ল্যুভ মিউজিয়াম দেখে মুগ্ধ হয়ে রাতে ঘুমুতে পারিনি। ছবিগুলো নাড়াচাড়া করলুম। ভোরের দিকে একটু ঘুমালুম। সেদিনই যাবার কথা আইফেল টাওয়ার দেখতে যাবার তবে ক্লান্ত থাকায় আর গেলুমনা, হোটেলেই বিশ্রাম নিলুম। পরদিন সকালে ট্রনে চেপে আইফেল টাওয়ার।পানথা স্টেশন থেকে আধ ঘন্টার পথ। হপ্তার টিকিট কাটা ছিল, তাই কম পয়সাতে যাওয়া যায়। অনেকে ভাবতে পারেন ইউরোপে এসে খালি খরচের কথা কেন বলছি! আসলে আমার মত অনেকে আছে যারা ভ্রমনপিয়াসী কিন্তু ট্যাঁকে অত জোর নেই তাদের অনেক হিসেব করে ঘুরতে হয় কিনা তাই আর কি। হপ্তার টিকিট বা মাসিক টিকিটের খবর না জানলে বা ব্যবহার না করলে প্রতি ট্রিপে ৫- ৬ ইউরো খরচ করা বেশ কঠিন হতে পারে। আরেকটা কথা বলতেই হয় আমাদের দেশে পাবলিক পরিবহন একটা অদৃশ্য বস্তু যা পর্যটকরা দেখেনইনা আসলে দেখা্ই যায় না। এদেশে বাসে চড়া অসম্ভব, ট্যাক্সি কাকে বলে জানা দেখা পাওয়া মানে আকাশের চাঁদ পাওয়া, সিএনজি এক অদ্ভুত বাহন কোন নিয়ম টিয়ম নেই! মন্ত্রীরা পর্যটন নিয়ে লাখো টাকা খরচ করে শো আর মেলা করে লোক দেখানো বক্তৃতা করে, আসলে পর্যটনের প্রতি কারো কোন মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হয় না। যাক গে ধান ভানতে শিবের গীত হয়ে গেল মনে হয়!
প্রথমেই চোখে পড়ল আইফেল টাওয়ারের পাশেই নদী।
নদী দিয়ে ভেসে চলেছে সুন্দর ট্যুরিস্ট বোট, ঘন্টাখানেকের জার্ণী। সাথের বন্ধুটি বলল আগে বোটে চড়ি তারপর আইফেল টাওয়ার দেখা। লাইন ধরে বোটে টিকিট কেটে উঠলুম। তেমন আহামরি কিছুনা। তবু প্যারিসের অভিজ্ঞতা আর কি। তবে বোটে চড়তে ভাড়াটা বেশ মোটা অংকের টাকা লাগল, বিরাট লম্বা লাইন তো ছিলই।
আইফেল টাওয়ারের নাম করা হয়েছির এটার ডিজানার আর নির্মাতা গুস্তাভ আইফেল এর নামে।
১৮৮৯ সালে ৩২৪ মিটার বা ১০৬৩ ফুট উঁচু এই টাওয়ারটি বানানো হয়। এটাই দুনিয়াতে সবচাইতে বেশি দর্শকের দেখা টাওয়ার। শুধু ২০১৫ সালেই প্রায় ৬৯,০০,০০০ দর্শক এটাতে চড়েছেন।
বানাবার পর প্রায় ৪১ বছর এটা পৃথিবীর সবচাইতে উঁচু মনুষ্য নির্মিত স্হাপনা ছিল। আজও এটা ফ্রান্সের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্হাপনা। দর্শকদের জন্য তিনটা লেভেল আছে উঠবার। সিড়ি দিয়ে বা লিফট দিয়ে ওঠা যায়। তবে উঠতে পয়সা লাগে, জনপ্রতি কয়েক হাজার টাকা। ভাবলুম সবাই উঠছে আমিও উঠি। লিফটে উঠলুম আর নামলুম হেঁটে। ভালই লাগল। অনেকে উঁচুতে ইস্পাতের গায়ে হেলান দিয়ে প্যারিস দেখছে, ভাল লাগে।
ওখানে প্রচুর খাবারের দোকান আছে, নাস্তা কফি খেতে পারেন, আবার ঘুরতে পারেন। স্যুভেনিয়ার কিনতে পারেন, দাম সস্তাই। সোয়া'শ বছর হয়ে গেছে আজও আইফেল টাওয়ার দাড়িয়ে আছে সগর্বে। ওরকম একখান টাওয়ার বাংলাদেশে বানানোই সম্ভব না আর যদি বানায় তো বছর খানেকের মধ্যেই.....তদন্ত কমিটি।
সন্ধ্যের মধ্যে ঘোরা ফেরা শেষ, মনে করলুম হোটেলে ফেরৎ যাব তখন বন্ধুটি বলল রাতের আইফেল টাওয়ার এক অপুর্ব দর্শনীয় জিনিস! ভাবলুম ঠিক আছে দেখি। ওমা সন্ধ্যে হতেই আইফেল টাওয়ারের গায়ে চমৎকার সব আলো জ্বলে উঠল। চারিদিক অপুর্ব আলোয় ভরে গেল। আবার ছবি তোলা। আলোকিত আইফেল টাওয়ার দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল।
ট্রেনে চেপে হোটেলে ফিরলুম তখন বেশ রাত।
পরদিন প্যারিসের বানিজ্যিক এলাকেগুলোতে ঘোরা ফেরা করে হোটেলে ফিরলুম। মালপত্র গুছিয়ে গেলুম কাছের এক জর্ডানী হোটেলে দুপুরের খাবার খেতে। খেয়ে দেয়ে দুপুরের ট্রেনে চেপে লুজান, সুইজারল্যান্ড।