চিটাগাং কলোনী, করাচী, পাকিস্তান।
স্থানীয় সময়ঃ দুপুর ২.৩০
ফোঁরৎ ফোঁরৎ কোওওও শব্দ তুলে বায়ু ত্যাগ করলেন তিনি ।বিমর্ষ বদনে বিড়বিড় করে বললেন ধুর আবারো অজু নস্ট হইলো। গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে ফোন পাওয়ার পর পরই সারা রাত পেটে প্রচন্ড গ্যাস আর এসিডিটি। বায়ু ছাড়লেই বেশুমার দুর্গন্ধ। ফজরের নামাজের সময়েও এইকারনে নামাজ নাস্তি। জামাতে দাঁড়ানো অবস্থায় অজু নস্ট।তার চাইতেও বড় লজ্জার ব্যাপার নামাজ শেষে খোদাদাদ খান তাহাকে সবার সামনেই পুনরায় অজু সহকারে ফজরে সালাত আদায় করতে বলেছেন এবং সাথে জামাতে দাঁড়ানো অবস্থায় বায়ু নির্গত হওয়া সত্যেও সালাতের জামাত থেকে বেড়িয়ে না গিয়ে তিনি কত বড় ভয়ানক গুনাহর কাজ করেছেন তার এক মস্ত ফিরিস্তী দিয়ে দুনিয়ার হাদিস মাসালা মাসায়েল শোনায় দিলেন। বড়ই শর্মিন্দার ব্যাপার।
বাঙ্গালী পেটে কাবলি রুটি বোধহয় আর সহ্য হচ্ছে না।তিনি মনে মনে ভাবলেন আরে বেটা এই আমি তোগো লাইগ্যাইতো ৪০ সাল পেহেলে আরো কত বড় বড় আর ভয়ংকর সব গুনাহার কাজ করছিলাম আর আইজক্যা তোরা আমারে নমাজে জামাত থে বাইর হইয়া যাইতে কস!! নামাজে খাড়াইয়া পাদের গুনাহ কত প্রকার ও কি কি তার বয়ান দেস!! গুনার কি দেখছোস তোরা?
দুঃখ এক্টাই চাইলেও সব বাত মুখ ফুইট্যা সবতেরে কওন যায় না।সবর করতে হয়। সবর ছাড়া গতি নাই। ওয়াতা ওয়া সাওবিল হাক্কে ওয়াতাওয়া সাওবিছ ছাবরে।আর এখন যা দশা তাতে পুরাই সবরের মৌছুম। আল্লায় বিচার করবো ইন্ডিয়ার দালাল জালেম বাকশালের।
এইতো কিছুক্ষন আগে বিবিসি বাংলার দুপুরের বুলেটিন শোনার পর তিনি আর জোহরের নামাজ জামাতে গিয়ে আদায়ের ঝুঁকি নেন নাই। ঘরেই পড়ছেন, তাতেও জোহরের নামাজ তিনবার পড়তে হইলো। তিনি মনে মনে জামাতে দাঁড়ানো অবস্থায় অজু ছুটে গেলে আর কি কি মাসালা আছে তা মনে করার চেস্টা করলেন খানিকক্ষন । পুরানো অভ্যেস আর কি। এককালে আলহাজ্ব ফালু সাহেবের টিভিতে নিজেই বেবাক মাইনষ্যেরে মাসাল মাসায়েল শেখাইতেন। ধর্মভীরু হাজারো মানুষ তার প্রোগ্রামে চিঠিতে, টেলিফোনে আর ই-মেইলে জীবনযাপনের পথে কতশত দ্বীনই সমস্যার কথা তুলে ধরতো, নিজেদের পরিবারের গোপন কথা জানায়ে হক পন্থায় তার কাছে সমস্যার আসানের দিক নির্দেশনা চাইতো।
আধুনিক চলচিত্র থেকে ইসলামের কালচার, ইসলামি রাজনীতি থেকে যুদ্ধের ময়দান , ইসলামি অর্থনীতি থেকে ইসলামি সমাজের আরকান আহাকাম, সদকায়ে জারিয়ার মাসালা থেকে বিগ বেং আর রাস্টনীতি থেকে বিশ্বপরিমন্ডলে ইসলাম... কোরান হাদিসের আলোকে কত হাজার মানুষরেই না তিনি সেরাতুল মুস্তাকিমের দিকে ধাবিত করাইছেন। ইসলামী বিধান অনুযায়ি জীবন পরিচালনার এক জীবন্ত নিদর্শন রুপে ছিলেন তিনি মানুষের দিলে। অত জনপ্রিয়তা বাংলাদেশে হানিফ সংকেত নামের ঐ ব্যাটা ভাঁড়ও পায় নাই। হেন্দু রাস্ট্র হইলে দেবতাটেবতাও বনে যেতে পারতেন।
টুপি খুলে মাথা ও দাড়িতে হাত বুলাতে বুলাতে ভাবলেন জীবন ঘনিস্ট ইসলামি অনুস্টানের বিষয়ে ইস্ট পাকিস্তানের ইতিহাসে মাশাআল্লা তিনিই প্রথম সেলিব্রিটি , এতে কোনই সন্দেহ নাই। তিনিই সে দেশে লাইভ মেহেফিলে ইসলামী সাওয়াল জবাবের পথিকৃত ।
কি দারুন ভাবেই না নিজের বীভৎস অতীত ঢেকে রেখে টিভি সেলিব্রিটি বনে গিয়েছিলেন তিনি।
তবে আল্লাহ পাকের খেলা বোঝা খুবোই কঠিন।
উত্তরা ৭ নম্বরের মত অভিজাত পাড়ায় অফিস, রীতিমত বিদেশী ফরেনার আর এইড এজেন্সী, দুতাবাসের আফিসারদের সাথে উঠাবসার সেইসব দিন। ইংলিশে বাতচিত করতে করতে জঙ্গী সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে জোট সরকারে থাকা ইসলামীপন্থীদের অবস্থান ব্যাখ্যা, মসজিদ মিশন আর “আপনার জিজ্ঞাসা” পত্রিকার ফান্ডের ধর্মপ্রান জনতার সদকায়ে জারিয়ার পয়সায় হিল্লি দিল্লি ভ্রমন! জোট আমলে তামাম ঢাকা শহরের তার মত ধর্মীয় শাহরুখ খান আর কয়টা ছিলো? বাড়ির মা বোনেরা পর্যন্ত তার মুখে দুইটা ইসলাম উপদেশ নিষেধ শোনার প্রতীক্ষায় বিকালে টিভির সামনে বসে থাকতো। আহারে কিসব দিন গেছে! ভাবলেই আফসোস লাগে,
বিরাট আফসোস!! আহহ!! বড়ই অস্থির সময়!!!
ছুটা কাজের ছেলেটা কাবাব আর তন্দুর রেখে গেছে বেশ কিছুক্ষন আগে।আজকে ছুয়ে দেখতেও ইচ্ছা করছে না। নিজের সেই সেলিব্রিটি ইমেজ আর মুগ্ধ শ্রোতা দর্শকদের কথা আবার ভাবলেন তিনি। আচ্ছা সেইসব মুগ্ধ দর্শক শ্রোতাদের আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কি কেউ আছেন যাকে তিনি ৪১ বছর আগে ওয়াতান এ পাকিস্তানের নামে জবাই করেছিলেন?
কি জানি থাকতেও পারে!! বাংলাদেশ খুবই ছোট দেশ।
১৯৭১ এ তার কীর্তিকলাপ আর আজকের ফাঁসির রায় শোনার পর সেইসব ধর্মভীরু মানুষেরা কি এখন নিজেদের প্রশ্ন করছেন, যে প্রতি সপ্তাহে জুম্মার নামাজে যাওয়ার আগে আমরা টিভিতে বাচ্চু রাজাকারের লাইভ প্রোগ্রাম দেখতাম, ফোন করে তার কাছে দ্বীন ইসলাম জানতে চাইতাম? হক পথে থেকে স্রস্টার অনুগ্রহ লাভের তরিকা শিখতে চাইতাম?
একজন জালিম, ধর্ষক খুনি জাতিদ্রোহী লুটতরাজের কাছে নিজেদের সমস্ত বিশ্বাস সপে দিয়ে আধ্যাতিকতার পথ অনুসন্ধান করতাম? আমরা একজন বাচ্চু রাজাকারকে মাথায় তুলে কোথায় বসাইছিলাম?
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে একাকীই বললেন... আল্লাহ হু আলম বিসসাওয়াহ...পরবর্তি কর্মপন্থা নিয়ে আজকেই মেজর মেহেবুব রাজা সাহেবের সাথে বাত করতে হবে।