দানা খুলে মুক্ত হলাম!
.......
-জনাব,আমি কি ভেতরে আসতে পারি?"
বিরক্তিকর প্রশ্ন!অফিসে বসে মাত্র নিতুর ঠোঁট টা কাছাকাছি টেনে এনেছিলাম।আমার পি.এস।আজ ছয় মাস হলো অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়েছি,কিন্তু মাছটা জালে উঠাতে যথেষ্ট সময় লাগছে।
আগের মাছগুলোতে এত্তো সময় লাগেনি।
যথেষ্ট খেলুড়ে মাছ বোঝাই যায়।উটকো প্রশ্নে নিতু ঠিকঠাক হয়ে দাঁড়ালো।আর,আমার মাথায় চড়ে গেলো রক্ত।
-জ্বি!এসেই যখন পড়েছেন শিবের বলদ হয়ে আর দেরি কেনো?ফাঁক করে ঢুকে পড়ুন।"
-ছি!জনাব।কি বলছেন?বয়েসকালে জোর ছিলো!এখন কি আর আছে?"
ভিতরে ঢুকতে ঢুকতে বললেন লোকটি।
-আরেহ!!মশাই।প্যাঁচাচ্ছেন কেন?বসুন আর কি দরকার বলুন।"
-আজ্ঞে,আমার নাম শ্রী গোবর্ধন উল্টিপাধ্যায়!শিববাবু আমাকে পাঠিয়েছেন!"
বসতে বসতে লোকটি বললো।
-কোথাকার শিব বাবু?আমি তো কোনো শিব বাবুকে চিনি নে।"
অবাক হলাম লোকটার কথাবার্তার ধরণ দেখে।এমনিতেই জলপান মিস করেছে,তার উপর এখন আবার উলটো ভাট বকে যাচ্ছে।
-উনি বিখ্যাত!হে মশাই।"
নিতুর দিকে তাকিয়ে গোবর্ধনধারী একবার নিচের ঠোঁট ভিজিয়ে নিলো।নিতুও লোকটার দিকে তাকিয়ে ফিক করে মুচকি হাসলো।হিংসেয় আর অহমিকায় আমার গাঁ জ্বলে উঠলো।আবার আগের কথায় ফিরে গেলেন গোবর্ধন।
-তিনি আপনাকে দেবার জন্যে এই ব্রিফকেস সহকারে আমাকে পাঠিয়েছেন।"
-কি আছে ব্রিফকেসে?"
সরকারী চাকুরে,যথারীতিই ব্রিফকেসের প্রতি একটু দুর্বলতা আছে।তার উপর কালো আর ভারী দেখেই বোঝা যায়।তাই,নিতুর দিকে গোবর্ধনধারীর তাকানো টা মাফ করে দিলাম।
-আজ্ঞে,শিব মশাই তো আর তা আমাকে বলেন নি।তাছাড়া,তিনি ব্রিফকেসটা লোকচক্ষুর আড়ালে খুলতে বলেছেন।"
আনন্দে গদগদ হয়ে গেলুম।বোঝাই যায়,মালপাত্তি ভালোই আছে।
-আচ্ছা,আচ্ছা!উনাকে বলবেন যাতে এই অধমকে রাতে একটু স্মরণ করে।"
-অবশ্যই অবশ্যই!আপনাদের স্মরণ করাই উনার কাজ!"
রহস্যজনক হাসি দিয়ে আবারও নিতুর দিকে তাকিয়ে জিব চেটে শ্রী গোবর্ধন উল্টিপাধ্যায় বেরিয়ে গেলেন।
অনেকদিন পর সঙ্গমকালীন সুখে উৎফুল্ল কবুতরের মতো বাকবাকুম বাকবাকুম রব ছাড়লাম।
.....
হুড়োহুড়ি করে ব্রিফকেসটা সাথে নিয়ে বাসায় ফিরে আসলাম অফিস শেষ হওয়ার পর।অবন্তী,আমার বউ অবাক হলো এতো তাড়াতাড়ি হুটহাট করে বাসায় ফিরে আসায়।
-কি গো?আজ এতো তাড়াতাড়ি ফিরলে যে?"
এমনিতেই উত্তেজনায় অধীর হয়ে আছি।বউ প্রশ্ন করে সময় নষ্ট করছে বলে যারপরনাই বিরক্ত হলাম।
-তাড়াতাড়ি ফিরেছি বলে তোমার সমস্যা?"
খ্যাকিয়ে উঠলাম।
তাড়াতাড়ি রূমে ঢুকে দরজা আটকে দিলাম।
ব্রিফকেসটা বিছানায় রেখে টানাটানি করে টাই খুলে বসলাম।
ক্লিক করে শব্দ করে ব্রিফকেসটা খুললো।
ভেতরে একটা মোড়ানো প্যাকেট।আর,সাথে একটা চিঠি।
কিছুটা অবাক হতেই হলো এই পর্যায়ে এসে।
টাকাটা কি তাহলে মোড়ানো প্যাকের ভেতর!
পরিমাণে তো তাহলে কম।হতাশায় আর খুলতে ইচ্ছে হলো না।চিঠিটা হাতে নিলাম।
লেখা,
...
শ্রী ধনেশ্বর রায়,
প্রণামপূর্বক কেমন আছেন?
পারতপক্ষে আপনি আমাকে চেনার কথা নয়।আমি শিবনারায়ণ,বলদবাহকী।
আজ হতে ৬০০০ হাজার বৎসর পূর্বে হিমালয় উত্তর মন্দির হতে আমার লিঙ্গখানা চুরি হয়।
এতোকাল এটা নিয়ে বিশেষ চিন্তিত ছিলাম না।
কিন্তু,সীতা নাছোড়বান্দা।
বুঝতেই পারছেন কেন?
আপনি আমার উত্তরপুরুষ রূপে পৃথিবীপৃষ্ঠে কামলীলায় অসদ্ব্যবহার করে এই লিঙ্গিক বৈষম্য সৃষ্টি করেছেন।যার ফলশ্রুতিতে,২৭ ইঞ্চির ঘনমূল এখন তিন ইঞ্চি।তাই,
উদ্ধারকৃত ২৭ ইঞ্চি আবার আপনার মাধ্যমে আমি পৃথিবীতে পুণঃপ্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
তাই,আমার পক্ষ হতে এখন এই উপঢৌকন প্রেরণ করলাম।
তাছাড়া,চীন দেশ হতে কিছু লোক সময় পরিভ্রামক যন্ত্র উদ্ভাবনের লক্ষ্যে এই মাংসল যন্ত্র ব্যবহারের অভিপ্রায়ে আছে।এটা তাদের অমূলক ধারণা নয়।
বিজ্ঞানভিত্তিক প্রমাণ বিদ্যমান।
তাই,আমি চাইনা এর পুণঃঅসদ্ব্যবহার হোক।
আপনি এর প্রাণপ্রতিষ্ঠা করুন।
শিব♦
....
নিরাশা আমাকে ঘিরে ধরলো,তার উপর কিছু আশাও বলীয়ান হলো।
যাই হোক,এতোকাল হতে করা কদাচার হতে মুক্তির পথ বোধহয় এই।
আর,এই প্রাণপ্রতিষ্ঠা করলে নিশ্চয়ই আমার স্বশরীরে স্বর্গযাত্রা হবে।
স্বর্গীয় অপ্সরী.....
উফফস!ভাবতেই গা রি রি করে উঠলো উত্তেজনায়।
অনেকখানি আগ্রহে তাড়াতাড়ি লুঙ্গি পড়ে মোড়ানো প্যাকটি কোলের উপর নিয়ে বসলাম।
প্যাকটি খুলে দেখি ভেতরে একটি চৌকোণ বাক্স।
বাইরে স্প্রিংযুক্ত হুক লাগানো।
বারবার শরীরের শিহরণ কারেন্টের ভোল্টেজের মতো শরীরের এপ্রান্ত হতে ওপ্রান্তে দৌঁড়াদৌঁড়ি করতে লাগলো।
(ওম!নমস্য শিবায়ী!) বলে দিলাম হুকে টান।হুক খোলার বহু পুরাতন অভ্যেস!
ঘ্যাটাং করে চৌকোণ বাক্সটি খুলে গেলো আর কিছু আলপিন ছুটে এলো আর কোথায় কোথায় যেনো আঘাত করলো।
দশ সেকেন্ডেই "ওম!নমস্য শিবায়ী!" শিবের কীর্তন "ও!মাগো!" আত্মকীর্তনে পরিণত হলো।
বাহির হতে স্ত্রী অবন্তী বোধহয় চিৎকার করে ছুটে এলো।
কিন্তু,তার আগেই আমার চারপাশ অন্ধকার হয়ে গেলো।
....
বহুদূর হতে কেউ যেনো আমার নামটা সংক্ষেপে ছোট করে ছেঁটেছুঁটে ডাকছিলো।
লম্বা ঘাসের লন,উঠতে পারলাম না।
পাশ ফিরলাম।
দেখি শিব দাঁড়িয়ে।
"কেমন আছে বৎস?"
আহ!আমাকে উনি স্মরিয়াছেন?কিছুক্ষণ গালাগালি করতেই দেখলাম উনি মুচকি হাসছেন!
"আপনি আমাকে উপঢৌকন পাঠান নি?!"
"বাছা!তুমি বিজ্ঞান পড়ো নি?"
"কেনো?"
"শা*র পুত!শিব কি তাইলে লি* ছাড়া ঘুরে?"
গালি খেয়ে দেখলাম নিজেকে কেমন জানি মুক্ত মুক্ত লাগছে।নিশ্চয়ই নিজের বোকামির বোঝা মাথা থেকে নেমে গেছে।আবার,চারপাশ দেখি কেমন জানি অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে।
......
চোখ খুলতে দেখি অবন্তী মুখের উপর ঝুকে আছে।আর,তার চুলগুলো আমার চোখেমুখে পড়ছে।আহ!
কতোদিন অবন্তীর চুলের গন্ধ শোঁকা হয় না।
চোখ খুলতেই অবন্তী মাথা সরিয়ে নিলো।
হাসপাতালে শুয়ে আছি।
চারপাশ কেমন জানি সাদা।
সাদা দেয়াল,সাদা বিছানার চাদর,সাদা এপ্রোন গায়ে ডাক্তার।
-এখন কেমন অনুভব করছেন?"
বুঝতে পারছিলাম না কি বলবো।শুধু নিজেকে হালকা লাগছিলো।তাই অস্ফুটে বললাম
-হালকা!
-হ্যাঁ,লাগারই কথা।একদম শার্লক হোমস স্টাইলটা অনুসরণ করেছে বুঝলেন?স্প্রিংয়ের সুত্রটা অ্যাপ্লিকেবল ছিলো।
ওইযে, F= -kx
অর্থাৎ,বল সরণের সমানুপাতিক আর বিপরীতমুখী।"
কি বলছে কিছুই বুঝলাম না।ফ্যাঁসফ্যাঁসে গলায় বললাম,
-তার সাথে হালকা লাগার কাহিনী কি?"
-আসলে চৌকোণ বাক্সের মধ্যে রাউন্ডেবল অনেকগুলো স্প্রিং ছিলো আর ওগুলোর মাথায় আলপিন।আপনি হুক টা জোরে টান দিতেই বল প্রয়োগ হয়।বড্ড বাঁচা বেঁচে গেছেন বুঝলেন?"
মাথায় রক্ত উঠে যাচ্ছিলো।
-আরেহ দাদা! হাল্কা লাগছে কেনো?"
-আর,বলবেন না।আলপিন গুলো এসে আপনার নিম্নাংশে আঘাত করেছে।আসলে,স্যরি!
আমরা আপনার নামের শর্ট ফ্রমটা রাখতে পেরেছি।কিন্তু,অন্ডকোষ দুটি পুরোই গেছে বুঝলেন?"
মাথায় বাজ পড়লো শ'খানেক।আমি একি অবস্থায় পতিত হলাম?
"আমি গোলা রেখেছি,খালি করেছে!
দানা নেই? কোনো?"
সপ্তাহখানেক হাসপাতাল ঘুরে বাসায় ফেরলাম।দেখি,বাসা খালি।
টেবিলের উপর চিঠি রাখা।
পড়তে ভয় হলো।কিন্তু,এখন তো আমি মুক্ত আর ভয় কিসের?
তাই,কাঁপাকাঁপা হাতে নিলাম চিঠিটা।
"বাসায় এসেছো নিশ্চয়ই?
তোমার কুকীর্তি আর কিছুই আমার জানতে বাকী নেই।
ফোন এসেছিলো সেদিন!
অপরিচিত এক লোক!
আমাকে সব জানিয়েছেন তোমার অফিস ডিউটি সম্পর্কে।
আশা করি,পি.এস দের সাথে ভালোই টাইম কাটাবে!
উফফ শিট! এখন তো আর সম্ভব না।
এখন তো তুমি দানাহীন ভূমিপুত্র।
যাই হোক,আমি দানামুক্ত প্রকৃতিপ্রদত্ত।
তুমি যুক্ত ছিলে,রাখতে পারোনি তোমার দোষে,
আর,আমিও তোমায় মুক্তি দিলাম।
ডিভোর্স লেটার পাবে।
সাইন করে দিও!....
....ফুসফুস হতে আহত বায়ু বাতাসের সাথে মিশে যেতে যেতে ফিসফিসিয়ে বললো,
"দানা খুলে মুক্ত হলে!"