হূমায়ূন আহমেদের সমাধিস্থল নিয়ে মুখোমুখি বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন তার পরিবারের সদস্যরা। দেখা যাচ্ছে, এর মধ্যে শুধুমাত্র তার দ্বিতীয় স্ত্রী মেহের আফরোজ শাওন হূমায়ূনকে গাজীপুরের নূহাশ পল্লীতে সমাধিস্থ করার পক্ষে। পরিবারের লোক না হলেও শাওনের পক্ষ নিয়েছেন তার বাবা-মা এবং প্রকাশক মাজহারুল ইসলাম। অন্যদিকে হুমায়ূনের মা, দুই ভাই, ভ্রাতৃবধূ, তিন কন্যা, বড়ো ছেলে, এমনকি ৩৬ বছর হূমায়ূনের পাশে ছিলেন যে গুলতেকিন - সকলেই ঢাকায় হুমায়ূনকে সমাধিস্থ করার পক্ষে। নূহাশ পল্লীতে দাফনের পক্ষে শাওনের সম্বল মোটে একটি - হুমায়ূন আহমেদের 'বলে যাওয়া শেষ ইচ্ছে!' এ নিয়ে ঘটনা এতো দূর গড়িয়েছে যে, খোদ প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হয়েছেন হূমায়ূন পরিবারের সদস্যরা। ঠিক এই মুহূর্তে (রাত ১০টা) পরিবারের সদস্যরা স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানকের সংসদ ভবন এলাকার বাড়িতে বৈঠকে বসেছেন।
আদতেই কি শেষ ইচ্ছে?
হুমায়ূনের শেষ ইচ্ছে আদতে কী ছিল, সেটা সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণের সুযোগ আর নেই। ফলে শাওন কিংবা প্রকাশক মাজহার যা বলছেন, সেটাই মেনে নিতে হচ্ছে। কিন্তু তবু শোক নয়, আবেগ নয় - হূমায়ূন মারা যাওয়ার পর থেকেই শাওন সেই নিউ ইয়র্ক থেকেই কেবল এক সমাধিস্থল নিয়ে যে নাটকীয় কাণ্ডকারখানার আশ্রয় নিচ্ছেন, তাতে অনেক প্রশ্নের জন্ম হয়েছে ইতিমধ্যে। তার মা সাংসদ তহুরা আলী এবং বাবা মোহাম্মদ আলীর অযাচিত ওকালতি প্রশ্নগুলোকে বরং আরো জোরালো করছে।
কেন বারবার ওই নূহাশ পল্লী?
হুমায়ূন আহমেদ যতোদিন বেঁচে ছিলেন, ততোদিন নূহাশ পল্লী শ্যুটিং স্পটের চেয়েও বেশি কিছু ছিল। কিন্তু এখন ওটা শ্রেফ একটি বিনোদন কেন্দ্র ছাড়া আর কিছুই নয়। ওই বিনোদন কেন্দ্রে কেন বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে জনপ্রিয় লোকটির সমাধি হবে? কোন্ যুক্তিতে? বরং সাম্প্রতিক পরিস্থিতি বিচার করলে শাওনের প্রকৃত উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন তোলা যায়। নূহাশ পল্লী হূমায়ূনের বড়ো ছেলের নামে হলেও এর মালিকানা এখন শাওনের হাতে। সেই নূহাশ পল্লীর বাজারমূল্য বাড়ানোর জন্যই কি শাওন পরিবারের অন্য সব সদস্যদের বিপক্ষে গিয়ে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি করতে চাইছেন?
বড় মেয়ের বড় যুক্তি
শাওন নয়, বরং হূমায়ূন আহমেদের বড় মেয়ে নোভা আহমেদের এই বক্তব্যই বিশ্বাসযোগ্য এবং বাস্তবানূগ, ‘আমরা চাই এমন জায়গায় বাবার কবর হোক, যেখানে সবাই সব সময় যেতে পারবে। বাবা জীবিত থাকতে বারবার বলেছিলেন, নুহাশপল্লীকে যাতে কবরস্থান বানানো না হয়। আমরা চাই নুহাশপল্লী বাদে অন্য কোনো কবরস্থানে (সেটা মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান হতে পারে) বাবার কবর হোক, যাতে সবাই সেখানে গিয়ে দোয়া করতে পারে।’ আমার দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা সমাধিস্থ হয়েছেন এই ঢাকায়। রাজধানী ছাড়া এতো বড়ো মাপের একজন মানুষের জায়গা আর কোথাও কি হতে পারে? হুমায়ূনের তো একটি আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি নেই যে, সুদূর টুঙ্গিপাড়া কিংবা রাঙ্গুনিয়ায় মাজার জিয়ারতে যাবে ভক্ত-অনুরাগীরা।