somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বিদায় হজ্বের পরে-(১) গাদির এ খুম উত্তরাধিকার নির্বাচন না ক্ষোভ উপশম ?“নেতা” আলী না “বন্ধু” আলী ?

০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আরবীতে “মাওলা” শব্দের আভিধানিক অর্থ- বন্ধু, অভিভাবক,প্রভু,নেতা, মুক্তিপ্রাপ্ত দাস,প্রশাসক ইত্যাদি সহ প্রায় ২৭টির মত অর্থ হতে পারে। বাক্যের ধরন ও পরিস্থিতির উপরে নির্ভর করে কোনো বাক্যে “মাওলা” শব্দের ইন্টারপ্রিটেশন কি হবে।ইসলামের ইতিহাসে “মাওলা” শব্দটা বেশ আলোচিত বিতর্কিত।শিয়া সুন্নী বিভক্তির পেছনে এ শব্দটার বেশকিছুটা ভুমিকা আছে। শিয়া এবং সুন্নী স্কলাররা একটি বিশেষ হাদিসে বর্নিত “মাওলা” শব্দটির দুটি আলাদা ব্যাখ্যা প্রদান করে থাকেন। এবং বলাই বাহুল্য সেই ব্যাখ্যা অবশ্যই যার যার নিজ নিজ রাজনৈতিক অবস্থানের উপরে ভিত্তি করে হয়।

কোন পটভুমিতে কোনো একটি হাদিসে “মাওলা” শব্দটা থাকার কারনে এই তর্কের উৎপত্তি একটু দেখা যেতে পারে।


বিদায় হজ্ব শেষে ফেরার পথে ইসলামের মহানবী হযরত মোহাম্মদ মক্কা ও মদীনার মধ্যবর্তি খুম নামক স্থানে ছোট একটি জলাশয়ের/কুপের নিকট প্রায় আশি হাজার মতান্তরে একলক্ষ বিশ হাজার সাহাবির সামনে উটের জিনের তৈরি অস্থায়ী মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুসলিমদের সামনে একটি ছোট বক্তৃতা প্রদান করেন এবং বক্তৃতার এক পর্যায়ে হযরত আলীর ডান হাত নিজের বাম হাতে ধরে উচু করে ঘোষনা করেন-
"আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা। হে আল্লাহ যে আলীর সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখে তুমিও তার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখ, যে আলীর সাথে শত্রুতা রাখে তুমিও তার সাথে শত্রুতা রাখ।" (সুত্রঃ সহি মুসলিম, ২য় খণ্ড, পৃ-৩৬২, মুসনাদে ইমাম হাম্বল, ৪র্থ খণ্ড, পৃ-২৮১)।


শিয়া ব্যাখ্যা মতে প্রফেট মোহাম্মদ এখানে তার উত্তরাধিকারি হিসাবে হযরত আলীকে নির্বাচন করেন। অন্যদিকে সুন্নীরা ব্যাখ্যা করেন ব্যাপারটা উত্তরাধিকারি নির্বাচনের মত গুরুতর বিষয় ছিলো না বরং প্রফেট প্রায় এক লক্ষ সাহাবির সামনে আলীর প্রতি সবাইকে বন্ধুত্ব পুর্ন মনোভাব পোষনের আহবান জানান।

পয়গম্বর মোহাম্মদ মানুষের ইতিহাসের অত্যন্ত গুরুত্বপুর্ন ও প্রভাবশালী এক চরিত্র। তার জীবনের মতই তার প্রচারিত মতবাদ ইসলামের প্রথম ৫০ বছরের রাজনৈতিক ইতিহাসও শ্বাসরুদ্ধকর। মুসলিম অমুসলিম নাস্তিক আস্তিক নির্বিশেষে রাজনীতি আর ইসিহাসে আগ্রহী মানুষের নির্মোহ ভাবে জানতে চেস্টা করা উচিত ইসলামের মহানবী খুম কুপের ধারে দাঁড়িয়ে আসলে কি বলতে চাইছিলেন । ১৪০০ বছর পুর্বে ট্রাইবাল আরব উপদ্বীপের আমজনতার পক্ষে সামাজিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতার ভারসাম্য বদলে দেয়া মানুষটির হ্নদয়ের বাসনা কি ছিলো?তিনি কি হযরত আলীকে তার উত্তরাধিকারি হিসেবে ইঙ্গিত করে গেছেন?নাকি তিনি শুধুই তার জীবনের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সঙ্গী, জামাতা ও চাচাতো ভাই আলীর প্রতি অন্যদের ঈর্ষা দূর করতে চাইছিলেন? তপ্ত মরুর বুকে ক্ষুদ্র জলাশয়ের পাড়ে অগনিত অনুসারির সম্মুখে দাঁড়ানো মহানবী কেনো আলী প্রসঙ্গে ভাষন দিতে গেলেন আসুন তা জানার চেস্টা করি।

সুন্নী ও কিছু শিয়া বর্ননা মতে – প্রফেট মক্কা বিজয়ের পর তিনশ যোদ্ধার এক বাহিনী আলীর নেতৃত্বে ইয়েমেন দখলে নিতে পাঠিয়েছিলেন। আলী নেতৃত্বে দলটি সহজেই যুদ্ধে জয় লাভ করে প্রচুর পরিমানে গনিমত (যুদ্ধলব্ধ সম্পদ) লাভ করে। আলী গণিমতের অংশ থেকে খুমুস ( খুমুস= ইসলামি শরীয়া অনুযায়ি যুদ্ধলব্ধ সম্পদের সেই অংশ যা বায়তুল মাল এ জমা হবে। পরিমান মোট লব্ধ সম্পদের পাঁচভাগের এক অংশ) আলাদা করে রাখেন। যার মধ্যে বিপুল পরিমান মুল্যবান লিলেনের কাপড় ছিলো। আলীর অধিনস্ত দলটি সেখানে তিনমাস অবস্থান করছিলো ফলে তাদের কাছে যথেস্ট ব্যবহার্য পোষাক ছিলো না।

এ অবস্থায় সাহাবিদের মধ্যে থেকে অনেকে ইয়েমেন থেকে গনিমত হিসাবে পাওয়া সেই দামি কাপড় থেকে ব্যক্তিগত ব্যবহারের জন্য কিছুটা ধার চেয়ে হযরত আলী কে অনুরোধ করেন। কিন্তু ঐ পন্য সামগ্রী খুমুসের অংশ হওয়ায় আলী রাঃ তা দিতে অস্বীকার করেন এবং তা সরাসরি ইসলামের মহানবীর এর হাতে তুলে দেয়ার ইচ্ছা ব্যক্ত করেন।

এর কিছুদিন পরে আলী নবীর পাঠানো খবরের প্রেক্ষিতে তার সাথে হজ্জে (বিদায় হজ্ব) যোগদানের জন্য ইয়েমেনের সেনাদলটিকে অন্যে একজনের অধীনে রেখে মক্কার উদ্দেশ্যে চলে যান। আলী চলে যাবার পর সেই ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সৈন্যদলকে লিলেনের কাপড় ধার হিসাবে দেবার সিদ্ধান্ত নেন। অল্পদিন পরে পুরো সৈন্যদলটিও মহানবীর সাথে যোগ দেয়ার জন্য মক্কা রওয়ানা করে। দলটির আগমনের খবর পেয়ে আলী মক্কা থেকে বেরিয়ে তাদেরকে অভ্যর্থনা জানাতে আসেন। কাছে এসে তিনি দেখতে পান তার সেনা দলের গায়ে সেই লিলেনের পোষাক। হুকুম অমান্য হতে দেখে আলী প্রচন্ড ক্ষিপ্ত হন এবং তাদের নির্দেশ দেন তৎক্ষণাৎ সে পোষাক খুলে পুরাতন পোষাক পরার জন্য। সাথে সাথে আলীর নির্দেশ মান্য করলেও দলটির নেতা সহ সকলেই খুব ক্ষুব্ধ হয়। ( সুত্রঃ ইবনে ইসাক- “সীরাতে রাসুল আল্লাহ”, পৃঃ৬৫০)

এক্ষেত্রে আলীর আচরন অত্যন্ত রুঢ় হলেও সরকারি কর্তৃপক্ষ/সেনাপতির পক্ষে তা অসম্ভব কিছু না।কারন সৈন্যদলের উপর সেনাপতির হুকুমই চুড়ান্ত। দলনেতা হিসাবে নিষেধ করে আসার পরেও আদেশ লংঘন করে সেনাদল কর্তৃক খুমুসের মাল ব্যাবহার করা সরাসরি অধিনায়কের কমান্ড অমান্য করার শামিল। তাছাড়া আলী উপরে প্রাশাসনিক দায়িত্ব ছিলো গনিমতের মালের অংশ বায়তুল মালে যথাযথ ভাবে পৌছে দেয়া। আলী চান নাই কোনো অবস্থাতেই তার দায়িত্ববোধ নিয়ে কোনো রকম প্রশ্ন উঠুক। তিনি জানতেন সামান্য কারনে তাকে অযোগ্য নেতা হিসাবে চিহ্নিত করা হতে পারে। তাই তিনি দীর্ঘ পথশ্রমে ক্লান্ত সৈন্যদলটির সাথে একটু বেশিই কঠোর আচরন করে ফেলেন।

নবীর অবর্তমানে যোগ্য নেতৃত্ব নির্ধারন নিয়ে যে আলী সহ বেশ কয়েকজনের মধ্যে আগে থেকেই অলিখিত প্রতিযোগিতা চলছিলো; ক্লান্ত সেনাদলের প্রতি আলী অস্বাভাবিক কঠোর আচরনে তার কিছুটা আভাস পাওয়া যায়। তবে আলী কঠোর হলেও তার আচরন শতভাগ নিয়মের অন্তর্ভুক্ত প্রাশাসনিক আচরন।কিন্তু এই আচরন প্রানবাজি রেখে লড়াই করা ক্ষুব্ধ সৈনিকদের মনে ক্ষোভ জাগায় এবং আলীর আচরন নিয়ে সেনা সদস্যদের মধ্যে কানাঘুষা হতে থাকে।

এ খবর ইসলামের নবীর কানে গিয়ে পৌঁছায়। শুনে তিনি তাদের উদ্দেশ্য করে বলেন, “তোমরা আলীর উপর রাগ করোনা। সে আল্লাহর পথে এতোটাই নিবেদিত একজন লোক যে, এ ব্যাপারে তাকে দোষ দেয়া যায় না”। নবীর এই বাণী ক্ষিপ্ত সৈন্যদলের বেশিরভাগ সদস্যের রাগ প্রশমন করতে পারেনি। (হাদীস বর্ণনাকারী সাহাবী বুরাইদাহ রাঃ ও এর ভেতর একজন)। আলীর বিপক্ষে তীব্র ক্ষোভ আর সমালোচনা চলতেই থাকলো।

প্রফেট মোহাম্মদ বিদগ্ধ পলেটিশিয়ান। তিনি জানতে আলীর নামে এধরনের চাপা ক্ষোভ আলীর রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের ক্ষতি করতে পারে। এমনকি আলীর প্রতিদ্বন্দিরা তাঁর অনুপস্থিতিতে এ ক্ষোভ ব্যাবহার করেও আলিকে বঞ্চিত করার সুযোগ নিতে পারে। তাই মহানবী এ বিষয় নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। মক্কা থেকে মদীনা ফেরার পথে খুম অঞ্চলে একটি কুপের কাছে যাত্রাবিরতি করলে সেখানেও আলীর নামে আবার এই অভিযোগের গুঞ্জন উঠে। এসব সমালোচনা ক্ষোভের কারনে মহানবী আলীর “হুকুম দেয়ার ক্ষমতা” বা “সিদ্ধান্ত নেয়ার অথরিটি” নিয়ে এতটাই চিন্তিত ছিলেন যে খুম এ পৌছার আগে আগে তাকে চিন্তা মুক্ত করতে ওহি নাজিল হয় ;)

শেষ পর্যন্ত বারবার অভিযোগে বিরক্ত প্রফেট মোহাম্মদ কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেন এবং সিদ্ধান্ত নিলেন তিনি এবার হস্তক্ষেপ করবেন এবং আলীর অথরিটি সুনিশ্চিত করবেন। তার প্রেক্ষিতেই গাদিরে খুমের সেই ভাষন যেখানে একপর্যায়ে নবী মোহাম্মদ নিজ হাতে আলীর হাত উপরে তুলে তাকে “মাওলা” সম্বোধন করলেন। মোটামুটি এই হলো গাদির খুম হাদীসের প্রেক্ষাপট।


এর বাইরে গাদির খুমের ঘটনার প্রেক্ষাপট হিসেবে হযরত বুরাইদাহ রাঃ থেকেও কাছাকাছি আরেকটা বর্ননা পাওয়া যায়-
বুরাইদাহ রাঃ বর্ণিত, “রাসুলুল্লাহ সাঃ আলী কে খালিদের (বিন ওয়ালিদ) কাছে পাঠালেন খুমুসের (যুদ্ধলব্ধ সম্পদের এক পঞ্চমাংশ) অংশ আনার জন্য, এবং আলীকে আমি অপছন্দ করতাম। আলী খুমুসের অংশের একজন যুদ্ধবন্দীর (যা তাকে রাসুল দিয়েছিলেন) সাথে মিলনের পর গোসল সেরেছিলেন। তা দেখে আমি খালিদকে বললাম, “তুমি কি দেখছো না (যে আলী খুমুস থেকে অংশ নিয়ে ব্যবহার করছে)”? আমরা যখন রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে পৌঁছালাম তখন আমরা তাঁকে এ ব্যাপারটা বললাম। তিনি আমাকে বললেন, “ওহে বুরাইদাহ, তুমি কি আলীকে ঘৃণা করো”? আমি বললাম “হ্যাঁ”। তিনি বললেন, “তুমি তাকে এজন্য ঘৃণা করছো, অথচ খুমুস থেকে এর চেয়ে বেশীই তার প্রাপ্য”।

অর্থাৎ আলী আহলে বায়াতের সদস্য হওয়ার অন্যায় সুবিধা নিচ্ছে এমন ধারনা সাহাবিদের মনে তৈরি হচ্ছিলো ।

প্রফেট মোহাম্মদের ততদিনে আরবের গোত্রীয় রাজনীতির ত্রিকাল দর্শন হয়ে গেছে। সদ্য জন্ম নেয় সম্ভাবনাময় ইসলামি রাজ্যের উত্তরাধিকারের প্রশ্নে তাঁর প্রিয় চাচাতো ভাই বন্ধু সহযোদ্ধা ও জামাতা আলীর প্রতি ক্ষমতার অন্যান্য ভাগীদারদের ঈর্ষা ও বিদ্বেষের আঁচ স্পস্টই অনুভব করতে পারছিলেন। এ সেই আলী যে ইসলামের শৈশবে মক্কায় তাঁর বিছানায় তাঁর চাদর গায়ে শুয়ে তাকে হত্যায় পাঠানো ঘাতকদের জন্য অপেক্ষা করতে পারতো।একদিকে তিনি তাঁর অবর্তমানে আলীর রাজনৈতিক ভবিষ্যত নিয়ে তিনি গভীর উদ্বিগ্নবোধ করেন অন্যদিকে তাঁর নীতিবোধ অন্যান্য ঘনিস্ট আত্মীয়, সহযোদ্ধাদের প্রতি দায়িত্ব সচেতনতা আর ইসলামের ভবিষ্যতের জন্য নিরাপদ আশ্রয় নির্ধারন করে যাওয়ার গুরুদায়িত্ব তার উপরে ছিলো। উত্তরাধিকার প্রশ্নে হঠাৎ কোনো সিদ্ধান্তে আসলে ঐক্য নস্টের আশংকাও হয়তো তার মধ্যে ছিলো।

তাই কিছুটা কৌশলগত কারনে কিছুটা হয়তো সিদ্ধান্তহীনতা থেকেই তিনি আলীকে ফরমান জারি করার মাধ্যমে সরাসরি উত্তরাধিকারি ঘোষনা করতে চাইছিলেন না। তিনি এও জানতেন তাঁর অবর্তমানে আলী ও তার বংশধরদেরকে আরবের হিংস্রতম গোত্র ভিত্তিক রাজনীতির মুখোমুখি হতে হবে এবং তাঁর দুনিয়া বদলের সাথে সাথেই তাঁর ও আলীর চারপাশে থাকা এতো দিনের প্রিয় মানুষগুলোর চেহারা খুব দ্রুতই বদলে যাবে। তাই তিনি প্রিয় কন্যার জামাতা আলীর প্রতি একটা ফেভার করার সিদ্ধান্ত নিলেন এবং -"আমি যার মাওলা আলীও তার মাওলা”-উল্লেখ করে আলীকে “মাওলা” হিসেবে ঘোষনা দিলেন।

গাদিরে খুমে আলিকে “মাওলা” হিসেবে উল্লেখ করার আগে নবীর লাইফে অতীতের অনেক ক্রিটিক্যাল পরিস্থিতির মতই আল্লাহ মহানবীর সহায় হলেন এবং “মহানবীর সাহাবিদের উদ্দেশ্যে আরো কিছু জিনিস বলা বাকি আছে”- এমন ধারনা দিয়ে আয়াত নাজিল করলেন। :P – খুম জলাশয়ের ধারে ভাষনের আগে আয়াত নাজিল হলো - "হে রসূল, পৌঁছে দিন আপনার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে। আর যদি আপনি এরূপ না করেন, তবে আপনি তাঁর পয়গাম কিছুই পৌঁছালেন না। আল্লাহ আপনাকে মানুষের কাছ থেকে রক্ষা করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ কাফেরদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না।"- সুরা মায়েদাহর ৬৭ নং আয়াত। যা কোরান শরীফের দ্বিতীয় শেষ আয়াত। অর্থাৎ আল্লাহ বলছেন যে নবী তার সাহাবিদের কাছে এখনো সব পয়গাম পৌছে দেন নাই। এবং আয়াত নাজিলের পরেই তিনি ভাষনে আলীকে “মাওলা” হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন। মহানবী সম্ভবত তার প্রিয় সাহাবিগন, অন্যান্য সম্ভাব্য উত্তরাধিকার প্রত্যাশীগন ও নতুন ইসলামি সমাজকে আলীর নেতৃত্বের ব্যাপারে মানসিক প্রস্তুতি নেয়ার কিছুটা সুযোগ দিলেন।

এতো কথা বলার উদ্দেশ্য হচ্ছে যেই প্রেক্ষাপটকে কেন্দ্র করে আলীর সমর্থনে মহানবীর কর্তৃক আলীকে “মাওলা”হিসেবে উল্লেখ করা হয়- সেই প্রেক্ষাপটকে সনাক্ত করা। সংকটের শুরু হয়েছিলো আলীর প্রাশাসনিক ও সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহনের এখতিয়া বা ক্ষমতাকে কেন্দ্র করে যা একপর্যায়ে আলীর হুকুমের প্রতি অন্যদের আনুগত্যের পরীক্ষায় পরিনত হয়। অর্থাৎ ইসলামি প্রশাসনে আলী একক ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার এখতিয়র রাখেন কিনা এবং মুসলিম বাহিনীতে আলীর হুকুম অবশ্যপালনীয় কিনা এসব প্রশ্নে ফায়সালা আনাই ছিলো গাদিরে খুমের উদ্দেশ্য। সমস্ত ঘটনাটা আলীর কিছু প্রাশাসনিক কার্যকলাপকে কেন্দ্র করে আবর্তিত।
ইসলামের বাহিনীতে ইসলামের প্রশাসনে আলীর সিদ্ধান্ত আলীর ও আলীর অথরিটি নিয়ে উত্থাপিত প্রশ্নের সমাধান দিতেই যেহেতু মহানবীর এ ঘোষনা, তাই মহানবীর ভাষনে ব্যাবহ্নত “মাওলা” শব্দটার অর্থ বন্ধু হওয়ার চাইতে প্রশাসক/নেতা/অথরিটি/অভিভাবক ইত্যাদি হওয়ার সম্ভাবনাই সবচেয়ে বেশি।

মহানবী (সাঃ) এর এই ঘোষণার পরপর হযরত ওমর এসে হযরত আলী কে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, “ হে আলী ইবনে আবু তালিব। আজ থেকে আপনি আমার এবং সকল মুসলিম নর-নারীর মাওলা হয়ে গেলেন।” হযরত আবু বকর (রাঃ)ও অনুরূপ অভিনন্দন জানান। (সূত্রঃ তাফসীরে তাবারী, খঃ ৩, পৃঃ ৪২৮, ইমাম আবু হামেদ গায্যালী সিররুল আলামীন, পৃঃ ৬, মাসনদে ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল, খঃ ৪, পৃঃ ২৮১)।হযরত ওমর এবং হযরত আলী বা নবীর ইনার সার্কেলের সবাই সবার দীর্ঘদিনের সহকর্মী বন্ধু সহযোদ্ধা। তাই নবী যদি “মাওলা” শব্দের দ্বারা “বন্ধু” বুঝিয়েই থাকেন সেক্ষেত্রে তাদের আলাদা করে আলীকে অভিনন্দন জানানোর প্রয়োজন হওয়ার কথা না।

হযরত ওমর প্রাথামিক ভাবে আলীর প্রাশাসনিক নেতৃত্বের ব্যাপারটা মেনে নিলেও পরবর্তিতে নবীকে তাঁর মৃত্যুশয্যায় ওয়াসিয়ত লিখে যেতে একপ্রকার বাধাই প্রদান করেন(সুত্রঃ সহি বুখারি, ১ম খন্ড অধ্যায় ৩,হাদিস ১১৫)। দিন শেষে রাজনীতিতে উত্তরাধিকার নির্ধারন করে যাওয়া যেহেতু অত্যন্ত কৌশলগত সিদ্ধান্ত তাই প্রফেট হয়তো শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চাইছিলেন। তবে শেষের দিকে ইসলাম ও ইসলামের ভবিষ্যত নির্ধারনের ক্ষমতা ইসলামের নবীর হাতে কতটা ছিলো এ নিয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। কারন গাদিরে খুমের ঘটনার পর ইসলামের নবী খুব বেশি দিন সুস্থ থাকতে পারেন নি।

নবীর অসুস্থ অবস্থায় তাঁর দুই স্ত্রী আবু বকর কন্যা আয়েশা রাঃ ও ওমর কন্যা বিবি হাফসা রাঃ সবসময় তাঁর পাশে থাকতেন। শেষ দিকে নবী এমন কি তার প্রিয় স্ত্রীদেরকেও আর বিশ্বাস করতে পারছিলেন না। তিনি এমন কি বিবি আয়েশার হাতেও খাদ্য ঔষধ গ্রহনে অনাগ্রহী ছিলেন যা বিবি আয়েশা বর্নিত হাদিসে উঠে এসেছে। ইবনে আব্বাস ব্যাতিত অন্য সবাইকে তিনি খাবার ও ঔষধ প্রদান করতে নিষেধ করে দেন।

সারা জীবন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা আর বৈরিতার সাথে লড়াই করে আরবের কঠোর পরিবেশে টিকে থাকা মানুষটা তাঁর শেষ সময়ে এসে কি আপনজনদের হাতে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার আশংকায় ভুগছিলেন ? সমগ্র জীবনে নিজের রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে অসাধারন সব স্ট্র্যাটেজিক সিদ্ধান্ত নিলেও উত্তরাধিকারি নির্ধারনে তিনি সম্ভবত সিদ্ধান্তহীনতায় ভোগেন এবং যখন সিদ্ধান্তে আসেন ততক্ষনে মক্কার কুটিল রাজনীতি ও আজরাইল আঃ তাঁর শিওরে পৌছে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১:০৬
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জাতির জনক কে? একক পরিচয় বনাম বহুত্বের বাস্তবতা

লিখেছেন মুনতাসির, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৮:২৪

বাঙালি জাতির জনক কে, এই প্রশ্নটি শুনতে সোজা হলেও এর উত্তর ভীষণ জটিল। বাংলাদেশে জাতির জনক ধারণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, যেখানে একজন ব্যক্তিত্বকে জাতির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়। তবে পশ্চিমবঙ্গের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মপোলব্ধি......

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:৫১

আত্মপোলব্ধি......

একটা বয়স পর্যন্ত অনিশ্চয়তার পর মানুষ তার জীবন সম্পর্কে মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে যায়। এই বয়সটা হল পঁয়ত্রিশ এর আশেপাশে। মানব জন্মের সবকিছু যে অর্থহীন এবং সস্তা সেটা বোঝার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি !

লিখেছেন হাসানুর, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:৩২



হঠাৎ ইলিশ মাছ খেতে ইচ্ছে হল । সাথে সাথে জিভে ..জল... চলে এল । তার জন্য একটু সময়ের প্রয়োজন, এই ফাঁকে আমার জীবন থেকে নেয়া ইলিশ মাছের কিছু স্মৃতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসছে এটা ১০০% নিশ্চিত। আমেরিকায় ইতিহাসে মহিলা প্রেসিডেন্ট হয়নি আর হবেও না।

লিখেছেন তানভির জুমার, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:৩৩

আর এস এস সহ উগ্র হিন্দুদের লিখে দেওয়া কথা টুইট করেছে ট্রাম্প। হিন্দুদের ভোট-আর ইন্ডিয়ান লবিংএর জন্য ট্রাম্পের এই টুইট। যার সাথে সত্যতার কোন মিল নেই। ট্রাম্প আগেরবার ক্ষমতায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প জিতলে কঠোর মূল্য দিতে হবে ইউসুফ সরকারকে?

লিখেছেন রাজীব, ০২ রা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ১০:৪২

ডোনাল্ড ট্রাম্পের এক মন্তব্যে বাংলাদেশের মিডিয়ায় ঝড় উঠেছে। ৫ তারিখের নির্বাচনে ট্রাম্প জিতলে আরেকবার বাংলাদেশের মিষ্টির দোকান খালি হবে।

আমি এর পক্ষে বিপক্ষে কিছু না বললেও ডায়বেটিসের রুগী হিসেবে আমি সবসময়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×