পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত শব্দটিই হলো “ ভালোবাসি” । এটা বলা যতো সহজ , বোঝানো লক্ষকোটি গুন কঠিন । আপনি হয়তো একশত ভাগ আন্তরিক যখন আপনি বলেন, “ আই লাভ য়্যু ” । কিন্তু একথা বলে আসলে কি বোঝাতে চাচ্ছেন আপনি ?
তাই এই পোস্টটি পড়ার আগে কাগজ, কলম নিন । নীচের শূন্যস্থান যুক্ত বাক্যটি লিখুন ১০ বার । তারপর শূন্যস্থানগুলো পূর্ণ করুন -
“যখন ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি’ বলি তখন আমি তোমাকে বোঝাতে চাই যে --------- ”
কি , কিছু বোঝাতে পেরেছেন ? খুব কষ্ট হবে বোঝাতে । কারন ঐ বাক্যটির অর্থ একেক জনের কাছে একেক রকম অর্থে ধরা দেবে ।
আপনি হয়তো আপনার স্ত্রী বা স্বামী কিম্বা সন্তান কিম্বা ছেলে বা মেয়ে বন্ধুদের , এমনকি আপনার কলিগদেরও এমন কথা হাযারবার বলেছেন ।
খুব খেয়াল করে দেখুন , যতোবারই আপনি বলেন, “ আই লভ য়্যু ” তখন একেকবার একেক অর্থে বলেন । ভিন্ন ভিন্ন ভাব বোঝাতে বলেন ।
যে মানুষটি পরিবারের কারো কাছ থেকে জীবনেও কোন ভালোবাসাই পায়নি তার কাছে এই বাক্যটি একটি স্বপ্নের মতো মনে হবে ।
আপনি আপনার সন্তানকে কড়া শাসনে রাখেন আবার বলেন, খুব ভালোবাসেন বলেই তাকে এমন শাসনে রাখতে হয় । আপনার সন্তানের কাছে এই ভালোবাসার রূপটি আপনার স্ত্রী বা স্বামীকে ভালোবাসার রূপটি নয় । আবার যৌবনদীপ্ত ছেলে বা মেয়েটি পরিবারের এতো এতো স্নেহ- ভালোবাসা পাওয়ার পরেও অন্যকারো কাছ থেকে “ আই লাভ য়্যু” শোনার জন্যে নির্ঘুম রাত কাটায় । বর্তমানে যা হালচাল, সেখানে ছেলেমেয়েদের বলা “ আই লভ য়্যু” বাক্যটিতে শারীরিক সম্পর্কের ইঙ্গিতটাই থাকে বড় বেশি ।
এমন উদাহরন দেয়া যাবে হাযারো ।
আসলে “আমি তোমাকে ভালোবাসি” বাক্যটি অনেক কনফিয়্যুশানের, অনেক বেদনার আবার অনেক আনন্দেরও ।
আপনি কাগজে ১০ টি শূন্যস্থানে যে ১০টি উত্তর লিখেছেন তা আপনাকে বিভ্রান্তিতেই ফেলে দেবে । এবং সম্ভবত ঐগুলোর কোনটিতেই আপনি একশতভাগ স্বচ্ছ নন । বলুন তো, কোন উত্তরটি আপনি সততার সাথে দিয়েছেন ?
আসলে “আমি তোমাকে ভালোবাসি” এর অর্থ এই বাক্যের তিনটি শব্দে নেই । আছে এটা বলার পেছনের আকুতিতে, বলার অনুভবে ।
এবার তাহলে দেখা যাক “ সখি ভালোবাসা কারে কয়......” এর “ভালোবাসা” কি জিনিষ ।
কোনও জিনিষের প্রতি অনুভবের সুতীব্রতা , আবেগের তীক্ষ্ণতা, অতল আকর্ষণেচ্ছা বা নিজের সবটুকু দিয়ে সমর্পণের নামই হলো - ভালোবাসা । ভালোবাসা একটা অনুভূতি, একটা বিশ্বাস । একে বর্ণনায় বর্ণীল করা যায়না, যায়না ছোঁয়া । ভালোবাসা হলো সম্ভাব্য মাত্রার সব্বোর্চ্য অর্থ নিয়ে ভরপুর, তরঙ্গায়িত এক ভাষা । এর দেশ, কাল , পাত্র নেই । নেই বর্ণ, নেই জাত ।
ভালোবাসা হতে পারে বিভিন্ন ধরনে, এটা প্রসারিত হতে পারে, আবরিত হতে পারে , লতিয়ে উঠতে পারে জাগতিক যে কোনও কিছুর শরীর-মন ঘিরে । এই যেমন আপনি ভালোবাসেন -
- তীর ভাঙা ঢেউ ,
-ঝুম বর্ষা কিম্বা
-ঘাসের ডগায় একটি শিশির বিন্দু ।
আবার ভালোবাসতে পারেন -
-দুলকি চালে চলা ঘোড়া,
-গরর...গররর করে কোলের উষ্ণতা খোঁজা বেড়াল কিম্বা
-দৌঁড়ে এসে পায়ের কাছে লুটিয়ে পড়া কুকুরটিকে ।
কেবলমাত্র সুন্দরের প্রতিই আমাদের সকল ভালোবাসা লুটিয়ে পড়বে এমন কোনও কথাও নেই । প্রকৃতির অসুন্দরতাকে , অপূর্ণতাকে মেনে নিয়ে যিনি ভালোবাসা সমর্পণ করেন , ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীটিকে বা বস্তুটিকে গড়ে তোলেন মনের মাধুরী মিশিয়ে তার ভালোবাসা নিখাদ - সত্যিকারের ।
মনে হয় , এই ভালোবাসা আপনার একটা জন্মগত অধিকারও বটে । আপনি ভালোবাসা পাবার যেমন অধিকার রাখেন তেমনি রাখেন ভালোবাসতেও । আপনি যে বেঁচে আছেন, এমন একটা অনুভূতিই তো আপনার নিজেকে ভালোবাসতে শেখায় । একটা “ নার্সিসাস” বোধ প্রতিটি মানুষেরই জন্মগত, প্রকৃতিদত্ত । এও তো ভালোবাসা, নিজেকে !
তেমন কারো জন্যে, কিছুর জন্যে ভালোবাসায় আপনার খাঁদ নেই মোটেও , এমনটাই মনে হয় । ভালোবাসার এই প্রকাশটি খুব সাধারন থেকে হতে পারে উচ্চাঙ্গের । আবার পাত্র ভেদে এর ভেতরে থাকতে পারে ভরসার জায়গাটি, থাকতে পারে নিরাপত্তাবোধের নিশ্চয়তা । এর সাথে সঙ্গ, আস্থা, আনুগত্য, আকর্ষণ, নিবেদনের মতো মানবিক কিছু কিছু চাওয়া তো থাকতেই পারে । তবে সবকিছু ছাপিয়ে ভালোবাসার যে ধ্রুপদী রূপ তা “বিশ্বাস” নামের ইটে গাঁথা । ভালোবাসার এমন একটি রূপ আপনি পাবেন অচ্ছেদ্য বন্ধুত্বে । এরকম ভালোবাসার স্বরূপটি মনে হয় যেন নীচের শের’টিতেই দ্যোতনায় ভাস্বর --
দোস্তি দিল হ্যাঁয়, দিমাগ নহী...
দোস্তি সোঁচ হ্যায়, আওয়াজ নহী ।
দোস্তি কী জজবো কো,
কোই আঁখো সে দেখ সেকতা নহী
কিঁউকি দোস্তি এহসাস হ্যাঁয়, আন্দাজ নহী ।
কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, “ভালোবাসা” বললেই এসবের কিছুই আপনার মনে পড়েনা ।
আপনার কেবলই মনে হয় - অন্যকিছু , গা শিউরে ওঠা কিছু , মনকে উথাল পাথাল করে দেয়া কারো মুখখানি, কোনও কিছুর অবয়ব । যা ভালোবাসার নামে শুধুই “ মোহ” । মানব-মানবীর বেলায় এ যেন , একজোড়া চোখের বিদ্যুত তরঙ্গ আর এক জোড়া চোখের ভেতর দিয়ে হৃদয় নামের জায়গাটিকে তরঙ্গায়িত করে যাওয়া মাত্র ।
গ্রীকো-ক্রিশ্চিয়ান মতে এমন “লভ” বা “ ভালোবাসা”র চারটি ধারা রয়েছে । ভালোবাসা বলতে প্রচলিত ধারনায় আমরা যা বুঝি তার নাম -“ ইরোস” (Eros) । ইরোটিক শব্দটি এখান থেকেই জন্ম নেয়া । দর্শন এবং মনোবিজ্ঞানের ভাষায় এই ইরোটিক শব্দটির যতো ব্যাখ্যাই থাকনা কেন, আমাদের ধারনায় তা শারীরিক উত্তেজনা । তাই আমাদের ধারনা মতের ভালোবাসায়, শারীরিক একটা আকর্ষণের ব্যাপার - স্যাপার থেকেই যায় জ্ঞাতে বা অজ্ঞাতে।
“ষ্টোর্জ” (Storge) হলো পারিবারিক ভালোবাসা । নিজের ধারে কাছের লোকজনদের প্রতি ভালোবাসা । যেমন সন্তান, ভাইবোনদের প্রতি ভালোবাসা । এমন ভালোবাসা এক ধরনের অনুরাগ , স্নেহ জাতীয় আবেগ ।
“ ফিলিয়া” ( philia) হলো বন্ধুত্বপূর্ণ ভালোবাসা । রক্তের সম্পর্কের বাইরে কাউকে আস্থার জায়গায়, বিশ্বাসের জায়গায়, অন্তরঙ্গতার জায়গায় বসানো ।
“ এ্যাগেপ” (agape) হলো স্বার্থহীন ভালোবাসা । এর কোন ব্যাখ্যা নেই, কেন এমনটা হয় । অনেকটা ইউটোপিয়ার মতোন ।
আবার ঈশ্বরেও ভালোবাসা সমর্পিত হয় । এখানে আমাদের সবার ভালোবাসাতে কোনও আলাদা রঙ মনে হয় নেই । এ এক নিখাদ আত্মসমর্পণ । আ ডিভাইন লভ উইথ নো ক্যাটেগরী !
ভালোবাসাকে মানুষ যে কতোভাবেই না শ্রেনীকরণ করেছে । এই সব শ্রেনীভেদের ব্যাখ্যায় আবার আছে হাযারো মতভেদ । দার্শনিকরা বলেন এক , তো মনোবিজ্ঞানীরা বলেন আরেক ।
ফ্রয়েড সাহেব তো আবার সকল ভালোবাসার মাঝে কামগন্ধ খুঁজে পান ।
সাইকোলোজিষ্ট রবার্ট ষ্টার্ণবার্গ ভালোবাসার একটা ত্রিভুজ থিওরীও দাঁড় করিয়েছেন । প্যাশন (physical arousal), অন্তরঙ্গতা (psychological feelings of closeness) আর কমিটমেন্ট (the sustaining of a relationship). এই তিনটি বাহু দিয়ে নাকি ভালোবাসার ঘরটি বাঁধা হয় ! আবার এ বাহু তিনটির পারম্যুটেশান করে আবার সাত রকমের ভালোবাসাও নাকি হয় । এর ভেতরে সবচেয়ে জনপ্রিয় ভালোবাসা হলো “রোমান্টিক” আর “কনজ্যুমেট লভ” । অন্যগুলো হলো লাইকিং, কমপ্যাশনেট লভ, ইম্পটি(শুন্য) লভ, ফ্যাটিউঅ্যাস লভ আর ইনফ্যাচুয়েশান বা মোহাচ্ছন্ন হওয়া। ষ্টার্ণবার্গ বলেছেন, বিবাহিত দম্পতিদের মাঝে অন্তরঙ্গতাই হলো বিবাহিত জীবনের সন্তুষ্টি ।
যে যা্-ই বলুক আসলে সত্যিকারের ভালোবাসা এক ও একক, নির্দোষ, অবিচল , স্বয়ংসিদ্ধ, অক্ষয় এক মানসিক অনুভূতি । সকল ভালোর সমন্বয়, একটি সুর । বিশ্বাস এর মূল উপাদান । হুট করে এমনটা হয়না । অনুরাগের কুঁড়ি থেকে ফুল, ফুল থেকে পরাগায়ন হয়ে ফল হয়ে ওঠার দীর্ঘ পরিক্রমায় যেতে হয় তাকে । তারপর জড়িয়ে ওঠা, আত্মার এক অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে, যেখানে শরীরের কোনও জায়গা নেই । নিজের আমিকে (ইগো) অন্যের মাঝে বিলীন করে দেয়াই ভালোবাসার প্রথম শর্ত ।
আবার অবিচ্ছেদ্য হলেই গাঢ় বা সত্যিকার ভালোবাসা হয়না । বিচ্ছেদের পরেও দু’জনে দু’জনার প্রতি বিশ্বাসে অবিচ্ছেদ্য হলেই তবে তা হয় ।
আর রোমান্স হলো ভালোবাসার উপস্থাপনার ঢং । একটি শিল্প । এতে ভালোবাসা বোঝাতে একটি নিবেদন স্পষ্ট করা হয় । এটা বাহ্যিক । যেমন, ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীটিকে আপনি একটি ফুটন্ত গোলাপ দিয়ে স্বাগত জানাতে পারেন । আর যদি সবে কুঁড়ি হয়ে ওঠা একটি শিশির স্নাত গোলাপ দু’হাতে তুলে ধরে, হাটু মুড়ে যদি আপনার ভালোবাসার পাত্র-পাত্রীটিকে সমর্পণ করেন তবে তা আরো গাঢ় একটি নিবেদনকেই ঈঙ্গিত করে । একটি সময় ছিলো, যে সময়ে একটি মেয়ে তার ভালোবাসার পাত্রটিকে রুমালে নিজ হাতে ফুল তুলে এমন একটি বাক্য- “ যাও পাখি বলো তারে , সে যেন ভোলেনা মোরে” বা “তুমি মোর বন্ধু বটে , রেখো মোর স্মৃতি” লিখে উপহার দিতো । এগুলো হলো রোমান্টিক রোমান্টিসিজম । ভালোবাসার ক্যানভাসে রঙের কি জেল্লা ধরাবেন সেটা নির্ভর করে আপনার সৃজনশীলতার উপর , আপনার আবেগের গভীরতার উপর , ভালোবাসার জনের প্রতি আপনার অনুরাগের মাত্রার উপর, তাকে চমৎকৃত করার উপায়ের উপর । এটা আপনার ভালোবাসাকে প্রলম্বিত করতে , দৃঢ় করতে সাহায্য করে । করে আবেগাপ্লুত, সুমিষ্ট। দু’জনাকে কাছে টানার রসায়নে এও ভালোবাসার গুরুপাকে একটি পাঁচফোঁড়ন ।
ভালোবাসা যদি হয় নিভৃত এক ফল্গুধারা , তবে রোমান্স তার বয়ে যাওয়ার কুলুকুলু ধ্বনি ।
ইতিহাসবিদরা বলেন , ইংরেজি “রোমান্স” শব্দটি এসেছে ফরাসী আঞ্চলিক ভাষা থেকে যা কেবলমাত্র সমাজের উচ্চশ্রেনীদের মাঝেই সীমাবদ্ধ একটি ধারনা । এটা সে সময়কালের ফ্রেঞ্চ এলিটদের কথা বলা , লেখা আর শৈল্পিক চিন্তার নান্দনিক প্রকাশ । আবার এটাও বলা হয় “রোমান্স” শব্দটি এসেছে ল্যাটিন ““রোমান্টিকাস” শব্দটি থেকে যার অর্থ “ রোমান ষ্টাইল” । আমাদের ধারনায় “ রোমান ষ্টাইল” বললেই যেমন আভিজাত্যময় কিছু বুঝি, আসলেও এটা যেন ভালোবাসায় আভিজাত্যের পরাগ মাখানো কিছু।
এই রোমান্সের খেলায় আমি আপনি যেভাবে খেলি তাকেও আবার ছকে ফেলেছেন সমাজবিজ্ঞানীরা ।
তারা বলেন , এটা হতে পারে ফ্লার্ট ( Flirt) করা । যেমন , “আহ কি মুক্তো ঝরানো হাসি আপনার।” কাউকে এমনটা বলা ।
হতে পারে অন্তরঙ্গতা (Intimacy)- যেমন, চোখে চোখে চাওয়া (Eye contact) । সেই গানটির মতোন - চোখ যে মনের কথা বলে ।
আবার আলতো চুমু খাওয়া (Kissing), আদর করা (Hugging), হাতে হাত রাখা (Holding hands) এগুলোও আরেক ধরনের রোমান্স ।
আবার পারষ্পারিক যোগাযোগের গুটি চেলেও এই রোমান্সের খেলাটি খেলতে পারেন আপনি । একসময়ে প্রেমপত্রের চল ছিলো খুব । নীলখামে চিঠি দেয়া । ডাকপিয়নের অপেক্ষায় বসে থাকা । চিঠি চালাচালি এখন আর নেই বললেও চলে । মোবাইলে মেসেজ চালাচালি সে জায়গাটাকে দখল করে ফেলেছে বেমালুম । অবশ্য এখনকার অস্থিরতার যুগে রোমান্সকে হতে হয় গরম গরম । ডেটিং করা , ফেসবুক চ্যাটিং, ফোন রোমান্স ইত্যাদি হলো চলতি সময়ের পালে লাগা গরম হাওয়া।
ভালোবাসা আর রোমান্স নিয়ে যারা ঘাঁটাঘাঁটি করেন তারা বলেন , রোমান্টিক ভালোবাসা হলো একটি জটিল আবেগ । এ ধরনের ভালোবাসা আবর্তিত হয় দু’টো ধরনে । আসক্তিমূলক (প্যাশনেট) আর অংশীদারীত্বমূলক (কমপ্যাশনেট) । আসক্তিমূলক ভালোবাসা (প্যাশনেট লভ) জন্ম নেয় সক্রিয় আর সুতীব্র একটি আবেগ থেকে যেখানে আপনি মনে করেন , পৃথিবীর সব সুখ এখানেই । কখনও কখনও এটা আপনাকে কষ্টও দেয় । বিজ্ঞানীরা এধরনের ভালোবাসাকে তুলনা করেন , “কোকেন” এর নেশার সাথে । কারন, কোকেন গ্রহনে আপনার মস্তিষ্ক থেকে যেমন “ ডোপামিন” নামের একটি হরমোন নিঃসৃত হয় এবং একটি সুখানুভূতিময় আবেগ সৃষ্টি করে তেমনি প্যাশনেট লভ এর সময় আপনার মস্তিষ্ক থেকে এই “ ডোপামিন” টিই নিঃসৃত হয়ে থাকে । এ ধরনের ভালোবাসা সাধারনত স্বল্পমেয়াদী । যার পরিনতিতে অনেক সময় আপনাকে গাইতে হয় - “ তুমি অনেক যত্ন করে আমায় দুঃখ দিতে চেয়েছো..............”
আর অংশীদারীত্বমূলক ভালোবাসায় (কমপ্যাশনেট লভ)পরষ্পরের মাঝে একটি ধীরস্থির আস্থার জন্ম হয় , জন্ম হয় প্রশান্তির । তখন আপনার গেয়ে উঠতে ইচ্ছে করে ---“ভালোবাসি - ভালোবাসি, জলে স্থলে বাজায় বাঁশি......”
রোমান্স, ভালোবাসার প্রতি একপ্রকার বিনয়ের প্রকাশ ও বটে । আবার ভালোবাসায় যে রোমান্স থাকতেই হবে এমন কোন কথাও নেই ।
শুরুতেই বলেছি , পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশী উচ্চারিত শব্দটিই হলো “ ভালোবাসি” । এটা বলা যতো সহজ , বোঝানো লক্ষকোটি গুন কঠিন ।
সব মিলিয়ে ভালোবাসায় পতিত হওয়া যেন গভীর এক কুয়োর মাঝে পড়ে যাওয়া । যারা সে কুয়ো থেকে জমজমের পানি তুলতে পারেন তারা উৎরে গেলেন । আর যারা পারেন না তাদের হৃদয় ভাঙা জল সে কুয়োর জলকেই বাড়ায় শুধু । তখন মনের ভেতরে এই গান গুনগুনিয়ে ওঠে -“ ভালোবাসা মোরে ভিখারী করেছে ......”
এই শ্রেনীর জন্যে একথাটিই বলতে হয় - একটি হাসি দিয়ে ভালোবাসার শুরু । চুম্বনে তা বাড়ে । কিন্তু শেষ হয় চোখের জলে ।
এখনকার যুগে ভালোবাসার এইসব ধারনা পাল্টেছে । লাইলি-মজনু , শিরী-ফরহাদ কিম্বা রোমিও-জুলিয়েটদের দিন পার করে, কেয়ামত সে কেয়ামত তক হয়ে আসা প্রেম-ভালোবাসা, আজ আর ডুব-সাতার দিয়েও খুঁজে পাওয়া যাবেনা । প্রেম-ভালোবাসায় সেদিনের সেই লালিত্য আজ যান্ত্রিকতার যাতাকলে পড়ে কর্পোরেট মানসিকতার খোলসে শুধু “গিভ এ্যান্ড টেক” হিসেবে বাজারজাত হয়ে গেছে । যাকে আমরা এই দিনকালে “প্রেম-ভালোবাসা” বলছি তা আসলে “মোহ”, যেখানটা প্রান কিম্বা হৃদয় ছাড়া আর অনেক কিছু দিয়েই সাজানো । অনেকটা যেন হাইব্রীড হয়ে গেছে এর নান্দনিকতাও । গায়ে গতরে বেশ ভারী দেখালেও স্বাদ নেই, সুগন্ধ নেই ।
তাই আজকাল “ভালোবাসা” বললেই অনেকের মনের মধ্যে উঁকি দিয়ে যায় শারীরিক সম্পর্কের মধুরতা ।
ভালোবাসা বলতে যারা বোঝেন - গোলাপী নেশা, শরীরের ঢেউ, উদ্দাম নাচ, সমুদ্র সৈকতে একটি রাত তাদের কাছে ভালোবাসা ধরা দেয় মুহূর্তেই, আবার হারিয়ে যায়ও নিমিশেই । এরা ভালোবাসায় স্নিগ্ধ রোমান্সের বদলে স্পাইসি ডিওডোরান্টের সুবাস মাখেন । এটা ভালোবাসা নয় - মোহ বা কাম ।
সবশেষে বলি , অনেকের কাছেই হয়তো ভালোবাসা একটা ফালতু জিনিষ ।
তবু ঐ ফালতু জিনিষটা আমাদের কিছুতেই ছাড়েনা । প্রতিদিনই আমরা বলি , ভালোবাসি - ভালোবাসি, আবার প্রতিদিনই তা বাদামের খোসার মতো ভেঙেও ফেলি । আবার নতুন করে ভালোবাসায় মাতি । এভাবে কতোবার শ্বাস টেনে নিয়েছি তা দিয়েই জীবনটা শুধু মেপে যাই আমরা । কিন্তু ভালোবাসার যে মূহুর্তগুলো আমাদের শ্বাস রূদ্ধ করে দিয়ে গেছে তা পড়ে রয় অবহেলায় । মেপে দেখিনে ।
ছবির কৃতজ্ঞতা ইন্টারনেট এর কাছে
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই মে, ২০১৭ রাত ১০:৫০