নিরাময় ক্লিনিকের জরুরী বিভাগের সামনে অপেক্ষমানদের জন্য রাখা একটা খালি চেয়ারে ঝিম ধরে বসে কায়সার মাথার ভেতর চলমান ঘূর্ণিপাকটাকে সামাল দেয়ার চেষ্টায় ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পরপর ব্যান্ডেজে হাত বোলাচ্ছে। ডাক্তার বলেছিল ভর্তি হওয়ার জন্য – তখন আমলে নেয়নি। এখন দ্বিধায় পড়ে গেছে। ওদিকে বাসা খোলা রয়েছে, সুতরাং ওখানে যাওয়াটাও জরুরী। এসব দোলাচল ঠেলে বিশ্রী একটা কান্না দলা পাকিয়ে গলা বেয়ে উঠে আসতে চাইছে। কান্নাটা ব্যাথার জন্য নয়, ইঞ্জেকশন দেয়ার দেয়ার পর এখন ব্যাথা অনেকটাই কম। অনন্যার জন্যও নয়, নয় কোন অপরাধবোধ কিম্বা রাগ থেকে। দুঃখটা, কষ্টটা নিজেকে ঘিরেই। অবশ্য এটাই স্বাভাবিক, মানুষের দুঃখ-কষ্ট-উদ্বিগ্নতা জাতীয় অনুভবগুলো নিজেকে ঘিরেই আবর্তিত হয় সবচেয়ে বেশী।
টলমলে পায়ে ক্লিনিকের গেটের কাছে এসেই দেখে একটা খালি রিকশা দাঁড়িয়ে। “যাক, কপাল ভাল” এতসব কিছুর পরও এই সাময়িক ভাবনা কায়সারকে কিছুটা স্বস্তি এনে দেয়। অবশ্য দুর্ভাগ্য আর দুর্ঘটনা চারপাশ থেকে চেপে ধরে, তখন সৌভাগ্যের ছিঁটেফোঁটা উচ্ছিষ্টও অনেক ব্যাপক মনে হয়।
“এখন সব ক্লীয়ার। ব্যাটা আকাম করার সময় অন্যা দেইখা ফালাইসিল, তারপর ধ্বস্তাধ্বস্তি, শেষমেষ জামাই পিটায়া অন্যা ভাইগা আসছে।” বাদলের কাছ থেকে একটা ছোটখাট লেকচার শোনার পর, পার্থ এবার সমীকরণতা মেলাতে পারে। লোকটার ওপর এতক্ষণ যে তীব্র ঘৃণা কাজ করছিল, এখন তার ধার এবং তেজ অনেকটাই কমে এসেছে। অনিচ্ছাকৃত একটা শ্লেষাত্মক হাসির সাথে পার্থর মুখ থেকে বেরিয়ে পড়ে, “হারামজাদা নিজের বইনডারেও ছাড়ে নাই!”
“এখানে সাবজেক্ট কে, ওইটা ম্যাটার না।” বাদল আবার তার ব্যাখ্যা শুরু করে। “এ্যাক্টটাই এখানে স্টিমুলেন্ট। তোকে যে বললাম, এইসব মনোবিকলনে আক্রান্ত লোকজন নর্মাল ইন্টারকোর্সের চাইতে অ্যাবনর্মাল কিছুতে বেশী আনন্দ পায়, কায়সার ভাইয়ের অবস্থাও তেমন। ইউরোফিলিয়ায় আক্রান্ত লোক সেক্সুয়াল স্টিমুলেশন পায় যে কারও, বিশেষত ভালবাসার মানুষের মূত্রত্যাগের দৃশ্য দেখে। এটার এক্সট্রীম পর্যায় হল ইউরিনিডিজম – মানে ভালবাসার মানুষের প্রস্রাব খেয়ে বা নিজ গায়ে ছিটিয়ে সেক্সুয়াল গ্রাটিফিকেশন পাওয়া।”
“ইয়াক! পিশাব দিয়ে? থুঃ!” এসব কথা শুনে গা গুলোয় পার্থর।
“শোন, একটা নর্মাল ছেলে, সাধারণত মেয়েদের প্রাইভেট পার্ট, যেমন ব্রেস্ট বা ভ্যাজাইনা দেখে বা স্পর্শ করে যৌন উত্তেজনা লাভ করে; অবশ্য শুধু ব্রেস্ট না, সচরাচর তার চারপাশের মেয়েদের যা কিছু গোপনীয়, তা প্রকাশিত অবস্থায় দেখলেই স্টিমুলেট হয়। আর স্টিমুলেশুটা প্রশমিত হয়, সম্ভব হলে ইন্টারকোর্স, অথবা মাস্টারবেশনের মাধ্যমে। কিন্তু এ ধরণের সাইকোসেক্সুয়াল ডিসঅর্ডারে ভুগতে থাকা লোকজনের স্টিমুলেন্ট বা সেক্সুয়াল গ্রাটিফিকেশন পাওয়ার মেথডটাই এ্যাবনরমাল। যেমন কিছু লোক আছে, যারা মেয়েদের অন্তর্বাস দেখে উত্তেজিত হয়, যেইটাকে আমরা “ফেটিশিজম” বলি; নেটে “ফেটিশ” অনেক পর্ণো সাইটও দেখে থাকবি ... ।”
“দেখসি, পিকুলিয়ার আবজাব সব!”
“হ্যাঁ, পিকুলিয়ার, এ্যাবনরমাল। তুই জানিস, কিছু লোক পশু, যেমন গরু, কুকুর এসবের সাথে সেক্স করে?”
“হ্যাঁ, নেটে দেখসি, ওগুলো সব মনে হইসে সাজানো, কতগুলো ফাউল প্লে!”
“ওগুলো হয়তো আসলেই ফাউল প্লে, কিন্তু ওগুলোরও কিছু নির্দিষ্ট দর্শক শ্রেণী আছে, যারা ঐ কাজে অভ্যস্ত। এটাকে বলে Besteality।”
“কস কি! গরুর সাথে? ছাগলের সাথে?” পার্থর পেট বগবগিয়ে অযাচিত হাসি বেরিয়ে পড়ে।
“তোর আমার কথা বানোয়াট মনে হইতে পারে, কিন্তু এটা সত্যি। এইজন্যেই তো এইটাকে সাইকোসেক্সুয়াল ডিসঅর্ডার বা সাইকোসেক্সুয়াল পার্ভার্শন বলা হইতেসে। একটা এক্সাম্পল তো আমরা লাইভ দেখলাম।”
পার্থ নির্বাক। ইন্টারনেটে পর্ণো সাইটে হাজারটা বিকৃতি দেখতে দেখতে চোখ সয়ে গিয়েছিল। কিন্তু আজকে এরকম মুহুর্তে এভাবে এমন মনোবিকলনের সাক্ষাৎ পেয়ে, আক্ষরিক অর্থেই কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়ে সে।
কায়সারের অনুপস্থিতির সম্ভাব্য কারণ অনুসন্ধান করার তাগিদটা ওরা সাময়িকভাবে ভুলে যায়।
আজ রাতভর প্রবল জোছনা ছিল, এখন কেমন যেন মরে এসেছে। রাত ফুরিয়ে আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে ক্ষয়িষ্ণু চাঁদ। আকাশ থেকে অন্ধকারের চাদরটা এখনও জেদ করে করে জুড়ে আছে ঘুমন্ত শহরটার ওপর। ঠান্ডা বাতাসের ঝাপ্টা ভালই লাগছে, ফাঁকা রাজপথে উড়ে চলেছে রিকশাটা। থেকে থেকে বমির একটা চাপ কিছুক্ষণ পরপর উঠে আসতে চাইছে, বারবার ঢোক গিলে সেটাকে নামিয়ে দিচ্ছে কায়সার। হাল্কা তন্দ্রালুতা সত্ত্বেও বুকের ধড়ফাড়ানিটা কমছে না। আর একটু পরপর মাথা ঘুরিয়ে ক্ষণিকের জন্য চারপাশটা হঠাৎ অন্ধকার হয়ে যাচ্ছে, আবার ধীরে ধীরে পরিষ্কারও হয়ে উঠছে। কায়সারের এই মুহুর্তে একমাত্র চিন্তা, যেভাবেই হোক বাসায় পৌঁছতে হবে। হয়তো কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিলেই সেরে যাবে। বেশী খারাপ লাগলে ভোরে হয়তো ধীরে সুস্থে কোন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যাবে।
“এইটা নিয়ে এত সেন্সিটিভ হওয়ার কি আছে?” কায়সারের ভাবনাগুলো তখন প্রাণপণে আত্মপক্ষ সমর্থনের যুক্তি বিনির্মাণে ব্যস্ত। “কারও ক্ষতি তো আমি করি নাই! অন্য কোন মেয়ের সাথে ফষ্টিনষ্টি করলেও তো একটা কথা ছিল। মানুষের কিছু পার্সোনাল ব্যাপার থাকতেই পারে! আমার যেইটা ভাল লাগে, সেইটা অন্য কারও ক্ষতি না করলেই তো হইল। কখনো কি অবহেলা করসি ওরে? এত বড় একটা ফ্যামিলি টানসি, কারও কোন চাহিদা পারতপক্ষে অপূর্ণ রাখি নাই। বিয়ের চার বছরেও বাচ্চা হয় নাই, সেটার জন্য আমাকে কেন দোষ দেয়া?” একটু একটু করে মাথাটা গরম হতে শুরু করে কায়সারের। “প্রথম দুই বছর তো অন্যাই পিল খাইসিল, বাচ্চা চায় নাই। এরপর আমরা যখন বাচ্চা চাইলাম, হইল না – এখানে কার কি করার আছে? টেস্ট-ফেস্টের রিপোর্টও তো সব নর্মাল। মানুষের জন্ম মৃত্যু তো সব আল্লাহর হাতে, আমাকে কোন মুখে খোঁটা দেয়?” মনোজাগতিক উত্তেজনা আগুনের মত, একবার জ্বলে উঠলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, “তুই কি এমন মহারাণী ভিক্টোরিয়া হইসস, তুই নিজে কি? এইরকম ফালতু মার্কা মাল নিয়া যে ঘর করতেসি কত না ... ...।”
অনন্যার অনাকর্ষণীয়, অনুত্তেজক অবয়বটা, সেই সাথে সেই মুহুর্তগুলো এখন মানসচক্ষের সামনে।
“ছিঃ! এসব কি!” নিঃশব্দে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকা বিস্ফোরিত চোখের অনন্যার হঠাৎ ছুঁড়ে দেয়া ঘৃণায় ভীষণ চমকে গিয়েছিল কায়সার। একহাতে টিস্যু পেপারে মোড়া নিজের উত্থিত শিশ্ম, অন্য হাত মাউসে, মনিটরে অনন্যা, তৎক্ষণাৎ ঘাড় ঘুরিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছিল সে। ঝড়ের বেগে স্টাডি রুম থেকে বেরিয়ে পড়েছিল অনন্যা। অন্যান্য দিনের মত দৈনিক কর্মক্লান্তির অজুহাতে সেদিনও ওরা মিলিত হয়নি। যদিও কায়সারের, যে কোন কারণেই হোক, আগ্রহ ছিল প্রচন্ডতম। অনন্যাকে চেনে বলেই বুঝেছিল, এ রাতে আর কিছুই হবার নয়। তাই বেশ কিছুক্ষণ পর, যখন কায়সার ধরেই নিয়েছিল অনন্যা ঘুমিয়ে পড়েছে, বেড়াল পায়ে স্টাডি রুমে এসে কম্প্যুটার অন করে নিজের পুরনো, এবং সম্ভবত সবচেয়ে আনন্দময় পথেই নিজেকে তৃপ্ত করতে চেয়েছিল। বিয়ের আগে এ-ই তো ছিল সবচেয়ে নিয়মিত সহচর!
কোনমতে নিজেকে সামলে কায়সার যখন নিজের বেডরুমে ঢোকে, অনন্যা তখন নিজের ব্যাগ গোছানোয় ব্যস্ত। “অনন্যা!” বড্ড খসখসে আর দুর্বল ছিল কায়সারের গলা। অনন্যা তখনও চুপচাপ কাপড় ঢোকাচ্ছে ব্যাগে। অপরাধবোধ মেশানো শংকিত পায়ে কাছে এসে অনন্যার কাঁধে হাত রাখে কায়সার, “শোন, আই ক্যান এক্সপ্লেইন ... ...”
“কথা বলবি না আমার সাথে! দূর হ!” ঘৃণা-কান্না জড়ানো চীৎকার করে উঠেছিল অনন্যা।
চট করে পা দিয়ে ঠেলে অনন্যার ব্যাগটা বিছানার নিচে ঢুকিয়ে দেয় কায়সার। “আগে তুমি আমার কথা শোন অন্যা ... ...” আবার অনন্যার কাছে যাওয়ার চেষ্টা কায়সারের।
“ছাড়!” অনন্যার চীৎকার আরও তীব্র এবং আর্দ্র।
“তুমি না দিলে আমি কি করব?” তাড়াহুড়ো করে কিছু একটা বলতে গিয়ে, অন্য কোন কথা জোটেনা হতবুদ্ধি কায়সারের মুখে।
এক মুহুর্তের জন্য স্থির ছিল অনন্যা। তার অশ্রুপ্লাবিত চোখে ঘৃণার প্রচন্ডতা ঠিকরে বেরুচ্ছিল। পরমুহুর্তে, কায়সারের জন্য একদমই অভাবিত, তড়িৎগতিতে চলে অনন্যার হাত, একটা জোরালো শব্দ, আর জ্বলুনি শুরু কায়সারের বাঁ গালে এবং কানে!
নিমেষেই কর্পূর অপরাধবোধ এবং শংকা। কায়সারের চোখের ভীষণ ভ্রুকুটি তার ফুঁসে ওঠা রাগের জানান দেয় স্পষ্টভাবেই। আর কায়সারের ওই রাগত চেহারাটাই অনন্যাকে পাল্টা রাগের সপ্তচূড়ায় উঠিয়ে নেয় এক লহমায়।
ইনহিবিশন কেটে গেলে ক্রুদ্ধ মানুষ এবং পশুতে তফাৎ থাকেনা। ছিলনা ওদের মাঝেও। প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকে বেশীরভাগ পুরুষ নারীর ওপর নিজের শ্রেষ্ঠত্ব প্রতিষ্ঠার শর্টকাট মোক্ষম পথ হিসেবে বেছে নিয়ে এসেছে যা, তখন কায়সারও তার অনুগামী। অনন্যা কি নিজেও কখনো ভাবতে পেরেছিল, তার জানা অশ্লীলতম খিস্তি-খেউড়গুলো, তার মুখ দিয়ে প্রথমবার বেরুনো সবচেয়ে নোংরা ভাষাগুলো তার স্বামীর উদ্দেশ্যে উৎক্ষিপ্ত হবে! চড়-থাপ্পড়-কিল-ঘুষি-আঁচড়-কামড় থেকে থতু ছিটানো ইস্তক কিছুই বাদ যায়না, বিছানায় ধ্বস্তাধ্বস্তিরত মানুষ দুটোই তখন বনে গেছে পুরোদস্তুর পশু।
গায়ের জোরে যতই ক্রমশ হেরে যাচ্ছিল, ততই অনন্যার ভাষা হয়ে উঠছিল বীভৎসতম। তার অবিশ্রান্ত গালিগালাজের মাঝে “নিমুরইদ্দ্যা” শব্দটাই যেন বহুগুণ অ্যাম্পলিফাই হয়ে কায়সারের কানে আছড়ে পড়ে। ফলাফল, একে একে পোশাকগুলো ছিন্নভিন্ন হয়ে ছিটিয়ে পড়ে চারপাশে। নিজের পাশবিক শক্তির জোরে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে পড়া অনন্যার ওপর চার হাত-পায়ে চেপে বসা কায়সার দ্রত নিজেকে উন্মুক্ত করে যাবতীয় আবরণ থেকে। কিছুক্ষণ আগেই বীর্যপাত হওয়ায়, তদুপরি প্রচন্ড উত্তেজনায়, কায়সারের পৌরুষ তখন শামুক। সামনের পরাস্ত নগ্নিকাটিও তখন তাকে জাগাতে পারছিল না। অনন্যাকে আগে কখনো এত কুৎসিত মনে হয়নি কায়সারের। তার অনুজ্জ্বল শ্যামলা রঙ, তার উঁচু হয়ে থাকা ওপরের সারির দাঁত, তার ছোট অথচ থ্যাবড়ানো স্তন, কুচকুচে কালো বৃন্ত, তার লোমশ তলপেট এবং জঙ্ঘা, তার মেদ সংকটে থাকা শরীরটার খুঁতগুলোই তখন বেয়াড়াভাবে প্রকট হয়ে ওঠে কায়সারের চোখে। অনন্যা ফের থুতু ছিটাতে শুরু করলে কায়সার উপর্যুপরি ঘুষি চালায় অনন্যার মুখে। অনন্যার চীৎকার-কান্না চারদেয়ালের মাঝে ঘুরপাক খেতে থাকে।
ভালবাসা নয়, যৌনাবেগ নয়, শুধু নিজেকে জাগানোর জন্য মরিয়া হয়ে ওঠে কায়সার, এলোপাথাড়ি কামড়াতে থাকে অনন্যাকে। একহাতে অনন্যার হাত দুটো চেপে অন্য হাতে অনন্যার স্তন দুটোকে পাশবিকভাবে মোচড়াতে থাকে। ব্যাথায় ককিয়ে উঠে অনন্যা ছটফট করতে থাকে। কিন্তু এসব কিছুই জাগাতে পারে কায়সারের ক্লান্ত শিশ্মকে। এবার একহাতে স্বমেহন শুরু করে কায়সার। চোখ বুঁজে মনেপ্রাণে কল্পনা করে তার প্রিয় দৃশ্যগুলো। তার এই সাময়িক অন্যমনস্কতার সুযোগে নিজেকে ছাড়িয়ে নেয় অনন্যা। মাথার পাশে থাকা ফুলদানীটা চোখ বুঁজে থাকা কায়সারের মাথায় সর্বশক্তিতে আঘাত করে। ভ্যাবাচাকা খাওয়া, আহত কায়সার দুহাতে মাথা চেপে ধরে পেছন দিকে কাৎ হয়ে হেলে পড়লে অনন্যার পা দু’টোও মুক্ত হয়। জোড় পায়ে লাথি চালায় অনন্যা। কায়সার সরাসরি পেছন দিকে চিৎ হয়ে পড়ে যায়। মাথাটা ভীষণ জোরে ঠেকে বিছানার ওমাথার কাঠে। দরদর করে রক্তপাত শুরু হয়। রক্তপাতের দৃশ্য আরও হিংস্র করে তোলে অনন্যাকে। একটানা উপর্যুপরি লাথি ঝাড়তে থাকে কায়সারের মুখে, মাথায়। আত্মরক্ষার ন্যূনতম চেষ্টা করারও সুযোগ পায় না কায়সার, পায়ের আঘাতে বারবার সজোরে মাথা ঠোকাঠুকি হতে থাকে কাঠের সাথে। এরপর, সব অন্ধকার!
“কিন্তু এই রোগটা হয় ক্যাম্নে?” বেডরুম থেকে বেরিয়ে পার্থ আর বাদল তখন ডাইনিংরুমে। তখনও একই আলোচনায় ব্যস্ত ওরা।
“সেটা ঠিক বলতে পারবনা। জেনেটিক হতে পারে, হরমোনের সমস্যা থেকে হতে পারে, ডেভলাপমেন্টালও হয় ... ...” বাদল পাঠ্যপুস্তকের স্মৃতি হাতড়ে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করে।
“ডেভলাপমেন্টাল মানে?”
“মানে বয়স বাড়ার সাথে সাথে আস্তে আস্তে নানারকম ঘটনা, নানারকম অভ্যাস বা বদঅভ্যাস থেকে থেকে ডেভলাপ করে আর কি!”
“তো, এইটার ট্রিটমেন্ট কি?”
“সেইটা, ঠিক মনে নাই। তবে ট্রিটমেন্ট ডেফিনিটলি আছে।”
এবার পার্থ অবাক, “তো ট্রিটমেন্ট থাকলে, কইতারস না ক্যান?”
বাদল একগাল হেসে বলে, “এইটার শুধু ডেফিনিশন জানলেই পাশ, তাই আর শিখি নাই। আসলে, মেডিকেলে, পাশ ফেলের টানা-হ্যাঁচড়ায় জানার ইচ্ছাটাই মইরা যায়।”
ওদের কথোপকথন বাধা পায়। খোলা দরজা দিয়ে সিঁড়ির যে আলো ঘরের ভেতর করিডোরে এলিয়ে পড়েছিল, ওতে একটা ছায়া!
একটা মানুষের।
দরজায় দাঁড়িয়ে কায়সার হোসেন।
(আগের পর্বগুলোঃ এক , দুই , তিন , চার , পাঁচ , ছয় , সাত , আট , নয় , দশ , এগার )
(চলবে)
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মে, ২০১১ রাত ১২:২৩