"‘ইংলিশ’ ওর গুলে খাওয়া, ওটাই ‘ফাস্ট’ ল্যাঙ্গুয়েজ
হিন্দি সেকেন্ড, সত্যি বলছি, হিন্দিতে ওর দারুণ তেজ।
কী লাভ বলুন বাংলা প’ড়ে?
বিমান ছেড়ে ঠেলায় চড়ে?
বেঙ্গলি ‘থার্ড ল্যাঙ্গুয়েজ’ তাই, তেমন ভালোবাসে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।
বাংলা আবার ভাষা নাকি, নেই কোনও ‘চার্ম' বেঙ্গলিতে
সহজ-সরল এই কথাটা লজ্জা কীসের মেনে নিতে?
ইংলিশ ভেরি ফ্যান্টাসটিক
হিন্দি সুইট সায়েন্টিফিক
বেঙ্গলি ইজ গ্ল্যামারলেস, ওর ‘প্লেস’ এদের পাশে না
জানেন দাদা, আমার ছেলের, বাংলাটা ঠিক আসে না।"
ভবানীপ্রসাদ মজুমদারের এই লাইন কটিতেই আছে বর্তমানে বাংলাভাষার অবস্থান। অনেক লোকই আছেন যারা ভাষার শ্রেষ্ঠত্বের গুরুত্ব স্বীকার করতে চান না। অথবা বোঝেন না। মুলত ভাষার শ্রেষ্ঠত্বই বলে দেয় আমাদের সামগ্রিক অগ্রগতি। শুধু মাতৃভাষার চেতনাই একটি দেশকে সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক,
চিকিৎসার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে। কিভাবে নিচে বলছি। মাতৃভাষা ছাড়া অন্য ভাষা আমরা কেন শিখবো? প্রথম কারন হতে পারে বহির্বিশ্বের সাথে
যোগাযোগ, দ্বিতীয়ত: অন্যান্য ভাষায় যে জ্ঞান ছড়িয়ে আছে তা অর্জন করা। যেমন, ইংরেজি আমরা কেন শিখতে বাধ্য? কারণ এখানে জ্ঞানের বিশাল
ভাণ্ডার আছে সেগুলো আমাদেরকে অর্জন করতে হবে। যেমন -চিকিৎসার ক্ষেত্রে : যে ইংরেজি বইগুলোতে চিকিৎসার সমৃদ্ধ জ্ঞান আছে সেগুলো অর্জন করার জন্য ইংরেজি শিখতে হবে। সাহিত্যের ক্ষেত্রে: ইংরেজি ভাষার সমৃদ্ধ সাহিত্যের জ্ঞান অর্জন করতে ইংরেজি শেখা যায় (এক্ষেত্রে রুশ ভাষাও শেখা যায়), এভাবে আন্তর্জাতিক যোগাযোগের সার্থে, প্রযুক্তিগতজ্ঞান অর্জনে আমাদেরকে ইংরেজি শিখতেই হবে। এভাবে অন্য ভাষা শেখা সুস্থতা, এতে কোন সমস্যা নেই। কিন্তু যখন দেখি কেউ কেউ এটাকে ফ্যাশন হিসেবে নিয়ে মাতৃভাষার চেয়েও বেশি গুরুত্ব দেয়, যখন দেখি ইংলিশ মিডিয়ামের নামে এমন কিছু শিক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষা দেয়া হয় যে শিক্ষার্থী খোদ মাতৃভাষায়ই কথা বলা ভুলে যায়, যখন দেখি বিনোদন জগতে রেডিও উপস্থাপক /উপস্থাপিকা বাংলা আর ইংলিশ মিলিয়ে কথা বলে এবং বাংলাকে ইচ্ছাকৃতভাবে অনেকটা ইংরেজি ধাঁচের করে বা ভুল উচ্চারণে বলে, তখন আমি বলবো এটা চরম অসুস্থতা। এ থেকে মুক্তি চাই, প্রয়োজনে আরেকটি ভাষা আন্দোলন। রফিক, সালামের সেই ত্যাজ, সেই চেতনা কি আছে?
কিভাবে প্রতিষ্ঠিত করবো বাংলা ভাষাকে?
প্রথমত, এই সকল অসুস্থতার বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। বর্জন করতে হবে এদের।
দ্বিতীয়ত, বাংলা ভাষায় আমাদের নিজস্ব জ্ঞানের মণ্ডল তৈরি করতে হবে। সেটা চিকিৎসা হোক, প্রযুক্তি হোক সব ক্ষেত্রেই। যাতে আমরা ভিন্ন ভাষার জ্ঞানের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল না হই। শুধু ভাষার এই একটি চেতনাই পুরো জাতিকে পরিবর্বতন করে, দ্রুত উন্নতির পথে ধাবিতে করতে পারে। আর যদি তা না করতে পারি, তাহলে আমাদেরকে অন্যান্য ভাষাভাষী জাতির উপর নির্ভরশীল হয়েই থাকতে হবে।