বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজের খেলা শুরু হবে আমাদের স্হানীয় সময়(নিউ ইয়র্ক) ভোর ৪ টায়। আর আমাকে কাজে ছুটতে হবে সকাল ৮ টায়। একেবারে না ঘুমিয়ে কাজ করাও নিতান্তই অসম্ভব। তাই ভাবছি খেলা দেখব কি দেখবনা।অন্যদিকে এটাও ভাবছি গত ওয়েস্ট-ইন্ডিজ সফরের সাফল্যের মত এবার নিজেদের বাড়ীতে পেয়ে তাদেরকে আচ্ছা করে তুলোধুনো করা হবে, এই দৃশ্য দেখার চাইতে সামান্য একটা চাকুরী কি খুব বড়? গোল্লায় যাক এমন চাকুরী! জীবনে কত চাকুরী আসবে যাবে.... হু ক্যায়ারস ? তাই ভোর ৩টার দিকেই কাজের জায়গায় কল করে বললাম আমি অসু্স্হ। কাজে আসতে পারবনা। এবং ওয়েস্ট-ইন্ডিজ বধের মহাকাব্য রচনা শুরু করার জন্য খেলা দেখতে বসে পড়লাম। কিন্তু কি দেখলাম? খেলা শুরু হওয়ার ৩ বল পরেই তামিম আউট, এর পর পরই ইমরুল , মুশফিক ........৩৪ রানে ৪ উইকেট নাই। আর দশটা ক্রিকেটপ্রেমীর মত খুব ব্যথিত হলাম। এবং খেলার বাকীটুকু না দেখেই ঘুমিয়ে পড়লাম। কিন্তু ঘুম কি আর আসে? কাজে ফাঁকি দিলাম। এদিকে টিমও জিতলোনা, সারাটা দিন যেন কিছু একটা না পাওয়ার বেদনায় কেটেছে।পরে মনকে প্রবোধ দিলাম, খেলা তো খেলাই। একটা খেলায় হেরেছে তো কি হয়েছে! গত নিউ জিল্যান্ড-বাংলাদেশ সিরিজের ম্যাজিকের মত বাংলদেশ আবারও আরেকটা ম্যাজিক দেখিয়ে সেটা পুষিয়ে দেবে। যাইহোক,সন্ধ্যার সময় যখন খেলার পোস্ট-মর্টেম বিশ্লেষন পড়ার জন্য অনলাইন পত্রিকার পাতা খুললাম। যা পড়লাম সেটা খেলায় পরাজয়ের চাইতেও ভয়ংকর।
(১)পরাজয়ের গ্লানি সহ্য করতে না পেরে কে বা কারা যেন ক্রিস গেইল বাহিনীর বাসে ঢিল ছুঁড়েছে।
(২)অধিনায়ক সাকিবের বাড়ীতে হামলা হয়েছে।
খেলায় হেরে যাওয়ার মর্মবেদনাকে অতিক্রম করে এই দুটো ব্যাপার প্রধান হয়ে উঠলো মনের মধ্যে। ভাবলাম শ্রীলংকান টিমের বাসে হামলা করা পাকিদের মত আমরা ও কি ক্রিকেট বিশ্বে সেরকম আরেকটা ইমেজ গড়তে যাচ্ছি? গত বিশ্বকাপে আমাদের সাথে ভারতীয় টিমের হেরে যাওয়াকে কেন্দ্র করে মহেন্দ্র সিং ধোনীর বাড়ীতে হামলার দৃষ্টান্ত অনুসরন করে আমরা কি সাকিবকে বানাতে যাচ্ছি আরেক ভিক্টিম? ...না তা হবে কেন? আমরা বাংলাদেশী। ঐতিহ্যগতভাবে আমরা পৃথিবীর সবার চাইতে অতিথিপরায়ন।ওয়েস্ট ইন্ডিজ অতিথি হয়ে আমার বাড়ীতে বেড়াতে এসেছে। আমার শত অভাব অনটনের মাঝে ক্রিস-গেইল বাহিনী কেন? অন্য কেউ এসেও আমার অতিথিপরায়নতায় কোন খূত পেয়ে আমাকে তিরস্কার করবে, মুখে-ভেংচি কাটবে, এ সুযোগ না দেবার ব্রত যে আমি পালন করেছি? সুতরাং আমি বিশ্বাস করতে চাই পত্রিকার পাতায় যা লিখেছে তা সম্পূর্ন ভূল। একজন হলুদ সাংবাদিকের মনগড়া বানোয়াট কেচ্ছা-কাহিনী। কিছুদিন আগে জনৈক শ্রীলংকান ক্রিকেটার আমার দেশেই উল্লেখ করেছিল শ্রীলংকান ক্রিকেট ফ্যানরা ভারতীয়দের মত এমন উম্মাদ নয় যে খেলায় হারলেই জ্বালাও-পুড়াও কর্মসূচী গ্রহন করবে।খেলাকে ওরা খেলা হিসেবেই গ্রহন করে । এটা শোনার পর আমিও যে সেই শ্রীলংকানদের দৃষ্টান্ত অনুসরন করতে শুরু করেছি ? অতএব সাকিবের বাড়ীতে হামলা হয়েছে বলে পত্রিকার পাতায় যাকিছু লেখা হচ্ছে, আমি বিশ্বাস করতে চাই তার সবই মিথ্যে। খেলায় পরাজয়ের বেদনা অতিক্রম করতে সবার সাথে আমি যে অনেক আগে থেকেই কোরাস কন্ঠে গাইছি..........
"হারজিৎ চিরদিন থাকবে
তবুও এগিয়ে যেতে হবে
বাধা বিঘ্ন না পেরিয়ে
বড় হয়েছে কে কবে "