আগেকার দিনে কার্ড দিয়ে বিয়ের নিমন্ত্রন দেয়া হতো। (এখনো হয়) নিচে বিশেষ দ্রষ্টব্যে লিখা থাকতো -'পত্র দ্বারা নিমন্ত্রন ত্রুটি মার্জনিয়।' কার্ড দাতার মনে প্রচ্ছন্ন একটা আশা থাকতো প্রতি কার্ডে উপহার আসবে। অনেক লোভী মানুষ উপহার দেয়ার কথা কার্ডে ইংগিতে জানিয়েও দিতেন। সেসব কার্ডে লিখা থাকতো -''শুধু উপহার নয়, দোয়াও কাম্য ।'' মানে আপনি উপহারতো দিবেন এব্যাপারে আমি নিশ্চিত, সাথে দোয়াও কইরেন। এটা লিখা ছাড়াও যাকে কার্ড দিয়ে নিমন্ত্রণ দেয়া হত তার খালি হাতে বিয়ে বাড়িতে যাওয়া ছিল সামাজিকতার পরিপন্থি। তাই মানুষ বিয়েতে সাধ্যমত উপহার দিত।
অন্য অঞ্চলের কথা জানিনা আমাদের অঞ্চলে উপহার সামগ্রীর ভিতর পিতল,এলুমুনিয়ামের কলসি,হারিকেন, শাড়ী, ব্লাউজ পিচ , বই, কলম (হিরো, উইংচং, ইয়থ, পার্কার) ঘড়ি, গোল্ডের আংটি ইত্যাদির প্রচলন ছিল। বেশি দেয়া হত বই। সেকালে বইএর দ্বিতীয় পেজে উপহার শিরোনামে একটা পাতা থাকতো । এতে লিখা থাকতো -----এর বিয়েতে প্রীতির নিদর্শন সরূপ 'কাগজের নৌকা' (বা অন্য কোন নাম) বই খানি অর্পণ করিলাম ।'' ইতি---
বইয়ের ভিতর বেশির ভাগ ছিল ইসলামী বই। মুকসুদুল মোমিনিন নামক বইটি কোন কোন বিয়েতে ৪/৫ কপিও পড়তো। আরো থাকতো শরত, রবীন্দ্রনাথ, নিহার রঞ্জন গুপ্ত ও রোমেনা আফাজের বই। এ যুগের মানুষ নিহার রঞ্জন, রোমেনা আফাজকে চিনে না। বোম্বে, কলিকাতা ও বাংলাদেশে নিহার রঞ্জনের উপন্যাস নিয়ে ৫৫ টি চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। আর রোমেনা আফাজের উপন্যাস নিয়ে তৈরি হয়েছে ১৫ টির মত জনপ্রিয় চলচ্চিত্র।
যাক বলছিলাম বিয়ের উপহার বই নিয়ে-
সত্য মিথ্যা জানিনা বা কোন রেওয়ায়েতও দিতে পারবোনা । অনেকের মুখে শুনেছি , বই চুরিতে নাকি গুনাহ নাই । এই ফতুয়ার উপর আমি নিজেও অনেক আমল করেছি । আগেই বলেছি, আগেকার দিনে বিয়েতে প্রচুর বই উপহার দেয়া হ । আমি তক্কে তক্কে থাকতাম এই বইগুলি কিভাবে 'বেগুনাহ' কম্মের মাধ্যমে নিজের করে নেয়া যায় । এক বিয়ে বাড়ি থেকে ''স্বামী স্ত্রির গোপন মিলন '' নামের একটি বই নিজের করে নিলাম । দুই তিন পাতা পড়ে কান লাল হয়ে গেল । নাহ , এই মারফতি লাইনের জ্ঞান সাধনা প্রকাশ্যে করা যাবেনা , আমাকে নিভৃতচারী হয়ে যেতে হবে, হতে হবে গৌতম বুদ্ধ ।
কাছারি ঘরে নির্জনে পাঠ্য বইএর আড়ালে রেখে বইটি পড়ার চেষ্টা করছি । পাশের রুম থেকে বয়সে আমার একটু বড় লজিং হুজুর এসে দুইবার আমাকে রেকি করে গেল । ভাগ্যিস হুজুর দেখেনি , আমি বইটি লুকিয়ে ফেলি । মনে মনে মহা বিরক্ত ! নিরবে যে একটু জ্ঞান সাধনা করবো ,শালার বেটাদের জন্য সে সুযোগও নেই ।
তৃতীয় বার হুজুর এসে মিচকা একটা হাসি দিয়ে বলল ,’’ পড়ে একটু দিয়েন লিটন ভাই ।‘’
'কিসের বই? আমিতো পাঠ্য বই পড়ছি' বলে আমি আকাশ থেকে পড়ার চেষ্টা করলাম।
হুজুর দেখি আরো এক কাঠি সরেস!! কয়- আমি নিজে দেখলাম, আপনি রসময় গুপ্ত পড়ছেন!!!!
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে জুলাই, ২০১৭ বিকাল ৫:৩৫