মানুষ হিসেবে আসলে কখনোই আমরা তুষ্ট হতে পারি না। তুষ্টির কোন শেষ নেই। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত অনেক স্বপ্ন দেখে যাই। অনেক স্বপ্ন পূর্ণ হয়; অনেক স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায়। স্বপ্ন দেখার প্রাক্কালে তার বিনিময়ও ভেবে রাখি। এই যেমন, যদি আমার জীবনে এমন ঘটে তাহলে আমি এমন এমন কাজ করবো। কিন্তু স্বপ্ন পূরণের পর তা কঠিন হয়ে পড়ে। মূলতঃ কঠিন নয়; শুধু নিজের অন্তহীন পাওয়ার চাহিদা আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ভুলিয়ে দেয়, অলস করে দেয় চেতনাগুলোকে; যার দ্বারা সে তার ওয়াদা পূর্ণ করতে পারতো। এভাবেই আমরা স্রষ্টার সাথে কৃত বহু ওয়াদা ভঙ্গ করে বসি। অবশ্য এসব ওয়াদার বহুলাংশই ঘটে শুধুমাত্র ব্যক্তি এবং তার প্রতিপালকের সাথে; একান্ত সঙ্গোপনে।
মানুষ হিসেবে আমাদের জন্য আরো একটি পাওয়া এরকম যে, আমাদের আশা থাকবে, স্বপ্ন থাকবে, আকাংখা থাকবে এবং সেসব পূরনের জন্য প্রচেষ্টা থাকবে। এসব স্বপ্ন আর তা পূরনের প্রচেষ্টাই আমাদের জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায়। স্বপ্নহীন জীবন হতে পারে না। হাঁ, কারো স্বপ্ন আকাশকে ছুঁয়ে যায়, আর কারো স্বপ্ন আধখানা রুটির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু স্বপ্নহীন জীবন আর মৃত্যুর মাঝে পার্থক্য থাকে না। যে বলে তার স্বপ্ন নেই, এই যে স্বপ্নহীন থাকার স্বপ্ন; এটাই তার স্বপ্ন।
কথাগুলো মনের মাঝে ছুটোছুটি করছে ক'দিন থেকে। একটা সময় ছিল একাকী মনে হতো সমগ্র পৃথিবীতে। পেছন ফিরে কাউকে তেমন খুঁজে পেতাম না। হাঁ, সম্মুখে অনেককেই পেতাম; বাবা, মা, ভাই, বোন, আত্মীয়-স্বজন অনেক। কিন্তু পেছন ফিরে কাউকে না পেলে সে কষ্টের ধরনই আলাদা। লিখে প্রকাশ করা যাবে না; শুধু অনুভবে বুঝতে হবে।
তারপর ধীরে ধীরে প্রভুর নিকট করা স্বপ্নের দরখাস্তের বাস্তবায়ন দেখতে লাগলাম নিজের জীবনে। পেছনে খুঁজে পেলাম আরো একজন মানুষ, তারপর আরো একজন উত্তরাধিকার। তখন চেয়েছিলাম- এটুকু হলেই আর বোধহয় চাওয়ার থাকবে না। এটুকুতেই খুশী থাকবো। হোক না তা সুদূর পরবাস। কিন্তু দিনক্ষণের বর্তমানে এসে মনে হচ্ছে- একাকী অসহায় দিনগুলোর মতই এসব দিনকাল। সব আছে তবু যেন কোথাও কেউ নেই, কিছু নেই। প্রবাস জীবনটাকে আজকাল অভিশাপ মনে হয়। তাই আর কাউকে প্রবাসী হবার পরামর্শ দেই না। এমন কি সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রবাসীকে এড়িয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিয়ে থাকি। হয়ত ঠিক, হয়ত ঠিক নয়; ব্যক্তি ও সময় বিশেষে ব্যবধান থাকতেই পারে। তবু মনে হয়, পৃথিবীর এই দিনগুলোতে সুখের দূরত্বের চেয়ে কষ্টের সাথে কাছাকাছি থাকা অনেক অনেক পাওয়ার।
অনেকেই তা বুঝতে পারি না। যে কোনদিন প্রবাসী হয়নি, প্রবাসের একাকীত্বের যন্ত্রণা অনুভব করেনি, সেই স্বদেশীকে তা বুঝানো যাবে না। তবুও নিজের জীবন নিয়ে এ গবেষণায় অনেক প্রবাসীই একমত হবেন হয়ত আমার সাথে যে, প্রবাসের কষ্টগুলো স্বদেশে করলে আয়-রোজগারও বাড়বে, পাশাপাশি প্রিয়জনদেরকেও সাথে পাবেন সারাক্ষণ; সুখে-দুঃখে।