আবাসিক গলির মাথায় ১৫/২০ জনের এক জটলা থেকে হাস্যরোল আর উল্যাস ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। আমিও এগিয়ে গেলাম, দেখি স্টিলের তৈজসপাতির পশরা মেলে ২৫/২৮ বছরের এক মহিলা হকার।
ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়ছে। একজন একটা বড় থালা দেখিয়ে বলল, এটা কত?
মহিলা বল্ল-এগারোশ টাকা
- দুইটা নিলে কত?
- দুইটা নিলে ১১শ আর ১১শ মোট দেন ৮৫০। জনতার হাস্য রোলের ভিতর ক্রেতা দাম পরিশোধ করলেন।
আরেকজন বলল এই চামুচ সেটের দাম কত? মহিলা বলল – আড়াইশ টাকা।
- আর দুইটা নিলে?
- দুইটা নিলে এই হইল আড়াইশ, এই আড়াইশ মোট কত হইল?
মহিলাটার প্রতি আমার মায়া হল।হিসাব পত্র জানেনা দেখে মানুষ তাকে ঠকিয়ে পৈশাষিক আনন্দ পাচ্ছে। আমি উত্তর দিলাম- মোট হইল পাঁচশ।
মহিলা আমাকে ধমক দিয়ে বললেন- আপনি কি জানেন মিয়া? ক্রেতার দিকে তাকিয়ে বললেন- এই হইল আড়াইশ, এই আড়াইশ মোট দেন দুইশ পঞ্চাশ টাকা।
মনটা খারাপ হয়ে গেল, হতাশ হয়ে স্থান ত্যাগ করলাম।
দেখুন ভিডিওতে----
এর ঘন্টা খানেক পরে জেলা শহরের উদ্যেশ্যে বাসে উঠলাম। শেষ সময়ে গাড়িতে উঠে আমার পাশে বসলেন এক মহিলা। খেয়াল করে দেখি সেই হকার, সাথের ব্যাগ খালি।সব বিক্রি হয়ে গেছে।
বললাম- একটু আগে আপনাকে না দেখলাম থালা চামুচ বেচছেন ?
মহিলা বলল –হ্যাঁ ।
বললাম- হিসাব পত্র না শিখে আপনাকে এই ধান্দা করতে কে বলেছে? আপনিতো ঠকে ভুত হয়ে যাচ্ছেন ।
মহিলা বললেন- হ ভাইজান, মানুষ খালি ঠকায়, আপনিও আড়াইশ, আড়াইশ পাঁচশ বলে আমাকে ঠকাতে চাইছিলেন।
আমি বিব্রত।
বললাম- সব মালতো বিক্রি করে ফেলেছেন। কত টাকার মাল এনেছেন আর কত বিক্রি উঠেছে হিসাব করেছেন?
মহিলা বলল - হিসাব আপনিই করেন, সতেরশ টাকার মাল এনেছি,বিক্রি উঠেছে তেতাল্লিশ’শ টাকা। কেলাশ টেন পর্যন্ত পড়েছি।এত বোকা ভাইবেন না ভাইজান।
আমার এখন ক্রেতাদের জন্যই মায়া হচ্ছে।
সর্বশেষ এডিট : ১১ ই মার্চ, ২০১৮ দুপুর ১২:৩২