somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

ফকির ইলিয়াস
আলোর আয়না এই ব্লগের সকল মৌলিক লেখার স্বত্ত্ব লেখকের।এখান থেকে কোনো লেখা লেখকের অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা, অনুলিপি করা গ্রহনযোগ্য নয়।লেখা অন্য কোথাও প্রকাশ, ছাপা করতে চাইলে লেখকের সম্মতি নিতে হবে। লেখকের ইমেল - [email protected]

জাতিসংঘের তাস ও বাংলাদেশের ভাগ বাটোয়ারা

২১ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



জাতিসংঘের তাস ও বাংলাদেশের ভাগ বাটোয়ারা
ফকির ইলিয়াস
=================================================
বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে আলোচনা আবারো বেশ তুঙ্গে। পাকিস্তান বলছে, বাংলাদেশের মৌলবাদী রাজাকারদের বাঁচাতে জাতিসংঘের কাছে নালিশ করবে। কী নালিশ তাদের? কী বলতে চায় তারা? বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে তাদের এত মাথাব্যথা কেন? তারা কি মনে করে ‘পাকিস্তান’ তাদের প্রভু দেশ? তারা তো মোনাফেকের মতোই ২৪ বছর বাঙালিদের দাবিয়ে রেখেছিল। এখনো কি সেই মানসিকতা পোষণ করে তারা? পাকিস্তানি জামায়াতিরা, বাঙালি জামায়াতিদের এখনো খাস পেয়ারা। এটা গোটা বিশ্বের মানুষ জানেন। এই প্রেম থেকে তারা যদি জাতিসংঘে যায়, তাহলে বাংলাদেশের পাওনাগুলোই পরিশোধ করতে হবে পাকিস্তানকে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম মিডিয়াকে বলেছেন, ‘এই বিষয়টি জাতিসংঘে তুললেই বিচার করার কথা বলে ১৯৫ পাকিস্তানি যুদ্ধাপরাধীকে দেশে নিয়ে গিয়ে বিচার করেছে কি না এবং না করে থাকলে কেন করেনি সে বিষয়ে পাকিস্তানের কাছে জানতে চাইবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশ মনে করে, পাকিস্তানি বাহিনীর গণহত্যা, যুদ্ধাপরাধের দায় পাকিস্তান এড়াতে পারে না। এ ধরনের অপরাধ তামাদি হয় না। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধ, গণহত্যার মতো অপরাধের দায়মুক্তি না দেয়ার বিষয়ে বৈশ্বিক ঐকমত্য আছে। ১৯৭৩ সালে পাকিস্তান জেনেভায় ইন্টারন্যাশনাল কোর্ট অব জুরিস্টে গিয়ে দাবি করেছিল, ১৯৫ শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীর বিচার করার একচ্ছত্র অধিকার পাকিস্তানেরই। কিন্তু সেই পাকিস্তান তাদের বিচার না করে কার্যত দায়মুক্তি দিয়েছে। পাকিস্তান নিজেই যখন নাজুক মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার সম্মুখীন, তখন বাংলাদেশের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার প্রসঙ্গটি জাতিসংঘে তুললে বাংলাদেশও এ বিষয়ে কথা বলার সুযোগ পাবে।’

আমরা দেখছি, ৪৫ বছর পরও এখনো আমাদের সম্পদের ন্যায্য হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি পাকিস্তান। বাংলাদেশ সরকার বিভিন্ন সময় সম্পদ ফিরিয়ে দেয়ার দাবি তুললেও পাকিস্তান নানা কৌশলে তা এড়িয়ে গেছে। তারা এখনো ফিরিয়ে নেয়নি হাজার হাজার বিহারী শরণার্থীও। সম্প্রতি রাজাকারদের বিচারে পাকিস্তানের নাখোশ ভঙ্গি নতুন করে ভাবনায় এনেছে, পাকিস্তানের কাছে পাওনার বিষয়টি। বিশেষজ্ঞরা, সম্পদ ফিরিয়ে আনার জোর দাবি জানিয়ে বলছেন, আন্তর্জাতিক ক‚টনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে খুব সহজেই সমাধান করা যায় বিষয়টি। ২৪ বছরের অর্থনীতিক বঞ্চনা পেরিয়ে বাঙালি জাতি স্বাধীনতা পেয়েছিল। তবে যুদ্ধ শেষ হলেও বাংলাদেশের বঞ্চিত হওয়ার ইতিহাস শেষ হয়নি এখনো। পাকিস্তান বাংলাদেশের সম্পত্তির হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি আজও।

১৯৭৪ সালে পাকিস্তানের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকা সফরে এলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ৪০০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা দাবি করে। তখন ডলারের মূল্য ছিল ৮ টাকা। চুয়াল্লিশ বছরে যা দাঁড়িয়েছে ৮০ টাকায়। এর মানে পাকিস্তানের কাছে আমাদের এখনকার পাওনা ১০ গুণ বেশি হয়ে ৪০০০ ঢ ১০= ৪০০০০ মিলিয়ন ডলার হয়েছে, যা টাকার অঙ্কে ৩২ হাজার কোটি টাকা। এ ছাড়াও দেশি-বিদেশি বেশ কিছু গবেষণাপত্রের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছে তৎকালীন হিসাবে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, পাকিস্তান দুর্বৃত্তদের দেশ। তাদের কাছে বাংলাদেশের সম্পদ পাওনা আছে সেটাই তারা স্বীকার করে না। এই অবস্থায় আমাদের সম্পদ ফিরিয়ে দিতে তাদের মানসিকতার পরিবর্তন আদৌও হবে কিনা তা ভবিষ্যৎ বলে দেবে। সরকারদলীয় সংরক্ষিত সংসদ সদস্য ফজিলাতুননেসা ইন্দিরার সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের সময় একজন আম্পায়ারের দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি কোনো দেশের পক্ষেই কাজ করেননি। তখন অনেক সম্পদ বিভাজন হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সেভাবে বিভাজন হয়নি। তবে আমাদের সঙ্গে পাকিস্তানের যখন ক‚টনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন হয়, তখন থেকেই আমরা পাওনা আদায়ের চেষ্টা করে যাচ্ছি। কিন্তু তারা স্বীকারই করে না, যে আমাদের সঙ্গে তাদের দেনা-পাওনার হিসাব রয়েছে।

ধারাবাহিক ঘটনা সাক্ষী দিচ্ছে- মুক্তিযুদ্ধের ক্ষতিপূরণ ছাড়াই উত্তরসূরি রাষ্ট্র হিসেবে অবিভাজিত সম্পদের ন্যায্য হিস্যা এবং একাত্তরে ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তান থেকে সরিয়ে নেয়া অর্থবাবদ পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের পাওনার পরিমাণ ২৩৬ কোটি মার্কিন ডলার (১৮,০০০ কোটি টাকা)। ২০১০ সালে পাকিস্তানের কাছে এই ২৩৬ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি করেছিল বাংলাদেশ। পাকিস্তান সে দাবিকে ‘স্পর্শকাতর’ অভিহিত করে কার্যত এড়িয়ে যায়। তবে তারা পুরনো যে ঋণ পাবে, সে ঋণের সুদের পরিমাণ অস্বাভাবিক বাড়িয়ে নির্ধারণ করে তা পরিশোধের জন্য চাপ সৃষ্টি করছে বাংলাদেশের ওপর। বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সুজা আলম তাদের পুরনো ঋণ পরিশোধ করতে গত ১৭ ডিসেম্বর ২০১৫ চিঠি পাঠান অর্থ মন্ত্রণালয়ে। ওই চিঠির কড়া জবাব দেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।

১৯৭০ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়ের পর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বৈদেশিক সাহায্য হিসেবে আগত প্রায় ২০০ মিলিয়ন (২০ কোটি) ডলার রক্ষিত ছিল ঢাকায় স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানে। মুক্তিযুদ্ধের সময় ওই অর্থ আত্মসাতের উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা হয় ব্যাংকের লাহোর শাখায়। ওই অর্থ সরাসরি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানিয়ে আসছে। এ ছাড়া ১৯৭১ সালের আগে অখণ্ড পাকিস্তানের প্রায় ৪৩২ কোটি ডলারের সমপরিমাণ সম্পদে হিস্যার জন্য বাংলাদেশ দাবি জানিয়ে আসছে। বাংলাদেশ মনে করে, ১৯৭১ সালের আগে পূর্ব পাকিস্তানের জনসংখ্যা বিবেচনায় বাংলাদেশ ওই সম্পদের ৫৬ শতাংশ, বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রে পূর্ব পাকিস্তানের অর্থনৈতিক অবদান বিবেচনায় ৫৪ শতাংশ এবং সমতার নীতি অনুসরণ করলে ৫০ শতাংশের দাবিদার। এ দুটি খাতে পাকিস্তানের কাছে বাংলাদেশের দাবি ২৩৬ কোটি ডলার। আর যুদ্ধের ক্ষতিপূরণের পরিমাণ এখনো হিসাবই করা হয়নি।

পাকিস্তানের সঙ্গে এখন যুক্ত হয়েছে তুরস্ক। এই দেশটিও এখন মৌলবাদের অন্যতম তোষক। রাজাকারদের ফাঁসিতে-পাকিস্তান ও তুরস্কের প্রতিক্রিয়া প্রসঙ্গে একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, ‘জামায়াতে ইসলামী এখন পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদার। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বাংলাদেশে যাদের বিচার হচ্ছে এবং অপরাধ প্রমাণিত হলে সাজা পাচ্ছে তাদের পাকিস্তানের জামায়াত ও সরকার নিজেদের নেতা ও প্রতিনিধি মনে করে। তারা তো নিজেদের লোকদের বিচার, সাজা ও ফাঁসির বিরোধিতা করবেই।’ তিনি বলেন, তুরস্কে ক্ষমতায় থাকা একে পার্টিও বৈশ্বিকভাবে জামায়াতের মিত্র। তারা এ বিচারকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে বিচার বলে প্রচারণা চালাচ্ছে।

এর মাঝেই খবর বেরিয়েছে বিএনপির ইসরায়েল কানেকশন। সরকার এটাকে কড়াভাবেই নিয়েছে। তাহলে কি সব রসুনের গোড়া একখানে?

জাতিসংঘ মূলত একটি তাসের ঘর। সেখানে কার কী পাওয়ার আছে- তা আমরা প্রতিদিন দেখছি। জাতিসংঘ কারো পৈতৃক সম্পত্তি নয়। সেখানে গিয়ে কেউ ‘চকোলেট আবদার’ করলেও তা কেউ শুনবে না। কেউ দাবি তুললে, নালিশ দিলে পাল্টা দাবি-নালিশ জানানো হবেই। তা পাকিস্তানের জানা ও বুঝা দরকার। বাংলাদেশ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। তাই বিশ্বমাঠে যা যা করা দরকার বাংলাদেশ তা করবে। আমাদের রাজনীতিকদের এই হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে যেতেই হবে।
--------------------------------------------------------------------------------------------
দৈনিক ভোরের কাগজ ॥ ঢাকা ॥ শনিবার, ২১ মে ২০১৬
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মে, ২০১৬ সকাল ৯:৩৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সংস্কারের জন্য টাকার অভাব হবে না, ড. ইউনূসকে ইইউ

লিখেছেন শাহ আজিজ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ দুপুর ১:২৪



বুধবার (৬ নভেম্বর) দুপুরে ঢাকার তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউর রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার এবং সফররত এক্সটার্নাল অ্যাকশন সার্ভিসের এশিয়া ও প্যাসিফিক বিভাগের পরিচালক পাওলা... ...বাকিটুকু পড়ুন

তোমার বিহনে কাটে না দিন

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ বিকাল ৪:০৩



অবস্থানের সাথে মন আমার ব্যাস্তানুপাতিক,
বলে যাই যত দূরে ততো কাছের অপ্রতিষ্ঠিত সমীকরণ।
তোমাকে ছেড়ে থাকা এতটাই কঠিন,
যতটা সহজ তোমার প্রতিটি চুল গুনে গুনে
মোট সংখ্যা নির্ণয় করা।
তোমাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

×