মহাকাল আমাকে নিয়তির খাঁচায় বন্ধি রেখে ইচ্ছেমত বাজিয়েছ রাষ্ট্রযন্ত্র।অনবরত রক্তাক্ত করেছ বাদ্যশলাকায়। আমার ঘাম,অশ্রু দিয়ে ক্রমেই লবণাক্ত করেছ মহাসাগর।আজ তোমার জমিতে তোমারই শ্বশান রচনা করে আউটডোরে ঝুলিয়ে দেব ক্রস-ফেস্টুন।তোমার ইচ্ছের নাটাই গুটিয়ে এ মাত্র স্নান সেরে আসলাম নক্ষত্র-ইউরেনিয়াম দ্রবণে।মূহর্তেই পিষ্ট করে দিলাম মিলনিয়ামের কোটরে ছটফট করতে থাকা দাস্বত্বের ভয়াল বন্ধনী।আমার চির বৈরাগী বাউল সমাধীতে লাগিয়ে দিলাম ধূসর-কঠিন আত্মার নেমপ্লেট।পুরোনো সেই ভৃত্যের খোলস শীরিষ কাগজে অব্যহতি দিয়ে, জড়ালাম বিস্ফোরনের নব খোলস।ধাতব ইরেজারে ঠাই নিল আমার বৃত্তের অসমাপ্ত জীবন অতীত।
মুছে দিলাম সবুজ কৈশরের সেই চঞ্চলা তরুনী লতাকে। যাকে নিয়ে অসংখ্য রৌদ্র-রূপালী অপরাহ্ন সময় চুষে নিয়েছি জলরঙে ভাসানো চন্দ্রপাতার পানশিতে।
আমার জননীর শরীরের মৃত্তিকা গন্ধ,বুকের পার্বতীর তরল আর দেহের লাঙ্গলের ফলার ক্ষতগুলো অগাহ্য অবনমন করেছি এ মাত্র।কসম আমি এ মায়া যাদুবল ছিড়ে টুকরো টুকরো করেছি।
প্রতারনা করেছি প্রেয়্সীর কোমল হূৎপিণ্ডে।যার সাথে হূদয় জাইগোটের সমীকরণে ব্বংশপ্রাণ টিকিয়ে রাখতে প্রতিজ্ঞাবব্ধ ছিলাম পৃথিবীর শেষ সন্ধাকালীন উৎসবেও।বহু মাতাল রাত্রি তার হূদয় ছোঁয়া বসন্ত শিশির নাভী গহব্বর থেকে পান করেছি উম্মাদ উত্তেজনায়।ছুড়ে ফেলে তার জলসান্দ্রতার মায়া,মুছে যাওয়া কাজলের গোঁধুলী,আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি ভয়াবহ এক ধ্বংশযজ্ঞের।
আমি একাকি সৈনিক এই জোস্না-আঁধারী ,নিদ্রাচ্ছন্ন শহরে অগ্নি মিছিল নামাব এখন। এই শহরের প্রতিটি কোষে কোষে গৃহযুদ্ধে।কংক্রিটে-কংক্রিটে কিলবিল করছে বিষপোকা।প্রতিনিয়ত এ শহর প্রসব করে যাচ্ছে নোংরা লাভাস্রোত।আমি পুড়িয়ে দেব এই প্রসব অঙ্গ।বাতাসে প্রসবতন্ত্রের পোড়া গন্ধ শুঁকব।
ঐতো বাতাসে উড়ছে থোকা থোকা মগজ-মেঘ।ফানুশ উড়াচ্ছে শান্তনার ভাষন। ভেসে বেড়াচ্ছে গল্প-কবিতার স্ফুলিঙ্গ।
নিমিষেই এসবকিছু মুখে পুরে পাচার করে দিলাম গলবিলে।
অমসৃণ ঠোটে আয়েশী জায়গা করে নিল ননফ্যান্টাসি সিগারেট-ফিল্টার।হাতে ডুমস লাইটার।
সায়ানাইড আগুন লাগিয়ে দিলাম তাবত নির্মাণে।এ প্রান্ত থেকে ঐ প্রান্তে।সকল উপাসনালয়ের ছাঁই উড়িয়ে ফূঁ দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম সৃস্টিকর্তা বরাবর।জ়্বালালাম,ধ্বংশ করলাম এ শহর। প্রচন্ড দাবানলে পুড়লো সংবিধান,নাট্টমঞ্চ,ভাষনমঞ্চ,গনতন্ত্রের মিনার।পুড়লো সংবাদপত্র,ইলেকট্রিক মিডিয়া,বেশ্যালয়,নির্মম বাসস্হান,দলীয় কার্য্যালয়,শহীদবেদির পেনসিডিল,মদ্যবার,ক্যাসিনো হাউজ।
কিছু আত্মা উড়িয়ে দিলাম এই পৃথিবীর ন্যায় নীলাভ-সুন্দর অন্য কোন গ্রহাণুর উদরে।বাকিসব পুড়ে স্তুপাকার হয়ে উর্ধ্বেউন্নত হচ্ছে আমার পদসন্মূখে।দৃস্টিসীমায় সব ধ্বংশ সব জীবন্ত কয়লার রং,প্রান-বস্তুর এক ধূসর শ্বশান।নিস্তব্ধ,নিস্তেজ এই শহরের এখন আমিই নিয়ন্ত্রক!আমিই সাময়িক দেবতা এই ভূমির!
উড়ছি,হাটছি,পদদলিত করছি বিশাল এই শহরের শেষ জ্বলন্ত স্তুপগুলো।একাদশী এই জোস্নাকে ঘোলাটে করে দিচ্ছে শহর পোড়া ধোঁয়া।এই রক্ত,ধূলি,জোস্নার মিশ্রণে আবগাহন করবো এখন।
আমি প্রস্তুতি নিচ্ছি বিজয় উৎসবের।
কিন্ত একি! দূরে কি কোন জীবন্ত ছায়ামূর্তি নড়ে উঠল?এই অন্ধকার বাষ্পে প্রানের উপস্হিতি জানাচ্ছে সে!কে সে এই মৃত্যু শহরের অবশিষ্ট অংশ? যাকে আমার ক্রোধের আগুন তাকে দাহ্য করে নি!
হুঙ্কার দিয়ে ছুটলাম তার দিকে। ক্রমশ নিকটতর হতেই ষ্পষ্ট দেখলাম একটি রুগ্ন,অমসৃণ ত্বক,জলহীন ধূঁলোর ফ্যাকাশে চুলের এক কিশোরী। অথচ চোখে কী আত্মবিশ্বাসের দৃষ্টি! সে বসে আছে পূড়ে প্রবালের ন্যয় ঝাঁঝাল হওয়া একটি পাথরের উপর।একখানি উজ্জল কাপড় তার শরীর জড়ানো। সে কাপড় বুক থেকে উরুর মাঝামাঝি পর্যন্ত আড়াল করতে পেরেছে মাত্র।
কে তুমি?কি পরিচয় তোমার?এই ভয়াবহ বিপর্যয়েও তুমি কিভাবে অক্ষত আছ?
প্রশ্নমাত্রই আনুভব করলাম আমার কণ্ঠস্বর ক্রমশ শীতল হয়ে আসছে!হূৎপিণ্ডে জমা হচ্ছে রঙিন জলকণা! সে আমার প্রশ্নের উত্তর দিল না।শুধু হাসলো, সামান্যতমা হাসি।সে হাসি পৃথিবী দেয়ালে কয়েকবার প্রতিধ্বনিত হল !
কন্ঠস্বর শক্ত করার চেস্টা করলাম কে তুমি?কে...???
হা হা।তুমি কি আমার এই পোষাকটি দেখতে পারছ না?এটিইতো আমার টিকে থাকার প্রাকৃ্তিক নির্বাচন।
বলেই সে সোজা দাড়াল। নগ্ন পা, নিজেকে কাপড়ের ওপাশে আড়াল করে কাপড়টিকে দূহাতে প্রসারিত করে মেলে ধরল আমার চোখের সামনে। এই পৃথিবীর এক শ্রেষ্ঠ্তম ফুলের শ্রেষ্ঠ্তম বিবর্তনের কূড়ি ফুটল তার মুখে,সেই মুখ আমার চেয়ে মাত্র একহাত আদর দুরুত্বে!এই থোঁকা থোঁকা আলো আঁধারীতে আমি ষ্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি এই বস্ত্র ধারন করে আছে আমার পতাকার বৃত্তের রং !! হা এটাই আমার পতাকা !
দেখো দেখো আমার এই আত্মরক্ষার অবলম্বন খানি।দেখো...।সে কিঞ্চিৎ নাড়াল পতাকাটি।তারপর জড়তাহীন আগের মত শরীরে জড়াল।আবার হাসলো। লজ্জাকাতর মিশ্রণের এক মিস্টিহাসি।সে হাসি সম্পূর্ণ আমাকে ইংগিতপূর্ণ।তর্জনী উঠাল আমার দিকে।হা হা।
এবার আমি খেয়াল করলাম আমি নিজেই নগ্ন! সম্পূর্ন বস্ত্রহীন এক মানব!এই বিশাল ধ্বংশক্রমে কখন নিজের সম্ভ্রম-আচ্ছাদন বিসর্জন দিলাম? আমি কিংকর্তব্যবিমূড়।কি করব?আমি কি ছিনিয়ে নেব এই পতাকা এর থেকে?এই সোনালী প্রজন্মের বালিকাকে লজ্জার জলে দ্রবীভূত করে নিজের নগ্নতা ঢাকবো?আমি এলোমেলো ভাবে দৌড়ালাম।বিক্ষিপ্ত,উম্মাদের মত।অবশেষে নিজের বিবস্ত্রতা রক্ষা করলাম পাশের ধ্বংশস্তূপের উত্তপ্ত-জ়্বলন্ত কয়লায় নিচে গলা পর্যন্ত দেহ আড়াল করে।
আমি নিম্নাংশ থেকে ক্রমশ গলে যাচ্ছি।
অবসাদগ্রস্ত,নিথর দেহে বুঝতে পারলাম বালিকাটি এখন নৃত্য করছে। এ নৃত্য ভুবন দোলানো!পৃথিবীকে মোহাবিষ্ট করার!নতুন প্রজাতির কোন পুষ্পের জন্ম আহব্বানের!
ঝাঁপসা চোখে দেখলাম এই রাত্রির ঘুমাতূর সূর্যও টুকরো টুকরো প্রাজন্মিক পরশ দিচ্ছে নৃত্য কলার প্রতিটি ফাঁকে!
নূপুর ছিল না।তারপরও এই ব্যকরণ নৃত্যে অনবরত নূপুরছন্দ ছড়াচ্ছে!নৃত্যবস্ত্র ছিল না। তারপরও সময়ের অতি নিখূত বাস্তাবায়নের পোষাক দোলা দিচ্ছে নৃত্য কোমর!চৌদিকের পোড়া গন্ধ ছাপিয়ে বাতাসে ছড়াচ্ছে তার দেহের মিস্টি সূরভী!নিস্তব্ধতায় ফানেলে নৃত্যের তালে তালে এই পৃথিবী নতুন কোন নিয়ন সুর বাঁধছে!রাত্রি আন্ধকারের পাজর মিহি দানায় উড়িয়ে চতূর্মাত্রিক আষাড়ীয় বৃষ্টিতে ভিজছে বালিকা।
আমি মুগ্ধ হয়ে দেখছি;উপভোগ করছি।তুমি ভালো থেকো।কোন এক ভেজা সন্ধ্যায় মাখনপ্রদীপে আচ্ছাদিত কর আমার আত্মা!
আমি ক্রমেই ধ্বংশ-স্তুপের নিচে তলিয়ে যাচ্ছি এখনকার শেষ সৈনিক।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে মে, ২০১৫ সকাল ১১:৩১