সাদামাটাভাবে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিগুলোর প্রতি একটা কমন অভিযোগ সবসময়ই শুনতে পাওয়া যায়,আর সেটা হলো শিক্ষার বানিজ্যিকিকরন, যদিও এর পক্ষে বিপক্ষে বেশ কিছু যুক্তি রয়েছে, তবে কম বেশি প্রায় সবকটি ইউনিভার্সিটির ক্ষেত্রেই এই অভিযোগের যথেষ্ট সত্যতা পাওয়া যায়।এই নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনে কমিশনের একটি আলাদা নীতিমালা রয়েছে। যার বাইরে গেলে সেই সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম সাময়িক কিংবা সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু বাংলাদেশ হলো সেই দেশ যাদের আইন কানুন দেখলে মনে হয় এর চেয়ে ভালো কোনো সিস্টেম হতে পারে না, কিন্তু আদতে কথার সাথে কাজের কোনো মিল নেই। বেশ কিছুদিন আগে নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাস এবং সার্বিক পড়াশোনা ও গবেষণার মান নিয়ে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য তোড়জোড় শুরু হয়েছিলো। কিন্তু সেই প্রচেষ্টা মাঠেই মারা গেছে। কিছু ইউনিভার্সিটি আবার অমুক জায়গায় জমি কেনা হয়েছে, তমুক বছরের মধ্যে ক্যাম্পাসের কাজ শেষ হয়ে যাবে---এই টাইপ কূটকৌশল অবলম্বন করেছে। তবে সব ইউনিভাসিটি যে একইরকম তা কিন্তু নয়, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি ইউনিভার্সিটি অলরেডি তাদের নিজস্ব ক্যাম্পাসে শিফট করেছে। তবে এদের সংখ্যা একেবারেই নগন্য। হাই টিউশান ফির সাথে পড়াশোনার মানের দ্বন্ধ তো রয়েছেই---সে প্রসংগে আর গেলাম না। সব প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি অবশ্য একরকম নয়, অনেক প্রাইভেট ইউনিভার্সিটিই এরইমধ্যে তাদের পড়াশোনার স্ট্যান্ডার্ডের জন্য বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। সুতরাং ঢালাও ভাবে না বলে আমি বরং নাম উল্লেখ করে অভিযোগ তোলাকেই সমর্থন করি।
এই পোস্টটিও ঠিক তেমনই একটা ব্যাপারকে নিয়ে।
আজকে সকালে বাসা থেকে বের হয়ে দেখি সাত মসজিদ রোডে বিশাল একটা মানববন্ধন হচ্ছে, করছে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টরা। তাদের ব্যানারে লেখা "সু-নির্দিষ্ট ক্যাম্পাস চাই"।
কৌতুহলবশত তাদের কাছে গিয়ে পরিচিত একজনের দেখা পাই, অনেকক্ষন কথা হয় তার সাথে।তার কাছে ঘটনার আদ্যপান্ত জানতে পারি।ওর কাছে যা যা শুনলাম তা নীচে লিখছি,
স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট খুব বেশি পুরোনো নয়, আবার একেবারেই নতুন নয়, ২০০৫ সালের দিকে এটির যাত্রা শুরু হয় । ২০০৫ থেকে ২০১২ – এই সাত বছরে প্রায় সাড়ে চার শতাধিক শিক্ষার্থী এই বিভাগে ভর্তি হয় । বর্তমানে প্রায় তিনশ শিক্ষার্থী এই বিভাগে অধ্যয়নরত অবস্থায় রয়েছেন। স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্ট বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন এর অনুমোদন পাওয়া সত্ত্বেও ইউনিভার্সিটির নিজস্ব স্থায়ী ক্যাম্পাসে এই বিভাগের স্থান সংকুলান হয় নি । আনাম র্যাংস প্লাজা এর পাঁচতলার কিছু অফিস স্পেস, ষষ্ঠ তলার দু’টি রুম এবং কেয়ারি প্লাজার চতুর্থতলায় দু’টি রুম (তাও আবার অর্থনীতি বিভাগের সাথে ভাগাভাগি করে) ---এই হলো সবমিলিয়ে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ এর আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের অবস্থা। এখানে আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের জন্য চাহিদা অনুযায়ী স্টুডিও, ক্লাসরুম, কম্পিউটার ল্যাব, লাইব্রেরী এবং লাইব্ররীতে প্রয়োজনীয়সংখ্যক
বই , জুরী রুম, ডিসপ্লে সেন্টার, টিচার্স কমন রুম, স্টুডেন্টস কমন রুম, ক্যান্টিন প্রভৃতি মৌলিক চাহিদার উপকরণ একেবারেই নেই । শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনায় অভিজ্ঞ শিক্ষক সংখ্যাও অপ্রতুল । এর ফলে Institute of Architects Bangladesh (আই.এ.বি) এর সদস্যপদ লাভ করা সম্ভব হয় নি।
***কারন যেখানে আই.এ.বির সদস্য পদ পেতে হলে কমপক্ষে ১০ থে ১৫ টি ল্যাব দরকার,সেখানে তাদের রয়েছে মাত্র ৫ টি, যেখানে একটি ক্যাম্পাসের জন্য দরকার কমপক্ষে ২৫০০০ স্কয়ার ফিট, সেখানে তাদের জন্য রয়েছে মাত্র ৫০০০ স্কয়ার ফিট। এই ডিপার্টমেন্টের যাত্রা শুরু হয়েছিলো যে অবস্থা দিয়ে, বর্তমানে সাতটি বছর কেটে গেলেও অবস্থার তেমন কোনো পরিবর্তন আসে নি।
(আই.এ.বি) এর সদস্যপদ না থাকায় অনেক শিক্ষার্থীই সুদীর্ঘ পাঁচ বছর নিরলস পরিশ্রমে শিক্ষাজীবন শেষ করে পেশাগত জীবনে এসে চরমভাবে নিগৃহীত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে সম্মিলিত ভাবে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকবার আবেদন করা হয়। তারা নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে এসব সমস্যা সমাধানের এবং প্রয়োজনীয় শিক্ষার পরিবেশ সৃষ্টির জন্য শিক্ষার্থীদের আশ্বাস প্রদান করেন। কিন্তু তাঁদের নিজেদের বেঁধে দেয়া সময়সীমা অতিক্রান্ত হওয়ার পরও তাঁরা বিভিন্ন অজুহাতে পর্যাপ্ত সুবিধা প্রদান করার জন্য কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে নাই। তারা দফায় দফায় সভা আয়োজনের মাধ্যমে সময় নষ্ট করতে থাকে। এবং একপর্যায়ে তাঁরা শিক্ষার্থীদের কাছে অগ্রীম টাকা দাবী করেন যার সাহায্যে তারা এসব উন্নয়নমূলক কার্যক্রম পরিচালনা করবেন (বিশেষ করে নতুন স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যাপারে)। শিক্ষার্থীরা এই প্রস্তাবনার ঘোর বিরোধিতা করলে তারা অনির্দিষ্ট কালের জন্য উন্নয়ন কার্যক্রম স্থগিত করার প্রচ্ছন্ন হুমকি প্রদান করেন। শিক্ষার্থীরা তাদের এই অনিয়মতান্ত্রিক আচরনে ক্ষুব্ধ হয়। এর ফলে কিছু অনাকাঙ্খিত, অনভিপ্রেত বিচ্ছিন্ন ঘটনার সূত্রপা্য হয়। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত সুবিধা এবং তাদের সুনির্দিষ্ট অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্ট কালের জন্য সবধরনের শিক্ষা কার্যক্রম থেকে তারা বিরত থাকে।
এর বিপরীতে কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের উপর হুমকি এবং ভয় ভীতি প্রদর্শনের মাত্রা আরো বাড়িয়ে দেয়।এবারে আসি আজকের ব্যাপারে, আজকে সেই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্টরা এইসবের প্রতিবাদে একটি র্যালী বের করে এবং সেটি ধানমন্ডি ঘুরে মেইন ক্যাম্পাস পর্যন্ত হয়।এরপর তাদের ইউনিভার্সিটির সামনে মানব বন্ধন হয়। সেখানে ডেইলি স্টার, যায় যায় দিন ছাড়াও একুশে টিভিও এসেছিলো ঘটনা জানতে। সর্বশেষ আপডেট হলো, স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটির আর্কিটেকচার ডিপার্টমেন্টের চেয়ারম্যান আলি নাকি, প্রেসিডেন্ট ড: এম এ হান্নান এবং ভিসি ড: এম মজিবুর রহমান শিক্ষার্থীদর সাথে আবারো মিটিংয়ে বসেন এবং তাদেরকে আশ্বাস দেন যে তিন মাসের মধ্যে তাদের জন্য একটি স্থায়ী ক্যাম্পাসের ব্যবস্থা করে দেবেন। শুধুমাত্র তাই নয়, আইএবির অন্যান্য ফিচার যেনো পূরন করা হয় এই বিষয়েও মৌখিক এগ্রিমেন্ট হয়।এদিকে শিক্ষার্থীরা জিনিসটা মেনে নিলেও ঐ তিনমাস ক্লাস না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
পুরো ঘটনা ও রাতে এসে আপডেট শুনে মনে হলো,যেখানে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের শর্তাবলীর সুষ্পষ্ট লঙ্ঘন হচ্ছে, যেখানে কোন ক্ষমতাবলে স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ এইরকম করার সুযোগ ও সাহস পায়? শিক্ষা মানুষের মৈলিক অধিকার।এটির অবাধ বানিজ্যিকিকরন বন্ধ করতে হবে।শিক্ষা কোনো পণ্য হতে পারে না, প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরো কোনো ব্যবসার ঘুটি হতে পারে না।
তাই সেইসকল শিক্ষার্থীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য এই পোস্টটি লিখলাম।আশা করছি স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ তাদের ওয়াদাগুলো রাখবে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে স্থায়ী ক্যাম্পাস আর আইএবি এনলিস্টমেন্ট সমস্যার একটি গ্রহনযোগ্য সমাধান করবে।