দেশ স্বাধীনের পর ১৯৭২ সালে সর্বপ্রথম এই বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণ ও চিহ্নিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ৩নং সেক্টরের গেরিলা উপদেষ্টা লুত্ফুল হাই সাচ্চু এবং ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মহকুমা প্রশাসক এস.এম. রেজা। মহকুমা প্রশাসকের উদ্যোগে প্রত্যেক কবরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের নামের ফলক ও চিহ্ন লিখে দেয়া হয় এবং কবরস্থানটির সার্বিক সংস্কার সাধন করা হয়। ১৯৮০ সালের দিকে তত্কালীন মহকুমা প্রশাসক রেজা-ই-রশীদ যৌথ উদ্যোগে সেখানে একটি কাঠের রেস্ট হাউজ তৈরি করেন।
কসবা উপজেলার সীমান্তবর্তী রেল স্টেশন সালদানদী। স্টেশন থেকে প্রায় ৩ কিলোমিটার দূরে টিলার উপর একটি তোরণের গায়ে লেখা ‘শহীদ সরণি’। এখানে রয়েছে রণাঙ্গনে শহীদ ৪৯ জন মুক্তিযোদ্ধার সমাধি। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে কোল্লাপাথর ২নং সেক্টরের মন্দবাগ সাব-সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন ক্যাপ্টেন বীর মুক্তিযোদ্ধা ও পরবর্তীতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কর্ণেল এমএ গাফফার।
তাঁর অধীনে যুদ্ধ করে দেশের স্বাধীনতার জন্য প্রাণোত্সর্গ করা ৪৯ বীর মুক্তিযোদ্ধাকে কোল্লাপাথরের একটি ছোট্ট টিলায় সমাহিত করা হয়েছে। অপর ১২ মুক্তিযোদ্ধাকে সমাহিত করা হয়েছে লক্ষ্মীপুরে। সীমান্ত এলাকায় রণাঙ্গনে শাহাদাত্ বরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের লাশ সংগ্রহ করে স্থানীয় জনসাধারণের উদ্যোগে আবদুল করিমের পিতা আবদুল মান্নান তার নিজস্ব মালিকাধীন টিলায় সমাহিত করেন। পরবর্তীতে তিনি স্মৃতিসৌধের জন্য ৬৫ শতাংশ জমি দান করেন। এখানেই নির্মিত হয় স্মৃতিসৌধ।
স্বাধীনতা সংগ্রামের ৯ মাসের যুদ্ধে জীবন উত্সর্গকারী যাদেরকে কোল্লাপাথরে শহীদ স্মৃতি সৌধে সমাহিত করা হয়েছে
কোল্লাপাথরে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সমাধিস্থলে সরকারি বা রাজনৈতিক দলের কোন কর্মসূচি না থাকলেও স্থানীয় এলাকাবাসী তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ভুলেন না। মহান স্বাধীনতা ও বিজয় দিবসে শহীদদের আত্মীয়-স্বজনদের আগমন ঘটে এখানে। শহীদদের স্মৃতিকে স্মরণীয় করতে এখানে নির্মিত হয়েছে একটি স্মৃতিসৌধ ও একটি মসজিদ। দর্শনার্থীদের সুবিধার্থে এখানে গড়ে তোলা হয়েছে রেস্টহাউজ, বাঁধানো পুকুর ঘাট, নিরাপত্তা দেয়াল। সমাধিস্থলকে ঘিরে দিন দিন বাড়ছে দর্শনার্থীদের আগমন।