সাউথ আফ্রিকার কেপটাউনের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ হচ্ছে টেবল মাউন্টেন নামক এক পর্বত। এই টেবল মাউন্টেন নতুন প্রাকৃতিক সপ্তম আশ্চর্যের একটি। প্রাকৃতিক সপ্তম আশ্চর্যের মধ্যে টেবল মাউন্টেন পঞ্চম। টেবল মাউন্টেন হচ্ছে সমুদ্রের ভেতর থেকে বের হয়ে আসা একটি মালভূমি। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে টেবল মাউন্টেনের উচ্চতা ৩৫৬৩ ফুট।
ড্রাইভার এখানে এনে আমাদের নামিয়ে দিয়েছে
ক্যাবল কারের টিকেটের জন্য লাইন
কেপটাউন বেড়াতে আসবো আর টেবল মাউন্টেন দেখবোনা তা কি হয়। তবে টেবল মাউন্টেন দেখতে হলে আকাশ অবশ্যই পরিষ্কার ঝকঝকে হতে হবে। আকাশ পরিষ্কার না হলে অথবা আকাশে মেঘ জমে থাকলে, বৃষ্টি হলে টেবল মাউন্টেন যাওয়া নিষেধ। তখন পুরা টেবল মাউন্টেনের উপর মনে হয় মেঘ চাদর বিছিয়ে দিয়েছে, পুরা মাউন্টেন মেঘের চাদরে ঢাকা থাকে। স্থানীয়রা বলে মেঘ টেবল ক্লথ বিছিয়ে দিয়েছে।
ক্যাবল কারের টিকেট কেটে এই বিল্ডিং এর উপর যেতে হয় লিফট দিয়ে, তারপর আবার লাইন দিয়ে উঠতে হয় ক্যাবল কারে। একেকটা ক্যাবল কারে ৪০ জনের উপর লোক ধরে সম্ভবত।
এই পর্বতের সর্বোচ্চ চূড়া দুটি।একটির নাম ডেভিল পার্ক, আরেকটির নাম লায়ন্স হেড মানে সিংহের মাথা। আমরা যখন টেবল মাউন্টনের দিকে গাড়িতে করে রওনা দিলাম তখন মেঘমুক্ত আকাশ, তবে প্রচুর ঠান্ডা ছিল।পবর্তের রাস্তার কাছে যখন গেলাম তখন দেখি গাড়ির দীর্ঘ লাইন। আগের দিন আকাশ ভালো ছিলনা বলে অনেক পর্যটক আসতে পারেনি এখানে, তাই হয়ত আজ এমন লম্বা গাড়ির লাইন।
পর্বতের উপরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি করা আছে, আছে হাঁটার জন্য রাস্তা। পর্যটক আকর্ষণের জন্য সব ব্যবস্থায় আছে। সাড়ে তিন হাজার ফিট উপরেও আছে রেষ্টোরেন্ট, ওয়াইফাই, দোকান।
পাহাড়ের কোল ঘেঁষে রাস্তা, ড্রাইভারের সামান্য ভুলে গাড়ি যে কোথায় গিয়ে পড়বে তার পাত্তা নাই।আমাদের ড্রাইভার যেখান থেকে টেবল মাউন্টেন উঠার জন্য ক্যাবল কারের টিকেট কাটতে হয় সেখানে নামিয়ে দিল।টেবল মাউন্টেনের উপর যেতে হয় ক্যাবল কারে, আবার অনেকে হেঁটে উঠতে চাইলে তার ব্যবস্থাও আছে, তবে দল বেঁধে গাইড নিয়ে যেতে হয়। ক্যাবল কারে উঠার জন্য লম্বা লাইন, অনেক সময় পর আমরা টিকেট পেয়েছি। দুইটা ক্যাবল কার উপরে নিচে আসা যাওয়া করে ১৫/২০ মিনিট পর পর।
ক্যাবল কারে যখন টেবল মাউন্টের উপর গিয়ে নামলাম তখন নিচে তাকিয়ে দেখি সাগর আর বাড়িঘরগুলি ম্যাচ বক্সের মত দেখা যাচ্ছে। আমি ভয়ে বেশিক্ষণ নিচে তাকাতে পারিনি। উপর থেকে টেবল মাউন্টেন দেখে মনে হয় কেউ যেন একটা টেবিল বিছিয়ে রেখেছে পুরা পর্বতের উপর। আর এজন্যই নাকি এর নাম টেবল মাউন্টেন।
টেবল মাউন্টেন পুরাটাই পাথরের। কিন্তু পাথরেও ফুল ফুটে
পর্বতের যেখানে বড় গর্ত তা পার হওয়ার জন্য আছে ব্রিজ
টেবল মাউন্টেনে আছে প্রায় ১৫০০ প্রজাতির বিভিন্ন উদ্ভিত ও নানা রকম প্রাণী। প্রাণিদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায় এক রকমের বড় ইঁদুর, যাদের ওজন ৪ কেজি পর্যন্ত হয়। অনেক বেশি শীতের কারনে হয়ত আমরা তাদের দেখতে পাইনি, গর্তে লুকিয়ে ছিল।
পর্বতের উপর থেকে দূরে দেখা যাচ্ছে সাগরের মধ্যে গোলাকার একটা দ্বীপ। এটা হচ্ছে রবেন আইল্যান্ড, যে দ্বীপে নেলসন ম্যান্ডেলা জেলে বন্দী ছিল ১৯ বছর।
ক্যাবল কার থেকে দেখলাম নিচের এই পাহাড়ি পথ দিয়েই আমরা এসেছিলাম
টেবল মাউন্টেনের উপর এত ঠান্ডা ছিল মনে হচ্ছিল জমে বরফ হয়ে যাবো। এবার নেমে আসার পালা।
বিশাল এই প্রকৃতির কাছে গেলে বুঝা যায় কত ক্ষুদ্র আমি।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে আগস্ট, ২০১৬ সকাল ৮:৩৯