মায়ের সাথে জীবনে প্রথম শহর দেখতে এসেছে লালু । যা দেখে তাই ভাল লাগে। মনে বিস্ময় জাগে। বাইরের জগত এত সুন্দর। কোথাও দেখা যাচ্ছে গরু খাসীর মাংস, কোথাও ভাজা হচ্ছে কড়কড়ে পরটা। আশে পাশে ঘুরছে তাদের অনেক স্বজাতি, কিন্তু কেউ তাদের ওগুলো খেতে দিচ্ছেনা, তার পরও তারা আশে পাশে থেকে চোক চোক করছে।
শহরে তাদের স্বজাতির চেয়েও বেশি দেখা যাচ্ছে এক বিশেষ প্রজাতির প্রাণী । এদেরও চার পা, দু পায়ে চলে, আর দুটো পা নুলা। নুলা পা গুলি ঘাড়ের দু পাশে ঝুলে থাকে। হাটার সময় কেমন দুলতে থাকে। একবার কিছুদিন কষাই পট্টীর ধলা কাকুকে তিন পায়ে হাটতে দেখেছিল লালু। কারা যেন মেরে এক পা ভেঙ্গে দিয়েছিল। তিন পায়ে হাঁটতে তার সেকি কষ্ট!
এই প্রানীগুলার দেখছি আরো বেশি কষ্ট, হাঁটছে মাত্র দুই পায়ে আর দুটো পা অকেজো। তবে নুলা দুপা দিয়ে এরা টুকটাক নানা কাজ করতে পারে। কাজ করতে পারে বটে, হাঁটতে তো আর পারেনা! চার পায়ে হাঁটার মজাটাতো এরা পাচ্ছে না! আহারে কি দুঃখ, কি দুঃখ!!
বিষয়টা মাকে জিজ্ঞেস করবে কিনা ভাবছে লালু। কারন আসার সময় মা বেশি কথা বলতে বারন করেছে।বারন সত্ত্বেও বেশীক্ষণ কৌতূহল চেপে রাখতে পারেনা লালু।
- আচ্ছা মা, ধলা কাকুকে তিন পায়ে হাঁটতে দেখেছি। কিছুদিন পর তার পা ভাল হয়ে যায়, এখন সে চার পায়ে হাঁটে। শহরে এই যে এত এত জানোয়ার দু পায়ে হাঁটতে দেখছি,এদের সবার দু;টো করে পা এক সাথে কে ভাংলো?
মা হেঁসে গড়িয়ে পড়েন- আরে এদের সামনের দু;পা থাকেই এরকম। এরা সৃষ্টির সেরা জানোয়ার। এরা কত কত কাজ করতে পারে। নিজের খাবার নিজে বানায়, টুকটাক আমাদেরও খেতে দেয়। কেউ দু;পায়ে হাঁটে, কেউ দু;চাকার কি একটায় চড়ে কুর কুর করে চলে যায়। কিছু দু;চাকার কুর কুর আবার গরর গরর শব্দ করে। তিন চাকা, চার চাকা, হরেক চাকায় চড়ে এরা ঘুরে বেড়ায়।
মা, ছেলের সামনে হুশ করে ব্রেক করা এক ট্রাক দেখিয়ে বলে, এই যে দৈত্যটা দেখছিস, এগুলা খুব হারামী দৈত্য। সে বছর তোর মামাকে চাপা দিয়ে মেরে ফেলেছিল। এদের আসতে দেখলে রাস্তার পাশে সরে যাবি। আরেকটা বিষয় খুব তাজ্জবের! দৈত্য গুলার পেটের ভিতর থাকে দুপেয়েরা। প্রচন্ড শক্তি নিয়ে এরা রাস্তা কাপিয়ে আসে। চাকার সামনে যা পায় পিষে মারে। কিন্তু যখনি পেটের ভিতর থেকে দু;পেয়েটা বেরিয়ে যায় অমনি তাদের সব শক্তি শেষ! তখন তুই পা তুলে এদের গায়ে ছড় ছড় করে পিসাব করে দিলেও কিছু বলে না।
পিসাব করার কথা শুনে হি হি করে হেসে উঠে লালু, মাকে বলে- মা শিসু করবো ।
পাশের আবর্জনার স্তূপ দেখিয়ে মা সেখানে পিসাব করতে বলে। লালুর মনপুত হয়না।
- না মা, দৈত্যটার গোল ঠ্যাঙের উপর করবো।
মা বিরক্ত হয়- দেখছিস না দু;পেয়েটা পেটের ভিতর বসা, যে কোন সময় দৈত্যটা হুংকার দিয়ে উঠতে পারে। তাছাড়া এদের ঠ্যেঙ্গের উপর পিসাব করার না না কায়দা কানুন আছে, তোর ধলা কাকু তোকে শিখিয়ে দেবে। এখন যা ওখান থেকে কম্ম সেরে আয়।
- তাইলে আমার পিসাব নাই বলে কিছু একটা ভাবে লালু। মাকে বলে-
- মা আমিও সৃষ্টির সেরা জানোয়ার হব।
মা অবাক হন কি ভাবে হবি।
- আমি দু;পেয়ে হব। বলেই সে সৃষ্টির সেরা জানোয়ার হবার প্রাথমিক পদক্ষেপ হিসাবে দু;পায়ে হাটতে শুরু করে। মাত্র দেড় দুই কদম গিয়েই দুদ্দাড় করে মাটিতে পড়ে যায়। সাথে সাথে গা ঝাড়া দিয়ে দেহের ধুলা সরিয়ে মাকে বলে- একদম ব্যাথা পাইনি। তুমি দেখে নিও, আমি ঠিকই শিখে নেব।
মা'র হাসি থামে না। পাগল ছেলে! দুপায়ে হাঁটতে পারলেই কি সৃষ্টির সেরা জানোয়ার হওয়া যায়?
(চলতেও পারে)
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে মার্চ, ২০১৭ দুপুর ১:৪০