somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

''হুমায়ূন আহমেদের চামড়া, তুলে নেব আমরা।''

১৯ শে জুলাই, ২০১৬ সন্ধ্যা ৬:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



একজন লেখকের লেখার মান কে বা কারা বিচার করবে? কয়েকজন ‘সমালোচক’ নাকি কয়েক লক্ষ্য পাঠক?
এখানে কয়েক জন যখন তাঁর উপন্যাসকে ‘অপন্যাস’ বলছে আরেকদল তখন তাঁর বাড়ির সামনে গিয়ে তাঁরই সৃষ্ট কাল্পনিক চরিত্রের ফাঁসির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করছে।

সারা দেশে বিক্ষোভ হচ্ছে ,’’হুমায়ূন আহমেদের চামড়া , তুলে নেব আমরা । বাকের ভাইর কিছু হলে, জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে।‘’

ঘটনাটা ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটক প্রচার সময় কালের ।
নাটকের নায়ক বাকের ভাই । এনটি সোশ্যাল ক্যারেকটার (দর্শকের দৃষ্টিতে হিরো)। সাথে দুই চেলা । মহল্লার প্রভাবশালী ‘কুত্তাওয়ালী’ তার পরিচালিত প্রাইভেট ব্রথেল ব্যবসা নির্বিঘ্ন করতে অন্যায় ভাবে বাকের ভাইকে খুনের মামলায় ফাঁসীয়ে দেয় । শেষ পর্বের কয়েক পর্ব আগে বাকের ভাইএর এক চেলা বদি (আব্দুল কাদের , বহুজাতিক কোম্পানি বাটা’র ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা) ভয় ভীতির কারণে রাজসাক্ষী হয়ে বাকের ভাইর বিরুদ্ধে সাক্ষী দেয় । দর্শক হতাশ , তারা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় বাকের ভাইর ফাঁসি হয়ে যাবে । এর পরেই ঘটতে থাকে উপরোক্ত ঘটনাগুলি ।

বাকের ভাইয়ের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ায় রাস্তায় গণপিটুনির শিকার হন আব্দুল কাদের । অল্পের জন্য তিনি প্রাণে রক্ষা পান । বহু দিন তাঁকে পুলিশ প্রোটেকশনে চলতে হয়েছে ।

শেষ পর্ব প্রচারের দিন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ হুমায়ুন আহমেদের নিরপত্তা জোরদার করে । খারাপ কিছুর আশংক্ষায় তাঁকে গোপনে সরিয়ে নেয়া হয় অন্য বাসায় ।

রাত ৮টা ৪৫ মিনিট । সারা বাংলাদেশ বাংলাদেশ টেলিভিশনের সামনে । শেষ পর্যন্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসি হয়ে যায় বাকের ভাইর । সারা দেশে শোকের মাতম উঠে । উন্মত্ত দর্শক হামলা চালায় হুমায়ুন আহমেদের বাড়িতে । তারা ককটেল আর হাতবোমার বিস্ফোরণ ঘটায় ।
দেশের বিভিন্ন স্থানে রীতিমত গরু জবাই করে বাকের ভাইয়ের কুলখানি করা হয় ।

এ নজীর পৃথিবীর ইতিহাসে বিরল । কত বড় মাপের লিখক হলে একজন লিখক তাঁর সৃষ্ট চরিত্রের সাথে সারা দেশকে একাত্ম করে ফেলতে পারেন তার দৃষ্টান্ত হুমায়ুন আহমেদ ।

তাঁর লিখা যতটুকু পড়েছি-যতটুকু জেনেছি...শুধু একটা কথাই বলতে পারি, সাহিত্যাকাশে হুমায়ুন নক্ষত্রের যে দীপ্তি তা অন্য যেকোন লেখিয়ের মনে হিংসার উদ্রেক করার জন্য যথেষ্ট।

• হুমায়ুন আহমেদের কয়েকটি উৎসর্গপত্রে তার মৃত্যু চিন্তা পরিস্ফুট হয়েছে -

"চলে যায় বসন্তের দিন" উৎসর্গ করা হয়েছে মেহের আফরোজ শাওনকে। (তখনো তারা পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন নাই।) উৎসর্গপত্রে লেখা :

"আমার একটি খুব প্রিয় গান আছে, গিয়াসউদ্দিন সাহেবের লেখা 'মরণ সঙ্গীত'- 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়।' প্রায়ই ভাবি আমি মারা গেছি, শবদেহ বিছানায় পড়ে আছে, একজন কেউ গভীর আবেগে গাইছে- 'মরিলে কান্দিস না আমার দায়।' 'নক্ষত্রের রাত' নামের ধারাবাহিক নাটকের শ্যুটিং ফ্লোরে আমি আমার ইচ্ছা প্রকাশ করলাম। এবং একজনকে দায়িত্ব দিলাম গানটি গাইতে। সে রাজি হলো। উৎসর্গপত্রের মাধ্যমে তাকে ঘটনাটি মনে করিয়ে দিচ্ছি। আমার ধারণা সময় এসে গেছে।

"দেখা না-দেখা" গ্রন্থটি উৎসর্গ করেন তাঁর পুত্র নিষাদকে । উৎসর্গ বাণীটি এরকম:

"নিষাদ হুমায়ূন, তুমি যখন বাবার লেখা এই ভ্রমণ কাহিনী পড়তে শুরু করবে তখন আমি হয়তোবা অন্য এক ভ্রমণে বের হয়েছি। অদ্ভুত সেই ভ্রমণের অভিজ্ঞতা কাউকেই জানাতে পারব না। আফসোস!"

কিংবদন্তী এই লিখকের আজ চতুর্থ মৃত্যুবার্ষিকী । তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি ।


সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুলাই, ২০১৬ সকাল ৯:৪৮
৪২টি মন্তব্য ৪৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×