বহুদিন পর ব্লগে লিখতে বসেছি। এতদিন শুধু শুনেছি, দেখেছি আর বুঝেছি। মনটা বিষিয়ে আছে। খুব ভালো করেই জানি এবং বুঝতে পারছি, কাঁচের আড়ালে আবদ্ধ এই শব্দগুলোর কম্পাংক এবং আলোক তীব্রতা অনেক অনেক বেশি। তাই আমি কি বলতে চাইছি আর কিইবা আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে চাইছি, কেউ বুঝবে না।
ফেইসবুক ব্যবহার ব্যক্তিগতভাবে বন্ধ করে দিয়েছি অনেক আগেই। তবুও চারপাশ দেখে বেশ বুঝতে পারি কি ঘটে চলেছে। কেউ আছে তনু হত্যার বিচারের দাবিতে, কেউ আছে মুস্তাফিজ মোহে, কেউ আছে শ্যুটিং নিয়ে, কেউ আছে চিরায়ত সেল্ফি সাথে গুড মর্নিং ক্যাপশনে- দেশটা একটা চক্রের ভেতর আটকে গেছে। আমি এঁদের দোষ দেবো না। এঁরা সবাই হয়তো সচেতন, কিন্তু এই পরিস্থিতিতে আসলে কি করা উচিত, কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না বলে জীবনটাকে চিরাচরিত সাধারণ নিয়মে চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় আছেন। ব্লাড টেস্টের জন্য যখন সুঁচ ফুটানো হয় তখন রোগীকে অন্যদিকে তাকাতে বলা হয়, যাতে করে ব্যথাটা কম অনুভূত হয়। এঁরা হয়তো তাদেরই দলে, দেখবেনও না, ব্যথাও পাবেন না।
সেদিন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষককে হত্যা করা হলো। আজকেই আবার পত্রিকার সম্পাদককে খুন করা হলো। এবং চলতেই থাকবে। লাশের উপর লাশ জমিয়ে সিঁড়ি বানিয়ে উপরে উঠতেই হয়তো তাদের এই হত্যাযজ্ঞ। চারিদিকে এত বেশি আন্দোলন আর মিছিলের ছড়াছড়ি যে কারো কথা শোনার সময় কারোর নেই। কারণ তারা নিজেদের কথা নিজেরা শুনতে ব্যস্ত। এটা মাথায় রাখা উচিত, ভালো বক্তা হতে হলে ভালো শ্রোতা হওয়াটা প্রথম শর্ত। কিন্তু কার কথা কে শুনবে? সবাই শুধু বলতে চায়, শুনাতে চায়, কেউ শুনতে চায় না। তাই লেখার শুরুতেই বলেছি, আমার বলা শব্দের কম্পাংক অনেক অনেক বেশি। কেউ শুনতে চাইবে না। শুনতে চাইবে না বলেই পারবে না। এক বনে দুই সিংহ গর্জন দিতে পারে না। আমাদের দেশে সিংহের অভাব নেই এবং দুঃখের বিষয় হলো তারা কেউ কারো গর্জন শুনতে রাজি নয়। সবাই একসাথে গর্জন দিয়ে শব্দ দূষণ সফল করতে পারলেই তারা শান্ত।
গত ক' বছরে কতগুলো হত্যা আর গুম হয়েছে, তা পরিসংখ্যান করে বলা ছাড়া মনে রাখা অন্ততপক্ষে আমার মত ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের মানুষের পক্ষে সম্ভব নয়। নাম তো মনে থাকেই না, ইচ্ছে করেই রাখি না। নামে কিছু এসে যায় না, মারা যাওয়ার পর সবাইকে একটা নামেই ডাকা হয়- "ডেডবডি"। ওটাই শ্রেয়। বিচার চাই না, কারণ বিচার হবে না। কিন্তু একটা জিনিস বেশ বুঝতে পারছি, গাছকে বিষাক্ত পোকামাকড়ের হাত থেকে বাঁচাতে হলে কীটনাশক দরকার। এটা মালির দায়িত্ব। মালি দায়িত্ব পালন করতে অক্ষম হলে তাকে দায়িত্ব থেকে মুক্তি দেওয়াই শ্রেয়। অবশ্য গাছ মরে গেলে মালি নিজেই অক্সিজেনের অভাবে হাসফাঁস করে মৃত্যুপথে রওনা দিবে।
সরকার বুঝে গেছে কোন্ সময় এদেশের মানুষের কোন্ ওষুধের দরকার। দেশ যখন এই হত্যা গুম নিয়ে কিছুটা অস্থির হয়ে ওঠে, তখনই একটি করে রাজাকার ঝুলিয়ে দিয়ে সবাইকে ঠান্ডা করে দেওয়া হয়। গুটিবাজি। এটা এখন আমাদের কাছে অনেকটা খাওয়ার পর মিষ্টান্ন ভেজনের মত। কিন্তু প্রচন্ড ক্ষুধার সময় আমাদেরকে এক মুঠো চাল ধরিয়ে দিয়ে বলছে ফুটিয়ে খেও। ডেজার্ট আগেই দিয়ে গেলাম!
আমার লেখা কিংবা বাইরে আন্দোলনকারীদের গর্জন- কিছুই ফলপ্রসূ হবে না, এটা তেতো সত্য। কারণ ওই যে, একই ক্লাসে সবাই ফার্স্ট!
তবে একচা উপায় হয়তো আছে। দেশে যখন RAB এসেছিলো তখন ঠিক সেই সময় না আসলে দেশে নির্দোষদের লাশের পর লাশের স্তুপ হতো। ঠিক সেরকম একটা ব্যাটেলিয়ান এখন দরকার; যারা কিনা নিরপেক্ষ হবে। জানি না, আমার মাথায় যা এসেছে, সরকারের মাথায় তা আদৌ কখনো আসবে কিনা। আসলে ছক্কা, না আসলে উপরে উঠতে উঠতে একেবারে সাপের মুখে এসে খালাস!