সরকার এতোদিন মাহবুবুল আলম হানিফ-টানিফকে দিয়ে ইউনূসের চরিত্রহননের চেষ্টা করে আসছিল। সেটি বাজার পায়নি। হানিফ কিংবা কামরুল ইসলামদের ইউনূসের মাপের লোকের সমালোচনা করার আদৌ যোগ্যতা আছে কিনা - উল্টো প্রশ্ন উঠেছে সেটি নিয়েই। শেষমেশ সরকার এবার অন্য লাইন ধরেছে, মাঠে নেমেছে ভিন্ন কৌশল নিয়ে। একপাল ভাড়ায় খাটা বুদ্ধিজীবী নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা। ৫১ বুদ্ধিজীবী হঠাৎ করে বাংলার ভাগ্যাকাশে উদিত হয়ে এই মর্মে অভিযোগ তুলেছেন যে, নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্কের সূত্রে বৃহৎ শক্তি ও দাতাগোষ্ঠীকে দিয়ে বাংলাদেশের ওপর নানা চাপ দিচ্ছেন। দুর্নীতিবাজ আবুল হোসেনকে নিয়ে এদের কোনো কথা নেই। দ্রব্যমূল্য, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক-নাগরিক সমস্যা - কিছুই তাদের স্পর্শ করে না। কোনো কিছু নিয়েই তাদের বিবৃতি দেখিনি আমরা। এই সরকারের আমলে দুষ্কর্মের সংখ্যা কি কম? কিন্তু কখনোই এইসব বুদ্ধিজীবীকে লেজ নাড়তে দেখা যায়নি।অবশেষে ভাদ্র মাসের এই ১০ তারিখে বিশিষ্ট এই বুদ্ধিজীবীবৃন্দ আচমকা পররাষ্ট্র বিশেষজ্ঞ হয়ে উঠেছেন!
ওরা কারা?
বিবৃতিদাতাদের নামগুলো একবার দেখে নিন- অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী, শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী, সৈয়দ শামসুল হক, শিল্পী হাশেম খান, শামসুজ্জামান খান, কামাল লোহানী, বিচারপতি (অব.) মেজবাহ উদ্দন আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আনোয়ার হোসেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্য অধ্যাপক প্রাণগোপাল দত্ত, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. আবুল বারাকাত, অধ্যাপক আবদুল খালেক, অধ্যাপক নজরুল ইসলাম, কবি বেলাল চৌধুরী, রামেন্দু মজুমদার, মামুনুর রশীদ, সেলিনা হোসেন, কবি নির্মলেন্দু গুণ, কবি মহাদেব সাহা, ড. হারুন-অর-রশিদ, অধ্যাপক খন্দকার বজলুল হক, স্থপতি রবিউল হুসাইন, সুরকার সুজেয় শ্যাম, সাংবাদিক ইকবাল সোবহান চৌধুরী, অভিনেতা-পরিচালক নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, লেখক-সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, শিল্পী ফেরদৌসী প্রিয় ভাষিণী, ড. মুহাম্মদ সামাদ, শহীদ জায়া শ্যামলী নাসরীন চৌধুরী প্রমুখ।
তালিকাটি পড়ে যে কেউই বুঝতে পারবেন, এই তালিকার প্রায় প্রত্যেকেই এই আওয়ামী সরকারের কাছ থেকে প্রত্যক্ষভাবে সুবিধা নিয়েছেন নানাভাবে। এদের প্রত্যেকেই আওয়ামী লীগের পোষা বুদ্ধিজীবী। জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কিংবা সৈয়দ শামসুল হককে আওয়ামী লীগের অঘোষিত চাকুরেই বলা যায়। যদি এরপরও আপনার বোঝার ঘাটতি থাকে, তাহলে একবার এই সংবাদের নিচের দিকে চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন, অথবা এখানে।
এই যে কাইয়ুম চৌধুরী, চিত্রশিল্পে অসাধারণ এক প্রতিভা, এর বাইরে তার প্রতিভা বড়জোর মদ্যপানে, এই লোক কী করে কোন্ প্রতিভাবলে বুঝলেন যে ইউনূস কবে কোথায় কিভাবে দাতাদের দিয়ে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন সরকারের ওপরে। ওই যে ডাক্তার প্রাণ গোপাল দত্ত কিংবা কবি বেলাল চৌধুরী কোন্ জাদুবলে পররাষ্ট্র বিষয়ক গোয়েন্দাগিরিতে এতো দক্ষ হয়ে উঠলেন, তাও হঠাৎ করে? প্রবল সন্দেহ জাগে, ফেরদৌসী প্রিয়ভাষিণী কি আসলেই জেনে-বুঝে সই দিয়েছেন বিবৃতিতে, নাকি কোনো বন্ধুবরের অনুরোধ রক্ষা করেছেন মাত্র?
সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য
বুদ্ধিজীবীরা আগেও সুবিধা নিতেন, কিন্তু একটি মুখোশ মোটামুটি থাকতো। লজ্জাটুকু তাতে মোটামুটি ঢাকা পড়তো। সৌভাগ্য অথবা দুর্ভাগ্য, সেই মুখোশটা খসে পড়ছে ক্রমশ। বুদ্ধিজীবীরা ধীরে ধীরে ন্যাংটো হতে শুরু করেছেন। ভালোই হল একদিক থেকে। ভাড়ায়, হয়তো খুব কম মূল্যে এদের আরো নানান কাজে খাটানো যাবে! জীবিকার জন্য এদের দিয়ে যে কোনো কিছুই করানো সম্ভব।
সংযুক্তি
গ্রামীণ ব্যাংক ঘিরে ২৯ প্রশ্নের জবাব