"আচ্ছা, তুমি কখনো রাস্তার পাশের দোকান থেকে চিতই পিঠা খেয়েছো? ধনে পাতার চাটনি আর সর্ষে বাটা দিয়ে? আশ্বিনের কাচামিঠা রোদে সাইকেল চালিয়েছো নদীর পাড় ধরে?"
"তুমি ভায়োলিন সোনাটা শুনেছো? পিংক ফ্লয়েডের গান? পল রবসন? জোয়ান বায়েজ? গ্যাব্রিয়েলা মিস্ত্রাল পড়েছ? কাফকা? হুমায়ূন আহমেদ পড়েছ?"
"আচ্ছা, তুমি কখনো ওই গল্পটা শুনেছো, সেই যে বিলুপ্তপ্রায় গাছের শেষ পাতাটা...? কখনো ভীড়ের মাঝে গলা ছেড়ে গান গেয়েছো? গীটারের তারে নির্ঝরের মত ঝরেছে লাল? স্লোগানে মুখর হয়েছে কখনো তোমার কন্ঠ? সহস্র হাতে হাত মিলিয়ে বলেছো, "জয় বাংলা"?"
"কখনো প্রেমিকার চোখে চোখ রেখে হারিয়ে গেছো সময়ের অতলে? বাতাসের ঝাপটায় উন্মাতাল চুলে মুখ রেখে নেশাগ্রস্থ হয়েছ? প্রেমিকার কপালে টিপ দেখে ভেবেছো তোমার হৃদয় ওই ছোট্ট বৃত্তে বন্দি? কখনো মনে হয়েছে, সেই মানুষটার হাতে হাত রেখে পৃথিবীর সকল পথই নির্বিঘ্নে পেরিয়ে যেতে পারবে? মানুষটা আধারে হারিয়ে গেলেও ঠিকই খুজে নেবে গন্ধ চিনে?"
মেয়েটা একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছিলো। হুট করে থেমে গেলো। চোখে চোখ রেখে বললো, "বেঁচে থাকার জন্যে আজ কি চমৎকার একটা দিন, তাইনা?"
আমি ভালো করে তার মুখের দিকে তাকাই, সকালের হালকা রোদ মেয়েটার মুখে এসে পড়েছে। আদ্ধেকটা মুখ চুলে ঢাকা পড়েছে, বাকী অর্ধেক আলোয় ভেসে যাচ্ছে। কী অপার্থিব দৃশ্য!
আমি ঋজু হয়ে জিজ্ঞেস করি, সত্যি করে বলো তো, তুমি কি মানবী? উত্তরে খিল খিল করে হাসতে থাকে অদুরে বসা সেই মেয়েটি। মানবীই তো! তার হাসির ঝংকারে আমার পৃথিবী ওলটপালট হয়ে যাচ্ছে! এরকম ভয়ংকর সুন্দর ব্যাপার সহ্য করা মুস্কিল। কিন্তু আমার এই মেয়েটার চোখের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে। অনন্তকাল। উত্তুরে বাতাসে মেয়েটার চুল উড়ছে। একটা মিষ্টি গন্ধ বাতাসে। আমার বাঁচতে ইচ্ছে করছে। এই ছোট্ট জীবনে কত্ত কিছু করা বাকী। আমার এই মেয়েটাকে ভালোবাসতে ইচ্ছে করছে!
© দি ফ্লাইং ডাচম্যান / ২০১৬
ইমেজ সোর্স
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ রাত ১২:৩৪