somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পরিবারতন্ত্র দেশে দেশে

২৭ শে এপ্রিল, ২০১০ রাত ১১:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশ
শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে হত্যার শিকার হওয়ার পর আওয়ামী লীগে নেতৃত্বের সংকট সৃষ্টি হয়। এ অবস্থায় তৎকালীন নেতৃত্ব ১৯৮১ সালে বিপর্যস্ত আওয়ামী লীগের হাল ধরার জন্য নিয়ে আসেন মুজিব কন্যা শেখ হাসিনাকে। সেই থেকে আওয়ামী রাজনীতিতে পরিবারতন্ত্রের যাত্রা শুরু। গত ৩৬ বছরের ইতিহাসে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে বিভিন্ন সময় শেখ পরিবারের অনেকেই প্রথম কাতারে থেকেই দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন বঙ্গবন্ধুর ভাই শেখ নাসেরের ছেলে শেখ হেলাল, বড় বোনের জামাই আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও তার ছেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ, শেখ হাসিনার ফুফাতো ভাই যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও মুজিব বাহিনীর সেকেন্ড ইন কমান্ড শেখ ফজলুল হক মনির ভাই শেখ ফজলুল করিম সেলিম।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে বেগম খালেদা জিয়ার আগমন ঘটে ১৯৮১ সালের ৩০ মে জিয়াউর রহমানের মৃত্যুর পর। বিএনপির নেতাকর্মীদের দাবির মুখে ১৯৮৩ সালে প্রথমে তাকে দলের ভাইস চেয়ারপারসন এবং পরবর্তীতে ১৯৮৪ সালে চেয়ারপারসনের পদে আসীন করা হয়। তাঁর বড় ছেলে তারেক রহমান, ছোট ভাই মেজর (অব) সাঈদ ইস্কান্দার, বড় বোনের ছেলে প্রকৌশলী শাহরিন ইসলাম তুহিন এবং বোন প্রয়াত সাবেক মন্ত্রী খুরশীদ জাহান হক রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হন।
ভারত
উপমহাদেশের যে দেশটিতে পরিবারতন্ত্র সবচেয়ে শক্তিশালীভাবে প্রোথিত সেটি হলো ভারত। ভারতের ক্ষমতা ও রাজনীতিতে ১৯৪৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত নেহেরু পরিবার ক্ষমতার কেন্দ্র হয়ে আছে। জওহরলাল নেহেরু ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৪৭ সালে। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত ১৭ বছর তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। নেহেরু কন্যা ইন্দিরা গান্ধী ভারতের তথ্য ও বেতারমন্ত্রী হন ১৯৬৪ সালে। পরবর্তীতে প্রধানমন্ত্রী হন ১৯৬৬ সালে। ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮০ সালে পুনরায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন তিনি। ইন্দিরা গান্ধী তাঁর উত্তরসুরি হিসেবে পুত্র সঞ্জয় গান্ধীকে প্রস্তুত করতে থাকেন। কিন্তু ১৯৮০ সালে বিমান দুর্ঘটনায় সঞ্জয় মারা যাবার পর ইন্দিরা গান্ধীর সঞ্জয় প্রকল্প মাঠে মারা যায়। একই বছর মায়ের ইচ্ছা পূরণের জন্য নম্র-ভদ্র রাজিব গান্ধী রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। নিজের বডিগার্ডের হাতে ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যুর পর দলের দাবির মুখে কংগ্রেসের দায়িত্ব নেন রাজিন গান্ধী। এরই ধারাবাহিকতায় নেহেরু পরিবারের তৃতীয় প্রজন্ম রাজিব গান্ধী ভারতের প্রধানমন্ত্রী হন। এতে ভারতে পরিবারতন্ত্রের ভীত আরও মজবুত হয়। রাজিন গান্ধী নিহত হওয়ার পর তাঁর বিদেশী স্ত্রী সোনিয়া গান্ধীর আগমন ঘটে। তিনি কংগ্রেসের প্রধান হন। কংগ্রেস বিজয়ী হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব না নিলেও তিনি সরকারি দলের সর্বোচ্চ নেত্রীর আসনে আসীন থাকেন। পরিবরতন্ত্র ভারতীয় গণতন্ত্রকে ক্ষতিগ্রস্ত নয় বরং শক্তিশালী ও সামরিক শাসনের হাত থেকে বাঁচিয়েছে বলেও অনেকে মনে করেন।

শ্রীলংকা
বছরের পর বছর বন্দরনায়েক পরিবারকে কেন্দ্র করে শ্রীলংকার রাজনীতি আবর্তিত হয়েছে। সলেমান ডায়েস বন্দরনায়েক ১৯৫৯ সালে প্রধানমন্ত্রীর (১৯৫৬-১৯৫৯) দায়িত্বে থাকাকালে আততায়ীর হাতে খুন হন। তাঁর স্ত্রী শ্রীমাভো বন্দরনায়েক ১৯৬০ সালে শ্রীলংকার প্রধানমন্ত্রী হন। সেই যে প্রধানমন্ত্রী হওয়া সে থেকে তিন মেয়াদ কাল (১৯৬০-১৯৬৫, ১৯৭০-১৯৭৭ ও ১৯৯৪-২০০০) মোট ১৮ বছর সরকারপ্রধান ও একই সংগে শ্রীলংকার ফ্রিডম পার্টির নেতৃত্বের দায়িত্ব পালন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী ও প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গা (১৯৯৪-২০০৫), পর্যটনমন্ত্রী অনুঢ়া বন্দরনায়েকে এ দু’ রাজনীতিকসহ বন্দরনায়েক বংশ ১৯৫৬ সাল থেকে (কিছু বিরতিসহ) ২০০৫ সাল পর্যন্ত দেশ শাসন করেন।

পাকিস্তান
উপমহাদেশের পরিবারতান্ত্রিক রাজনীতির ভীত পাকিস্তানে সে অর্থে খুব মজবুত নয়। জুলফিকার আলী ভুট্টো ১৯৫৮ সাল থেকে১৯৬৬ সাল পর্যন্ত মন্ত্রী, ১৯৭১ থেকে ১৯৭৩ পর্যন্ত পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এবং ১৯৭৩-৭৭ সালে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাঁর কন্যা বেনজির ভুট্টো ১৯৮৮-১৯৯৩ ও ১৯৯৩-১৯৯৬ এ দুই মেয়াদে প্র্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ভুট্টোর স্ত্রী বেগম নুসরাত ভুট্টো জাতীয় পরিষদ সদস্যা ছিলেন এবং বেনজির ভুট্টোর মন্ত্রিসভায় উপপ্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন।
মালদ্বীপ
সার্কের সাগর বিধৌত দ্বীপদেশ মালদ্বীপ। বর্তমান প্রেসিডেন্ট মামুন আবদুল গাইয়ুম ১৯৭৮ সাল থেকে প্রতিদ্বন্দ্বীহীন নির্বাচন অনুষ্ঠান করে ক্ষমতায় আছেন। তাঁর বিরুদ্ধেও আছে পরিবারতন্ত্রের অভিযোগ। স্ত্রী নাসরিনা গাইয়ুমকে মন্ত্রীর পদমর্যাদা এবং নিজের ভাই ও স্ত্রীর ভাইদের দেশের বড় বড় পদে নিয়োগ দিয়েছেন তিনি।

আমেরিকা
শক্তিশালী গণতন্ত্রের দাবীদার দেশ আমেরিকা। কিন্তু সেখানেও পরিবারতন্ত্র আছে। বর্তমান প্রেসিডেন্টের পিতা সিনিয়র বুশ ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৩ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট এবং দাদা প্রেসকট বুশ ১৯৫৩ সাল থেকে ১৯৬৩ সাল পর্যন্ত আমেরিকার সিনেটর ছিলেন। ১৯৯৯ থেকে ২০০৭ এর জানুয়ারি পর্যন্ত ফ্লোরিডার গভর্নর ছিলেন বুশের ভাই জেব বুশ। বুশের আগেই দুই মেয়াদে আট বছর আমেরিকার প্রেসিডেন্ট ছিলেন বিল ক্লিনটন। আরকানসাসের গভর্নর ছিলেন প্রায় ১২ বছর। এরই ধারাবাহিকতায় ক্লিনটনের সহধর্মিনী হিলারি ২০০১ সাল থেকে নিউইয়র্কের সিনেটর। আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হওয়ার জোর তৎপরতা চালাচ্ছেন তিনি।

আর্জেন্টিনা
আর্জেন্টিনা ফুটবলের জন্য বিখ্যাত হলেও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং তা পারিবারিক ঘেরাটোপের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার জন্যও কম পরিচিত নয়। সেনানায়ক থেকে দুই মেয়াদে (১৯৪৬-১৯৫৫ ও ১৯৭৩-১৯৭৪) প্রেসিডেন্ট হন জুয়ান পেরন। তৃতীয় স্ত্রী ইসাবেলকে তাঁর শেষ ক্ষমতাবলে ভাইস পেসিডেন্ট করেছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ইসাবেল আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট হন।

ফিলিপাইন
ফিলিপাইনের বিরোধী দলের নেতা বেনিনো অ্যাকুইনো নির্বাসন থেকে স্বদেশে ফেরত এসেই বিমানবন্দরে আততায়ীর হাতে নিহত হলে এশিয়ার প্রথম মহিলা প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন তাঁর বিধবা স্ত্রী কোরাজন অ্যাকুইনো (১৯৮৬-১৯৯২)। ফিলিপাইনের বর্তমান প্রেসিডেন্ট (২০০৮ থেকে-) গ্লোরিয়া ম্যাকাপাগাল অরোয়ার পিতা দিওসদাদো ম্যাকাপাগাল প্রথমে ভাইস প্রেসিডেন্ট (১৯৫৭-১৯৬১) এবং পরে প্রেসিডেন্ট (১৯৬১-১৯৬৫) ছিলেন।
ইন্দোনেশিয়া
ইন্দোনেশিয়ার স্থপতি ও প্রথম প্রেসিডেন্ট ড. সুকর্নোর (১৯৪৫-১৯৬৭) কন্যা মেঘবতি সুকর্নোপুত্রীও ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন (২০০১-২০০৪)। এছাড়া ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, স্পেন, বেলজিয়াম, ডেনমার্ক, নরওয়ে, সুইডেন, মোনাকো, জাপান, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়াসহ পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশের সংবিধানে নিয়মতান্ত্রিক রাজতন্ত্রের বিধান থাকায় সে দেশগুলোতে পরিবারতন্ত্র আইনসম্মতভাবেই অব্যাহত আছে। এর বাইরে পূর্ণ রাজতন্ত্রের মাধ্যমে চূড়ান্ত পরিবারতন্ত্র কায়েম আছে সৌদি আরব, কুয়েত, সংযুক্ত আরব আমিরাত, জর্ডান, ব্র“নাই, মরক্কোসহ আরো কয়েকটি দেশে।


সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে এপ্রিল, ২০১০ সকাল ৮:৩১
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অন্তর্বর্তী সরকারে উপদেষ্টা নিয়োগ কারা দেয় ?

লিখেছেন মেঠোপথ২৩, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

বৈষম্যবিরোধি আন্দোলনের সফল পরিসমাপ্তির পর আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কেরা ডক্টর ইউনুসকে দেশের ক্ষমতা গ্রহন করার আহবান সেই শহীদ মিনার থেকেই জানিয়েছিল। ডক্টর ইউনুস প্রথমে অরাজি হলেও পরে ছাত্রদের হাজারো অনুরোধের মুখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গণমুখী একটি চাওয়া

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১০:২০


মানুষের মুখে হাসি ফুটুক,
আঁধার মুছে আলোর ছোঁয়া,
ক্লান্তিহীন পথ চলুক,
নতুন স্বপ্ন আনবে জোড়া।

দিনবদলের শপথ নিয়ে,
কাঁধে কাঁধ মিলে কাজ করে যাই,
নদীর স্রোতে ভেসে ভেসে
একটি স্রোতে মিলিয়ে যাই।

সবার তরে সমান বিচার,
ধনীর দুঃখীর,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলার একমাত্র অভিশপ্ত রাজনৈতিক দল আওয়ামীলীগ

লিখেছেন জ্যাকেল , ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সকাল ১১:৫০

২৩শে জুন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব জনাব সিরাজ উদ দৌলা ব্রিটিশদের কাছ হেরে যান কেবলমাত্র মীরজাফর, জগৎশেট, রাজভল্লভ, ঘষেটিদের কারণে। বাংলার ইতিহাসে এই দিনটি একটি অভিশপ্ত দিন। এর পর থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের গ্রামের বিয়ের বর দেখা

লিখেছেন প্রামানিক, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ২:১৩


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

একদিন পরেই শুক্রবার। সকালেই বাবাকে ঐ বাড়ির ঘরবর (অর্থাৎ বর দেখা অনুষ্ঠানকে আঞ্চলিক ভাষায় ঘরবর বলে) উপলক্ষে ডাকা হয়েছে। বাবা সকালে গিয়ে বর দেখা উপলক্ষ্যে কি কি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওবায়েদুল কাদের কি মির্জা ফখরুলের বাসায় আছেন?

লিখেছেন রাজীব, ১৩ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৮

"পালাবো না, পালিয়ে কোথায় যাবো? দরকার হলে মির্জা ফখরুলের বাসায় আশ্রয় নেবো। কি ফখরুল সাহেব, আশ্রয় দেবেন না?" ওবায়েদুল কাদের একটি জনসভায় এই কথাগুলো বলেছিলেন। ৫ই আগষ্টের পরে উনি মির্জা... ...বাকিটুকু পড়ুন

×