প্রশ্নটা মাথায় ঘুরতে শুরু করল বিমান ক্রাশের পর সোসিয়াল মিডিয়ার অবস্থা দেখে। আমরা কতটা অমানুষ হয়ে গেছি তা জানলে আপনি নিজেও শিহরিত হবেন যদি ক্ষানিকটা অনুধাবন করেন।
মনে করুন আপনি একজন পিতা বা মাতা। আপনার সন্তান মাত্র ২০টা মিনিট আগে আপনার সাথে ফোনে কথা বলেছে। একটুখানি কল্পনা করুন হুট করে সে আর এই পৃথিবীতে নেই। কেমন ফিল হবে আপনার?
এত এত পরিমাণ ফেসবুকে স্ট্যাটাস, ফটো দিতে দিতে উড়িয়ে দিচ্ছি। আসলেই কি আমরা সমবেদনা পাচ্ছি? সমবেদনার মানে বুঝেন আপনারা? যে হারায় তার সমান পরিমাণ বেদনা পাওয়াকে সমবেদনা বলে। ইউ হ্যাভ টু বি জেনুয়েনলি সরি ফর দিস ইন্সিডেন্স। ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়ে মানুষজনকে জানিয়ে সমবেদনা প্রকাশ করাটা অবশ্যই একটা শয়তানের কাজ।
কতটা খারাপ আপনি ভাবুন, স্ট্যাটাস দেয়ার পাচ মিনিট পর আবার আপনি গুনছেন কয়টা লাইক পড়ল, কয়টা স্যাড রিঅ্যাক্ট পড়ল। আপনি প্রোফাইল পিকচার কালো করে খুব সুন্দর করে লেখে দিলে আপনি খুবই সরি এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার জন্যে। ওহ বিলিভ মি, ইউ আর নট। ইউ আর অ্যা ফেইক। আপনি যখন দুঃখ অনুভব করবেন তখন যার হারায় তার অবস্থানে নিজেকে বসিয়েই দুঃখ অনুভব করবেন। অন্যথায় এটাকে দুঃখ ফিল করা হয়না।
আমার প্রিয় একজন শিক্ষক বলেছেন, মনে করো হুট করে তোমার চাকরীটা শেষ হয়ে গেল বা তুমি ফকির হয়ে গেলে। ৫০% মানুষ যারা তোমার একান্ত কাছের, তারা এ সম্পর্কে সামান্য কেয়ারও করবেনা। শুধু ফরমালিটি মেনশন করতে গিয়ে মুখ ফুটে বের করবে, 'এখন কি অবস্থা ভাইসাহেব?' 'আহারে, কি হয়ে গেল'। এ ধরনের কথাগুলো ছাড়া মন থেকে তারা সামান্যতম দুঃখও অনুভব করেনা। আপনার সামনে থেকে তারা চলে যাবে, ওখানেই এই দুঃখ পাওয়া কাহিনীর খতম। এই হল ৫০% এর অবস্থা, তাহলে বাকী ৫০%? বিশ্বাস করুন বা নাই করুন, বাকী ৫০% খুশি হবে যে আপনি জবটা হারিয়েছেন বা ফকির হয়ে গেছেন।
হ্যা ভাই। এটাই আমাদের এখনকার পৃথিবী। এটাই আমাদের পৃথিবীতে চলছে। ৫০টা প্রাণ ঝরে গেছে আর আপনি প্রোফাইল পিক কালো করে ঝুলিয়ে রাখছেন, ট্রাষ্ট মি এটা শো অফ ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি এই মানুষগুলোর প্রাণকে ব্যবহার করে ফায়দা লুটাচ্ছেন, মানুষ দেখাচ্ছেন বৈ আর কিছুই নয়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানকে দেখেছি তারা প্রোফাইলে ফ্রেম বানিয়েছে বিমান দুর্ঘটনায় আমরা শোকাহত, অমুক গ্রুপ। কতটা নির্বোধ এবং একই সাথে অমানুষ হলে এমন শোকাহতের মাধ্যমে নিজের প্রতিষ্ঠানের প্রচারণা চালাতে পারে আমার জানা নেই।
ঘটনা একটু অন্যদিকে ঘুরাই কিছুক্ষণের জন্যে। বর্তমান সমাজে আমাদের সবচেয়ে প্রধান সমস্যা হল কমিউনিকেশন। ভাইয়ের সাথে ভাইয়ের কমিউনিকেশন। পিতার সাথে পুত্রের কিংবা হাজবেন্ডের সাথে ওয়াইফ। সবার সাথেই যে কমিউনিকেশন গ্যাপটা এটাই আমাদের মানুষ থেকে অমানুষ বানিয়ে দিচ্ছে। আসল জরিপ দিতে পারছিনা কিন্তু একটু ঘাটাঘাটি করলেই বুঝতে পারবেন বাংলাদেশে ৭০-৮৫% ফৌজদারী মামলাই হল জমিজমা সংক্রান্ত। মজার ব্যাপার হল এই মামলার মধ্যে অধিকাংশ বাদি-বিবাদীই হল আপন রক্তের। আপনি কি এটা বিশ্বাস করেন? না করলে করার কিছু নেই, কারন এটাই সত্য। ভাই-ভাইয়ের সাথে জমি নিয়ে মামলা করছে। আপনি কি ভাবতে পারেন ভাই? ৫০টা মানুষ হুট করে চলে গেল, যে পৃথিবীতে এক মুহুর্ত বেচে থাকার নিশ্চয়তা নেই সেই পৃথিবীতে আপন রক্তের ভাই-বোনরা জমি নিয়ে মামলা করছে। এটা হল আমাদের পৃথিবী। আর বাকি ১৫% মামলা হাজবেন্ড-ওয়াইফ ছাড়াছাড়ি সংক্রান্ত। এই হল আমাদের যোগাযোগ এবং সম্পর্কের ধরন।
এটা এমন একটা নকল পৃথিবী যেখানে রিয়েলিষ্টিক বলে কিছুই নেই। যেখানে মানবতার নামে মানুষ টিভিতে মুখ দেখায়, ফেসবুকে বুলি শুনায়। এটা এই পৃথিবী। সত্যিই মাঝেমধ্যে চরম অবাক হই, এ কেমন পৃথিবী?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মার্চ, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:৩৬