জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়িতে একবার রবীন্দ্রনাথের বিসর্জন নাটকের মহড়া চলছিল। নাটকে রঘুপতি সেজেছিলেন দীনেন্দ্রনাথ ঠাকুর, আর জয়সিংহের ভূমিকায় স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ। একটা দৃশ্য ছিল এমন, জয়সিংহের মৃতদেহের ওপর আছড়ে পড়ে শোকবিহ্বল রঘুপতি। দৃশ্যটার মহড়া চলছিল বারবার। দীনেন্দ্রনাথ বাবু ছিলেন কিছুটা স্থূলকায়। বারবার তাঁর ভার বহন করা কবিগুরুর জন্য কঠিন হয়ে পড়ছিল। একবার দীনেন্দ্রনাথ একটু বেকায়দায় রবিঠাকুরের ওপর আছড়ে পড়লেন। রবীন্দ্রনাথ কঁকিয়ে উঠে বললেন, ‘ওহে দিনু, মনে করিসনে আমি সত্যি সত্যিই মারা গেছি!’
মার্ক টোয়েন
মার্ক টোয়েন একবার ট্রেনে চড়েছেন। একে তো ট্রেন এসেছিল দেরি করে, তার ওপর ট্রেনটি চলছিলও খুব ধীরগতিতে। এমন সময় কন্ডাক্টর ভাড়া চাইতে এলেন। টোয়েন তাঁর হাতে অর্ধেক ভাড়া ধরিয়ে দিলেন। কন্ডাক্টর রাগতস্বরে বললেন, ‘অর্ধেক ভাড়া দিলেন কেন মশাই? অর্ধেক ভাড়া তো শিশুদের জন্য। আপনি কি শিশু?’ টোয়েন উত্তর করলেন, ‘না, শিশু নই। তবে তোমার ট্রেনে যখন উঠেছিলাম, তখন মনে হয় শিশুই ছিলাম।’
রুডইয়ার্ড কিপলিং
একবার ভুলবশত একটি পত্রিকায় প্রখ্যাত লেখক রুডইয়ার্ড কিপলিংয়ের মৃত্যুসংবাদ ছাপা হলো। পরদিন রুডইয়ার্ড পত্রিকা অফিসে ফোন করে বললেন, ‘আপনাদের পত্রিকা পড়ে জানতে পারলাম, আমার মৃত্যু হয়েছে। অতএব দয়া করা আগামীকাল থেকে আপনাদের পত্রিকার গ্রাহক-তালিকা থেকে আমার নামটা বাদ দেবেন।’
পরমাণু মডেলের জনক নিলস বোর
নিলস বোর। ছোটবেলায় পরীক্ষা দিয়ে বাড়ি ফিরলেই মা তাকে জিজ্ঞেস করতেন, ‘খোকা, কেমন হলো পরীক্ষা?’ বোর বলতেন, ‘ভালো।’ এক দিন, দুই দিন, তিন দিন… প্রতিদিন মায়ের একই প্রশ্ন। এভাবে একদিন স্কুল থেকে ফেরার পর আবারও মা জিজ্ঞেস করলেন, ‘খোকা, কেমন হলো পরীক্ষা?’ বোর ব্যাগ থেকে পরীক্ষার খাতা বের করে দিলেন মায়ের হাতে। ‘আজ আর খাতা জমা দিইনি। বাসায় নিয়ে এলাম। তুমি নিজেই দেখে নাও, আমি কেমন পরীক্ষা দিই!’
বার্ট্রান্ড রাসেল
বিখ্যাত দার্শনিক বার্ট্রান্ড রাসেল একবার বক্তৃতা করছিলেন। বলছিলেন, কীভাবে পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে। এমন সময় এক বৃদ্ধা উঠে দাঁড়ালেন। বললেন, ‘বললেই হলো? পৃথিবী আসলে গোল নয়, চ্যাপ্টা। আর পৃথিবীটা আছে একটা কচ্ছপের পিঠের ওপর। সে কথা আমরা জানি না ভেবেছ?’
বারট্রান্ড হেসে বললেন, ‘ঠিক আছে ম্যাডাম, আপনার কথাই মানলাম। কিন্তু বলুন তো, যে কচ্ছপটা পিঠের ওপর পৃথিবীটা বয়ে বেড়াচ্ছে, সে কিসের ওপর দাঁড়িয়ে আছে?’ বৃদ্ধা বললেন, ‘তোমার মাথায় এত বুদ্ধি, আর এটা জানো না? কচ্ছপটার নিচে আছে আরেকটা কচ্ছপ। তার নিচে আরেকটা কচ্ছপ, তার নিচে আরেকটা…!’
দার্শনিক প্লেটো
প্লেটো একবার বললেন, ‘মানুষ হলো একটি পালকবিহীন দুই পাবিশিষ্ট প্রাণী।’ এর কিছুদিন পর এক গবেষক একটি পালকবিহীন মুরগি নিয়ে প্লেটোর ক্লাসে হাজির হলেন। বললেন, ‘দেখো দেখো! এই হলো প্লেটোর সংজ্ঞায়িত মানুষ!’
স্যার আর্থার কোনান ডয়েল ও চার্লি চ্যাপলিন
মঞ্চনাটক দেখতে গিয়ে একবার এক কিশোরের অভিনয় দেখে মুগ্ধ হলেন আর্থার কোনান ডয়েল। ছেলেটিকে কাছে ডেকে বললেন, ‘চালিয়ে যাও। তোমার মধ্যে প্রতিভা আছে। অনেক নাম হবে তোমার।’ শুনে ছেলেটি প্রস্তাব করল, ‘আপনি আর আমি কি একসঙ্গে কাজ করতে পারি? দুজনের আয় নাহয় সমান ভাগে ভাগ করে নেব।’ এমন ধৃষ্টতা দেখে কিছুটা বিরক্তই হয়েছিলেন ডয়েল। বাচ্চা ছেলের আবদার ভেবে তিনি খুব একটা পাত্তা দেননি। বড় হয়ে সেই কিশোর সত্যিই দুনিয়া মাতিয়েছিল। আমরা তাকে চার্লি চ্যাপলিন নামে চিনি!
লিও টলস্টয়
লিও টলস্টয় একবার বক্তৃতা করছিলেন। বক্তৃতায় সব প্রাণীর প্রতি অহিংস ও সহানুভূতিশীল হওয়ার কথা বলছিলেন তিনি। এমন সময় একজন প্রশ্ন করল, ‘বনের ভেতর একটা বাঘ যদি আমাকে আক্রমণ করে, কী করব বলুন তো?’ টলস্টয় বললেন, ‘নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করুন। এমন ঘটনা জীবনে বারবার ঘটে না!’
আইনস্টাইন
বিজ্ঞানীরা বরাবরই কিছুটা ভুলোমনা হয়ে থাকেন, তবে এদিক থেকে আইনস্টাইন বোধ হয় একটু বেশিই এগিয়ে আছেন! একবার আইনস্টাইন ট্রেনে চড়ে যাচ্ছিলেন। চেকার এসে টিকিট দেখতে চাইলেন। কিন্তু আইনস্টাইন কিছুতেই টিকিট খুঁজে পাচ্ছিলেন না। শুধু বিড়বিড় করে বলছিলেন, ‘কোথায় যে রাখলাম টিকিটটা…।’ চেকার বললেন, ‘স্যার, আমি আপনাকে চিনতে পেরেছি। আপনি নিশ্চয়ই টিকিট কেটেই উঠেছেন। আপনাকে টিকিট দেখাতে হবে না।’ আইনস্টাইন চিন্তিত মুখে বললেন, ‘না না! ওটা তো খুঁজে পেতে হবে! না পেলে জানব কী করে, আমি কোথায় যাচ্ছিলাম!’
আবার রবীন্দ্রনাথ !
রবীন্দ্রনাথকে একবার এক ভদ্রলোক লিখলেন, ‘আপনি কি ভূতে বিশ্বাস করেন?’ কবি উত্তরে লিখলেন, ‘বিশ্বাস করি বা না করি, তাদের দৌরাত্ম্য মাঝে মাঝে টের পাই—সাহিত্যে, রাজনীতিতে সর্বত্রই একেক সময় তুমুল দাপাদাপি জুড়ে দেয় এরা। দেখেছি। দেখতে ঠিক মানুষের মতো!’
-নির্বাচন ও সংকলনেঃ আমি (অনেক ঘেঁটেঘুটে)
আমার ডিজিটাল মার্কেটিং বিষয়ক ব্লগ Market Rocker, ঘুরে আসতে পারেন।