আমি আমার টিউশনে যে ছেলেকে পড়াই তার সাড়ে চার বছর বয়সী এক ছোট বোন আছে। বছর দেড়েক আগের কথা, পিচ্চিটাকে পড়ানোর জন্য পাশের বাসা থেকে এক অনার্স পড়ুয়া মেয়ে আসত। আমার সাথে তেমন কথা না হলেও মেয়েটাকে মোটামুটি শান্তশিষ্ট ও ভালো বলে মনে হত। যাই হোক, একদিন আমি টিউশনিতে যাওয়ার পর দেখলাম আমার ছাত্রটি মন খারাপ করে আছে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম,
"কি হয়েছে?"
ও কান্না কান্না কণ্ঠে বললো, "চাচ্চু, রাশি মারা গেছে"।
হঠাৎ আতঙ্কিত হয়ে- "কোন রাশি?"
"ঐ যে ঐ দিন শাড়ী পরেছিলো, ঐ মেয়েটা"
আমার আর আর বুঝতে বাকী রইলো না, পিচ্চিটার টিচারটাই হবে। এত অল্প বয়সে কাউকে(মেয়ে) মরতে খুব কম দেখেছি।
আমি প্রচণ্ড শোকাহত হয়ে বলে উঠলাম,
"মেয়েটা খুব শান্তশিষ্ট ছিলো, আর ভালো ছিলো"
"জ্বী চাচ্চু, আমারও ওকে খুব ভালো লাগত"
একটু পর ছাত্রের মা আসলো ঘরে, আমি বললাম,
"ভাবী, রাশি নাকি মারা গেছে?"
মনে হচ্ছিল তিনি আমাকে এ খবর দিতেই এসেছিলেন। তিনিও অত্যন্ত দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বলে উঠলেন, "হ্যারে, রাশি মারা গেছে। অকালে চলে গেলো মেয়েটা। ওর ছেলেগুলোকে এখন কে দেখবে?,,,,,,,,,,, "
"ছেলেগুলো মানে? মেয়েটা বিবাহিত ছিল নাকি?"
"হ্যা, তুই জানিস না? এখন ছেলেগুলো মা হারা হয়ে গেলো"
আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলাম, মেয়েটাকে দেখতেতো বিবাহিত মনে হতোনা। আমি আমার স্টুডেন্টকে বললাম, "আদু'র টিচারের কথাইতো বলছিস, নাকী?
পিচ্ছিটা বললো, "আরে নাহ! ঐযে, সিরিয়ালের রাশি। ঐটা মারা গেছে"
প্রছণ্ড বিরক্ত হয়ে আমি বললাম, "দূর ব্যাটা! এতক্ষন বুঝি সিরিয়ালের কথা বলছিলি?"
এই চরম শোকের দিনেও আমার শোকহীন বিরক্তি দেখে ছেলেটার চেহারায়ও অসন্তোষ ফুটে উঠলো।
সেই মেয়েটি আল্লাহর রহমতে এখনো বেচে
আছে। আল্লাহ তাকে দীর্ঘজীবী করুন।