আমার দুই বাসা পরে এক বৃদ্ধ আর বৃদ্ধা দম্পতি থাকেন। মাঝে মধ্যে একজন মধ্যবয়সী লোককে আসতে দেখি তাদের কাছে; বোধহয় ওনাদের ছেলে। তাছাড়া আর কাউকে কখনও আসতে বা থাকতে দেখিনি। আমরা নতুন বাসায় উঠে আসার পর থেকেই দেখছি বুড়ো প্রায় সারাদিনই হয় বাসার সামনের অথবা পেছনের বাগানে কাজ করছেন। মাঝে মাঝে বৃদ্ধের সাথে বৃদ্ধা এসেও যোগ দেন। বাসায় যাওয়া আসার পথে কখনও বা চোখা চোখি হলে মৃদু হাসেন কিন্তু কখনও আগ বাড়িয়ে কথা বলেননি। আমিও যেচে আলাপ করতে যাইনি। বুড়োদের সাথে কথা বলা মানেই অনেক খানি সময়ের জন্য আটকে যাওয়া।
হঠাৎ করেই বৃদ্ধের সাথে এক অদ্ভূত ঘটনার মাধ্যমে পরিচয় হয়ে গেল। তার নাম জিউস, গ্রীস থেকে অনেক অনেক দিন আগে খুব ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সাথে চলে এসেছিলেন এখানে অভিবাসন নিয়ে। একটি বিশেষ কারণে তার বাসায় একদিন আমাকে যেতে হয়েছিলো। সেই গল্প না হয় থাক অন্য আরেকদিনের জন্য। এরপর থেকেই তার সাথে আমার বিভিন্ন বিষয়ে কথা হত। আস্তে আস্তে বুঝতে পারলাম বৃদ্ধ সব ব্যাপারেই ব্যপক জ্ঞান রাখেন। আমিও তার সাথে সব ব্যাপারে আলাপ করে বেশ মজা পেতে শুরু করলাম।
এরকমই একদিন তার সাথে কথা বলার সময় ধর্ম এবং ইশ্বর প্রসংগ উঠে আসল। "আচ্ছা বলত, ঈশ্বরের কি স্বাধীন ইচ্ছা আছে?" বৃদ্ধ জিজ্ঞাসা করলেন আমাকে।
অনেক আত্মবিশ্বাস নিয়েই বললাম, অবশ্যই আছে। এটা মানি যে মানুষের স্বাধীন ইচ্ছার ব্যাপারটা একটু ধোঁয়াটে কিন্তু ইশ্বর হলেন সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। তিনি যা খুশী তাই করার ক্ষমতা রাখেন। আর সৃষ্টিকর্তার যদি স্বাধীন ইচ্ছা না থাকত তবে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী হতে পারতেন না।
তুমি ঠিকই বলেছ, আর যেহেতু তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী তার মানে হল তিনি নিজের ভবিষ্যতের যে কোন ঘটনাও পুঙ্খানুপুঙ্খু রুপে দেখতে সক্ষম। ঠিক না? বৃদ্ধ আমার দিকে প্রশ্নবোধক দৃস্টি ছুড়ে দিলেন।
বুঝতে পেরেছি আপনি কি বলতে চান, বললাম আমি। যেহেতু তিনি নিজের ভবিষ্যতের ঘটনা দেখতে পান তার মানে সেই ঘটনা সম্পর্কে নেয়া তার সিদ্ধান্তগুলাও সব পূর্ব নির্ধারিত। মানে পরিবর্তনের সুযোগ নেই। আর যদি তিনি ভবিষ্যত দেখতে না পান তাহলে তিনি সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী না, এইত?
একটা অর্থপূর্ন হাসি দিয়ে তিনি বললেন, স্বাধীন ইচ্ছা আসলে যত সহজ ভেবেছিলে ততটা সহজ না, তাইনা?
আমি চিন্তায় পরে যাই।