somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আবার লাদেন ভূত পাকিস্তানের কাঁধে!

০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ বিকাল ৫:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
উবাই শাহবন্দর



গত ৩০ মার্চ আরব নিউজে পাকিস্তান-আমেরিকার কূটনৈতিক সম্পর্ক নিয়ে প্রকাশিত কলামটি অনুবাদ করার সামান্য প্রয়াস চালিয়েছি মাত্র। আশা করি আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়ে আগ্রহীদের ভালো লাগবে।- ইমদাদ হোসাইন

সাম্প্রতিককালে পাকিস্তান পুরোনো কাসুন্দি ঘেঁটে আবার যুক্তরাষ্ট্রের নজর কেড়েছে। পুরোনো কাসুন্দি ঘাঁটতে গিয়ে জন্ম দিয়েছেন নতুন বিতর্কের। যুক্তরাষ্ট্রে কর্মরত পাকিস্তানের সাবেক রাষ্ট্রদূত হুসাইন হাক্কানি ওয়াশিংটন পোস্টে একটি নিবন্ধ লিখেন। কলামে হাক্কানি ওয়াশিংটনের সাথে রাষ্ট্রদূতের সম্পর্ক কি রকম হতে পারে কিংবা হোয়াইট হাউজের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্কের ব্যাপারে ব্যাপক আলোচনা করেছিলেন।

পুরো কলামে একটা কথা লিখার পরই বিতর্কের পূণর্জন্ম দিয়েছেন তিনি। ‘ওবামা ক্যাম্পেইন দলের একজন সদস্য হিসেবে আমার সম্পর্কগুলো ছিলো লোক দেখানো। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রকে বিন লাদেন খোঁজার ক্ষমতা দেয়া এবং তাকে ধ্বংস করে দেয়ার বিষয়টিও।’

নিজের পায়ে কুড়াল মারার মতোই অবস্থা হয়েছে তার। এই কলাম লিখার ফলাফল হিসেবে সাবেক এই রাষ্ট্রদূতকে মৌমাছির মতো ঘিরে ধরে সে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনের মানুষসহ সব মিডিয়াগুলো। নিজ দেশ থেকে একের পর এক নিন্দার ঝড়ে কুপোকাত তিনি। সে যাই হোক লাদেন বাহাসের অঙ্গার আরও বাড়ে হাক্কানির কৃতকর্মের সরল অকপটতায়। এই শতাব্দিতে সবচেয়ে বড় গণহত্যার নায়ক হিসেবে ‘কুখ্যাত’ হয়ে আছেন ওসামা বিন লাদেন। অনেক বছর যাবৎ তিনি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন বিচারকে আড়ালে রেখে। আমেরিকায় শক্তিশালি গোয়েন্দা সংস্থাগুলো বছরের পর বছর চেষ্টা করেও তাকে খুঁজে পায়নি। ব্যাপারটি যত ছোটই হোক হাক্কানি যদি এই ভূমিকায় থেকেই থাকেন তাহলে অনেক গুরুত্বের দাবি রাখে। লাদেন খোঁজার অপারেশনে মদদ দেয়ার পর নিরপেক্ষ থাকার হেতু তিনি স্বর্ণ পদক পাওয়ার দাবি রাখেন।
সে যাই হোক, হাক্কানির এমন কৃতকর্মের হেতু হিসেবে নিন্দুকেরা ইতোমধ্যেই তাকে বিশ্বাসঘাতকের আসনে বসিয়েছে। এটা হওয়ারই ছিলো। কিন্তু আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে, তিনি যা করেছেন সাহসিকতা আর মহেত্বর সাথেই করেছেন। সুস্পষ্টভাবে তিনি একটি মহান কাজই করেছেন। এই শতাব্দির শুরুতেই বিন লাদেন এবং তার হাজারো ভাড়াটে গুণ্ডাদের অপকর্মের সাজা ভোগ করতে হচ্ছে পুরো আরব বিশ্বসহ সমগ্র মুসলিম বিশ্ব। অশান্তির আগুনে পুড়ে ছাই হচ্ছে মুসলমানদের প্রতিটি ঘর। লাদেন যেহেতু পুরো বিশ্বের মানুষের কাছেই একজন মৃগয়া ছিলেন, এমনকি তিনি নিজেকে প্রায় এক যুগের কাছাকাছি সময় পুরো বিশ্বের চোখের আড়াল করতে সক্ষম হয়েছেন। তথাপি তার বিচারের সম্মূখীন হওয়াটা কোটি কোটি মুসলমানেরই কাম্য ছিলো। নিঃসন্দেহে লাদেনের বিদায়ে পুরো বিশ্ব আগের চেয়ে একটু আরামদায়ক অবস্থানেই আছে। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে নির্বাসিত হাক্কানি হাডসন ইনস্টিটিউটের থিংক ট্যাঙ্ক হিসেবে ‘সাউথ এণ্ড সেন্ট্রাল এশিয়া স্টাডিজ’ নিয়ে গবেষণা আছেন। ওয়াশিংটন পোস্টে প্রকাশিত কলামে তার অভিপ্রায় নিতান্তই পরিহাসের বিষয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের এমন একটা নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় ইউএস মিডিয়ায় এই কলাম ছাপানোটা সত্যিই রহস্যজনক। এমন সময় তিনি এই লেখাটি লিখেছেন, যখন ট্রাম্প ক্যাম্পেইনের কর্মকর্তা এবং রাশিয়ান রাষ্ট্রদূত সার্গেই কিসল্যাক ওয়াশিংটনের সাথে আলোচনায় বসেছিলেন। হাক্কানি মৃগি রোগির মতো গম্ভীর তাত্ত্বিক আলোচনায় এমন সময় নক করেছেন যাতে রাশিয়ান রাষ্ট্রদূতের কাছে এই বার্তাই পৌঁছায় - ঐতিহাসিকভাবে একজন রাষ্ট্রদূত জাতির চাবি হিসেবে কিভাবে কাজ করবেন। হয় প্রতিপক্ষ হিসেবে আর নচেৎ বন্ধু হিসেবে ভূমিকা রাখবেন। যাতে হোয়াইট হাউস এবং যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে শক্তিশালী একটা সম্পর্ক গড়া যায়।

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের চলমান কৌশলগত সম্পর্কটা নিশ্চিত করাটা এই মুহূর্তে অত্যন্ত গুরুত্ত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যৌথভাবে দেশ দুটি এবং আন্তর্জাতিক স্থিতিশীলতার জন্য। ঐ অবস্থায় হাক্কানি একজন রাষ্ট্রদূত হিসেবে একটি কার্যকরী সিদ্ধান্তই নিয়েছিলেন। কিন্তু এই মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক মজবুত করার জন্য তার এগিয়ে আসার পদক্ষেপটি অবশ্যই ইতিবাচক। যখন কিনা আন্তর্জাতিক এই সন্ত্রাসীকে বিচারের মুখে দাঁড় করানোর কারণে হাক্কানিকে তার দেশের মিডিয়া এবং রাজনৈতিক জিঘাংসার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কিছু প্রশ্নবিদ্ধ বিষয়ে পাকিস্তানি জনগণের কাছে কখনোই মুখ খোলেননি তিনি। সমালোচনা তার বিরুদ্ধে অব্যাহতভাবে চলছেই।

নিন্দুকের ক্রোধে মেশানো সমালোচনাগুলো বেশিরভাগই লক্ষ্যচ্যুত হচ্ছে। পাকিস্তানের অ্যাবাটোবাদে যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষায়িত সেনাবাহিনী সিল কতৃক অপারেশনের ভয়ানক সেই রাতের পর কেটে গেছে প্রায় ছয়টি বছর। সেই অপারেশনে চালানো হয়েছিলো বিশেষায়িত হেলিকপ্টারও। গ্রেফতার করা হয় ওসামা বিন লাদেনকে। সেই সময়ে প্রেসিডেন্ট ওবামা কতৃক ঘোষিত ‘ওপারেশন নেপচুন’টি ছিলো একটি বিপজ্জন জুয়া খেলার মতোই। পাকিস্তানি সীমানার ভেতরে পৌঁছে অচিহ্নিত ও চিত্তাকর্ষক ফায়ারফ্লাইটের পর এই বিষয়টি শুধুমাত্র অপারেশনাল রিস্কই ছিলো না বরং বিপজ্জন রাজনৈতিক মহড়াও ছিলো। তবুও এটি সম্পূর্ণ সঠিক একটি সিদ্ধান্ত। সেই সময়টাতে বিন লাদেন আদশিকভাবে এবং সাংগঠনিকভাবে আল-কায়েদা এবং তাদের বহু শাখার নেতা হিসেবে কাজ করছিলেন। কিন্তু জটিলতা যেখানে গিয়ে দাঁড়িয়েছে সেটা হলো এই অপারেশনের কোনো তথ্যই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাকিস্তানকে পূর্ব থেকে জানানো হয়নি। এমনকি সফলতা এবং রাতের অন্ধকারেই লাদেনের বিচার করার অনেক কিছুই জানানো হয়নি পাকিস্তানকে। কিন্তু সেই পয়েন্টটাই গুরুত্ত্বপূর্ণ ছিলো। ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকা বিন লাদেন কিভাবে অ্যাবাটোবাদে থাকেন? সাবেক সকল রাষ্ট্রদূতদের দেশ প্রেমের বিরুদ্ধে গিয়ে হাক্কানি নিজের মর্জি মতো কাজ করেছেন কিভাবে?হাক্কানি নিজেকে নিয়ে একটি কারণেই গর্ববোধ করেন যে তিনি সে সময় ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে পেরেছেন এবং বিন লাদেনের বিরুদ্ধে সফল একটি অপারেশন করাতে পেরেছেন। তার দিক থেকে তিনি অসাধারণ কাজ করেছেন। যদিও পাকিস্তানের ইন্টার সার্ভিসেস ইন্টিলিজেন্স বা আইএসআই কিংবা সেনাবাহিনীর অগোচরেই কাজটি করেছিলেন তিনি। তিনি তাদের জানাননি এই ভয়ে যে তার আশঙ্কা ছিলো আইএসআইয়ের মাধ্যমে উগ্রবাদিদের কাছে খবরটি পৌঁছে যেতে পারে। কিন্তু সময়টাতো এগিয়ে যাওয়ার। বিন লাদেনের অনুসৃত উগ্রবাদিরা এবং তাদের আদর্শের গর্ভে জন্ম নেওয়া সন্ত্রাসীরা এখনো নিরপরাধ মানুষদের হত্যা করেই যাচ্ছে। পাকিস্তান রাষ্ট্রটি নিজেই অনেক সন্ত্রাসী হামলা শিকার হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্র-পাকিস্তানের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে কৌশলগত সম্পর্কের উন্নতির পর উভয় দেশটি সঠিক রাস্তা দিয়ে হাঁটছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। এটা অবশ্য সম্ভবপর হয়েছে লাদেনের মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারদের আর চলতে না দেয়ার যে শপথ পাকিস্তান নিয়েছে তার কারণেই। ইতিহাসই হাক্কানির সিদ্ধান্তের বিচারক হিসেবে থাকবে। যদিও তিনি রাজনীতির কাঠগড়ায় অপরাধী হয়ে দাঁড়িয়ে।

উবাই শাহবন্দর; সৌদি আরবের প্রতিরক্ষা বিভাগের সাবেক সিনিয়র উপদেষ্টা, এবং বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্য ও গালফ অ্যাফেয়ার্সের কৌশলগত যোগাযোগ কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত আছেন।
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা এপ্রিল, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৩৬
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিশ্রী ও কুশ্রী পদাবলির ব্লগারদের টার্গেট আমি

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:০৫



আমাকে জেনারেল করা হয়েছে ১টি কমেন্টের জন্য; আমার ষ্টেটাস অনুযায়ী, আমি কমেন্ট করতে পারার কথা; সেটাও বন্ধ করে রাখা হয়েছে; এখন বসে বসে ব্লগের গার্বেজ পড়ছি।

সম্প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছবি কখনো কখনো কিছু ইঙ্গিত দেয়!

লিখেছেন ডার্ক ম্যান, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৩৭



গতকাল ভারতীয় সেনাপ্রধানের সাথে বাংলাদেশ সেনাপ্রধান এর ভার্চুয়ালি কথা হয়েছে। ভারতীয় সেনাবাহিনী তাদের অফিসায়াল এক্স পোস্টে এই ছবি পোস্ট করে জানিয়েছে।

ভারতীয় সেনাপ্রধানের পিছনে একটা ছবি ছিল ১৯৭১ সালের... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রথম আলু

লিখেছেন স্নিগ্দ্ধ মুগ্দ্ধতা, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৫৯



লতিফপুরের মতি পাগল
সকালবেলা উঠে
পৌঁছে গেল বাঁশবাগানে
বদনা নিয়ে ছুটে



ঘাঁড় গুঁজে সে আড় চোখেতে
নিচ্ছিল কাজ সেরে
পাশের বাড়ির লালু বলদ
হঠাৎ এলো তেড়ে




লাল বদনা দেখে লালুর
মেজাজ গেল চড়ে।
আসলো ছুটে যেমন পুলিশ
জঙ্গী দমন করে!





মতির... ...বাকিটুকু পড়ুন

দেশে ইসলামি আইন প্রতিষ্ঠা করা জরুরী?

লিখেছেন রাজীব নুর, ০৭ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৯:০২



বিশ্ব ইসলামের নিয়মে চলছে না।
এমনকি আমাদের দেশও ইসলামের নিয়মে চলছে না। দেশ চলিছে সংবিধান অনুযায়ী। ধর্মের নিয়ম কানুন মেনে চললে পুরো দেশ পিছিয়ে যাবে। ধর্ম যেই সময় (সামন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি হাজার কথা বলে

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ০৮ ই নভেম্বর, ২০২৪ রাত ৩:৫৩

আগস্টের ৩ তারিখ আমি বাসা থেকে বের হয়ে প্রগতি স্মরণী গিয়ে আন্দোলনে শরিক হই। সন্ধ্যের নাগাদ পরিবারকে নিয়ে আমার শ্বশুর বাড়ি রেখে এসে পরদিনই দুপুরের মধ্যেই রওনা হয়ে যাই। আগস্টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×