somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালবাসার মাথা নষ্ট

২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০১২ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্ধকার মঞ্চ। অন্ধকার মিলনায়তন। সারি সারি দর্শক, অন্ধকারে। এসময় মঞ্চের ওপর নব্বুই ডিগ্রী খাড়া স্পট লাইট এসে পড়ে। ওখানে কাঁচুমাচু করে দাঁড়ায় এক লোক। চেহারা ভাল করে বোঝা যায় না – আলোটা বড্ড বেশী সোজা। ওপর থেকে যে আলো আসে, যে আলো বড্ড সোজাসুজি আসে, তাতে তীব্রতা থাকুক, কিন্তু চেনা মানুষ চেনা যায় না। ওই আলোতে চোখ ধাঁধায়, অন্ধকার তাই কেটেও কাটে না। লোকটা ওপরে তাকিয়ে বলে, “ঈশ্বর, এত ভালবাসা দিও না আমাকে!” আলোর উৎস সরে যায়। আলো তির্যক হয়। আলো কোমল হয়। আলো বিস্তৃত হয়। অন্ধকার কাটে। মঞ্চে দাঁড়ানো কাঁচুমাচু মানুষটাকে চিনতে পারে দর্শকরা। দাঁড়িয়ে আছে শব্দপুঞ্জ। আজকের নাটকের একাধারে পরিচালক এবং সঞ্চালক।
শব্দপুঞ্জঃ (দর্শকদের দিকে তাকিয়ে, বেশ ভাব নিয়ে) এজন্যই ঈশ্বর আমাদের সবকিছু ঘুরিয়ে দেন, সোজাসুজি নয়।
জনৈক দর্শকঃ (স্বগত) সেই ঘুরানির ঠ্যালায় মানুষ ঘুরে, দুনিয়া ঘুরে, সূর্য ঘুরে, ছায়াপথ, গ্যালাক্সি – সবই তো ঘুরে! আর কত ঘুরাবে?
আরেক দর্শকঃ (প্রথম দর্শককে, ফিসফিসিয়ে) ঘুরতে ঘুরতে আমার মাথাও ঘুরে!
তৃতীয় দর্শকঃ (বিরক্তি নিয়ে) বাঙালীর খাসলত হইল, টঙে উঠলে ভাব বাইড়া যায়; ভাবাভাবি ছাড়াই ভাবের কথা কয়!
শব্দপুঞ্জঃ আজকে কতিপয় বলদকে আমরা নিয়ে এসেছি, তারা বিভিন্ন মানুষের ভূমিকায় অভিনয় করে দেখাবে। যেহেতু তারা বলদ, তাদের আলাদা কোন নাম নেই, পরিচয় নেই, জাত পাত ধর্মাধর্ম নেই, তবে মানুষের অভিনয় শুরু করলে সবই জুটে যাবে। সুতরাং, আজকের নাটকে কুশীলব অংশ ছাঁটাই। ওহ্‌, আমাদের আজকের নাটকের নাম, (একটু চিন্তান্বিতভাবে মাথা চুলকে) ভালবাসার মাথা নষ্ট
***
যাত্রা নাটকের মত কাঁসার ঘন্টা, তবলা, হারমোনিয়াম, প্যাঁ-পোঁ বাঁশী (বাদক দলের দাবী, এটা নাকি সানাই), এবং আরও বিচিত্র বাদ্যযন্ত্রাদি একসাথে বাজতে শুরু করেছে। মঞ্চ নাটকে এই ব্যাপারটা কেউ কেউ আশা করেনি। নাটকের নাম বড়ই অশিল্পিত। নাটকের সূচনায় রবীন্দ্র সঙ্গীত, পল্লীগীতি বা পালিশ করা আবৃত্তির জায়গায় এই দড়ি ছাড়া গরু টাইপ সুরের কারুকাজ অনেকের দুই ভ্রু এর দূরত্ব কমিয়ে দিয়েছে।
মঞ্চে এবার আলো ফুটছে। সুর ক্রমশ তিরোহিত।
***
দেখা যাচ্ছে, এক কিশোর অথবা তরুণ, এক কম্প্যুটারের সামনে বসে আছে। খটখট আওয়াজ হচ্ছে। এরকম আওয়াজ সাধারণত টাইপিস্টের হয়ে থাকে। কম্প্যুটারে এরকম আওয়াজ হওয়ার কথা না।
জনৈক দর্শকঃ (বিদ্রুপের স্বরে) ব্যাটা, তুমি কি খালি এন্টার বাটনই চাপতাসো?
কিশোর অথবা তরুণঃ (দর্শকের দিকে ফিরে, একগাল হাসি দিয়ে) কীভাবে বুঝলেন? আসলেই তা-ই করছি। মনিটরে আমার প্রেয়সীর ছবি, তার হৃদয়ের গভীরে ঢুকতে চাইছি!
দর্শকদের মধ্যে তাচ্ছিল্য আর হালকা বিরক্তির গুনগুনানি ওঠে।
কিশোর অথবা তরুণঃ অথচ কিছুতেই কিছু হচ্ছে না! শয়তান যন্ত্রটাও ষড়যন্ত্র করছে, যেভাবে ষড়যন্ত্র করে চিঠির বাকশো, মোবাইলের নেটওয়র্ক ...
[তার কথা বাধা পায়। পেছন থেকে তার মাথায় চাঁটি মারে শব্দপুঞ্জ]
শব্দপুঞ্জঃ ওরে বলদা, ডায়লগ বল, ডায়লগ! নিজ থেকে কোন কথা না! নিজ থেকে কথা বলার মত বুদ্ধিমান মানুষের কি অভাব ছিল? ওদের বাদ দিয়ে বলদ নিলাম কেন? আমি ক্রিয়েটর, আমি ছাড়া আর কারও মধ্যে আমি ক্রিয়েটিভিটি সহ্য করতে পারি না। যা কিছু আমার তৈরী, তাকে বা তাদেরকে কিছুতেই আমার মুষ্টির বাইরে যেতে দিতে পারি না।
কিশোর অথবা তরুণঃ টুইঙ্কেল টুইঙ্কেল হ্যাভ ইউ অ্যানি উল, হাউ আই ওয়ন্ডার থ্রী ব্যাগ ফুল ... ...
শব্দপুঞ্জঃ করিস কি, করিস কি? টুইঙ্কেলের গায়ে উল গজিয়ে দিলি !!!
কিশোর অথবা তরুণঃ ভালবাসার গান গাই!
[শব্দপুঞ্জ তুড়ি বাজায়। এবার মঞ্চে প্রবেশ করে এক মধ্যবয়সী দম্পতি।]
পিতাঃ ভালবাসার তুই কী বুঝিস ছোকড়া?
মাতাঃ ভালবাসার সেরা উদাহরণ আমরা।
পিতাঃ যে ভালবাসা তুলনাহীন ...
মাতাঃ যে ভালবাসা স্বর্গীয় ...
পিতাঃ যে ভালবাসা অপরিমেয় ...
মাতাঃ যে ভালবাসা মৃত্যুঞ্জয় ...
শব্দপুঞ্জ মাথা চুলকায়। পাত্র-পাত্রীরা ভুলভাল ডায়লগ দিচ্ছে। একটু সাংকেতিক সাহায্য দেয়া দরকার।
শব্দপুঞ্জঃ (আড়াল থেকে, উচ্চকন্ঠে) ভালবাসা কারে কয়?
পিতাঃ সন্তানের মুখে প্রথম আধো বুলিতে বাবা ডাক শুনতে পাওয়া হল ভালবাসা ...
শব্দপুঞ্জঃ (আবারো আড়াল থেকে) আর সেই সন্তান পাকা বুলিতে যখন হাতখরচ বাড়াতে চেয়ে বাবা বাবা ডেকে কান ঝালাপালা করে তখন?
অজ্ঞাত উৎস থেকে কোরাসঃ তখন মনে হয়, ভালবাসার খ্যাতা পুড়ি!
মাতাঃ কোলের মধ্যে বাচ্চাটা যখন ঘুমের মধ্যে অকারণ হাসে, সেই হাসি নিজের মধ্যে সংক্রমিত হওয়াটাই ভালবাসা ...
শব্দপুঞ্জঃ আর সেই সন্তান যখন মোবাইলে ফিসফিসিয়ে কথা বলে মুখ চেপে হাসার কারণ জানতে চাইলে উল্টো ঝাড়ি মারে, তখন?
অজ্ঞাত উৎস থেকে কোরাসঃ তখন মনে হয়, ভালবাসার খ্যাতা পুড়ি!
মঞ্চে উঠে আসেন এক দাদু, আর তাঁর এক নাতি।
দাদুঃ ভালবাসা হল, চশমা ভেঙে যাওয়ার পর, নাতি টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে নতুন চশমা কিনে দেওয়া, যদিও সে মুখে বলে, প্রতিদিন আমার জন্য ছাইপাশ পত্রিকার আগাপাশতলা পাঠ সংক্রান্ত বিরক্তি থেকে উদ্ধারের জন্য এই ব্যবস্থা!
নাতিঃ ভালবাসা হল, সেই চশমা না পড়ে তা আলমারীতে সযত্নে তুলে রাখা, আর সময় সময় তা বের করে ওতে আদুরে হাত বোলানো, যদিও মুখে বলবেন, চশমাটা বড্ড ইয়ো টাইপ, ওটা বড্ড বেমানান!
অজ্ঞাত উৎস থেকে কোরাসঃ তবুও মনে হয়, ভালবাসার খ্যাতা পুড়ি!
এবার মঞ্চে কিছু সেলিব্রিটির প্রবেশ।
সুবীরঃ [গায়ক সুবীর নন্দী নন কিন্তু] পাড়ার হাজার লোক থেকে টাকা ধার চেয়ে বুঝলাম, পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই, ভালবাসা নেই ...
ইন্দু দেবীঃ ভালবাসি ... ভালবাসি ... এই সুরে ... ঘুরে ঘুরে ... উড়ে উড়ে ...
জনৈক লেখকঃ ভালবাসা মানে জন্ম-জন্মান্তরের বাঁধন ...
শব্দপুঞ্জের মাথায় হাত। ব্যাপক ভ্রুকুটি নিয়ে হিসেব নিকেশের কাটাকুটি করতে বসে।
মঞ্চে সমবেত কুশলীরাঃ পৃথিবীতে ঘৃণার প্রচণ্ডতা বেশী, কিন্তু স্থায়ীত্ব কম। ভালবাসাই টিকে থাকে অনন্তকাল, ভালবাসারই জয় হয় সর্বত্র।
শব্দপুঞ্জঃ (স্বগত) উঁহু, হচ্ছে না। (মন্ত্র উচ্চারণের সুরে) বদলে দাও, বদলে যাও ... ...
এবার দেখা যায়, শব্দপুঞ্জ ধীরে ধীরে দড়ি টানছে, মঞ্চের আকার ক্রমশ ছোট হচ্ছে।
শব্দপুঞ্জঃ (স্বগত) হি হি হি ... পায়ের নীচে মাটি, মাথার ওপর আকাশ, সব ছেঁটে ফেলছি, সব ছোট হচ্ছে, ক্ষুদ্র হচ্ছে, সংকীর্ণ হচ্ছে, দেখি এবার তোরা গা ভালবাসার গান, হি হি হি ... (উচ্চকন্ঠে) ভালবাসার বিশ্বে মিলেমিশে এক হয়ে যাও, গড়ে তোল একান্নবর্তী বিশ্ব, বদলে যাও, বদলে দাও ...
জনৈক বুদ্ধিজীবিঃ কেন? একান্নবর্তী কেন? বায়ান্ন অথবা তিপ্পান্নবর্তী হতে সমস্যা কোথায়?
তরুণ অথবা কিশোর কিছু বলতে চাইছে, কিন্তু তার মাইক্রোফোনের সুইচ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে।
ক্রমশ সংকীর্ণ হয়ে আসছে মঞ্চ, সংকুচিত হচ্ছে কতগুলো বলদের পায়ের নীচের মাটি, ছোট হয়ে আসছে মাথার ওপর আকাশের সামিয়ানা। অল্প ক্ষেত্রটুকুতে তারা অস্থির পায়চারী করছে।
শব্দপুঞ্জঃ (স্বগত) বলদগুলো ক্রমশ মানুষ হয়ে উঠছে! একমাত্র মানুষেরই তীব্রতম অভিজোযন ক্ষমতা আছে। মানুষই পারে খুব সহজে খাপ খাওয়াতে, ক্ষুদ্রতার সাথে, সংকীর্ণতার সাথে, সীমাবদ্ধতার সাথে। এখন এরাই গাইবে ঘৃণার জয়গান – প্রমাণিত হবে, ভালবাসার মাথা নষ্ট। উফ্‌! এই ছোকড়াটা জ্বালাচ্ছে। চীৎকার করছে, কিন্তু তার মাইক্রোফন বন্ধ করে দিয়েছি বলে তার কথা কেউ শুনতে পাচ্ছে না। এখন দেখি অন্যের মাইক নিয়ে কাড়াকাড়ি করছে! বলদ কুনহানকার!
মঞ্চে জনৈক ভ্রান্তি বিশেষজ্ঞের প্রবেশ।
বিশেষজ্ঞঃ এ ছোকড়াটা তখন থেকে সবাইকে জ্বালিয়ে মারছে, এর প্রতিকার করুন!
কিশোর অথবা তরুণটি ততক্ষণে এক বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর মাইক্রোফোন কেড়ে নিয়েছে। ব্যবসায়ীদের কথা বলতে হয় না, অথচ সবচেয়ে ভাল মাইক্রোফোন হাতে ওরা একই সাথে সং এবং সৎ সেজে থাকে!
কিশোর অথবা তরুণঃ এই ভাঙ, ভাঙ, ভাঙ ... ...
বিশেষজ্ঞঃ এই ছোকড়া উচ্চঃস্বরে নেশাজাতীয় দ্রব্য চাইছে, অন্যের অধিকারে হস্তক্ষেপ করছে, একে অবিলম্বে গারদে পোরা হউক!
মঞ্চের সকলেঃ গারদে পোরা হউক, গারদে পোরা হউক!
বিশেষজ্ঞঃ পৃথিবীতে আজ শৃঙ্খলার বড়ই অভাব। আসুন, সবাই শৃঙ্খল হই। আমাদের ডান হাতে ডানপাশের জনের, বাম হাতে বাম পাশের জনের গলায় হাত রাখি ...
মঞ্চের সকলে তাকে অনুসরণ করতে থাকে। সীমিত মঞ্চেও অদ্ভুত এক শৃঙ্খল রচিত হয়। কোন দড়ি না, শেকল না, স্রেফ একজন মানুষের হাত আরেকজনের জন্য শেকল রচনা করছে। যে শেকল পৃথিবীর তাবৎ মানুষের জীবন না হোক, জীবনবোধকে শ্বাসরোধ করে মেরে ফেলছে, তা কোন দড়ি বা লোহার শেকল নয়, মানুষের আপন ভাবনাজাত শৃঙ্খল।
কিশোর অথবা তরুণকে নেশাসক্ত করে ফেলা হয়েছে। থেমে থেমে তার রক্তবমি হচ্ছে। এবার মঞ্চে শব্দপুঞ্জের প্রবেশ।
শব্দপুঞ্জঃ ভালবাসা কারে কয়?
কিশোর অথবা তরুণঃ ভালবাসা মানে আমরণ এক রক্ত রণাঙ্গন!
বিশেষজ্ঞঃ ভালবাসা? ভালবাসা হল জাস্ট একটা বিজনেস। ভালবাসা হল Highest selling business. এর সাথে টেক্কা দিতে পারে একমাত্র sex business. মাদক ব্যবসা, অস্ত্র ব্যবসা, ধর্ম ব্যবসা – কোনটারই এত কাটতি নেই। কি সিনেমায়, কি গল্পে, কি উপন্যাসে, কি কবিতায়, কি গানে, কি নাটকে, কি বাজারে, কি পার্কে, ঘরে, বাইরে, রাস্তায়, রেস্তোরাঁয় – ভালবাসার বিকিকিনি সর্বত্র। ভালবাসার বাজার গরম। ভালবাসার কাটতি তুমুল। ভালবাসা এক্সপায়ার করলেও, পণ্যরূপ ভালবাসার এক্সপায়ার ডেট নাই। অথবা, যে পণ্যের গায়ে ভালবাসার সীল আছে, তার মাইর নাই!
শব্দপুঞ্জঃ আরে, তুমি আমার ডায়লগ দিয়ে দিলে যে?
বিশেষজ্ঞঃ তাহলে আপনি আমার ডায়লগ দিয়ে দিন!
শব্দপুঞ্জঃ ভালবাসা হল আসলে এক ধরণের ফ্যালাসী। মুগ্ধতা প্লাস সেক্স প্লাস মায়া ইকুয়েল্টু টিপিক্যাল ভালবাসা। কিছু কিছু ভালবাসা থেকে সেক্সটা বাদ দেয়া চলে। ওখান থেকেই বিজনেস আইডিয়া। একটা ডাব কয়বার বেচা যায়? একবার, তার পানির জন্য বিক্রী। এরপর, তার ছিবড়া বিক্রী, এরপর, শক্ত খোলের ভেতর নরম শাঁস বিক্রী। ভালবাসা থেকে সেক্স আর মুগ্ধতা আলাদা করে তারেও বিক্রী করি, কখনো সাহিত্যে, কখনো ফিল্মে। একবার ভালবাসা বেচব, একবার সেক্স বেচব। বেচতেই থাকব, বেচতেই থাকব ... ...
পিতাঃ অসম্ভব!
মাতাঃ অসম্ভব!
শব্দপুঞ্জঃ হে হে হে ... তোমাদের সন্তানদের মোবাইল চেক করলেই বুঝবা, আর বুঝবা বৃদ্ধাশ্রমে নথিভুক্ত হওয়ার পর।
দাদুঃ অসম্ভব!
নাতিঃ অসম্ভব!
শব্দপুঞ্জ আবার দড়ি টানতে শুরু করে। মঞ্চ আরও ছোট হয়ে আসে। ঠিকমত দাঁড়ানোর জায়গাও নেই।
নেশাগ্রস্থ কিশোর অথবা তরুণঃ ভালবাসা মানে এক টিকিটে দুই ছবি ... হিক ... সস্তা রেটের হোটেল ... হিক ... সস্তায় পাওয়া জি পি এ প্যাঁচ ... হিক ... বন্ধুর লাশের ছবি দিয়ে ফেসবুকে লাইক ব্যবসা ... ...
জনৈক লেখকঃ না... ইয়ে... মানে...
সুবীরঃ ভালবাসা আসলে পিটুইটারীর খেলা আমরা বোকারা বলি প্রেম ... ...
জনৈক লেখকঃ না ... ইয়ে ... মানে ...
আবারো দড়িতে টান। মঞ্চের বলদ কিম্বা সদ্য মানুষগুলো এক অন্যের ওপর হুমড়ি খেতে খেতে কোনমতে টাল সামলায়। গলার ওপর চাপ ক্রমশ ফাঁস হয়ে চেপে বসতে শুরু করে।
দাদুঃ দাদুভাই, একটু, আস্তে ...
নাতিঃ শালার বুইড়া, কবরে এক পা ঠ্যাকসে, আর কত বাঁচতে চাস? আমারে জায়গা দে ...
পিতাঃ ধুর মাগী, দূরে গিয়া মর ...
মাতাঃ তুই মর ... সর্‌, সর্‌ ...
বিশেষজ্ঞঃ আমরা নতুন বিশ্ব রচনা করেছি, এখন মানুষ একে অন্যের অনেক কাছে ...
জনৈক লেখকঃ হুঁ, আগে অত দূরে দূরে থেকেও সবাই নিজেকে ছাড়াও অন্যকে দেখার, শোনার, ভাবার সময় পেত। এখন আমরা এত কাছে যে, মোবাইল, এমনকি ইন্টারনেটও অযথেষ্ট ...
ব্যবসায়ী বিশেষজ্ঞর কানে কানে কিছু বলে। বিশেষজ্ঞ জনৈক লেখকের মাইক্রোফোনের তার কেটে ফেলে। মঞ্চ আরও সংকুচিত।
মঞ্চ থেকে ছিটকে পড়েছে দাদু, পিতা, মাতা, ইন্দু দেবী, আরও কয়েকজন। ব্যবসায়ীর পাঞ্জাবীর কোণা ধরে ঝুলে আছে জনৈক লেখক।
জনৈক লেখকঃ (চীৎকার করে) ভালবাসার মাথা নষ্ট ... ভালবাসার মাথা নষ্ট ...
বিশেষজ্ঞঃ চোপ!
জনৈক লেখকঃ জ্বী হুজুর!
ব্যবসায়ী লেখকের দিকে একটি চিরকুট বাড়িয়ে দেয়।
জনৈক লেখকঃ (উচ্চঃস্বরে) ভালবাসার মানুষের কাছে থাকুন ... ভালবেসে হোক দিন বদলের চেষ্টা ... ভালবেসে জ্বলে উঠুন আপন শক্তিতে ... মাত্র পঞ্চাশ পয়সায় ভালবাসা কিনে নিন ...
বিশেষজ্ঞঃ হুম! ভালবাসা মানেই ফ্যালাসি ...
তৎক্ষণাৎ ব্যবসায়ী একটা আচমকা ঘুঁষি বসায় বিশেষজ্ঞর মুখে। বিশেষজ্ঞ ছিটকে পড়ে মঞ্চ থেকে। ব্যবসায়ীর পাঞ্জাবীর কোণা ধরে ঝুলে আছে জনৈক লেখক, একজন কিশোর অথবা তরুণ, সুবীর।
এবার ব্যবসায়ী প্রথম মুখ খোলেঃ Indeed! ভালবাসা হল Highest selling business. (এবার উচ্চকন্ঠে, পুরো মিলনায়তন প্রকম্পিত করে) ভালবাসার জয় হোক!

এতক্ষণ পর দর্শকবৃন্দ প্রথম খেয়াল করেন, মঞ্চের দড়িটা আসলে ব্যবসায়ীর হাতে ধরা!!!
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×