আমার জন্মের আগের কথা। আমাদের ছিল গরু মহিষের বিশাল বাথান। এক কোরবান ঈদের দিন সকালে চর থেকে পুরা বাথান বাড়ীর দরজায় আনা হল। কোন গরুটা কোরবান করা হবে সেটা দাদাজান নির্বাচন করবেন।
বাথান আর রাখালদের কাজের তদারকি করতেন আমার জেঠাতো ভাই নুর আলম (পরবর্তিতে হাজী, বর্তমানে মরহুম)। তিনি লড়াইএর জন্য একটা ষাঁড়কে খুব যত্ন করে লালন পালন করছেন। ইতিমধ্যে ষাঁড়টি দুইটা ফাইট জিতেছে। (এই সব দাদা জানে না, দাদার দৃষ্টিতে ষাঁড়ের লড়াই হারাম) পাছে দাদার নজর এই ষাঁড়ের উপর পড়ে তাই তিনি ষাঁড়টাকে দলের পিছনে রাখলেন।
এক সময় খড়মে খট খট শব্দ তুলে বাথানের সামনে হাজির হলেন রূপা গাজী ভুঁইয়ার উত্তর পুরুষ আবদুল হামিদ ভুঁইয়া। রাশভারী আর মেজাজি মানুষ তিনি, তাঁর কথার উপর কেউ কথা বলেছে এরকম নজির নাই। তিনি বাথানের উপর একপলক তাকিয়ে লড়াইয়ের ষাঁড়টাকে দেখিয়ে বললেন, এইটা হালাল করে দে।
মনে মনে হাহাকার করে উঠলেন নাতি নুর আলম। দাদাজানের কথার উপর কথা চলে না। তবুও বুকে সাহস সঞ্চয় করে গায়ে গতরে সেকেন্ড পজিশনে থাকা গরুটাকে দেখিয়ে বললেন, দাদাজি আমার ইচ্ছা ছিল এই গরুটা কোরবানী করার।
নাতির আবদার বলে কথা! নাতী একটা আবদার করেছে এইটা তিনি রাখবেন না, এত বড় অবিবেচক তিনি নন।
- তাহলে এইটাও কোরবানী করে দে, বলে দাদা খড়মে শব্দ তুলে বাড়ীর পথ ধরলেন।
*হুলাল তেলের গন্ধে-
ক্লাশ এইটে পড়ি। আমাদের ক্লাসে ছাত্রী ছিল ৪ জন। একদিন আকাশ মেঘলা, ক্লাস অন্ধকার। লেইজারের সময় শেখ ওয়ালী উল্যাহ নামে এক ছাত্র মেয়েদের বেঞ্চে বসার স্থানে ঘুমিয়ে পড়েছে।
লেইজারের পরের ক্লাস এনামুল হক স্যারের, উনার পিছে পিছে ছাত্রীরা এল। আগেই বলেছি ক্লাস রুম ছিল অন্ধকার, তারা হুড়মুড় করে বেঞ্চে ঢুকে কেউ বসলো ওয়ালী উল্যাহর মাথার উপর, কেউ বুকে, কেউ তলপেটে।
কয়েক সেকেন্ড! ঘটনার আকস্মিকতায় ওয়ালী উল্যাহ উয়াউ উয়াউ করে বিকট চিৎকার করে উঠলো। তার সাথে মেয়েরা 'গেছিরে', 'খাইছেরে', আল্লারে বলে চিৎকার! এ যেন চিৎকার প্রতিযোগিতা! কে কাকে হারাতে পারে তাই সমানে পাল্লা দিয়ে জেতার চেষ্টা, সাথে লাফ! কারো ফাটলো মাথা, কারো হাঁটু।
স্যার ওয়ালী উল্যাহকে পাকড়াও করলেন, কিরে বেটা মেয়েদের 'হুলাল তেল'এর গন্ধে ঘুম এসে গেছে না? এই সালাউদ্দিন বেত আন!!
(হুলাল তেল- সুগন্ধি তৈল)
* অভিনব আজান
আমাদের কাছারী ঘরটা ছিল বিশাল। এক রুমে তালেবে এলেম হুজুর, খোলা অংশে কাজের লোক, আরেক রুমে আমি আর লজিং মাস্টার।
হুজুর নতুন এসেছেন। আগের হুজুরের মত এই হুজুরের উপরও আমার জেঠার নির্দেশ ছিল, ফজরের আজান দিয়ে সকলকে নিয়ে জামাতে নামাজ পড়তে হবে। একদিন আজান না শুনলে আমার জেঠা কৈফিয়ত চাইতেন। হুজুর যথারীতি কাছারির মাঠে দাড়িয়ে আজান দেন, আমরা যথারীতি জামাতে শামিল হইনা। হুজুরকে বলে দেয়া হয়েছে আমার জেঠা জিজ্ঞেস করলে যেন বলা হয় আমরা জামাতের সহিত সালাত আদায় করেছি।
একদিন আজানের বিকট শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল! বিষয় কি ? আজ আজানের সাউন্ড এত বেশি কেন?
বিছানা থেকে উঠে খেয়াল করলাম আজানটা হুজুরের রুম থেকে আসছে। ভাবলাম হুজুর মনে হয় আজ আজানের জন্য বাইরে মাঠে যায়নি, রুমে থেকেই আজান দিচ্ছে। তার পরও রুমে উঁকি দিয়ে দেখলাম, দেখি হুজুর শোয়া অবস্থায় লেপের ভিতর থেকে মুখটা বের করে বিকট শব্দে আজান দিচ্ছে। আজান শেষ হলে লেপমুড়ি দিয়ে যথারীতি ঘুম!
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে আগস্ট, ২০১৭ রাত ৮:০১