somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাখনলালের মানবাধিক্কার বন্ধু

০১ লা মার্চ, ২০১২ রাত ১২:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


বন্ধুবর,

কেমন আছ ? আশা করি ভালো । আমাকে মনে পড়ে ??

আমি তোমার কলেজ জীবনের বন্ধু মাখনলাল । ডাঃ মাখনলাল এম বি বি এস !

অনেকদিন তোমার সাথে যোগাযোগ নেই। সেই কলেজ শেষে আমি যেদিন মেডিকেলে ভর্তির সুযোগ পেলাম,

সেদিন থেকেই তুমি কেমন যেন দূরে চলে গেলে !



এরপর তুমি ভার্সিটির পড়াশুনা শেষে পি এইচ ডি করলে, আমলার চাকরি নিলে।

সেই চাকরি জীবনের শুরু থেকেই তোমার আছে ক্ষমতা আর নিরাপত্তা ।

তুমি যেখানেই যাও, পিছু পিছু পৌঁছে যায় দামি গাড়ি আর নিরাপত্তা কর্মী ।

সরকারের উপর মহলে ভালো যোগাযোগের সুবাদে আজ তুমি নামকরা মানবাধিক্কার কর্মী ! তুমি আজ এতই

উচুতে উঠেছ যে, সেখানে খোলা হাওয়ার কোন কারবার নেই ।

দামি বিদেশি এসি পরশ বুলায় তোমার অফিসে, বাড়িতে, গাড়িতে । এই গরমেও তাই তুমি ঘুরে বেড়াও দামি স্যুট,টাই পড়ে ।

তোমার একেকটি বক্তৃতা শুনতে সমাজের উঁচুতলার লোকেরা ভিড় জমায় পাঁচতারকা হোটেলে ।

সেখানে তারা চামচ দিয়ে বুফে খায় আর হাত দিয়ে তালি বাজায় । আর তাদের সেই তালির শব্দে

কেঁপে ওঠে সাগর-রুনির বেডরুমের জানালার কাঁচ !



আর আমি ?? আমি মাখনলাল ডাক্তারি পড়তে এসে অনেক কিছুর সাথে সাথে কলেজ জীবনের প্রিয় বন্ধুটিকে হারালেও

তখনো বুঝতে পারিনি- গোলাকার এই পৃথিবী একদিন তোমাকে আমার মুখোমুখি এনে দাড় করাবে,

তাও এই ভাবে । তোমার আছে ক্ষমতা, আছে মিডিয়া, আমার কিছুই নেই। তাই আমার কথা তুমি

জানো না, জানতে চাও ও না !! তবু আজ আমি তোমাকে লিখতে বসেছি। জানিনা এ চিঠি তুমি পাবে কিনা !!



বন্ধু, আমি সরকারি পরীক্ষায় যোগ্যতা প্রমাণ করেছিলাম বলেই সরকার আমাকে পড়িয়েছে,

যেমন পড়িয়েছে অন্যান্য পাবলিক ভার্সিটির ছাত্রদের !

কিন্তু আজ যদি আমি বলি, সকল সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের গ্রাজুয়েশানের পর ২ বছর গ্রামের স্কুলে

শিক্ষকতা করতে হবে, তাহলে তোমরা নিশ্চিত আমাকে পাগল বলবে ।

রক্তচোষা আছি, তাই আপাতত থাকি, পাগলের খাতায় আর নাম না লেখাই ।

আর বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীদের কথা নাই বলি। তোমাদের কথা শুনলে তো মনে হয়,তারা যেহেতু সরকারি টাকায় পড়েনি,

তাই দেশের প্রতি তাদের কোন দায়িত্বই নেই ।



পাশ করে ইন্টার্নী করার পড়ে টানা ৪ বছর আমি একটি মেডিকেল কলেজে বিনাবেতনে কাজ করেছি।

কেন করেছি জানো ?? বড় ডাক্তার হতে হলে আমাদের দেশে কমপক্ষে ৪ বছর নির্দিষ্ট কিছু হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে দিতে শিখতে হয়,

একে ট্রেনিং বলে।

যার সরকারি চাকরি নেই, তাকে এই চিকিৎসা মাগনা দিতে হয়, মাগনা । টানা ৪ বছর মাগনা মাগনা ফুল ডিউটি দিয়েছি আমি !!

"৪ বছর মাগনা"- কথাটার মানে বোঝো তুমি ?? ৪ দিন ও কি মাগনা খেটেছ কখনো ??



হয়ত বলবে, সরকারি চাকরি নিলেই তো হত । আর মাগনা খাটা লাগত না ।

ভাই, ডেকে ডেকে সরকারি চাকরি দেয়ার দিন কি আর আছে এখনও ?? আর চাকরি নিলেই বা লাভ কি ??

বিশেষ ক্ষমতা না থাকলে বড় হাসপাতালে ট্রেনিং এ আসার সুযোগ কে দিবে আমাকে?? তোমার কমিশন ??

থাক সে কথা !!



আমি যখন সরকারি চাকরি নিয়ে গ্রামের এক হাসপাতালে গেলাম, তোমার সরকার আমাকে সামান্য

একটা এক্সরে, ইসিজি মেশিন দিতে পারেনি, দিতে পারেনি সামান্য রক্ত পরীক্ষার জন্যে একজন

কর্মী, দিতে পারেনি একটা এম্বুলেন্স আর তার ড্রাইভার । প্রথম দিন হাসপাতালে গিয়ে কি দেখি জানো ??

১লাখ লোকের জন্যে হাসপাতালে বিছানা আছে মাত্র ২০ টা, ডাক্তার মোটে ৪ জন, যাদের দুই জন

আবার তোমাদের মতো ক্ষমতাবানদের আত্মীয়, "আসি যাই-বেতন পাই" গোত্রীয় ।

আছে কিছু নাপা ট্যাবলেট, কিছু ক্রিমির ওষুধ আর সের দরে কেনা নাম না জানা কিছু কম্পানির এন্টিবায়োটিক। আর ছিলাম আমি, সাথে আমার স্টেথোস্কোপ বেচারা । এই দিয়ে আমি ওখানে ৩ বছর মানুষের রক্ত চুষেছি ।

আমি কত অমানুষ ভেবে দেখো তো !!



তবু ও যদি আমি ভালো রাধতে পারতাম, ভালো ঝাড়ু দিতে পারতাম , ফুঁ দিয়ে বাতাস থেকে ওষুধ বানাতে পারতাম- আমার কিছু পাপমোচন হত বোধহয় !!

কিন্তু আমার তো সে ক্ষমতা নেই ভাই !! তাই ময়লা ওয়ার্ড, রোগীর বিস্বাদ খাদ্য, ওষুধের সংকট আর পাথলজিতে পড়ে থাকা ভাঙ্গা, নোংরা সিরিঞ্জের দায়ভারও আজ আমার !!



আমি ভাই তাহলে এখন কি করবো ?? আমার ছাত্রদের চিকিৎসা শেখানোর পাশাপাশি রান্না, ঘর মোছা আর বড়ি বানানো শেখাবো ??

তাহলে হবে তো ?? নাকি তারপরেও আমি রক্তচোষা ?? অমানুষই থাকব ??



শিকারি বেড়াল নাকি গোঁফে চেনা যায় !! তা ভাই হুলো বেড়াল, তুমি তোমার থাবাটা একটু বিস্তৃত কেন করোনা ??

শেয়ার কেলেংকারি, খুন, হত্যা, রাষ্ট্রপতির অসীম ক্ষমা- এই সকল ব্যাপারে তো তোমার গলা দিয়ে "মিউ" শব্দ টাও শুনিনা ।

নাকি ওই বিরাট গোঁফ তখন গাছের কাঁঠাল দেখে তেল মাখায় ব্যস্ত থাকে ????

নিশ্চয়ই বলবে, "তাহলে কি সব ডাক্তার ভালো ?? খারাপ, লোভী ডাক্তার নেই ??"

আরে ভাই, তাই কি আমি বলেছি ?? খারাপ লোক দুনিয়ার কোন জায়গায় নেই, বলতো ??

তাই বলে এইভাবে তুমি সবাইকে গালি দেবে ?? গ্লাসের অর্ধেক খালি, তাই তুমি দেখে গেলে !! বাকি অর্ধেক যে ভরা, আর সেই অর্ধেক থেকে যে কোটি মানুষের তেষ্টা মিটছে, তা একবারও ভাবলে না ?? সামান্য পেট ব্যাথা হলেও তুমি সিঙ্গাপুর যাও, তোমার মতো এই ক্ষমতা কতজনের আছে বলতো ?? আর দেশের বাকিরা কি সব বিনা চিকিৎসায় মরছে বলে তোমার ধারনা ??



এই তোমার শিক্ষা ?? এই তোমার অভিজ্ঞতা ?? নাকি আজকাল নোংরা কথা বলাটা একটা ফ্যাশন ??

আশা করি আমার চিঠির জবাব পাব !! ভালো থেকো !!



ইতি- রক্তচোষা, অমানুষ ডাঃ মাখনলাল এম বি বিএস !!



[মূল লেখকঃ শুভাষীশ সায়ন। তাঁর অনুমতি নিয়ে লেখাটি প্রকাশ করছি।
ফেসবুকে মূল লেখাটা এখানে] ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রথম বিবৃতি, যা বললেন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:৩২



জেলহত্যা দিবস উপলক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার (২ নভেম্বর) বিকালে দলটির ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এটি পোস্ট করা হয়। গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখানে সেরা ইগো কার?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪






ব্লগারদের মাঝে কাদের ইগো জনিত সমস্যা আছে? ইগোককে আঘাত লাগলে কেউ কেউ আদিম রোমান শিল্ড ব্যবহার করে,নাহয় পুতিনের মত প্রটেকটেড বুলেটপ্রুফ গাড়ি ব্যবহার করে।ইগো আপনাকে কোথায় নিয়ে গিয়েছে, টের পেয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবং আপনারা যারা কবিতা শুনতে জানেন না।

লিখেছেন চারাগাছ, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮

‘August is the cruelest month’ বিশ্বখ্যাত কবি টিএস এলিয়টের কালজয়ী কাব্যগ্রন্থ ‘The Westland’-র এ অমোঘ বাণী যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে এমন করে এক অনিবার্য নিয়তির মতো সত্য হয়ে উঠবে, তা বাঙালি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×