একই বিল্ডিং এ বসবাসরত দুটি পরিবারের মধ্যে কারণে অকারণে ঝগড়া হয়। ঝগড়া হয় কমন স্পেজ নিয়ে, সিঁড়ি নিয়ে, ছাদ নিয়ে, হাঁচি -কাসি, হাসি-কান্না এমনকি বাচ্চাদের খেলাধুলা নিয়ে। কখনও যৌক্তিকভাবে কখনও অন্যায়ভাবে- সম্পদশালী আর জনবলে শক্তিশালী সামাদ সাহেবের পরিবারটি সবসময়ে ছুতোয়-নাতায় দূর্বল প্রতিবেশীর ফজল মিয়ার পরিবারের উপর চড়াও ও হয়।
একদিন ঘটলো ভিন্ন এক ঘটনা।
সামাদ সাহেবের বাড়িতে এক ইয়া মস্ত! যাকে বলে 'ইয়ামাহা ফিগার'- তেমনই এক মেহমান- 'করিম বখত' এলেন। বখত সাহেব যখন সিঁড়ি ভেঙ্গে উঠতে লাগলেন সেই সময়ে ফজল মিয়ার ছোট ছেলে সুভ'র গায়ে তাঁর টাচ লাগে। তখন অবশ্য নজরে পরেনি, তবে ঘরে ঢুকে যখন সোফায় আরাম করে বসলেন করিম সাহেব খেয়াল করলেন যেখানে বাচ্চাটির সাথে টাচ লেগেছে - সেখানে তার চোঁখ ধাঁধানো বহুমূল্য ধবধবে সাদা স্যুটে কিঞ্চিত রং পরিবর্তন হয়েছে।
বিষয়টি বখত সাহেবের প্রেস্টিজ ইস্যু। তিনি তো একেবারে রেগে-মেগে আগুন! হবারই কথা। কেবল বানিয়ে ওয়াশ থেকে নামিয়ে জাস্ট এনে আজই প্রথম পরলেন, দামী স্যুট বলে কথা! এভাবে রং নস্ট হলো! সে কি মেনে নেয়া যায়! তিনি তো বলেই বসলেন, 'সামাদ ভাই, কই থাকেন? কোন এনভারনমেন্টে থাকেন, দেখেন কী সব লোকজন? এখানে কী মানুষ থাকে? কতবার বলেছি এই পরিবেশ ছাড়ুন। শুনলেন না! নিজে তো কোনো রকম কাটিয়ে দিলেন! এবার ভাস্তিদের কথাগুলো একটু ভাবুন! ওরা এখানে-এই এনভারনমেন্টে থাকলে কী কোনদিন একটা ভালো সম্বন্ধ আসবে? ভাবুন ভাই-ভাবুন! সময় থাকতে থাকতে জায়গাটা বদলান।'
সামাদ সাহেব চটে গেলেন। যাবেনই বা না কেন? বখত তার দীর্ঘ দিনের পুরনো বন্ধু। শুধু বন্ধুই কেন, সে সামাদ সাহেবের হবু বেয়াই। তাছাড়া এমন মেহমানের সঙ্গে ওই পুচকে ছোড়ার এমন অভব্য আচরণ কি হজম করা যায়- না কেউ করে? কেউ করে না। এর একটা বিহীত হওয়া চাই। আজই এবং এখনই চাই।
সামাদ সাহেব রাগ সামাল দিতে পারলেন না। দ্রুত ফ্ল্যাট থেকে বেড়িয়ে ফজল মিয়ার ফ্ল্যাটের দরজায় নক করলেন। পিছন পিছন বেড়িয়ে এলেন মিসেস সামাদ। এদিকে কিচেন রুমে মিসেস ফজলকে বিকেলের নাস্তা তৈরিতে নিজেই ছুড়ি দিয়ে সব্জি কেঁটে সাহায্য করছিলেন ফজল মিয়া; দরজায় সজোড়ে খটখটানির শব্দে কিচেনরুম থেকে দৌড়ে এলেন সামনে।
দুই পরিবার লিপ্ত হয়ে পরে তুমুল বিতর্কে, ঘরের মধ্যে থাকা বখত সাহেব এসে দেখেন ফজল মিয়া হাতে ছুড়ি নিয়ে ঝগড়া করছেন; তিনি আর নিজেকে সামাল দিতে পারলেন না। হাত থেকে ছুড়িটা টেনে নিয়েই বসিয়ে বসলেন ফজল মিয়ার পাজরে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে সিঁড়ি। ফজল মিয়া লুটিয়ে পড়লেন। ফজল মিয়া ছটফট করেছেন মৃত্যু যন্ত্রনায়।
চোঁখের সামনে স্বামীর এমন পরিনতি দেখে কে-ই বা স্বাভাবিক থাকতে পারে! কেউ পারে না। ফজল মিয়ার স্ত্রীও ঠিক থাকতে পারেন নি। তিনি অবস্থা দেখে বিলাপ করে ডাকলেন অন্য প্রতিবেশীকে -
- কামরুল ভাই, আপনার ভাইজানেরে সামাদের লোকজন মাইরা ফ্যালাইছে, আমাগো সবাইরে মাইরা ফ্যালাইবে, ভাই আপনের পায়ে পড়ি, আপনে আমাগো একটু বাঁচান।
শেষকথা: প্রতিবেশী মি. কামরুল-এর কাছে নিজেদের জীবন বাঁচানোর জন্য এই যে করুন আর্তনাদ! এর কারণ কি মিসেস ফজল আর মি. কামরুল-এর ‘অনৈতিক সম্পর্ক’? যদি তাই হয় তবে শুধু এডভোকেট রানা দাশ গুপ্ত আর অভিনেতা পিযুষ বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট প্রভাব খাটানোর কথিত আবেদন যদি সত্যও হয়; তবে শুধু তারাই সেই দোষে দুষ্ট নয়; একই দোষে দুষ্ট বিএনপি নেত্রী এবং ড. ইউনুস সহ আরো অনেকে। কারণ তারা যা করেছেন সেটা ‘ক্ষমতা’ ফিরে পাবার জন্য। আর রানা দাসগুপ্ত এবং পিযুষ বন্দোপাধ্যায় যদি করে থাকেন – তা সম্পূর্ণ মানুষের জীবন আর সম্পদের নিরাপত্তার স্বার্থে, মানবিক প্রয়োজনে।
[ছবি: ওয়েব]
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই জুন, ২০১৬ সকাল ১০:৩৩