১৯৭১ সালের ১০ ডিসেম্বর বর্তমান ধর্মমন্ত্রী এবং তৎকালীন ঢালু যুব শিবির প্রধান অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তি বাহিনী ও মিত্র বাহিনীর সদস্যরা সম্মিলিতভাবে বিজয় পতাকা উড়িয়ে ময়মনসিংহ জেলা সদরে প্রবেশ করেন। তখন ময়মনসিংহবাসী বিজয়ের আনন্দে রাস্তায় নেমে আসে। শহরের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই মিছিলে অংশ নেয়। মুক্তিযোদ্ধারা মুক্ত ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করেই সার্কিট হাউস প্রাঙ্গণে স্বাধনীন বাংলার পতাকা উত্তোলন করেন।
তৎকালীন ঢালু যুবশিবিরের প্রধান ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ও ব্রিগেডিয়ার সাম সিং বাবাজীর নেতৃত্বে মিত্রবাহিনীর সকল বীর সদস্যরা একযোগে শম্ভূগঞ্জ ফেরিঘাট দিয়ে ময়মনসিংহ শহরে প্রবেশ করেন।
মুক্তির আনন্দে শহরবাসী একে একে তাদের প্রিয় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন। এরপর মুক্তিযোদ্ধা, মিত্রবাহিনীসহ সর্বস্তরের জনতা মুক্তির আনন্দ মিছিল নিয়ে একযোগে স্থানীয় সার্কিট হাউজ মাঠে জড়ো হতে থাকেন। এসময় মুহূর্তের মধ্যে গোটা মাঠ কানায় কানায় ভরে গিয়ে তা এক জনসমূদ্রে রূপ নেয়।
মিত্রবাহিনীর কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল সাম সিং বাবাজি, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম, মুক্তিযুদের সংগঠক ঢালু ক্যাম্প প্রধান বর্তমান ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা নাজিম উদ্দিন আহাম্মেদসহ আরো অনেকের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধারা মিছিল সহকারে বিজয়ের পতাকা নিয়ে শহরে প্রবেশ করেন। এসময় উৎফুল জনতা রাস্তার দুপাশে লাইনে দাঁড়িয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অভিনন্দন জানান।
ডিসেম্বর মাসের শুরু থেকেই সীমান্তবর্তী উপজেলা হালুয়াঘাট দিয়ে মুক্তিবাহিনী আক্রমণ শুরু করে। এরপর থেকেই শুরু হয় হানাদার বাহিনীর পরাজয়ের পালা। মুক্তিযোদ্ধাদের তোপের মুখে হানাদার বাহিনী মুক্তাগাছা হয়ে পালাতে শুরু করে। ৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা প্রথমে ফুলপুর পরে তারাকান্দা, শম্ভুগঞ্জ ও ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে ঢাকায় পালিয়ে যেতে শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর ভোরে হানাদার বাহিনী ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে পালিয়ে যায়।
জানা যায়, ১৯৭১ সালের ৩ ডিসেম্বর ১১ নম্বর সেক্টরের এফ. জে মুক্তিবাহিনী এবং ভারতীয় মিত্রবাহিনীর ১৩ রাজপুত রেজিমেন্ট ও ৯৫ ব্রিগেডের ৫৭ মাউন্ট ডিভিশন যৌথভাবে ময়মনসিংহ অঞ্চলে অবস্থানরত হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধের পরিকল্পনা করে।
পরে মুক্তিবাহিনী সীমান্তঘেষা উপজেলা হালুয়াঘাট দিয়ে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে দিশেহারা পাক বাহিনীর সদস্যরা টিকতে না পেরে পিছু হটে।
৯ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা প্রথমে ফুলপুর ও পরবর্তীতে তারাকান্দা, শম্ভুগঞ্জ ও ময়মনসিংহ শহর ছেড়ে টাঙ্গাইল জেলার ভেতর দিয়ে ঢাকায় পালিয়ে যেতে শুরু করে। ১০ ডিসেম্বর ভোরে হানাদার বাহিনী ময়মনসিংহ শহর থেকে পালিয়ে যায়।
১০ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার সান সিং বাবাজী ও মুক্তিবাহিনীর প্রধান, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি প্রিন্সিপাল মতিউর রহমান মুক্তিযোদ্ধা-জনতার বিজয় মিছিলে নেতৃত্ব দেন।
সান সিং বাবাজীকে সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে ময়মনসিংহকে আনুষ্ঠানিকভাবে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করেন।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩০