ধর্ম যার যার উৎসব ও তার তার।
পশ্চিম বঙ্গ এবং বাংলাদেশী হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের কাছে অন্যান্য ধর্মীয় উৎসবের চেয়ে দূর্গা পূজা সবচেয়ে বড় উৎসব। এই দূর্গা পূজাকে সামনে রেখে তথাকথিত সুশীল সমাজের বাজারে " ধর্ম যার যার উৎসব সবার" কথাটা বেশি বেশি শোনা যায়। একজন মুসলিম হিসেবে এই বাক্যটি বিশ্বাস করা কতটুকু যুক্তিযুক্ত বা ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক তা আলোচনা করার চেষ্টা করব।
মূলতঃ এই শ্লোগানটি এসেছে ধর্ম নিরপেক্ষতা থেকে।
ধর্মনিরপেক্ষতাবাদ (Secularism) বলতে কিছু নির্দিষ্ট প্রথা বা প্রতিষ্ঠানকে ধর্ম বা ধর্মীয় রীতিনীতির বাইরে থেকে পরিচালনা করাকে বোঝানো হয়। “ধর্মনিরপেক্ষতা বা সেকুলারিজম” শব্দটি ১৮৫১ সালে ব্রিটিশ লেখক জর্জ জ্যাকব প্রথম ব্যবহার করেন। জর্জ জ্যাকব ধর্মের কোনো রকম সমালোচনা ছাড়া, সমাজে শৃঙ্খলা আনয়নের জন্য তার এই Secularism এর ধারণা প্রকাশ করেন।
সোজা কথায় বললে বলা যায়, তিনি বলতে চেয়েছেন ধর্ম দেশে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে।
মোদ্দাকথা ধর্মনিরপেক্ষতা হল দেশের সরকার কোন ধর্মকে রিপ্রেজেন্ট করতে পারবে না আর ধর্মীয় নীতি অনুসারে দেশ পরিচালনা করতে পারবে না। অর্থাৎ, "ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার।"
তাহলে এই ধর্মনিরপেক্ষতা যদি কোন ব্যক্তি নিজের জীবনে প্রয়োগ করতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই ধর্মহীন মানে সেকুলার হতে হবে।
সেক্যুলার রাষ্ট্রে রাষ্ট্রকে বড় করে দেখা হয়। ধর্ম সেখানে নগন্য। ঠিক তদ্রুপ, "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" শ্লোগানটির মধ্যে উৎসবকে প্রাধান্য দিয়ে ধর্মকে নগন্য করা হয়েছে। যেমন ধরুন, কারো বাপ চাচারা পাঁচ ভাই। প্রয়োজনের তাগিদে সবাই পৃথক হয়ে গেছেন। কিন্তু ঐক্য ঠিক রাখার জন্য একজন বললেন,"সংসার যার যার পরিবার সবার।" এখানে সংসারের তুলনায় পরিবারকে, পরিবারের সম্মানকে বড় করে দেখা হয়েছে। আমরা যদি "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" কথাটির দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব এখানে ধর্ম শব্দটা খুবই ক্ষুদ্র এবং উৎসব শব্দটা বৃহৎ। তদ্রূপ যারা "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" বলেন তাদের কাছে ও ধর্ম খুবই নগণ্য উৎসবটা অনেক বড়। ধর্ম তাদের কাছে মুখ্য নয় মুখ্য হচ্ছে উৎসব। আরেকটু সামনে এগিয়ে বললে বলা যায় ধর্ম তাদের কাছে যতটুকু না মূল্যবান তার থেকে বেশি মূল্যবান দেশের মানুষের ঐক্য। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে দেশের জনগণের মাঝে ঐক্য ঠিক রাখার জন্য কি ধর্ম ত্যাগ করতে হবে? তা কখনো একজন ধার্মিকের কাম্য হতে পারে না। ধর্ম ছাড়াও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার অনেক উপাদান আমাদের রয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ। দেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ। আরো বিভিন্ন চরিত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ। যাকে উদ্দেশ্য করে উৎসব তাকে ছোট করে উৎসবকে বড় করে দেখা কতটুকু যুক্তিযুক্ত তা অবশ্যই ভাববার বিষয়।
তথাকথিত সুশীল সমাজের যারা "ধর্ম যার যার উৎসব সবার" কথায় বিশ্বাসী তারাই আবার দ্বিমত পোষণ করবে যদি বলা হয় " দল যার যার উৎসব সবার।" ধরুন, আমাদের দেশের প্রধান দুটি রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি। পনেরই আগস্টে শোক দিবস পালন আর জন্ম দিন পালনের কথা বাদই দিলাম। ধরুন, বিএনপির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীতে আওয়ামী লীগের কোন নেতা বা কর্মী পল্টনে বিএনপির অফিসে গিয়ে আনন্দ উৎসবে যোগ দিয়ে রং মেখে সঙ সেজে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে গিয়ে বললেন, "দল যার যার উৎসব সবার"। উক্ত নেতা/ কর্মীর রঙ মাখা চেহারা সুরত দেখে আর তার মুখে সম্প্রীতির শ্লোগান শুনে প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী কি আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে তাকে পুষ্প মাল্যে বরণ করে নিবেন? তাকে কি আমরণ আওয়ামীলীগের আমরণ সদস্য পদ প্রদান করবেন? নাকি চিরদিনের জন্যে নির্বাসনে যাওয়ার নির্দেশ দিবেন? আবার ধরুন, বিএনপির কোন নেতা যদি আওয়ামী লীগের ক্ষমতা আরোহণ পূর্তি উৎসবে গিয়ে রঙিন পানির পেয়ালায় চুমুক দিয়ে একটু বেসামাল হয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার কাছে গিয়ে বললেন, আপনি কারাগারে থাকায় আপনাকে নিয়ে যেতে পারলাম বলে অন্তরে খুবই কষ্ট পাচ্ছি। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী নিশ্চয় খুশিতে আত্মহারা হয়ে তাকে "সম্প্রীতির সেতু বন্ধক" উপাধিতে ভূষিত করবেন? নিশ্চয় না। অবশ্যই করুন পরিণতি তার জন্য অপেক্ষা করবে। এবার ভাবুন,এই সব সুশীল সমাজের লোকেরা উৎসবকে টিকিয়ে রাখতে ধর্মকে ছোট করতে পিছপা হয় না। কিন্তু দলীয় স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে উৎসবকে বড় করে দেখে না।যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে এদের কাছে ধর্মীয় মতাদর্শ থেকে দলীয় মতাদর্শ অনেক বড়। দলীয় স্বার্থের কাছে ধর্মীয় স্বার্থ খুবই নগণ্য।
যে কোন উৎসবের পিছনে উপলক্ষ্য থাকে। উপলক্ষ্য ছাড়া কোন উৎসব হয়না। উপলক্ষ্যকে ঘিরেই উৎসবের উদ্ভব। কোন উৎসবে যোগদান করা মানেই উৎসবের আয়োজকের উদ্দেশ্য কে মেনে নিয়ে তার সাথে একাত্বতা ঘোষণা করা। ধরুন, আপনার প্রতিবেশি তার ছেলের বিয়েতে আপনাকে দাওয়াত করল। তার উদ্দেশ্য আপনি দাওয়াতে অংশগ্রহণ করে তার সন্তানের জন্য দোয়া করবেন। আপনি যখন তার দাওয়াতে অংশগ্রহণ করবেন তখন অবশ্যই তার ছেলের বিবাহকে মেনে নিয়েই অংশগ্রহণ করতে হবে। অন্য ভাবে বলতে গেলে আপনি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়েই তার ছেলের বিবাহ মেনে নিলেন। যেহেতু ধর্মীয় উৎসব গুলো ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর ভিত্তি করে উদযাপন হয়ে থাকে। তাই বলা যায় ধর্মীয় উৎসব গুলো ধর্মীয় বিশ্বাসের প্রতিফলন। তাই স্বীকার করি বা না করি কোন ধর্মীয় উৎসবে যোগদান করা মানে সেই ধর্মের অনুসারীদের মতাদর্শের সাথে একাত্বতা প্রকাশ করা।
এবার আসুন, দেখি একজন মুসলিম ভিন্ন ধর্মের উৎসবে যোগদান করার মাধ্যমে তার অবস্থান কোথায় গিয়ে দাঁড়ায়। হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব মূলতঃ মূর্তি পূজাকে উপলক্ষ করে। দূর্গা পূজা বলুন আর কালি পূজা বলুন সবই মূর্তি পূজা। তারা তাদের দেবতাদের তুষ্ট করার মানসে এই পূজা অর্চনার আয়োজন করে থাকে। তারা তাদের পাপ মোচন এবং সার্বিক সফলতার মানস কামনায় এই সব পূজা উদযাপন করে থাকে। পক্ষান্তরে আমরা যদি মুসলিমদের ধর্ম বিশ্বাসের দিকে তাকাই তাহলে এর বিপরীত চিত্র দেখতে পাব। ইসলাম ধর্ম মতে মূর্তি পূজা শিরক। ইসলাম ধর্মে শিরক হচ্ছে সবচেয়ে বড় পাপ। আগুন যেমন সব কিছু পুড়ে ছারখার করে দেয়। ঠিক তেমনি শিরক একজন মুমিনের সব আমল শেষ করে দেয়।
আসুন দেখি, মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন শিরক সম্পর্কে কি বলেছেন-
وَإِذْ وَاعَدْنَا مُوسَىٰ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ثُمَّ اتَّخَذْتُمُ الْعِجْلَ مِنْ بَعْدِهِ وَأَنْتُمْ ظَالِمُونَ
Al-Baqarah-51
আর যখন আমি মূসার সাথে ওয়াদা করেছি চল্লিশ রাত্রির অতঃপর তোমরা গোবৎস বানিয়ে নিয়েছ মূসার অনুপস্থিতিতে। বস্তুতঃ তোমরা ছিলে যালেম।
سَنُلْقِي فِي قُلُوبِ الَّذِينَ كَفَرُوا الرُّعْبَ بِمَا أَشْرَكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا ۖ وَمَأْوَاهُمُ النَّارُ ۚ وَبِئْسَ مَثْوَى الظَّالِمِي
Al Imran-151
খুব শীঘ্রই আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করবো। কারণ, ওরা আল্লাহর সাথে অংশীদার সাব্যস্ত করে যে সম্পর্কে কোন সনদ অবতীর্ণ করা হয়নি। আর ওদের ঠিকানা হলো দোযখের আগুন। বস্তুতঃ জালেমদের ঠিকানা অত্যন্ত নিকৃষ্ট।
إِنَّ اللَّهَ لَا يَغْفِرُ أَنْ يُشْرَكَ بِهِ وَيَغْفِرُ مَا دُونَ ذَٰلِكَ لِمَنْ يَشَاءُ ۚ وَمَنْ يُشْرِكْ بِاللَّهِ فَقَدِ افْتَرَىٰ إِثْمًا عَظِيمً
An-Nisa-48
নিঃসন্দেহে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে লোক তাঁর সাথে শরীক করে। তিনি ক্ষমা করেন এর নিম্ন পর্যায়ের পাপ, যার জন্য তিনি ইচ্ছা করেন। আর যে লোক অংশীদার সাব্যস্ত করল আল্লাহর সাথে, সে যেন অপবাদ আরোপ করল।
لَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُوا نَصِيبًا مِنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا هَٰؤُلَاءِ أَهْدَىٰ مِنَ الَّذِينَ آمَنُوا سَبِيلًا
An-Nisa-51
তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা মান্য করে প্রতিমা ও শয়তানকে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, এরা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে।
أَمِ اتَّخَذُوا آلِهَةً مِنَ الْأَرْضِ هُمْ يُنْشِرُونَ
أَ
Al-Anbiyah-21
তারা কি মৃত্তিকা দ্বারা তৈরী উপাস্য গ্রহণ করেছে, যে তারা তাদেরকে জীবিত করবে?
أَمِ اتَّخَذُوا مِنْ دُونِهِ آلِهَةً ۖ قُلْ هَاتُوا بُرْهَانَكُمْ ۖ هَٰذَا ذِكْرُ مَنْ مَعِيَ وَذِكْرُ مَنْ قَبْلِي ۗ بَلْ أَكْثَرُهُمْ لَا يَعْلَمُونَ الْحَقَّ ۖ فَهُمْ مُعْرِضُونَ
Al-Anbiyah-24
তারা কি আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য গ্রহণ করেছে? বলুন, তোমরা তোমাদের প্রমাণ আন। এটাই আমার সঙ্গীদের কথা এবং এটাই আমার পুর্ববর্তীদের কথা। বরং তাদের অধিকাংশই সত্য জানে না; অতএব তারা টালবাহানা করে।
وَمَنْ يَقُلْ مِنْهُمْ إِنِّي إِلَٰهٌ مِنْ دُونِهِ فَذَٰلِكَ نَجْزِيهِ جَهَنَّمَ ۚ كَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ
Al-Anbiyah-29
তাদের মধ্যে যে বলে যে, তিনি ব্যতীত আমিই উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নামের শাস্তি দেব। আমি জালেমদেরকে এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি।
قَالُوا سُبْحَانَكَ أَنْتَ وَلِيُّنَا مِنْ دُونِهِمْ ۖ بَلْ كَانُوا يَعْبُدُونَ الْجِنَّ ۖ أَكْثَرُهُمْ بِهِمْ مُؤْمِنُونَ
AS-Saba-41
ফেরেশতারা বলবে, আপনি পবিত্র, আমরা আপনার পক্ষে, তাদের পক্ষে নই, বরং তারা জিনদের পূজা করত। তাদের অধিকাংশই শয়তানে বিশ্বাসী।
قُلْ أَرَأَيْتُمْ شُرَكَاءَكُمُ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَرُونِي مَاذَا خَلَقُوا مِنَ الْأَرْضِ أَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِي السَّمَاوَاتِ أَمْ آتَيْنَاهُمْ كِتَابًا فَهُمْ عَلَىٰ بَيِّنَتٍ مِنْهُ ۚ بَلْ إِنْ يَعِدُ الظَّالِمُونَ بَعْضُهُمْ بَعْضًا إِلَّا غُرُورًا
Al-Fatir-40
বলুন, তোমরা কি তোমাদের সে শরীকদের কথা ভেবে দেখেছ, যাদেরকে আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা ডাক? তারা পৃথিবীতে কিছু সৃষ্টি করে থাকলে আমাকে দেখাও। না আসমান সৃষ্টিতে তাদের কোন অংশ আছে, না আমি তাদেরকে কোন কিতাব দিয়েছি যে, তারা তার দলীলের উপর কায়েম রয়েছে, বরং জালেমরা একে অপরকে কেবল প্রতারণামূলক ওয়াদা দিয়ে থাকে।
نْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ ۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ
Al-Fatir-14
তোমরা তাদেরকে ডাকলে তারা তোমাদের সে ডাক শুনে না। শুনলেও তোমাদের ডাকে সাড়া দেয় না। কেয়ামতের দিন তারা তোমাদের শেরক অস্বীকার করবে। বস্তুতঃ আল্লাহর ন্যায় তোমাকে কেউ অবহিত করতে পারবে না।
إِنْ تَدْعُوهُمْ لَا يَسْمَعُوا دُعَاءَكُمْ وَلَوْ سَمِعُوا مَا اسْتَجَابُوا لَكُمْ ۖ وَيَوْمَ الْقِيَامَةِ يَكْفُرُونَ بِشِرْكِكُمْ ۚ وَلَا يُنَبِّئُكَ مِثْلُ خَبِيرٍ
وَاتَّخَذُوا مِنْ دُونِ اللَّهِ آلِهَةً لَعَلَّهُمْ يُنْصَرُونَ
Ya-Sin-74
তারা আল্লাহর পরিবর্তে অনেক উপাস্য গ্রহণ করেছে যাতে তারা সাহায্যপ্রাপ্ত হতে পারে।
لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَهُمْ وَهُمْ لَهُمْ جُنْدٌ مُحْضَرُونَ
Ya-Sin-75
অথচ এসব উপাস্য তাদেরকে সাহায্য করতে সক্ষম হবে না এবং এগুলো তাদের বাহিনী রূপে ধৃত হয়ে আসবে।
قُلْ أَرَأَيْتُمْ مَا تَدْعُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ أَرُونِي مَاذَا خَلَقُوا مِنَ الْأَرْضِ أَمْ لَهُمْ شِرْكٌ فِي السَّمَاوَاتِ ۖ ائْتُونِي بِكِتَابٍ مِنْ قَبْلِ هَٰذَا أَوْ أَثَارَةٍ مِنْ عِلْمٍ إِنْ كُنْتُمْ صَادِقِينَ
Al-Ahqaf-4
বলুন, তোমরা আল্লাহ ব্যতীত যাদের পূজা কর, তাদের বিষয়ে ভেবে দেখেছ কি? দেখাও আমাকে তারা পৃথিবীতে কি সৃষ্টি করেছে? অথবা নভোমন্ডল সৃজনে তাদের কি কোন অংশ আছে? এর পূর্ববর্তী কোন কিতাব অথবা পরস্পরাগত কোন জ্ঞান আমার কাছে উপস্থিত কর, যদি তোমরা সত্যবাদী হও।
وَمَنْ أَضَلُّ مِمَّنْ يَدْعُو مِنْ دُونِ اللَّهِ مَنْ لَا يَسْتَجِيبُ لَهُ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ وَهُمْ عَنْ دُعَائِهِمْ غَافِلُونَ
Al-Ahqaf-5
যে ব্যক্তি আল্লাহর পরিবর্তে এমন বস্তুর পূজা করে, যে কেয়ামত পর্যন্তও তার ডাকে সাড়া দেবে না, তার চেয়ে অধিক পথভ্রষ্ট আর কে? তারা তো তাদের পুজা সম্পর্কেও বেখবর।
মুসলিম হওয়ার প্রধান শর্ত হল আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস করা। অর্থাৎ
১. সৃষ্টি, রাজত্ব, কর্তৃত্ব্ব পরিচালনায় আল্লাহকে এক হিসেবে বিশ্বাস করা।
আল্লাহ পবিত্র কোরআনে বলছেনঃ
يَا أَيُّهَا النَّاسُ اذْكُرُوا نِعْمَةَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ هَلْ مِنْ خَالِقٍ غَيْرُ اللَّهِ يَرْزُقُكُمْ مِنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ فَأَنَّى تُؤْفَكُونَ ﴿٣﴾
হে মানুষ! তোমরা তোমাদের প্রতিপালক আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর। আল্লাহ ছাড়া কি কোন স্রষ্টা আছে, যে তোমাদেরকে আসমানসমূহ ও যমীন থেকে রিযিক দান করে? আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য ইলাহ নেই। কাজেই তোমাদেরকে কোথায় ফিরানো হচ্ছে? [সূরা ফাতিরঃ ৩]
قُلْ مَنْ بِيَدِهِ مَلَكُوتُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ يُجِيرُ وَلَا يُجَارُ عَلَيْهِ إِنْ كُنْتُمْ تَعْلَمُونَ ﴿٨٨﴾
“হে নবী! আপনি জিজ্ঞাসা করুন,সব কিছুর কর্তৃত্ব কার হাতে? যিনি আশ্রয় দান করেন এবং যার উপর কোন আশ্রয়দাতা নেই।” [সূরা মু’মিনূনঃ ৮৮]।
نَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَى عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُ الْعَالَمِينَ
নিশ্চয় তোমাদের রব আল্লাহ্ যিনি আসমানসমূহ ও যমীন ছয় দিনে সৃষ্টি করেছেন ; তারপর তিনি আরশের উপর উঠেছেন। তিনিই দিনকে রাত দিয়ে ঢেকে দেন, তাদের একে অন্যকে দ্রুতগতিতে অনুসরণ করে। আর সূর্য, চাঁদ ও নক্ষত্ররাজি, যা তারই হুকুমের অনুগত, তা তিনিই সৃষ্টি করেছেন। জেনে রাখ, সৃজন ও আদেশ তারই। সৃষ্টিকুলের রব আল্লাহ কত বরকতময়।
২. আল্লাহ তা’আলা নিজেকে যে সমস্ত নামে গুনান্বিত করেছেন, সে সমস্ত নাম ও গুনাবলিতে তাঁকে এক ও অদ্বীতিয় বলে মেনে নেওয়া।
৩. ইবাদতের মালিক হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে বিশ্বাস করা। তিনি ছাড়া আর কারো জন্য ইবাদত করা যাবে না। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কাছে সিজদাহ করা যাবে না। আল্লাহ্ তা’আলা বলেনঃ
اتَّبِعُوا مَا أُنْزِلَ إِلَيْكُمْ مِنْ رَبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِنْ دُونِهِ أَوْلِيَاءَ قَلِيلًا مَا تَذَكَّرُونَ ﴿٣﴾
“তোমরা অনুসরণ কর, যা তোমাদের প্রতি পালকের পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য সাথীদের অনুসরণ করো না।” [সুরা আ’রাফঃ ৩]
وَمَنْ يَبْتَغِ غَيْرَ الْإِسْلَامِ دِينًا فَلَنْ يُقْبَلَ مِنْهُ وَهُوَ فِي الْآخِرَةِ مِنَ الْخَاسِرِينَ ﴿٨٥﴾
“যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতিগ্রস্ত।” [সুরা আলে ইমরানঃ ৮৫]
সুতরাং একথা দ্ব্যার্থহীনভাবে প্রমানিত যে মুসলমান হতে হলে আল্লাহ্ ছাড়া অন্য কারো ইবাদত করা যাবে না। শুধু তাই নয় একথা মনে প্রানে বিশ্বাস করতে হবে যে ইবাদতের মালিক একমাত্র আল্লাহ।
একজন মুসলিম যখন শিরকের উৎসবে অংশগ্রহণ করবে তখন তার ঈমান যে অবশিষ্ট থাকবে না তা উপরের মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের বাণীর দ্বারা প্রমাণিত।
একজন রাজনৈতিক দলের নেতা বা কর্মী তাদের মতাদর্শের বিপরীতে ভিন্ন মতাদর্শের উপলক্ষে আয়োজিত কোন অনুষ্ঠানে গিয়ে আনন্দ প্রকাশ করলে যেমন তাদের দলের প্রতি আনুগত্য থাকে না। তেমনি কোন মুসলিম তাওহীদের( আল্লাহর একাত্বতা) বিপরীতে কোন মতাদর্শের ওপর ভিত্তি করে অনুষ্ঠিত কোন উৎসবে যোগদান করলে ঈমান থাকতে পারে না।
ঐ সব সুশীলদের মুখে শোনা যায় অন্য ধর্মের মতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে। একজন হিন্দু যখন জানে যে, ইসলাম ধর্মে মূর্তি পূজা বড় পাপ। তখন সেই হিন্দু কী করে একজন মুসলিমকে মূর্তি পূজার উৎসবে নেমন্তন্ন করবে? নেমন্তন্ন করলে ইসলামের প্রতি সে কীভাবে শ্রদ্ধাশীল হলো? নেমন্তন্নর মাধ্যমে কি মুসলিম লোকটার বিশ্বাস তথা ইসলামকে অবজ্ঞা করা হলো না। অপর দিকে মুসলিমরা ঈদুল আজহার দিনে গরু কোরবানি করেন। এই কোরবানির মাধ্যমে মুসলিমরা আত্ম সুদ্ধ করেন। পক্ষান্তরে হিন্দুরা গরুকে মায়ের মত সম্মান করেন।তারা গরুর পূজা করেন। হিন্দুদের এই বিশ্বাস জানার পরেও একজন মুসলিম কী করে একজন হিন্দুকে তাদের ঈদুল আজহার উৎসবে দাওয়াত দিতে পারে? একজন হিন্দু বা কী করে মুসলিমদের ঐ উৎসবে যোগদান করতে পারে? আর যদি একজন মুসলিম কোন হিন্দু কে দাওয়াত দেয় তাহলে তার ধর্ম বিশ্বাসকে কীভাবে সম্মান দেখানো হলো? তার বিশ্বাসকে কি অপমান, অপদস্থ, পদদলিত করা হলো না?
একজন রাজনৈতিক নেতা বা কর্মী ভিন্ন মতাদর্শের রাজনৈতিক দলের উৎসবে অংশ গ্রহণ করার মধ্য দিয়ে যদি তার নিজস্ব দলের দলীয় বিশ্বাস নষ্ট হয়ে যায়। তবে একজন মুসলিম অন্য ধর্মের উৎসবে গিয়ে একাত্বতা প্রকাশ করে আনন্দ ফুর্তি করলে তার ঈমান কী করে অবশিষ্ট থাকে তা আমার বোধগম্য নয়।
সম্প্রীতির কথা বলে সমাজ নামক শরীরে সুন্দর সুন্দর বাণীর মোড়কে আবৃত নীরব ঘাতক ঈমান নষ্টকারী ক্যান্সার জীবাণু ঢুকিয়ে সমাজ থেকে ধর্ম মুছে ফেলার প্রয়াস ছাড়া অন্য কিছু নয়। এর জন্য শুধু মুসলিম নয় প্রত্যেক ধর্মের অনুসারীদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন।
পরিশেষে বলতে চাই,নিজ ধর্ম পালনের মাধ্যমে ভিন্ন ধর্মের উৎসবে অংশগ্রহণ না করে ও সহাবস্থান সম্ভব।যার যার ধর্ম সেই সেই পালন করবে। ধর্মে যেমন জোর জবরদস্তি চলে না তেমনি গোঁজা মিল ও চলে না। ধর্ম যেমন যার যার উৎসব ও তেমন তার তার।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ২:১৫