২০৫৫ সাল, রোদ্রকরজ্জোল ঢাকা।
বাংলার ভার্চ্যুয়াল জগতের প্রখ্যাত মহামানব "ফেসবুক নবী"র মহা প্রয়ান ঘটিয়াছে। ফেসবুকে বানী প্রচার করিতে করিতেই এই মহামানব পঞ্চত্ব প্রাপ্ত হইয়াছেন বলিয়া খবরে প্রকাশ।
চন্দ্রিমা উদ্যান, ইডেন কলেজ, শামছুন্নাহার হল,প্রাইভেট বিশ্ব বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসসমুহ, ধানমন্ডির অলিতে গলিতে দিশাহারা ভার্যাগন প্রবল শোকে মুহ্যমান। শোকের শেলে বিদ্ধ হইয়া “উদার মানবতাবাদ” এই কিছুক্ষন পুর্বে মুর্ছা গেলো। বেদনার্ত অনুগামিরা মুমুর্ষ “নারীবাদ”কে ধরাধরি করিয়া পিজি হাসপাতালের আইসিইউ’তে ভর্তি করাইয়া একে একে শাহাবাগ এর সম্মুখে জড় হইতেছেন। জান কবজ অন্তে সয়ং আজ্রাইল আঃ তাহার অনুভুতি ব্যাক্ত করিয়া ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়াছেন। চতুর্দিকে কানাঘুষা চলিতেছে নোবেল পীস কমিটির পক্ষ হইতে নরওয়ের যুবরাজ জানাজায় শরিক হইবেন। (অবশ্যই মরনোত্তর নুবেল পদক ও সার্টিফিকেট সহ) । জানাজায় ইমামতি করিবেন সয়ং সমাজতন্ত্র। সব কয়টি দুতাবাস ও মন্ত্রনালয়ের পক্ষ হইতে ফেসবুকে শোক পাতা খোলা হইয়াছে। শোকাবিভুত জনতার শোক প্রকাশের জন্য সেখানে কেবল মাত্র “লাইক” অপশনটি রাখা হইলো। ভক্তকুলের একপক্ষ কহিলো লাশ বিজ্ঞানাগারে দান করিয়া দেয়া হউক তাহাতে মানবজাতির অশেষ উপকার,অন্যপক্ষ কহিলো নাআআ, ইহা জনসম্মুখে গোর দেয়া হউক সেখানে আমরা সৌধ গড়িব,তীর্থ করিব।
ভক্তকুলে বাদনুবাদ বিসম্বাদ শেষে শাহবাগের গোলচত্বরে নামাজে জানাজান্তে শোকার্ত ভক্তকুল লাশের খাটিয়া বহন করিতে করিতে আজিমপুর গোরস্থানের দিকে চলিলো। তাহাদের শোকার্ত কন্ঠের “ইয়া আমি,ইয়া আমি ... সবার চেয়ে লাইক দামি”
মাতাম ধ্বনিতে দিকবিদিক প্রকম্পিত... ঢাকার রাজপথের কানে তালা লাগিয়া যাওয়ার যোগার।২০১২ সালে হুমায়ুনের মৃত্যুর দীর্ঘ দিন পর আজ এইরুপ বাঁধ ভাঙ্গা জনজোয়র ঢাকাবাসি প্রত্যক্ষ করিলো।
এই ২০৫৫ সালে ক্লাইমেট চেঞ্জের ধকল হইতে বাঁচিয়া যাওয়া গোটাকয় কাক ও নেড়ি কুকুর যাও নগরের রাজপথে টহল দিয়া ঈশ্বর নাম জপিত তাহারাও ভাবিলো এইবেলা বুঝি মহা প্লাবনে দুনিয়া ছাড়খাড় হইয়া গেলো। তো যাই হোক ঢাকা প্রদক্ষিন শেষে শোক মিছিল খাটিয়া ধরিয়া হাঁচড়াইয়া পাচড়াইয়া আমিজপুর গোরস্থানে আসিয়া উপনিত হইলো। গোর খুড়া শেষ ... গোরের সম্মুখে একখানি ছোট টুলের উপরে মিনি স্পিকার সংযুক্ত ল্যাপ্টপে রিচার্ড ডকিন্সের বক্তৃতা প্রস্তুত। অন্তিম সংস্কারের সময় তাহা বাজাইতে বাজাইতে মৃত দেহ কবরে নামানো হইবে। ফেসবুক নবীর রাখিয়া যাওয়া ওসিয়তনামা অনুযায়ি মুর্দার এর সহিত মডেম যুক্ত একটি ল্যাপ্টও দেয়া হইয়াছে। যাহাতে পরকালের জীবনে উপনিত হইয়াও সেখান হইতে পর্যাপ্ত লাইক সংগ্রহ করিতে পারেন।
দাফন সমাপ্ত। চৌক্ষু মুছিতে মুছিতে ভক্ত কুল ফিরিয়া চলিতেছে। এমতাবস্থায় রেকর্ডিং ডিভাইস ও জালালি মুগুর পিঠে বাঁধিয়া মুনকার-নাকির আজাবের ফিরিশতা "সুজা আক্রা" সর্পর পিঠে চড়িয়া কব্বরে পার্শে অবতরন করিলেন। জনতার ৪০ কদম যাওয়া অপেক্ষায় মুনকার ফেরেশ্তা একশলা স্টেট এক্সপ্রেস ধরাইয়া নাকিরের দিকে বাড়াইয়া কহিলেন ওস্তাদ টাইন্যা দেন। সিগারেটে সুখটান দিয়া গোলাপ পানিতে কুলিকুচি শেষে ২ জন প্রস্তুতি নিলেন কব্বরে প্রবেশের।
কিন্তু একি!! কবরের সুপার ন্যাচারাল দুয়ার খুলিতেছে না... মুনকার আবার তাহার জালালী কার্ড পাঞ্চ করিলেন কিন্তু দুয়ার খুলিলো না।আবার ,আবার, আবার... কিন্তু দরওয়াজা নিশ্চুপ। নাকির ফেরেশ্তা কিঞ্চিত বিরক্ত হইয়া কহিলেন ধুর বাল তুই সর আমাকে দেখিতে দে...
নাকির ফেরেশ্তা কবরে কান পাতিলেন... কববরের ভিতর হইতে প্রতিধ্বনি ভাসিয়া আসিলো আমি... আমি ...আমি ...আমি ...আমি...আমিইইইইই!!
থতমত খাইয়া নাকির ফেরেশতা পালটা উচ্চ স্বরে শুধাইলেন কিডা আফনে?
প্রতি উত্তরে আবার সেই গর্বিত হুংকার আমি আমি আমি আমিইইইই......!!!!!!
২টা হার্ট বিট মিস করিয়া নাকির ফেরেশ্তা ছাপার অযোগ্য ভাষায় বিরবির করিয়া উঠিয়া বলিলেন এই **** ** দিগদারি আইটেম কইথিকা আইলো!! ।
পেছন হইতে মুনকার কহিলো, ভচ হুশিয়ার... এইডা ফেসবুক নবী আচিপ উল জ্ঞানেস্টাইনের কবর, আদব তমিজ রাখেন...।
নাকির ফেরেশ্তাঃ কস্কি মুমিন !!! (মনে মনে কহিলেন সবুর কর, একবার ঢুইক্কা লই ... তোর ইয়ে দিয়া টেরাক ভর্তি কার্ল মার্ক্স সমগ্র ভরমু)
এইবার নাকির ফেরেশ্তা কাতর কন্ঠে পুনরায় শুধাইলেন মুর্দার ভাই ছাব দরজা খুলেন... সাওয়াল জবাব হইবো... । মুর্দার নিরুত্তর।
নাকির মরিয়া হইয়া কহিয়া উঠিলেন..ইয়া “পেয়ারে পায়গাম্বার, ফেসবুক ঈ তাজাল্লি, হাবিবে ডিবি, “আমিশ্বর আমি” আমরা আপনার সহবত প্রত্যাশি নাদান ফেরেশ্তাদ্বয়... “দৈনিক বেহেস্তবাসী” হইতে আপনার সাক্ষাতকার লইতে আসিয়াছি।
“তুলনামুলক জ্ঞানতত্ব ” নাম দিয়া আপনার সুখোপাঠ্য বিশ্লেষন প্রতিদিন “দৈনিক বেহেস্তবাসী”র পরথম পাতায় ছাপা করিবো...এইবেলা দিওয়ার উন্মোচন করিয়া কবরে ঢুকিতে দিন জনাব।
গহীন কব্বর হইতে আওয়াজ ভাসিয়া আসিলো
“ওরে হীন কাপুরুষ আগে মাউস টিপিয়া লাইক দে... তারপর ঢুকিবি...”