somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পারভার্ট – ১০

৩১ শে মার্চ, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


“কথাবার্তা পরে, আগে ধইরা ঢুইকা পড়বি।” পার্থকে বুদ্ধি বাৎলায় বাদল। মৌসুমীর বাসার গলি থেকে বেরিয়ে এখন দু’জন বিশ্বরোডের সুনশান ফুটপাথ ধরে অলস পায়ে হাঁটছে। কিছুক্ষণ পরপর একটা দুটো মুশকো বাস ট্রাক উড়ে যাচ্ছে দূষিত বাতাসের ঝাপ্টা লাগিয়ে। যাত্রীবিহীন সি এন জি, ট্যাক্সিক্যাব, রিক্সা – কিছুই আপাতত দেখা যাচ্ছে না। একটা সি এন জি তা-ও গতি কমিয়েছিল, কিন্তু পার্থর বাসার ঠিকানা শুনেই এমন চম্পট, যেন কোন নিষিদ্ধ নগরীর নাম শুনেছে।


“কেন জানি মনে হচ্ছে গাধামী করসি!” পার্থ চিন্তামগ্ন, দ্বিধাগ্রস্থ, সংশয়াচ্ছন্ন।
“কি গাধামী করসস?” বাদলের অনুসন্ধিৎসু চোখ তখন রাস্তার ওপর সার্চলাইট।
“অনন্যারে যে নিয়া আসলাম! ভিত্রের ঘটনা তো অন্যা কিস্যু কয় নাই। হয়তো জামাই বউয়ের গ্যাঞ্জাম লাগসিল, এখন আবার অন্যারে খুঁজতে বাইর হইসে!”
বাদলের মেজাজ চিড়বিড় করে ওঠে, “অন্যারে মাইরা কি হাল করসে দেখসস। এরপর শালার বেটা কায়সার কোন মুখে ওরে খুঁজতে আসবে? ওরে তো জেলের ভাত খাওয়ান দরকার!”
“তুই অন্যার কথাটা ভুলি গেসস? মারি ফেলসি – বলতে সে কি বুঝাইসে সেইটা কিন্তু আমরা জানিনা। বরং অন্যা উল্টা নিজেই ফাঁসতে পারে। কায়সারদের জয়েন্ট ফ্যামিলি, সবদিকে হোল্ড ভাল, আর অন্যা তো একা! ওর বাপ মা আছে বাংলাদেশের আরেক মুল্লুকে।”
“তুই বলতে চাইতেসস, জানে মারি ফেলসে?”
“চাইতিসিনা। কিন্তু না চাইলেও, সম্ভাবনা তো একেবারে জিরো পার্সেন্ট না! তারপর আরেকটা জিনিস চিন্তা কর, পালাইয়া আসলে ঠিকঠাকমত মোবাইল নিল ক্যাম্নে? ঘরে অতগুলা মানুষ থাকতে – গ্যাঞ্জাম কইরা – মাঝরাতে বাইর হই আসা – কি জানি ঘাপলা লাগতেসে!”
“ধূর! উকিলের ব্যাটা উকিল! সবকিছুর মধ্যে ঘোলাপানি দেখস কা?”
“পরিষ্কার পানি চক্ষে না-ও পড়তে পারে, কিন্তু ঘোলা পানি অবশ্যই পড়বে।”
“হইসে, ডায়লগবাজী রাখ! অন্যার সাথে কালকে কথা কয়া নিলেই হইব নে।”

কিছুক্ষণ নীরবতা। এরপর আবার সরব পার্থ, “কাল কতক্ষণে আসবি?”
“সকালে তো ডিউটি; দেখি, কাল বিকালে। তুই নাহয় সকালে আসিস!”
“কালকে একটা কেইসের টাইম পিছান লাগবে, আরও কিছু ভেজাল আছে, সক্কালটা প্যাক্‌ড। নীপুরে পাঠান যায় নি দেখি।”
“তুই তো এখনও এডভোকেটশিপ পরীক্ষা পাশ করস নাই, তুই ক্যাম্নে কেইসের টাইম পিছাবি?”
“টাইম তো জজে পিছাবে, আমার কাজ শুধু বলা।”
“তুই বললে হবে?”
“আরে অন্য লয়ারদের মুহুরীরা বলে, আমি তো তবু Intimation এ আসি!”
“মুহুরী মানে? পিয়ন? পিয়নের কথায় কোর্টের টাইম পিছায়?”
“তো কি? এইটাতে এমন টাস্কি খাওয়ার কি আছে?”

আবার নিশ্চুপ দুজন। ধাঁ করে একটা খালি সি এন জি ছুটে গেল, চিৎকার চেঁচামেচি করে ডেকেও লাভ হল না। সদ্য ইলেকশান জেতা নেতার চাইতেও এদের ভাব বেশী।

“সুমীর সাথে কথা হইল?” নীরবতাটাকে আরেকবার ভাঙে পার্থ।
“তেমন না।” প্রসঙ্গটায় এই মুহুর্তে বাদলের নিরুৎসাহ স্পষ্ট।
“এখন সব ঠিকঠাক?”
“মানে?”
“আন্টির সাথে যতক্ষণ কথা কইতিসিলাম, তোরা দুজনেই তো বহুত কথা কইলি দেখলাম।দুইদিন ধইরা যে প্রবলেম চলতিসিল, সেইটা কাটসে?”
“নাহ! ঐটা নিয়া কথা হয় নাই, অন্যারে নিয়াই কথা হইসে।”
“তাইলে কথার শেষে তোরে এমন বেদিশা লাগতিসিল ক্যান?”
“কই? না তো!”
“আচ্ছা ঠিকাছে। কইতে না চাইলে কইস না।”
একটুখানি চুপ করে থেকে বাদল শুরু করে, “এখন আমার জন্য ওর আর টাইম নাই। কালকে বা পরশু কথা বলার সময় হবে কিনা জিজ্ঞাস করসিলাম, বলে, টাইম নাই।”
“ছাইড়া দে বাপ! সে যদি তোরে মন থিকা মুইছা ফেলে, তাইলে আজাইরা সম্পর্কের দোহাই দিয়া ঝুইলা থাইকা লাভ আসে?”
“এইরকম চিন্তা কইরাই তুই মুমুরে ছাড়সিলি?”
“এর মধ্যে আবার ওরে নিয়া টানাটানি ক্যান?” পার্থর বিরক্তিটা স্পষ্ট।
“তোর কথা হইল, এইরকম কন্ডিশনে ছাইড়া দেওয়াটা লজিক্যাল। এখন তুই বল তো, মুমুকে ছাইড়া দিয়া তুই কতটুকু ভাল আসস?” ঘন্টাখানেক আগে পার্থর খ্যাঁকানো হাসিটা বাদলের মাথায় খেলে যায়।
এখন পার্থ অসহিষ্ণু, কিছুটা উষ্ণও, “হ্যাঁ, আমি ভাল নাই, তবে এর থেকে বেশী খারাপ থাকতাম – সেইটা হয় নাই। ভালবাসা গেছে যাক, সম্মানটুকু থাক ... ...”
“ঐসব কেতাবী কথা পার্থ! মুমুর সাথে ব্রেকাপের পর থেকে তুই একটা প্রবলেমে আসস – সব রিলেশনে ব্রেক আপ খুঁজস। সব রিলেশানের ফাঁকগুলোই তোর চোখে বেশী ধরা পড়ে। সব রিলেশন তোর মত ঠুনকো না!” বাদলের শেষ কথাটা পার্থর ওপর চাবুকের মত আছড়ে পড়ে।


ঠিক এখানটায় পরাস্ত পার্থ। এই জায়গাতে এসে নির্বাক। কিছু কিছু ক্ষত কখনো পুরনো হয় না, ওদের ওপর কখনো সময়ের প্রলেপ পড়েনা, কিছু কিছু বেদনা স্মৃতির কাছে অচ্ছ্যুত! যে কোন মানুষকেই তার অতীত পরাজয়ের প্রসংগ তুলে আঘাত করলে তার মাত্রাটা হয় তীব্রতম। ভুলে যাওয়ার, ভুলে থাকার ভাণটা – থুবড়ে পড়া মুখটাকে বাঁচানোর ঠুনকোতম রক্ষাকবচটা যখন এমন পল্কা তোড়েই ছত্রখান, পলায়নপর মানুষ তখন হঠাৎ নিজেকে আবিষ্কার করে মধ্য-তেপান্তরে। ঠিক এই রাতেরই অন্য একটা প্রহরে যেসব মুহুর্তকে নিয়ে পার্থ দুঃখবিলাসিতায় মেতেছিল, তারাই এখন ভুঁইফোড় নতুন চেহারায় তাকে এফোঁড়-ওফোঁড় করে দিচ্ছে কি অবলীলায়!


পার্থর হঠাৎ স্তব্ধতায় বাদল খানিকটা অনুতপ্ত। হয়তো সে একটু বেশীই উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। “সরি” বা ঐ জাতীয় কিছু বলার জন্য মুখ খুলতে যাবে, কিন্তু রাস্তায় টহলরত দৃষ্টি আচানক মস্তিষ্কের রিফ্লেক্সে তাকে উচ্চারণ করায়, “ধর! ধর!”

একটা খালি সি এন জি!

বাদল সি এন জি আটকায়। দেখে, পার্থ কার সাথে যেন ফোনে কথা বলছে। সি এন জি’তে উঠে গিয়ে বাদল হাঁক দেয়, “পার্থ, আয় জলদি!” ফোন কেটে পার্থ উঠে বসে। “কই যাইবেন?” সি এন জি চালকের প্রশ্নের উত্তরে বাদলকে চমকে দিয়ে পার্থ বলে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়র কায়সার হোসেনের বাসার ঠিকানা।








(চলবে)
(পর্ব- , , , , , , , , )
৩টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=বেলা যে যায় চলে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯



রেকর্ডহীন জীবন, হতে পারলো না ক্যাসেট বক্স
কত গান কত গল্প অবহেলায় গেলো ক্ষয়ে,
বন্ধ করলেই চোখ, দেখতে পাই কত সহস্র সুখ নক্ষত্র
কত মোহ নিহারীকা ঘুরে বেড়ায় চোখের পাতায়।

সব কী... ...বাকিটুকু পড়ুন

মার্কিন নির্বাচনে এবার থাকছে বাংলা ব্যালট পেপার

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৫:২৪


আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বাংলার উজ্জ্বল উপস্থিতি। একমাত্র এশীয় ভাষা হিসাবে ব্যালট পেপারে স্থান করে নিল বাংলা।সংবাদ সংস্থা পিটিআই-এর খবর অনুযায়ী, নিউ ইয়র্ক প্রদেশের ব্যালট পেপারে অন্য ভাষার সঙ্গে রয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সত্যি বলছি, চাইবো না

লিখেছেন নওরিন হোসেন, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:০৮



সত্যি বলছি, এভাবে আর চাইবো না।
ধূসর মরুর বুকের তপ্ত বালির শপথ ,
বালির গভীরে অবহেলায় লুকানো মৃত পথিকের... ...বাকিটুকু পড়ুন

বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা কি 'কিংস পার্টি' গঠনের চেষ্টা করছেন ?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৪ ঠা নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৮:১০


শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর থেকেই আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নামক সংগঠন টি রাজনৈতিক দল গঠন করবে কিনা তা নিয়ে আলোচনা চলছেই।... ...বাকিটুকু পড়ুন

শেখস্থান.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ০৫ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১২:১৫

শেখস্থান.....

বহু বছর পর সম্প্রতি ঢাকা-পিরোজপু সড়ক পথে যাতায়াত করেছিলাম। গোপালগঞ্জ- টুংগীপাড়া এবং সংলগ্ন উপজেলা/ থানা- কোটালিপাড়া, কাশিয়ানী, মকসুদপুর অতিক্রম করার সময় সড়কের দুইপাশে শুধু শেখ পরিবারের নামে বিভিন্ন স্থাপনা দেখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×