অনেক রাত। কী লিখব এত রাতে? আমি কেমন আছি, তা? মন্দ আছি। খুব ত্যক্ত আছি। মূল কারণ, লিখি না। প্রবন্ধ-কাব্য তো দূরে, দিনলিপিটাই লেখার সময় পাই না। সময় যে কীভাবে যায়, কোথায় যায় — সেই হিসেবেরও সময় পাই না। দেশে কত কী ঘটছে। আভাসে টের পাই, কিন্তু কিছুই ঠিক জানি না। পত্রিকা না পড়লে জানব কী করে!
কাজেই দেশের কথা বাদ। নিজের কথা বলি। বর্তমানে আমি বাস করছি বিবিধ যন্ত্রণার মধ্যে। বিকল যন্ত্রের যন্ত্রণা, নকল মানুষের যন্ত্রণা, সকল ঝামেলার যন্ত্রণা!
একটা প্রাগৈতিহাসিক ল্যাপটপ ব্যবহার করি। তার জন্যে মাসে মাসে অ্যাডাপ্টর কিনতে হয়। শেষটা পুড়ল পরশু। বুদ্ধি বের করলাম, এবার আর কিনব না। পোড়াটা সারাব। গেলাম সারাইখানায়। জিন্দাবাজারের সমবায় ভবনে। ঢুকে দেখি এলাহি কারবার! হেন যন্ত্র নেই যা এরা ঠিক করতে পারে না। এটা তো নস্যি! ঠিকই ঠিক হলো। চারশো সত্তুর টাকা দিলাম। রাতটা ভালোই চলল। কিন্তু সকালে পটাশ্! শুধু যে অ্যাডাপ্টর গেল তা নয়, সঙ্গে গেল ল্যাপটপের ব্যাটারিও। আগে ব্যাকআপ দিত এক ঘণ্টা, এখন দেয় আধা সেকেন্ড। অবশেষে নতুন আরেকটা কিনলাম। টাকা বাঁচাতে চেয়েছিলাম। বাঁচানো গেল না। উল্টো গচ্চা গেল!
আজ দুপুরে জুমা পড়ে বেরুচ্ছি। দেখি এক ডিমঅলা। ঝুড়িভর্তি ইয়া বড় বড় হংসডিম্ব। এক কুড়ি মোতাবেক পাঁচ হালি কিনলাম। ও বলছিল এগুলি বাড়ির ডিম, খামারের নয়। তাই ভেবেছিলাম নকল হবে না। ঘরে এনে দেখি সব নকল। হংসের ঔরসজাত নয়, কারখানার রাসায়নিক যন্ত্রে উৎপাদিত!
মাছে-মাংসে-ফলে-দুধে-শবজিতে ফরমালিন। কীসে ফরমালিন নেই, তা বুঝব কীভাবে? না, আমাকে শিগগির শহর ছাড়তে হবে। নকল মানুষ নকল জিনিসের শহরে আর নয়। খুব দূরের কোনো অজপাড়াগাঁয়ে চলে যাব, যেখানে ধ্বংস-সভ্যতার ধোঁয়া পৌঁছুয় নি। সবচেয়ে ভালো হয় বেহেশতে যেতে পারলে। সেখানে রসায়নের দূষণ নেই। দুধের নদী, মধুর নদী আছে। ঝাঁকে ঝাঁকে হুর আছে। কিন্তু মুশকিল হলো বেহেশত আমার পছন্দ নয়। দুধ জীবের ওলানেই মানায়, ভূমিখাদে নয়। মধু মানায় মৌচাকে। বেহেশতে আমাকে অভ্যস্ত হতে হবে অদ্ভুত শৃঙ্খলায়, যেখানে সবকিছুই মূল্যহীন। আর হুরেরা তো মানুষ নয়, অমানুষ। অমানুষের সঙ্গে ভালোবাসাবাসির প্রশ্নই ওঠে না! সোজা 'গেট লস্ট' বলে বের করে দেব। না, হয় নি। 'গেট লস্ট' নয়, 'সুহকান সুহকান'!