সারা বিশ্বে আজকের দিনের প্রধান আলোচ্য বিষয় করোনা ভাইরাস- কভিড ১৯। এই ভাইরাসে সংক্রমে সারা বিশ্ব আতঙ্কিত, ভীত। মানুষ মৃত্যুর আতঙ্কে ভোগছে। কেননা এই ভাইরাস অতিসাধারণভাবে সংক্রমিত। আক্রান্ত রোগী নিজের অজান্তেই আরেকজন কে সংক্রমিত করতে পারে। আমি যখন এই লেখাটি লিখছি তখন সারা বিশ্বের ২০২ দেশ বা অঞ্চলে ছড়িয়ে গেছে। মোট আক্রান্ত বিশ্বব্যাপী ১০,৮১,২৮৭ জন। এই পর্যন্ত মৃর্ত্যুর ৫৮১৩৭ জন। সর্বোচ্চ আক্রান্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ২৬৬২৫৯ জন আর সর্বোচ্চ মৃর্ত্যুর সংখ্যা ইতালীতে ১৪৬৮১ জন।
সারা বিশ্বের উন্নত বা উন্নয়নশীন বা হতদরিদ্র দেশ সবাই নিজেদের মত করে প্রতিরোধ মূলক ব্যবস্থা নিয়েছে বা নিচ্ছে। যেহেতু এই রোগের কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা নেই। একমাত্র এই রোগের প্রাদুর্ভাব কমানোই একমাত্র পন্থা। কিন্তু এই মুহুর্থ যারা আক্রান্ত তাদের চিকিৎসা করানোর এক বিশাল চ্যালেঞ্জ। কেননা করোনা অতি-উচ্চমাত্রার এক সংক্রে ব্যাধি। ফলে যারা এই রোগের চিকিৎসার সাথে জড়িত তাদের ঝুঁকি আরো বেশী।ডাক্তার, নার্স, ক্লিলার, হাসপাতালে কর্মরত অন্যান্য কর্মকর্তা,কর্মচারিরা অনেক বেশী চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে। সারা বিশ্বে ইতঃমধ্যে অনেক ডাক্তার, সেবিকা মারা গিয়েছেন। এই চিকিৎসা কর্মযজ্ঞের সাথে যারা জড়িত তাদের৭০% বেশী নারী। সারা বিশ্বের গড় হিসাব অনুযায়ী এই তথ্য দেন ওয়াল্ড ইকোনোমিক ফোরাম। যেখানে সারা বিশ্বের ২৫% নারী নের্তৃত্ব দিচ্ছে এই খাতে। সারা বিশ্বের স্বাস্থ্যসেবা খাতের হিসাব একেবারেই নারীদের হাতে। বাহ্যত করোনা ভাইরাস মোকাবেলায় নারীদের ভূমিকা বেশী। চীনে ৯০% নার্স হচ্ছে নারী। অধিকন্তু চীনে
স্বাস্থ্যকর্মীরা কভিড -১৯ ( COVID -19) ক্ষেত্রে প্রাদুর্ভাবের প্রথম সারীতে আছে। সংক্রমনের ঝুঁকি, প্যাথোজেনের সংস্পর্শ, দীর্ঘ কর্মঘণ্টা, মানসিক সংকট, পেশাগত সমস্যা, কলংক, শারীরিক মানসিক সহিংসতা অন্তর্ভুক্ত। এই রকম পরিস্থিতি নিয়ে সারা বিশ্বের এই সংকটময় মুহুর্তে নীরবে নারীরা তাদের পেশাগত কাজ করে যাচ্ছে। যেখানে নারীরা সারা বিশ্বেই কমবেশী নির্যাতনের শিকার। অনেক নারী ধর্ষণের শিকার হন। তাদের কর্মস্থলে নানা ধরনের নির্যাতনের হন। পথেঘাটে অনেক বিব্রত হন। সেই নারী চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে জীবনের চরম চ্যালেঞ্জ নিচ্ছে। জীবনের ঝুঁকি নিচ্ছে। পুরুষ বা নারী হিসাবে আলাদা করছে না। আবার এই নারীরা সারা বিশ্বে কোন পারিশ্রমিক ছাড়াই গৃহস্থালী সামলাচ্ছে। বাচ্চাদের সেবা করা। যত্ন নেয়া। অসুস্থ্য স্বামী,ভাই বোন, মা বাবা, সন্তানদের দেখভালের কাজ করছে।
সারাবিশ্ব ব্যাপী স্কুল বন্ধ। এই স্কুল বন্ধ থাকার কারণে গৃহে মা’দের উপ বাড়তি চাপ পড়বে। কেননা গৃহস্থালী কাজের পাশাপাশি স্কুলগামি ছেলেমেয়ের সামলানো, তাদের কে আবদ্ধ ঘরে মানসিকভাবে চাঙ্গা রাখার কাজটি মা’দের উপরই বেশী। তাছাড়া কর্মহীন স্বামীর হাতে নির্যাতনের শিকার হওয়া, গড় হিসাবে সারা বিশ্বে যারা চাকরি হারাবে তাদের অধিকাংশই হবে নারী। সেবা খাত যেমন, বিমান, হোটেল, রেস্টুরন্ট, খুচরা বিক্রেতার যেখানেই ব্যবসা বন্ধ, মেয়েদের চাকরি চলে যাবে। বেকারত্বের হার মেয়েদের মধ্যে বেশী হবে।
আমরা একজন সেবিকার কথা জানি, ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, যিনি জীবনের ঝুঁকি যুদ্ধাহত সৈনিকদের সেবা করে খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। যার পরিচিতি ছিল লেডি উইথ দ্য ল্যাম্প (Lady with the lamp)। সেবিকার পেশাকে যিনি সারা বিশ্বের কাছে মর্যাদাবান করেছিলেন। The Life of Florence Nightingale, গ্রন্থে ই টি কোক, টাইম পত্রিকার রেফারেন্স দিয়ে লিখেছেন, She is a "ministering angel" without any exaggeration in these hospitals, and as her slender form glides quietly along each corridor, every poor fellow's face softens with gratitude at the sight of her. When all the medical officers have retired for the night and silence and darkness have settled down upon those miles of prostrate sick, she may be observed alone, with a little lamp in her hand, making her solitary rounds.
আজকের মহামারি করোনার সেবা দিতে গিয়ে সারা বিশ্ব হাজারো সেবিকা এই দায়িত্ব পালন করছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যারা ফ্রন্টলাইনে কাজ করছে –ডাক্তার, সেবিকা, প্যাথোলজিস্ট, হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার সাথে জড়িত সকলের প্রতি শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। নারী কর্মিদের প্রতি বিশেষ শ্রদ্ধা রইল। যারা দুই ফ্রন্টের যোদ্ধা। ঘর সামালাচ্ছে। মানুষের জীবনে আশার আলো দেখাচ্ছে। হাসপাতালের বিছানায় মৃর্ত্যর সাথে পাঞ্জা লড়া রুগির সেবা দিচ্ছে। সে জানে এই করোনা তাকেও আক্রমণ করতে পারে। ইতিমধ্যে চিকিৎসার সাথে অনেক ডাক্তার, নার্স প্রাণ হারাচ্ছে। অন্যের প্রাণ বাঁচাতে গিয়ে নিজের জীবন দেয়া কে আর কি বলা যেতে পারে। নভেল পেশা। নভেল করোনার বিরুদ্ধে সারা বিশ্বের নোবেল পেশার ফ্রন্ট লাইনার্সদের জন্য রইল শ্রদ্ধা, ভালোবাসা আর লাল সালাম।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০২০ দুপুর ২:০৩