somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

নীরব স্বপ্ন
মানুষ স্বপ্নবিলাসী, প্রতিনিয়ত মানুষের স্বপ্নের ভাঙ্গন ঘটে, তবুও নতুন আশায় বুক বাঁধে, এইতো জীবন৷ সবাইকে সুখী থাকার অভিনয় করেই বেঁচে থাকতে হয়, আমি সেই সব স্বপ্নহারা মানুষের নীরব বন্ধু হয়ে হাসি ফোঁটাতে চাই ৷

সবাই আমার জন্মদিন কেন ভুলে যায়!

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার জন্মদিন একটা বিশেষ দিনে। যেদিন পৃথিবীতে দিনের ভাগ দীর্ঘস্থায়ী হয়। ছোটবেলা থেকে কমবেশি সবারই জন্মদিন উদযাপন করেন বাবামায়েরা। আমার প্রথম জন্মদিনও জাঁকজমকভাবে পালন করা হয় যা আমি ছবিতে দেখি বুঝার বয়স হওয়ার পর। ছোটবেলা থেকেই আমি চাইতাম আমার জন্মদিন প্রতিবছরই উদযাপন করা হোক যেখানে আমি আমার বন্ধুদের আসতে বলব। কিন্তু বাবা মা দুজনই চাকুরী করায় সেই সুযোগ হয়ে উঠতোনা। এভাবেই চলতে লাগলো বছরের পর বছর। পঞ্চম শ্রেণীতে আমি এলাকার সেরা বিদ্যালয়ে ভর্তি হই। ১ম সাময়িক পরীক্ষায় ২য় স্থান অধিকার করায় আমার কয়েকজন ভালো বন্ধু হয়। বাবা মাকে বলি সেবার আমার বন্ধুদের দাওয়াত করবো। বাবা মাও সায় দেন। আমার খুব ভালো ৬ জন বন্ধুকে দাওয়াত দেই। আমার জন্মদিনের দিন যখন তাদের আসতে বললাম তখন তারা অজুহাত দেখাল তাদের বাবা মা বলেছে তারা তখন ছোট, তাই অত দূরে না যেতে। এদিকে আমার মা বাসায় বিরিয়ানি রান্না করলো, আব্বা কেক,মিষ্টি চকলেট এনে রেখেছিল। বাধ্য হয়ে আমাদের এলাকার কাছের এক প্রিয় বন্ধুকে জোর করায় ও আসে। এমনিতেও ও আমার জন্য কত বিদেশী কলম এনেছিল। ওর প্রতি আমি খুবই কৃতজ্ঞ কারণ সে একটু হলেও আমার কথার সন্মান রেখেছিল আমার সাথে বাসায় এসে। ওর সাথেই আমাদের বাসার সবাই কেক কেটে খেলাম। ও চলে যাওয়ার পর আব্বু আম্মু আমায় খুব বকা দিলো এজন্য যে কেন যারা আসবেনা তাদের দাওয়াত করলাম আর এতো কিছু আনতে হল ও রান্না করতে হল? আমায় বলে দেওয়া হয় পরবর্তীতে কখনও যেন জন্মদিন উদযাপনের কথা না বলি এবং বন্ধুদের দাওয়াত দেওয়ার ইচ্ছে মনে না আনি। বন্ধুদের জন্মদিনের দাওয়াতেও যেতে মানা করা হয়। আমার যে বন্ধুটি এসেছিল তার সাথে এটা বলি। ও আবার এই কাহিনী বাকীদের বলে দেয়। তখন থেকে আমার বন্ধুরা আমার আব্বুকে চরম ভয় পায় এবং কোন দরকারে আমাদের বাসায় এরপর এলেও আব্বু বাসায় আছে শুনলে ভয়ে চলে যেত। যদিও আমার আব্বু ভয় পাওয়ার মত মানুষ না।
আমি এমন ছিলাম যে আমার বাবা মা কোন কিছু মানা করলে কখনও সেটা করতামনা। আমারও সেদিন বন্ধুদের উপর অনেক অভিমান করেছিলাম। এরপর থেকে আমি কোন বন্ধুদের জন্মদিনে যাইনি মাধ্যমিক পরীক্ষা পর্যন্ত। কোন বন্ধু আমার জন্মদিন কবে জিজ্ঞেস করলেও বলতাম না কবে। আমার বাবা মাও অনেকসময় ব্যস্ততায় ভুলে যেত আমার জন্মদিন কবে। আমি কাওকেই মনে করিয়ে দিতাম না। মাঝেমধ্যে আমার ছোটভাই আব্বু আম্মুকে মনে করিয়ে দিলে বাসার আমার পছন্দের ভুনা খিচুড়ি রান্না করতো আম্মু। এস এস সি পরীক্ষার ফলাফল দেওয়ার আগের দিন আমার জন্মদিন ছিল। আমার নতুন এক বন্ধু খুব জোর ধরে আমার সাথে দেখা করে আমায় শুভেচ্ছা উপহার দিবে। আমি আমার মা ও ছোট ভাইকে এই কথা বলে যাই যে আমার দুজন বন্ধু আমাদের এলাকায় আসবে। কিন্তু আম্মুর মনে ছিলোনা ঐদিন আমার জন্মদিন ছিল। আমিও বলিনা। হঠাৎ ছোটভাই আম্মুকে মনে করিয়ে দেয়। আম্মু আমাকে বলে তাদের বাসায় নিয়ে আসতে এবং আব্বু ফোন করে কেক মিষ্টি নিয়ে আসতে বলে। আমিও আমার ঐ দুই বন্ধুকে বাসায় আনি। আব্বু আম্মুর সাথে তাদের পরিচয় করিয়ে দেই। বন্ধুটি আমায় একটা হেয়ার জেল উপহার দেয় আমার চুল স্পাইক করা থাকে বলে। যদিও এরআগে আমি চুলে কখনও জেল ব্যাবহার করিনি। এটি বলায় বন্ধুটি খুব লজ্জা পায়। আমি তাকে বলি আমি চুল অনেক ছোট করে কাটাই কিন্তু সাম্নের চুল একটু বড় থাকে, যখন আমি ওযু করে টুপি পরি তখন চাপে আমার চুল দাঁড়িয়ে স্পাইকের মত দেখাত। তবে তখনকার সময়ে আমি কোন উপহার পেতামনা বলে ঐ উপহার পেয়ে আমি খুবই খুশি হই। দিনটি এখনো আমার কাছে স্মরণীয়।
এরপর কলেজ জীবন গেল। কলেজ জীবনেও সবাই ভুলে গেল আমার জন্মদিন কবে ছিল! আমিও কাউকে মনে করিয়ে দিতামনা। বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এসে সবার মত আমিও ফেসবুক ব্যাবহার শুরু করি কিন্তু এখানেও আমার জন্মদিন টাইমলাইনে হাইড করা থাকতো। বন্ধুরা কেও জিজ্ঞেস করলে বলতাম দিন যেদিন দীর্ঘতম হয় সেদিন। এই প্রশ্নটি তখন অনেকে বলতে পারলেও জন্মদিন আসতে আসতে সবাই ভুলে যেত। এভাবে বছরের পর বছর আমার জন্মদিনটি আসে আর যায় কেও মনেও রাখেনা। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠে টিওশনি করাতাম বলে আমার জন্মদিনে বন্ধুদের আমি এমনি বেতন পেয়েছি খাওয়াতে ইচ্ছে করলো বলে খাইয়েছি। কেউ বুঝতও না। তাই আমি কোন উপহারও পেতামনা। কিন্তু আমায় কোন বন্ধু তাদের জন্মদিনে দাওয়াত করলে সাধ্যমত ও বন্ধুর পছন্দমত উপহার কিনে দিতাম। সামনে আবারও সেইদিনটি আসছে। জানিনা কি হয়!
আমার ছোটভাইটি আমার জন্মদিনে এখনো ভুলেনা। এখনো প্রতিবছর আমি যেখানেই থাকিনা কেন আমায় ফোন করে / ম্যাসেজ পাঠিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। তাই আমিও তার জন্মদিনটি ভুলিনা। আমি যেখানেই থাকিনা কেন ঐদিন আমি সব কাজকে ছুটি দিয়ে ছোটভাইয়ের জন্য ওর পছন্দমত উপহার এবং ওর পছন্দের খাবার যেমন কেক,মিষ্টি,চকলেট,রসমালাই কিনে নিয়ে বাসায় যাই ও ছোটভাইকেও বাসায় থাকতে বলি। বাসার সবাইকে নিয়ে ওর জন্মদিন উদযাপন করি। একদিকদিয়ে ওর বন্ধুরা ভালো আছে। ওর বন্ধুদের দাওয়াত দিলে কেউ বাদ যেতনা।
আমি জানি এখন আমার বন্ধুরা আমার জন্মদিনে দাওয়াত দিলে এখন আসবে, উপহার দিবে। কিন্তু ছোটবেলার জেদটা এখন একগুঁয়েমিতে পরিণত হয়েছে। তাই কেও না জানুক এটাই ভালো। যে দুতিনজন বন্ধুর সাথে আমি এখন প্রতিনিয়ত চলি, তারা আমার স্বভাব জানে বলে মোবাইল এ রিমাইন্ডার দিয়ে মনে রাখার চেষ্টা করে ও শুভেচ্ছা জানায়। কারণ ফেসবুক এ আমার জন্মদিন লুকোনো বলে জন্মদিনে কারো কাছে নটিফিকেশান পৌঁছায় না। আমি এতটুকুতেই সন্তুষ্ট। যেসব বন্ধুরা মনে করে আমি না খাওয়ানোর জন্য জন্মদিন জানাইনা তাদের জন্য আজ একথাগুলো বললাম।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জানুয়ারি, ২০১৬ রাত ১২:৫৭
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মত প্রকাশ মানে সহমত।

লিখেছেন অনুপম বলছি, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৭

আওয়ামী লীগ আমলে সমাজের একটা অংশের অভিযোগ ছিলো, তাদের নাকি মত প্রকাশের স্বাধীনতা নাই। যদিও, এই কথাটাও তারা প্রকাশ্যে বলতে পারতেন, লিখে অথবা টকশো তে।

এখন রা জা কারের আমলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্নমর্যাদা!

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:৪৩

রেহমান সোবহান একজন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক। তার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ৬ কিলোমিটার। রেহমান সাহেব এমন একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন যা খুব নির্জন এলাকায় অবস্থিত এবং সেখানে যাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁঠালের আমসত্ত্ব

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

কাঁঠালের কি আমসত্ত্ব হয় ? হয় ভাই এ দেশে সবই হয়। কুটিল বুদ্ধি , বাগ্মিতা আর কিছু জারি জুরি জানলে আপনি সহজেই কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানাতে পারবেন।
কাঁঠালের আমসত্ত্ব বানানের জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। অ্যাকসিডেন্ট আরও বাড়বে

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



এরকম সুন্দরী বালিকাকে ট্র্যাফিক দায়িত্বে দিলে চালকদের মাথা ঘুরে আরেক গাড়ির সাথে লাগিয়ে দিয়ে পুরো রাস্তাই বন্দ হয়ে যাবে ।
...বাকিটুকু পড়ুন

কেমন হবে জাতীয় পার্টির মহাসমাবেশ ?

লিখেছেন শিশির খান ১৪, ০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৫৬


জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিক্ষুব্দ ছাত্র জনতা আগুন দিয়েছে তাতে বুড়ো গরু গুলোর মন খারাপ।বুড়ো গরু হচ্ছে তারা যারা এখনো গণমাধ্যমে ইনিয়ে বিনিয়ে স্বৈরাচারের পক্ষে কথা বলে ,ছাত্রলীগ নিষিদ্ধ হওয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×