ছোট থেকেই নীল চোঁখের মেয়েদের
উপর আমার একটা দুর্বলতা আছে।কোন
একটা নীল চোখের মেয়ের সাথে
প্রেম করতে ইচ্ছা করে,ভালবাসতে মন
চাই তাকে।যে চোঁখ দুটোর দিকে
আমি অপলক তাকিয়ে যাবো
নীলিমার মায়ায়।চারিদিকে
থাকবে নীলের ছড়াছড়ি।এটা নীল
রঙ্গের নদী বয়ে যাবে যার পার ঘেসে
হেটে বেড়াবো দুজন।আমি নীল ঝিনুক
কুড়াবো আর মাঝে মাঝে মুঠো ভরে
তার দিকে বাড়িয়ে দিব।সে তার
ঢোল পড়া হাসি দিয়ে এক ঝটকায়
কেড়ে নিবে সেই ঝিনুক গুলো।একটা
একটা করে নদীর নীল জলে ফেলবে আর
বলবে,নীলকে নীলের মাঝে মিশে
যেতে দাও।এতে তার প্রকৃত সৌন্দর্য
প্রকাশ পায়।তাকে নিজে আপন করে
পেতে চেয়ো না।
*
আমি যখন ক্লাস ফাইবে পড়ি তখন
আমাদের সাথে একটা মেয়ে পড়তো।
যার চোঁখ দুটো ছিলো অসম্ভব নীল।
মেয়েটির নাম ছিলো নীলিমা।ওকে
খুব পছন্দ করতাম।সেটাকে ভালবাসা
বলে কিনা জানতাম না।তবুও মনের
অজান্তেই সাদাকালো ক্যানভাসে
একটা রঙ্গিন ছবি আকাঁ হয়েছিলো।
একদিন ওকে বলেছিলাম,আচ্ছা
তোমার
নাম নীলিমা কেন?
নীলিমা তার টোল পড়া গালে একটা
হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল,আমার চোঁখ
দুটো নীল তো।তাই আব্বু নীলিমা
রাখছিলো।
তারপর ও একরাশ অভিমানী কন্ঠে
বলেছিলো,
--কেন?তোমার পছন্দ হয় নি বুঝি?
--পছন্দ হবে না কেন?খুব পছন্দ হয়েছে।
এই কথা শুনে ও হেসে ফেললো।আমি
মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে।ও
বলল,
-কি হল?
আমি মাথা নেড়ে বললাম,
-না।কিছু না।আচ্ছা আমি কি তোমার
গালটা একটু ছুয়ে দেখতে পারি?
-কেন?
-তুমি হাসলে তোমার গালে অনেক
গভির একটা টোল পড়ে।আমি একটু ছুঁয়ে
দেখতে চাই।
ও কিছুক্ষন ভেবে বলল,
-পারো।তবে বেশি না।অল্প একটু।
আমি মাথা নেড়ে হাত দিয়ে আলতো
করে ওর গালটা ছুয়ে দেয়েছিলাম।
ঠিক যেই জাইগাটাতে ঢোল পরে।
দেখেছিলাম ও লজ্জায় লাল হয়ে
গেছে।ওর দুধে আলতা ফর্সা মুখটাতে
মনে হয়েছিলো শরীরের সমস্ত রক্ত
জমাট বেধে আছে।তারপর ও দৌড়ে
আমার কাছ থেকে চলে গিয়েছিলো।
*
একদিন নীলিমাকে আমি একটা চিঠি
লিখি।আমার অনভিগ্গ হৃদয়ে আবেগ বা
ভালবাসার আকুন্ট জোয়ারে কাঁচা
হাতের লেখাতে কিছু শব্দের ছড়াছড়ি
করে রেখেছিলাম চিঠিতে।চিঠিটা
ছিলো এই রকম,
-
প্রিয় নীলিমা,
-
জানো,আমি তোমার ঐ নীল চোঁখদুটোর
প্রেমে পড়ে গেছি। তোমার নীল
চোঁখ দুটা কি আমাকে দিবে?আমি
সারাটা জীবন তাকিয়ে থাকতে চাই
তোমার নীল চোখ দুটোই।বন্ধি হতে
চাই
তার মায়ার জালে। ছুঁয়ে দিতে চাই
তোমার হাসিতে
ফুটে উঠা টোল।ভালবাসতে চাই
তোমাকে।তুমি কি আমাকে
ভালবাসবে?
ইতি,
তোমাকে ভালবাসি
জল
*
চিঠিটা কিভাবে যে লিখেছিলাম
সেটা মনে নেই।তবে এতটুকু মনে আছে
কি একটা উপন্যাস থেকে যেন এগুলো
শিখেছিলাম।চিঠিটা যখন ওকে দেই
তখন বলেছিলাম,বাড়ি গিয়ে পড়বা।
তারপর আমাকে জানাবা।ও
বলেছিলো,এটা কি?আমি
বলেছিলাম,খুললেই দেখতে পারবা।
টিফিন শেষ হবার কারনে ও চিঠিটা
নিয়ে ক্লাসে ঢুকে পড়ে।
*
ওর সিদ্ধান্ত আমি আর পাই নি।সেই দিন
বাসায় গিয়েই নাকি ও অসুস্ত হয়ে
পরে।হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
জানতে পারি ওর নাকি ব্লাড
ক্যানসার হয়ছে।ছোট থাকাই এত কিছু
তখন বুঝতে পারি নি।ওকে একদিন
দেখতে গিয়েছিলাম আমরা অনেক বন্ধু
মিলে।সাদা বেডে সাদা পোশাকে
মুখে অক্সিজেন মাস্ক নিয়ে নিথরে
ঘুমুচ্ছিলো মেয়েটা।ওকে সেই শেষ
দেখি।তার কিছু দিন পরে শুনতে পাই
নীলিমা মারা গেছে।বিশ্বাস করুন
পাঠক কথাটা শোনার পর আমি একটু
কাদছিলাম না।কেন যেন আমার
চোখে পানি আসে নি সেদিন।শুধু এত
টুকু মনে হয়েছিলো বুকের ভিতরে কে
যেন দুমরে মুচরে সব ভেঙ্গে নির্যাশ
বের করে নিচ্ছে।
এভাবেই শেষ হয়ে যায় আমার প্রথম
প্রেমের কাহিনী।কিন্তু ভালবাসা?
সেটা কি আদৈও শেষ হয়েছিলো।
★
★
★
তারপর কেটে গেছে ১৬ টা বসন্ত।নীল
আকাশের মাঝে সাদা তুষারশুভ্র
মেঘের দুরন্তপনা আর শেষ বিকেলে
বিষন্ন কোকিলের ডাকের সঙ্গি হয়ে
সময়ের পথ পাড়ি দিয়ে কেটে গেছে
এতটা বছর।আমি বিশ্বাস করতাম
নীলিমা নিশ্চয় একদিন আমার কাছে
ফিরে আসবে।ভালবাসার চাওয়াগুলো
খুবই অবাস্তব হয়।তবুও সবাই চায়।প্রেমিক
মন যে মানে না।নীল চোখের মেয়ে
দেখলেই তাদের মাঝে ওকে খুজতাম।
কিন্তু বার বারই ব্যর্থ হতাম।অজান্তেই
কিছু জল চোঁখ বেয়ে পড়তো।
*
শুনেছি আশায় নাকি কার্য সিদ্ধি হয়।
অপ্সরাকে যেদিন দেখলাম সেদিন
আমার মনে হয়েছিলো নীলিমাই
হয়তো আবার পুর্নজন্ম লাভ করছে।বুকের
ডান পাশে একটা চিন চিন ব্যাথা শুরু
হয়ে যায়।সৃষ্টিকর্তা হয়ত নীলিমার
একটা ক্লোন কে পৃথিবীতে
পাঠিয়েছে আমার জন্য।শুধু আমার জন্য।
*
সেদিন ছিলো আমার চাচাত বোন
রিনার বিয়ে।ক্যামেরাম্যানের
দায়িত্ব আমাকে দেওয়া হয়েছিলো।
তাই ক্যামেরাটা নিয়ে চারপাশে
সবার ছবি করছিলাম।হঠাৎ চোখ আটকে
গেল একটা মেয়েকে দেখে।মনে
হল,নীলিমা?নীলিমা এখানে আসবে
কিভাবে।ও তো......
একটু পরেই ভুল ভাঙ্গলো যখন দেখলাম
মেয়েটাকে একজন ডাকছে।অপ্সরা।কি
সুন্দর নাম!!
★
মেয়েটা একটু একা হতেই গেলাম
পরিচয় হতে।গিয়ে বললাম,
-এক্সকিউজ মি....
--জ্বী বলেন।
--আপনি কি বরযাত্রী হিসাবে
আসছেন?
--হ্যা।কেন?
--না এমনি।ছেলে আপনার কি হয়।
--আমি ছেলের চাচাত বোন।আপনি?
--জ্বী,আমি মেয়ের চাচাত ভাই।
--ও তাই।খুব ভাল।
-নামটা জানতে পারি?
--কার?
--আমার আপুর বরের চাচাত বোনের যে
এখানে দাড়িছে আছে।
--হি হি হি।আমার নাম অপ্সরা।আপনার?
মেয়েটা হাসলে টোল পড়ে।সেই
হাসি,সেই টোল।কত না পরিচিত সেই
হাসি?
--এই যে মিস্টার।কি হল?
--জ্বী,কিছু না।আমার নাম জল।
দেখলাম ওর চোখটা একটু সরু হয়ে গেল।
হয়ত ভাবছে মিথ্যা বলছি।
--কি?বিশ্বাস হচ্ছে না?
--না মানে।আপনার নামটা একটু আজব।
--হা হা হা।একটু না পুরাটাই আজব।আমি
নাকি জলের মত।সহজ,সরল,তরল কিন্তু
হঠাৎ জলশ্বাস।
--হি হি হি।আপনি তো অনেক মজার
মানুষ।
আমিও একটু মাথা চুলকে হাত রের করে
হেসে বললাম,
--হা হা হা হা।
*
এভাবেই পরিচয় হলো অপ্সরার সাথে।
এভাবেই আসা যাওয়া করতে করতে ওর
সাথে ভাল একটা সম্পর্ক হয়ে গেল।ওর সব
কথাই ও আমার সাথে শেয়ার করত আমি
ও করতাম।আস্তে আস্তে আরো
কাছাকাছি আসলাম দুজন।ফোনের কথা
বলার পরিমানও বাড়ছিলো ক্রমে
ক্রমে।
★
আমি অপ্সরার মাঝে নীলিমাকে
খুজে পেয়েছিলাম।তাই ভালবাসার
রংটা আরো গভির হয়ে জেকে বসে
জলরঙ্গের ছবিটাতে।
তারপরে একদিন অপ্সরা সহ অনেকেই
বেড়াতে আসে আমাদের বাসায়।আমি
বাসায় ছিলাম না।এসে দেখি অপ্সরা
আমার চির ঐতিহাসিক এলোমেলো
রুমটা গোছাচ্ছে।আমি দেখে অবাক
হয়ে তাকিয়ে ছিলাম ওর দিকে।কত
মায়াবী লাগছিলো ওকে।কত না
যত্নে গোছাচ্ছে।হঠাৎ ও আমাকে
দেখে অনেকটা লজ্জা পেল।নিজেকে
সামলে নিয়ে বলল,
--এতবড় একটা ছেলে আপনি।অথচ
নিজের রুমটাও গুছিয়ে রাখতে পারেন
না?
আমি একটা গাধার মত হাসি দিয়ে
বললাম,
--আমি গুছিয়ে রাখলে তোমার মত
একটা বৌ এসে কি করবে শুনি।
অপ্সরার মুখটা আরো লাল হয়ে গেল।
আচ্ছা সুন্দরি মেয়েরা রাগলে মুখ লাল
হয় আবার লজ্জা পেলেও মুগ লাল হয়
কেন?
*
ওকে নিয়ে পরের দিন অনেক জায়গায়
ঘুরে ঘুরে দেখলাম।সারাটা দিনকে
মনে হল একটা মুহুর্ত মাত্র।সময়গুলো খুব
সার্থপর।প্রিয় মানুষটা কাছে থাকলে
সময় খুব দ্রুত সরে যায়।তখন মনে হয় সময়ের
কানটা ধরে তার ঠিক দুই ইন্ঞ্বি নিচে
একটা বর্জ্যপাত ঘটায়।
.
বাইরে থেকে এসে ফ্রেশ হয়ে রুমে
বসে আছি।অপ্সরা কালকে চলে যাবে।
এই কথটা শুনে মনটা খুব খারাপ হয়ে
গেছিলো।আর দুইদিন থেকে গেলে কি
হত না?এই দুই দিন যে কবে শেষ হবে তা
কেউ জানে না।
★
এমন সময় অপ্সরা আসলো আমার রুমে।
দেখলাম ওর মনটাও খারাপ।এসে
আমাকে সরাসরি প্রশ্ন করলো,নীলিমা
কে?
হঠাৎ এমন প্রশ্নে ভেবাচেকা খেয়ে
গেলাম।ও নীলিমার কথা জানলো
কিভাবে।নীলিমার কথা একমাত্র
আমি ছাড়া তো আর কেউ জানে না।
তাই অবাক কন্ঠে বললাম,
--তুমি নীলিমার কথা জানলে
কিভাবে?
--কিছু মনে কইরো না।তোমার
ডাইরিতে পাইছি।
একটা দীর্ঘনিশ্বাস ছেড়ে বললাম,
--বলার কি আছে?ডাইরিতে তো সবই
লেখা আছে।পড়ছো নিশ্চয়?
--হুম..পড়ছি।তুমি কি এখনও ওকে
ভালবাসো?
--হ্যা ভালবাসি।তবে তাকে আমি
একজনের মাঝে খুজে পেয়েছি।তাই
আমার মনটা এখন তাকেই ভালবাসে
ফেলেছে।সে কে জান?
অপ্সরা মাথা উচু করে বলল,
-কে?
আমি উঠে এক ঝাটকায় দেয়ালের
সাথে চেপে ধরে ওর হাতে হাত আর
চোঁখে চোঁখ রেখে বললাম,
--সেটা তুমি।আমি তোমার নীল
চোঁখের মাঝে খুজে পেয়েছি
নীলিমার নীল চোঁখ।তোমার হাসির
ঢোলের মাঝে পেয়েছি নীলিমার
হাসির টোল।আর......
এতটুকু বলেই থেমে গেলাম।ও নরম সুরে
বলল,
--আর কি?
--আর নীলিমার নীল ভালবাসায়
রাঙ্গিয়ে ফেলেছি তোমাকে।তুমি
কি সেই রঙ্গে পরিপুর্নতা দেবে?
অপ্সরার নীল চোঁখের কার্নিস বেয়ে
গড়িয়ে পরতে লাগলো শ্রাবনের
ধারার মত নীল রঙ্গের পানি।আচ্চা ওর
চোঁখের পানি নীল কেন?নীল চোঁখের
পানি কি নীল হয়?