অনেক দিন কোন পোস্ট দেইনা । এটা রীতিমত অস্ত্বিত্তের সংকট । লিখার মত কিছু পাচ্ছিও না । সামুর এক মুরুব্বি বলেছিলেন পোস্ট দেয়ার মত কিছু যদি লিখতে না পার তাহলে ছবি পোস্টই ভরসা ।
আমিও সে লাইনেই আগালাম । পুরনো দিনের কিছু জিনিসপাতি সাথে একটু স্মৃতি নিয়ে একটা ছবি পোস্ট দিয়ে বসলাম ।
১/ প্রথমেই নিব কলম
আমাদের সময় প্রাইমারী পেরিয়ে হাই স্কুলে যাওয়া ছাত্ররা এই কলম ব্যবহার করতো । ইয়থ , পাইলট , উইংচং, হিরো সহ ছিল হরেক নামের কলম ছিল। মুল্য ছিল ২৫ থেকে ৪৫ টাকার ভিতরে । আমার অবশ্য অনেক দামী একটা কলম ছিল । এটা আমার বাবা জার্মান থেকে এনেছিলেন । পার্কার । ফিলিং এর জন্য বাজারে কালির দোয়াত পাওয়া যেতো , বেশির ভাগ চায়নিজ কালি । বাজারে সহজলভ্য ছিল আমাদের দেশি জেম কালি ।
২/ ম্যাচ লাইট
দেখতে অনেকটা এখনকার গ্যাস লাইটের মত , তবে স্টিল বডি । মেড ইন অস্ট্রিয়া । ধূম্র এস্তেমালকারীদের কাছে এটা ছিল রীতিমত ৭ রাজার ধন । হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে অনেকে রশি বা চেইন দিয়ে কোমরের সাথে বেঁধে রাখতেন । ভিতরে ছিল ফুয়েল চেম্বার । তুলা দিয়ে চেম্বার ভর্তি করা থাকতো । পেট্রোল দিয়ে এই তুলাগুলি একবার ভিজিয়ে দিলে অনেক দিন কাজ চলতো । আমাদের পাশের গ্রামের এক কৃষক এক বার আমাদের জন্য ১০ জোড়া নারিকেল নিয়ে এসেছিল । বাবা টাকা দিতে চাইলে সে কিছুতেই নিতে রাজি নয় । সে জানালো আগামী বার জাহাজ থেকে আসতে যেন তার জন্য একটা ম্যাচ লাইট আনা হয় ।
৩/ টেবিল ল্যাম্প
৮০র দশকে বিয়ে শাদীতে এই টেবিল ল্যাম্পটি ব্যাপক হারে উপহার পড়তো । কেরোসিন দিয়ে চালানো এই ল্যাম্পের প্রস্তুত অবকাঠামো ছিল অনেকটা হারিকেনের মত । ইচ্ছামত আলো বাড়ানো কমানো যেতো । গ্লাসের উপরে ছিল খোলা ।
আলাদা গ্লাস কিনতে পাওয়া যেতো , তেল খরচ হতো খুব কম ।
৪/ খড়ম
আমাদের সময় জুতা স্যান্ডেলের ব্যাপক প্রচলন শুরু হয়ে গেলেও অনেক মুরুব্বিকে দেখতাম পুরনো ঐতিহ্য আর সাচ্ছন্দের জন্য তখনো খড়ম ব্যবহার করতেন । কাঠের তৈরি খড়মে আঙ্গুল আটকানোর খুঁটিটিও ছিল কাঠের । বনেদি লোকদের খড়ম তৈরি হত চন্দন জাতীয় দামী কাঠ দিয়ে । আর খুঁটি ছিল পিতল , রুপা বা মহিষের শিঙের । আমি আমার নানুর খড়ম পায়ে দিয়ে হাঁটতে গিয়ে কাদার মধ্যে তিন আছাড় খেয়েছিলাম ।
৫/ স্লেট চক
স্লেট চকে লিখে বর্ণ পরিচয়ের হাতে খড়ি হয়েছিল এমন লোক সামুতে থাকলেও এই মাটির তৈরি স্লেট আর মাটির তৈরি খড়ি ব্যবহার কারীর সংখ্যা বেশি থাকার কথা নয় । মাটির তৈরি এ স্লেট চার দিকে কাঠের ফ্রেম দিয়ে বাঁধাই করা ছিল । খুব সতর্কতার সহিত হ্যান্ডেলিং করতে হত । হাত থেকে মাটিতে পড়ে গেলেই শেষ ! আমি নিজে এ বস্তু ব্যবহার না করলেও আমার কয়েকজন সহপাঠী এটাতে বিদ্যা চর্চা করতো ।
৬/ ক্যাসেট প্লেয়ার
প্রচলিত অন্যান্ন ক্যাসেট প্লেয়ারের তুলনায় ছোট সাইজের এই প্লেয়ার চলতো মিডিয়াম ব্যাটারিতে । চারটা ব্যাটারিতে ৩/৪ ঘণ্টা চলতো । ইন্টারনাল ব্যাটারিতে চালানো ব্যয়বহুল ছিল তাই অনেকে ৬ ভোল্টের ব্যাটারি দিয়ে এটা চালাতেন ।
৭/ হক/ চান্দা ব্যাটারি
ক্যাসেট প্লেয়ার , টর্চ , দেয়াল ঘড়ি , রেডিও ইত্যাদি ইলেকট্রনিক ডিভাইস চালাতে দেশে তৈরি এক মাত্র ব্যাটারি ছিল , কোহিনূর ক্যামিকেল কোম্পানির চান্দা ব্যাটারি । অনেক পরে এর সাথে হক ব্যাটারি যোগ হয় । এক জোড়ার মুল্য ছিল ৮ টাকা । বড় । মিডিয়াম , পেন্সিল এই তিন ধরণের ব্যাটারি পাওয়া যেতো ।
৮/ রাজা
প্রস্তুতের উদ্দ্যেশ্য যাই হোক আমরা এটাকে বেলুন হিসাবে পেয়েছি । টাকায় ৪ থেকে ৬ টা বিক্রি হতো । বাঁশের বাঁশির সাথে এই বেলুন ফুলিয়ে ফেঁ পু না করলে ঈদ পার্বণগুলি পানসে মনে হত ।
৯/ মায়া বড়ি
এটা ছিল জন্মনিয়ন্ত্রণ ফিল । কাউকে খেতে দেখিনি , তবে ঝুরানি বা রানিখেত রোগে এই বডি মোরগ মুরগীকে খাওয়ানো হত ।
১০ / বলাকা ব্লেড
চুল কাটা বা শেভের কাজটা সাধারনত ক্ষুর দিয়েই সারানো হত , কেউ এই কাজে বা অন্য প্রয়োজনে ব্লেডের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলে বাজারে ছিল এই ব্লেড ''বলাকা।'' পিচ ৫০ পয়সা ।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৬ সন্ধ্যা ৭:৪৬