আমাদের সমাজে অনেকেই মনে করেন মাদ্রাসাভিত্তিক লেখাপড়া মানে শুধু কুরান হাদিস আর নামাজ শিক্ষা দেয়া হয়। শুধু এই নয় অনেকে বলে মাদ্রাসা শিক্ষা মানুষকে আধুনিক কোন শিক্ষা দিতে পারেনা। আর যারা নাস্তিক শ্রেণীর লোক তারাতো মনে করে এরা একেবারে মূর্খ আর সমাজ বিজ্ঞান, অর্থনীতি এসবের কোন জ্ঞান নাই তাদের। তারা মূর্খ।আসলে কি তাই?
কউমী মদ্রাসাতে শুধু নামাজ রোজা হজ্জ জাকাত, সম্পর্কে শিক্ষা দেয়না শিক্ষা দেয় ভাষা জ্ঞান আরবী, উর্ধু, ফার্সি, আজ হুজুর বললেন তাদের গ্রীক কিতাব পড়ানো হতো এক সময়। মান্তিক যাকে বলে, এর অর্থ যুক্তিবিদ্যা। দর্শন শাস্ত্র তেও তারা জ্ঞান রাখে। তারা রাজনীতি, অর্থনীতি, গণিত সহ কিতাব, ইসলামিক অর্থনীতি, সমাজ নীতি, সব পড়ে থাকে। শুধু তাই নয়।
ফেকাহ পড়ানো হয়। এর সাথে তাদের চার পাঁচটা ভাষার উপরেও তাদেরকে শিক্ষা দেয়া হয়। বাংলা, ইংরেজি প্রাথমিক পর্যায়ে, আরবি উচ্চস্তর পর্যায়ে, পাশাপাশি উর্দুও তাদেরকে শেখানো হয়। অল্প ফারসিও তাদেরকে পড়ানো হয়।
জেনারেল শিক্ষা অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত বাংলা, অঙ্ক, ইংরেজি, সমাজ, ভূগোল, ইতিহাস বর্তমানে অনেক মাদ্রাসাগুলোতে পড়ানো হয়। তাছাড়া উপরের দিকে অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানও আমরা পড়ানো হয়।
কাওমি মাদ্রাসার সিলেবাস,২০১৫-১৬
(বেফাক)
তাকমীল(দাওরা)
০১.বুখারী শরীফ (১ম ও ২য় খন্ড)
০২. মুসলিম শরীফ (১ম ও ২য় খন্ড)
০৩. তিরমিযী শরীফ (১ম ও ২য় খন্ড)
০৪. আবু দাউদ শরীফ
০৫. নাসায়ী শরীফ
০৬. ইবনে মাজাহ শরীফ
০৭. শরহু মা’আনিল আছার (ত্বহাবী)
০৮. শামায়েলে তিরমিযী
০৯. মুয়াত্তা ইমাম মালিক (রহ.)
১০.মুয়াত্তা ইমাম মুহাম্মদ (রহ.)
১১. উলুমূল হাদীস
১২.তিলাওয়াত ও তাজবীদ
ফজীলত (মেশকাত)
০১. মেশকাত শরীফ (১ম ও ২য় খন্ড)
০২. তাফসীরুল বায়জাবী শরীফ (প্রথম পারা)
০৩. হিদায়া (৩য় ও ৪র্থ খন্ড)
০৪. শরহুল আক্বাইদ আল-নাসাফী এবং ফেরাকে বাতেলা
০৫. শরহু নুখবাতিল ফিকার
০৬. তাহরীকে দেওবন্দ: দেওবন্দ আন্দোলন
ইতিহাস, ঐতিহ্য ও অবদান
ছফফে সানী আশার (হেদায়া ও জালালাইন)
০১. জালালাইন শরীফ (১ম ও ২য় খন্ড)
০২. হিদায়া (১ম ও ২য় খন্ড)
০৩. নূূরুল আনওয়ার (সুন্নাহ)
০৪. ছুল্লামুল উলূম
০৫. আল-ফাউজুল কাবীর
০৬. আক্বীদাতুত ত্বহাবী
০৭. উলূমুল কুরআন
ছফফে হাদী আশার(শরহে বেকায়া)
০১. শরহুল বিকায়া (১ম ও ২য় খন্ড)
০২. মুখতাসারুল মা’আনী (১ম খন্ড)
০৩. নূরুল আনওয়ার (কিতাবুল্লাহ)
০৪. মাকামাতুল হারিরী (১-১০)
০৫. তরজমাতুল কুরআন (১-১৫ পারা)
০৬. আত্তরীক ইলাল ইন্শা (৩য় খন্ড)
০৭. সিরাজী (মুনাসাখার পূর্ব পর্যন্ত)
ছফফে আশের (কাফিয়া শরহে জামী)
০১. কাফিয়া
০২. শরহেজামী
০৩. উসুলুশশাশী
০৪. তরজমাতুল কুরআন (২১-৩০ পারা)
০৫.দুরুসুল বালাগাহ
০৬. নফহাতুল আরব
০৭. শরহুত তাহযীব
০৮. মুখতাসারুল কুদুরী (মুআমালাত)
০৯. তালখিসুল মিফতাহ্
১০. আত্তরীক ইলাল ইন্শা (২য় খন্ড)
১১. আলফিয়াতুল হাদীস
১২.কানযুদ দাক্বায়েক
ছফফে তাসে ( হেদায়েতুন্নাহু)
০১. হেদায়েতুন্নাহু
০২. ইলমুসসীগাহ – খাছীয়াত সহ
০৩.নূরুল ইজাহ
০৪. তা’লীমুল মুতাআল্লিম
০৫. কাফিয়া (ফেল হরফ)
০৬. মুখতাসারুল কুদূরী (মুআলামাত পর্যন্ত)
০৭. তরজমাতুল কুরআন (১৬-২০ পারা)
০৮. তাইসীরুল মানতিক
০৯. মিরকাত
১০. আততরীক ইলাল ইন্শা (১ম খন্ড)
১১. আল কিরাআতুর রাশেদা (১ম ও ২য় খন্ড)
১২. বাংলা,গণিত, ইংরেজী (স্কুলের ৮ম শ্রেণীর)
ছফফে সামেন (নাহবেমীর)
০১. নাহবেমীর
০২. শরহু মিয়াতি আমিল
০৩.ইলমুছ ছরফ (৩য় ও ৪র্থ খন্ড)
০৪. রওজাতুল আদব (প্রথম ৬ বাব)
০৫. মালাবুদ্দা মিনহু
০৬. সীরাতে খাতামুল আম্বিয়া
০৭. গুলিস্তাঁ ফারসী (১ম ও ৮ম বাব)
ছফফে সাবে (মীযান)
০১. মিযানুছছরফ ও মুনশাইব
০২. আরবী ছফওয়াতুল মাছাদির
০৩. তারীখুল ইসলাম
০৪. আসানে কাওয়ায়েদ
০৫. কারীমা
০৬. পান্দেনামা
০৭. বেহেস্তি জেওর (১ম – ৩য় খন্ড)
০৮.জামালুল কুরআন ও তিলাওয়াতুল কুরআন
০৯.এসো আরবী শিখি (১-২ খন্ড)
১০.বাংলা, গণিত,ইংরেজী (স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণীর)
১১. হিফজুল কুরআন
ছফফে ছাদেছ (তাইসীর)
০১. তিলাওয়াতুল কুরআন তাজবীদ সহ
০২. তা’লীমুল ইসলাম (৪র্থ খন্ড)
০৩. উর্দূ কী তেছরী (এমদাদিয়া লাইব্রেরী)
০৪.ফারসী কি পহেলী
০৫. তাইসীরুল মুবতাদী
০৬. আদর্শ বাংলা পাঠ (পঞ্চম ভাগ) বেফাক বোর্ড
০৭.আদর্শ বাংলা ব্যাকরন, বেফাক বোর্ড
০৮.প্রাথমিক গণিত (পঞ্চম ভাগ) বেফাক বোর্ড
০৯. ইতিহাস পাঠ(পঞ্চম ভাগ) বেফাক বোর্ড
১০.ভূগোল ও সমাজ পরিচিতি (পঞ্চম ভাগ) বেফাক বোর্ড
ছফফে খামেছ (উর্দূূ)
০১.এসো আরবী শিখি (১-২ খন্ড)
০২. উর্দূ কায়দা
০৩. উর্দূ পহেলী
০৪. উর্দূ দুসরী
০৫. তা’লীমুল ইসলাম (১-৩ খন্ড)
০৬. তিলাওয়াতুল কুরআন (তাজবীদ সহ)নুজহাতুল ক্বারী অনুস্বরনে
০৭.বাংলা ৪র্থ
০৮. গণিত ৪র্থ
০৯. ইংরেজী ৪র্থ
১০. হিফজুল কুরআন
দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষার্থীরা এর আগেই ১০ বছরের কওমি পাঠ শেষ করে আসেন। ওই ১০ বছর সময়ের মধ্যে ২৪টি বিষয় পড়েন। এর মধ্যে ইসলামের মৌলিক শিক্ষা ছাড়াও রয়েছে আরবি, উর্দু ও ফার্সি ভাষা। প্রথম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত বাংলা ব্যাকরণ, সাহিত্য, গণিত, ইংরেজি, ইতিহাস, ভূগোল ও সাধারণ বিজ্ঞানও রয়েছে।
যা আছে পাঠ্যসূচিতে
হুদুদআইন: কয়েকজন দাওরায়ে হাদিস বিশেষজ্ঞ জানান, হুদুদ আইন মূলত ইসলামি আইনবিজ্ঞান। ‘মুয়াত্তা ইমাম মালিক’ দাওরা সিলেবাসের মূল বই।
জিহাদ: আরবি শব্দ জিহাদ-এর অর্থ লড়াই। কোরআন ও হাদিস মতে, ভালো মুসলিম হওয়ার জন্য সব ধরনের কুপ্রবৃত্তির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের পাশপাশি নিজের বিশ্বাসকে অন্যদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার নামই জিহাদ।
হিজাব: হিজাব বা পর্দার ব্যাপারেও এখানে শেখানো হয়। এটি নিজেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহার করা হয়। নারীদের ক্ষেত্রে এর বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
নারী অধিকার ও কর্মক্ষেত্রে নারীরা: দাওরায়ে হাদিসের সিলেবাসে নারী অধিকার নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। কওমি শিক্ষকরা জানান, তারা নারী অধিকার, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষা ব্যবস্থা ও এসবের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সচেতন করেন।
জামিয়া আরবিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার দাওরায়ে হাদিসের সিনিয়র শিক্ষক ওয়ালিউল্লাহ আরমান বলেন, ইসলামি আইনে নারীদের তাদের জন্য বিশেষভাবে তৈরি কর্মক্ষেত্রে কাজ করার অনুমতি রয়েছে।
যুদ্ধ (কিতাবুলমাগাজি): ইসলামি যুদ্ধ নিয়ে বলা হয়েছে কিতাবুল মাগাজি বইটিতে। মুসলিমরা কখন, কোন বিষয়ে যুদ্ধে যেতে পারবে এবং কিভাবে যুদ্ধ করবে, সে সম্পর্কিত হাদিস এই বইয়ে সংকলিত হয়েছে।
ব্যবসা (কিতাবুলবায়াহ): এই বইটিতে ব্যবসা সম্পর্কিত নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইসলামিরাষ্ট্র: একটি ইসলামি রাষ্ট্রের নীতি কেমন হবে, আরেকটি রাষ্ট্রের সঙ্গে তার আচরণ, অর্থনৈতিক কাঠামো কেমন হবে, সেই বিষয়গুলো দাওরায়ে হাদিসে পড়ানো হয়।
ইসলামিঅর্থনৈতিকব্যবস্থা : টাকা জমা রাখা, ব্যাংকিং নিয়ে ইসলাম কী বলে, হাদিসের আলোকে সেই বিষয়গুলো সেখানো হয় এখানে। রিবা বা সুদ এখানে নিষেধ করা হয়েছে।
চিকিৎসা: একজন বিশেষজ্ঞ জানান, দাওরায়ে হাদিসের শিক্ষার্থীরা তিন হাজার ধরনের রোগের চিকিৎসা বিষয়ে পড়াশোনা করেন। এর মধ্যে এক হাজার রোগের জন্য মূলত ভেষজ, বাকিগুলো দোয়ার মাধ্যমে আরোগ্যের পদ্ধতি শেখেন তারা। এক হাদিসে বলা হয়েছে, ‘প্রত্যেক রোগেরই ওষুধ রয়েছে। আর যদি সেই ওষুধ প্রয়োগ করা হয়, তবে আল্লাহর ইচ্ছায় তিনি সুস্থ হয়ে উঠবেন।
অমুসলিমদের সঙ্গে আচরণ: অমুসলিমদের সঙ্গে কেমন আচরণ করতে হবে, সেই বিষয়েও দাওরায়ে হাদিসে শেখানো হয়। অমুসলিমরা মুসলিম রাষ্ট্রে বসবাস করতে পারবেন, তবে সে জন্য তাদের জিজিয়া কর দিতে হবে।
উপসংহার ♦♦♦আজ আমাদের মসজিদের হুজুর বললেন আমরাও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে ভাষ আর জ্ঞান শিক্ষা করি। শুধু সেটা জাহির হয় কম। আগে গ্রীক ভাষায় মান্তিক শিক্ষা করা হত। তারপর সেটা কমে ফার্সি ভাষা চর্চা শুরু হল। আজ ইংরেজি সারা দুনিয়াতে এক নাম্বার ভাষা আন্তর্জাতিক ভাষা। আমরা ইংরেজি ভাষাও সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করছি। আমরা বিজ্ঞান ও শিক্ষা করছি সিলেবাস আরো পরিবর্তন হবে। তবে আমরা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হবোনা ঠিক তবে শিক্ষিত হয়ে
নিজের ধর্মীয় চেতনা, কালেমা ইমানের দাওয়াত দিতে সবার কাছে যেতে পারবো।
ব্রিটিশ আন্দোলনরত কিছু ওলামা কেরামের ইতিহাস দেখে নিন।।। কপি মারলাম না লিংক দিলাম।
ভারতীয় আলেম সমাজ ও বঙ্গীয় পীর মাশায়েখগণের ভূমিকা
আযাদী আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা
স্বাধীনতা আন্দোলনে আলেম সমাজের ভূমিকা
বৃটিশ বিরোধী আন্দোলনের মূল নায়ক ছিলেন আলেমসমাজ
ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামী মাইজবাড়ির মিয়াঁ ছাহেব রাহ.ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা নভেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:৪১