যেমনি করে শুক্লাপক্ষের খন্ড চাঁদ আপন আভায় চন্দ্রমার আদরের আভাস দেয় ঠিক তেমনি একই আদলে কৃষ্ঞ পক্ষের চাঁদও আপন আভায় বৈভাজনিক দুনিয়ার স্মরন করিয়ে দেয় । আর সকল বৈভাজনের অনুঘটক হচ্ছে নেগেটিভিটি নামক যৌগিক ক্রিয়া । আমরা মোটামুটি নেগেটিভ পিপল, নেগেটিভ বিহেভিয়র, নেগেটিভ ডুয়িং এর সাথে পরিচিত । প্রথমে আসা যাক নেগেটিভিটি কি? কোন ব্যাক্তি, কোন সমাজ, কোন গোষ্ঠী, কোন আদর্শ যখন বৃহৎ জনগোষ্ঠীর স্বার্থ বিরোধী কাজ করে নূন্যতম শান্তি স্থাপনে তাড়নার সৃষ্টি করে তাই নেগেটিভিটি । অর্থাৎ যে ক্রিয়া বা প্রক্রিয়া বিশেষ বিশেষ পরিস্থিতিতে সঠিক নয় । কিন্তু প্যাসিভ নেগেটিভিটি টা কি ? আক্ষরিক অর্থে সরাসরি কারো কোন ক্ষতি না করেও নিজের ক্ষতি করা । প্রকৃত অর্থে নিজের ক্ষতি নিজে করার চতুর প্রক্রিয়ার নাম প্যাসিভ নেগেটিভিটি। প্রথম দিকে নেতিবাচক চিন্তা নেতিবাচক আবেগ তৈরী করে যেমন- ভয়, ক্রোধ, অসন্তোষ ইত্যাদি । পরবর্তীতে এই আবেগগুলি রিএকশন প্রসিডিওর করে । আরো অন্যভাবে বলা যায় সাধারনভাবে নেতিবাচক চিন্তা মানসিকতা এবং উপভোগের মাত্রা কমিয়ে স্ব-আরোপিত অস্থিতিস্থাপকতার সাথে যোগসূত্র স্থাপন করা ।
প্রতিটি সুক্ষ চিন্তা এবং অনুভূতির নির্দিষ্ট শক্তি এবং ভাইব্রেশন আছে, যা মুডকে সরাসরি প্রভাবিত করে । এই সকল চিন্তা এবং আবেগ শারিরীক প্রক্রিয়াসহ তেমনি অনেক কিছুই প্রভাবিত করার ক্ষমতা রাখে । অধিকাংশ সময় আমাদের আচরন, কথা, চিন্তা ইত্যাদি অভ্যাসগুলোকে নোটিশ করি না । কিন্তু ডিএনএ লেবেলে সেগুলো অবিরত রেকর্ড হতে থাকে । কিন্তু নেগেটিভ চিন্তা যখন পজেটিভ স্বত্তাকে exeed করে তখন বলা হয় it’s time to take Action . কিন্তু সেই Action টি ঠিক কি ধরনের হবে তা নির্ভর করে আমাদের চিন্তার ধরন এবং মাত্রার উপর।
একটি সহজ উদাহরনের মাধ্যেমে ব্যাপারটা ক্লিয়ার করা যাক । প্রকৃতির কিছু সিষ্টেম সত্য বা মিথ্যাকে নিজে থেকে ডিটেক্ট করতে পারে না । অনেকটা রোবটিক আচরন করে । তেতুঁলের নাম উচ্চারনের সাথে সাথে জিভে পানি চলে আসে । সত্যি সত্যি না খেলেও ব্রেন তার নিজস্ব ওয়েভে সেট করা প্রোগ্রাম থেকে সংশ্লিষ্ট গ্ল্যান্ড এ তথ্য পৌছেঁ দেয় । জিভ তখন প্রকৃত স্বাদ গ্রহন না করেই রিএ্যকশন দিয়ে দেয়, সেক্ষেত্রে বাস্তব জাজমেন্টশনের প্রয়োজন হয় না । তেতুঁলের কাল্পনিক ইমেজ বা শব্দগত উচ্চারনে জিভে জল আসে । যে কোন ধরনের সিগনালের সাথে সাথেই ডিএনএ লেভেল সক্রিয় হয়ে ওঠে । এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে মানব দেহ সমস্তটাই মূলত নানা প্রকার হরমোনের গুদাম। আর এই সকল হরমোনগুলো শুধুমাত্র সেট করা প্রোগ্রামকেই ফলো করে, এর বাইরে সক্রিয় উদ্যোগে কোন কিছু করার ক্ষমতা এদের নেই ।
ধরা যাক আপনাকে কেউ খুব বাজে একটি গালি দিল সেটা আপনার জন্য প্রযোজ্য হোক বা না হোক । সেক্ষেত্রে প্রকৃত বিবেচনা না করেই আপনি উত্তেজিত হবেন। আবার কেউ আপনার প্রশংসা করলে উৎফুল্ল হবেন । কারনগুলো নিতান্তই হরমোনিক । কোন সময়ই বাস্তবে ব্যাপারটা কি তা বিবেচ্য হয় না । আমাদের ইটারনাল প্রসেসটাই এমন । একবারে খাঁটি রোবটিক । এ সম্পর্কিত গবেষণাগুলো অনেকটা এরকম যে স্ব-আরোপিত আবেগগুলি ব্রেনের সেই অংশকে সরাসরি তীব্রভাবে প্রভাবিত করে যে অংশ সত্যিকার অর্থে আবেগকে প্রভাবিত করে ।
ঠিক তেমনি আমরা যখন অন্যের জন্য অকল্যান কামনা করি বা নিজের জীবনে নেগেটিভ চিন্তা করি তখন প্রকৃতি Action & Reaction প্রক্রিয়ায় চলে যায় । রোবটিক প্রক্রিয়ায় অন্যের জন্য ডেকে আনা অকল্যাণ নিজের জীবনে নেমে আসে । তবে এখানে সময় একটি বড় ফ্যাক্ট । কখনো এটি খুব দ্রুত ঘটে আবার কখনো খুব ধীরে । নিউটনের তৃতীয় সূত্রটি কার্যকর হবেই ।আরো সুষ্পষ্টভাবে বলা যায় আবেগের হরমোন জনিত প্রতিক্রিয়ার বিপরীতে ক্রিয়া করতে সহায়তা করে থাকে । এখানে আগে প্রতিক্রিয়া পরে ক্রিয়া ।
অবচেতন মনের সকল নেতিবাচকতা সচেতনভাবেই রেকর্ড হয়ে নেগেটিভ ফলাফল নিয়ে আসে । চিন্তা আলাদাভাবে অন্য কোন ব্যক্তিকে ডিফাইন করতে পারে না বলে সরাসরি চিন্তকের উপরই ফলাবর্তন ঘটায় । নেগেটিভ চিন্তা সক্ষমতাকে আঘাত করে সঠিকপথে বা ষ্পষ্টভাবে চিন্তা করার ক্ষমতাও নষ্ট করে ফেলে । এটি কি এবং কিভাবে এটি সনাক্ত করা যায় :-
1. জীবনে নেতিবাচক মান আগে থেকেই যোগ করে ফেলা ।
2. আত্মবিশ্বাসের লেবেল কমে যাওয়া ।
3. আত্মসন্মান বোধ নিম্নমুখী হওয়া অথবা খুব ঊর্ধ্বমূখী হওয়া অর্থাৎ ভারসাম্য না থাকা ।
4. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া ।
5. সামাজিক ইনটেরাকশন কমে যাওয়া ।
6. দুশ্চিন্তা, মানসিক দূর্ভাবনা, মানসিক চাপ সবই নেগেটিভ সাইকিক ইমপ্রেশন এর উপর নির্ভর করে ।
7. নেতিবাচকতায় তাড়িত ব্যক্তি এই সুন্দর জগতটা দেখতে পেলেও একাত্ম হতে পারে না । কোন কিছুতেই কোন উচ্ছাস বা আনন্দ তারা পায় না ।
পৃথিবীর অনেক নাগরিকেরা সরাসরি কোন অপকর্মের সাথে জড়িত না । নিতান্ত সাদাসিদে জীবন যাপন করে । দৃশ্যত সৎ নাগরিকও বটে । তবু দেখা যায় ব্যক্তি জীবনে তারা খুব একটা ভাল নেই । এ প্রশ্নটি অনেককেই খুব আহত করে যেমন আমাকেও করতো । বিস্তারিত খোঁজখবর করলে বাস্তবে নিম্নোক্ত ব্যাপরগুলো দেখা যায় যা অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রায় এরকম :-
1. কারো অন্যায় আচরন দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন। সে স্মৃতিটি কখনো মন থেকে মুছে ফেলতে পারেনি। নীরবে সে স্মৃতি লালন করে একই নেগেটিভ ঘেরাটোপে বন্দী হয়ে রয়েছেন । যথারীতি রোবটিক প্রক্রিয়া বহমান ।
2. পারিবারের এমন কারো দ্বারা প্রভাবিত যে নিজ থেকে স্বাধীনভাবে তার পক্ষে কিছু করা সম্ভব হয় না । পরোক্ষ ক্ষোভ তাকে এগুতে দিচ্ছে না ।
3. অন্যের বিষয়ে অনেক বেশী নাক গলান । তিনি চান অন্যের জীবনও তার ইচ্ছেয় পরিচালিত হবে, যখন এতে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন তিনি প্যাসিভ নেগেটিভিটি বহন করে যাচ্ছেন । এতে দুপক্ষই প্যাসিভ নেগেটিভসেন দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছেন ।
4. নিজেকে নিজে সন্দেহ করা । কোন কাজ শুরু করার আগে এমনটা ভাবা যে আমি কি পারব? এটা কি আমার দ্বারা সম্ভব । যদি নিজেকে সন্দেহ হয় তবে সে কাজটি না করাই উচিৎ । যদি আমি প্রজেক্টটা ফেল করি! যদি এক্সিডেন্ট হয় ইত্যাদি চিন্তা করে একটি নেগেটিভ প্লটফর্ম নিজেই তৈরী করা ।
5. কোন ঘটনা পরিপূর্ণভাবে না জেনেই খারাপ ধারণা পোষন করা ।
6. আগে থেকেই Expects to worst তৈরী করা ।
7. মন্দ কোন পরিস্থিতি থেকেও ভাল কিছু পাওয়া সম্ভব সেটা না তলিয়ে only bad aspects of a situation.
8. অন্যের liability নিজে নেয়া ।
9. সবসময় নিজেকে নিখুঁত আর অন্যের দোষ অন্বেষন করা । নিজের ভাবমূর্তি নিয়ে সদা সঙ্কিত থাকা কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন ফুলকে মুখ ফুটে বলতে হয় না তার সুবাসের কথা ।
10. সমস্যা একা একা সমাধান করার চেষ্টা করা । এটা নিয়ে কারো সাথে ডিসকাস না করা ।
আমি ব্যাক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি মানুষ কেবলমাত্র তার নিজস্ব সৃষ্টিগত মেধা দিয়েই প্রকৃত সত্য আবিস্কার করতে সক্ষম । সে ক্ষেত্রে কোন আর্টিকেল বা থিসিসের প্রয়োজন হয় না । একথাগুলো হয়তো আমরা সবাই জানি কিন্তু প্রকৃত অর্থে মানিনা । নিজেকে নিজের তৈরী ফাঁদ থেকে বাচাঁতে আজ থেকেই সকল নেগেটিভ চিন্তা বাদ দেয়া আশু প্রয়োজন । আর এটি খুবই সহজ একটি বিষয় । কারন যারা সরাসরি কোন নেগেটিভ কাজের সাথে জড়িত নয় তারা তো তাদের কল্যাণ এগিয়েই রেখেছেন । এখন সমান্য একটু চেষ্টা । এ সাফল্যটি অবশ্যই বৈষয়িক কোন বিষয়ের সাথে জড়িত নয়, জড়িত অপরিহার্য মূল্যবান ব্যক্তিসত্তার সাথে; সুখী জীবন যাপনের সাথে ।
*** কিন্তু অত্যন্ত আশার বিষয় নেগেটিভ থটের এনার্জি লেবেলের ভাইব্রেশন অনেক নীচু হয় যদি তা পজেটিভ ভাইবের সাথে তুলনা করা হয় । ভাল থাকার এই দুর্মূল্যের বাজারে আলোকময় একটি সম্ভাবনাকে পরীক্ষা করেই দেখা যাক না !
1. অত্যাচারিত হলে ক্ষমা করা । ক্ষমার অর্থ এমন নয় যে মুখে উচ্চারন করলেই হয়ে যাবে । বরং ঘটনাটিকে মন থেকে এমনভাবে মুছে ফেলা যে তাতে আর কিছুই আসে যায় না ।
2. অন্যের অকল্যানময় চিন্তা বাদ দেয়া ।
3. নিজের প্রয়োজনকে শক্তিশালীভাবে জানানো ।
4. অন্যেরা কি ভাববে সেটা না ভেবে নিজের চিন্তা করা । কারন একসাথে সবাই কখনো আপনাকে ভাল বলবেনা ।
5. স্থিরতা । এটি অত্যন্ত অমোঘ একটি পন্থা ।
6. নিজেকে সুখী মনে করতে না পারলে অন্ততপক্ষে সুখী হবার ভান করা । এই ভানই একসময় সত্যি হয়ে ধরা দেবে ।
7. যে কোন বিষয় বিবেচনাবোধ, ইতিবাচক চিন্তা, পক্ষপাতহীনভাবে বা নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষন করা ।
8. অবশ্যই চিকিৎসকের শরনাপন্ন হতে হবে । এটি একটি ভয়াবহ মানষিক ব্যাধি । ঔষধের মাধ্যমে অনেকাংশে এক্ষেত্রে নিরাময় সম্ভব এবং সহজ ।
চেষ্টার নামই জীবন, আসুন একটু চেষ্টা করে দেখি ।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে এপ্রিল, ২০১৭ সকাল ১০:৩১