somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্রগ্রামের ফ্লাইওভার ট্র্যাজেডি নিয়ে আমার কিছু ভাবনা

২৫ শে নভেম্বর, ২০১২ রাত ১০:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লগের শুরুতেই বলে রাখি এই ব্লগ পড়ার পর আমাকে যে যাই বলুক আমার কিছু যায় আসে না। আমি সত্যটাই বলতে পছন্দ করি। চট্রগ্রামের ফ্লাইওভারের গার্ডার পরে এত মানুষের মৃত্যু আসলেই মেনে নেওয়া যায় না। কিন্তু এটা নিয়ে যা যা ঘটছে তা আগে থেকেই বলা যায়।

কারণ প্রতিটি সরকারের আমলেই ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনা থেকে আমরা সেই শিক্ষাই পায়। তাহলে দেখা যাক এবারের ঘটনা গুলোঃ

১। প্রথমেই আসি লাশের হিসাবে। এই দুর্ঘটনায় আসলে মৃতের সংখ্যা কত?? বিশ্বস্ত কোন সুত্র থেকে কেউ কি উত্তরটা দিতে পারবে?? না, পারবে না।। কারণ ফেসবুকের মাধ্যমেই জানলাম দুইজন প্রত্যক্ষদর্শী দুই ধরণের বর্ণনা দিয়েছেন। আসুন দেখে নিই সেই সকল বর্ণনাঃ





প্রথম ছবির বক্তা অন্যের কাছ থেকে শুনে বলছেন কমপক্ষে সত্তরজন মারা গেছেন। অন্য ছবির বক্তা নিজের চোখে ঘটনা দেখে বললেন ২০-২৫জনের বেশি নয়। অনেকে ঘটনাস্থলে না গিয়েই বলছেন ২০০এর উপর মারা গেছে। এখন আপনি আপনার যুক্তি খাটিয়ে দেখুন আসলে কতজন মারা গেছে।

২। আমরা বাঙ্গালিরা আসলে গুজবে কান দিই বেশি। একটা গুজব ছড়াইতে বেশিক্ষণ সময় নিই না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় চট্রগ্রামের তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুর কথা। সেতুটি উদ্বোধন করতে নাকি ২০০জনের মাথা লাগবে। তাই হাসিনা আদেশ দিসে শিশু গুম করে তাদের মাথা কাটতে। কয়েকজন নাকি শুনছে কাটা মাথা নিয়ে যাইতে, কিন্তু দেখে নাই। এটা নিয়ে বেশ আতঙ্কও ছড়ানো হইছিল। যাই হোক সেটা পরে মিথ্যাই প্রমাণিত হইছিল। কালও একই অবস্থা। গার্ডারগুলো সরানোর আগেই বলা শুরু হয়ে গেছিল ২০০ এর উপর মানুষ মারা গেছে।

৩। এবার আসি দুর্নীতির কথাই। বাংলাদেশে কেউ বলতে পারবে না দুর্নীতি ছাড়া কোন কাজ হইছে। তবে কালকের ঘটনাটা যে দুর্নীতির কারণে হইছে তা কিন্তু না। আগের বারের তদন্ত রিপোর্টটা যদি সিডিএ চেয়ারম্যান এম এ সালাম গুরুত্ব সহকারে দেখতেন তাহলে এই দুর্ঘটনা ঘটত না। দায়িত্বে অবহেলার কারণেই দুর্ঘটনাটা ঘটেছে। আর এর মূল হোতা হলেন এম এ সালাম। ২নং ছবি থেকে আমরা জানতে পারি গার্ডারগুলো ভেঙ্গে পড়েনি। একটার সাথে আরেকটার ধাক্কা লেগে পড়ে যায়। আগেরবারও যেভাবে পড়ছিল। তাই এটা নির্দ্বিধায় বলা যায় এই দুর্ঘটনার মূল কারণ দায়িত্বে অবহেলা।

৪। গার্ডার তৈরির সময় নির্দিষ্ট জায়গাটি নিরাপত্তা বেষ্টনী দিয়ে ঘিরে রাখা হয়। কিন্তু বিস্ময়কর হলেও সত্য যে, বর্তমানে যে গার্ডারগুলো তৈরি করা হচ্ছে তার আশেপাশে নিরাপত্তার কোন বালাই নেই। গার্ডারগুলোর নিচেই ছিল ভাসমান বাজার। নিরাপত্তা বেষ্টনী দেয়া থাকলে হয়তো এত লাশ দেখতে হত না। এখানেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অবহেলায় দায়ী। তবে এখানে কিছুটা সাধারণ জনগণেরও দোষ দেয়া যায়। জেনেশুনে মৃত্যুকে বরণ করে নিতেই কি তারা সেখানে বাজার বসিয়েছিলেন?? এমন তো না যে সেখানে আগে থেকেই বাজার বসত। ফ্লাইওভার তৈরির কারণে রাস্তা বন্ধ থাকায় এই বাজার বসেছিল। তাদেরও কি সতর্ক থাকা উচিত ছিল না??

৫। এবার আসি উত্তেজিত জনতার কথায়। ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ভ্রাম্যমান কার্যালয়ে আগুন, সালামের প্রতিষ্ঠান ওয়েলফুড ভাংচুর এতটুকু মানলাম। তারপর!! উদ্ধার কর্মীদেরকে মারধর, তাদেরকে উদ্ধার কাজে সহযোগিতা না করা, আহত ব্যক্তিদেরকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে আসা এ্যাম্বুলেন্স ভাংচুর এসব কার স্বার্থের জন্য??? কোথায় উদ্ধার কর্মীদেরকে আটকে পড়া মানুষদের দ্রুত উদ্ধার করতে সাহায্য করবে তা না, বরং তাদেরকে মারধর করা হল। এমন দৃশ্য আমরা আগেও দেখেছি।

৬। একটা বিষয় নিশ্চিত যে লাশ গুম করার একটা চেষ্টা খুব সম্ভবত হয়েছিল। কিন্তু মানুষ যেভাবে বলাবলি করছে আমার মনে হয় সেরকম কিছু হয়েছে। লাশ গুম করার সময় মানুষজন কোথায় ছিল?? কাল এনটিভির খবরেই দেখলাম দুইটি লাশ ঢাকছে জনগণ। সেখানে কোন পুলিশ ছিল না। লাশ গুম হতে পারে একটা জায়গায়। সেটা হল হাসপাতালের মর্গ। এখান থেকে লাশ গুম করা হলে কেউ জানবে না। কিন্তু মর্গের কথা কেউ বললই না!!!

৭। আরেকটা বিষয় হল গার্ডার সরানোর মত যন্ত্রপাতি নাকি চট্রগ্রামে নেই। ঢাকা থেকে যন্ত্রপাতি আসার পর নাকি উদ্ধার কাজ দ্রুত এগিয়ে যাবে। আমার প্রশ্ন হল, সব দুর্ঘটনা কি ঢাকাই ঘটবে বলে কথা আছে?? চট্রগ্রাম বাণিজ্যিক রাজধানী(!!!)। কিন্তু এখানে উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনার মত যন্ত্রপাতি এখনো নেই কেন?? এই প্রশ্নের উত্তর কে দিবে??

৮। সবচাইতে মজার বিষয় হল চট্রগ্রামের মাস্টার প্লেনে এই ফ্লাইওভার নাই-ই। নগর পরিকল্পনার বাইরে গিয়ে করা হচ্ছে এই ফ্লাইওভার। কার স্বার্থে?? পেট পূজো করার জন্যেই কি নয়??? এই কথাটা কাল থেকে এখন পর্যন্ত শুধু একজনের মূখেই শুনেছি। অনেকেই এই ব্যাপারটা সম্পর্কে হয়তো জানেও না।

সবশেষে একটা কথায় বলব, এই দুর্ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদেরকে এমন শাস্তি দেওয়া হোক যাতে অন্যরা মানুষের জীবন নিয়ে খেলা করতে ভয় পায়। এমন মৃত্যু কারও কাম্য নয়। একদিন হয়ত আমাকে বা আপনাকেও এভাবে মরতে হবে। আসুন তার আগেই আমরা সচেতন হয়, নিজেদের নিরাপত্তার জন্য দাবি তুলি।
২টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আজকের ডায়েরী- ১৫০

লিখেছেন রাজীব নুর, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ দুপুর ১:৩৩



গতকাল ছিলো বাংলা নববর্ষ।
সকালে এক জরুরী কাজে আমি উত্তরা গিয়েছিলাম। আমার তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার কথা। কিন্তু দেরী করে ফেললাম। আজ বাসার সবাই মাওয়া যাবে। সেখানেই... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই সময়ের কিঞ্চিৎ ভাবনা!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ বিকাল ৩:১৭

বাক স্বাধীনতা কিংবা যা মনে আসছে তাই লিখে বা বলে ফেলছেন, খুব একটা ব্যাক স্পেস চাপতে হচ্ছে না এখন, তবে নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে এবং যে কোন দল নির্বাচিত হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্প: অপেক্ষা (১ম পর্ব)

লিখেছেন শামীম মোহাম্মাদ মাসুদ, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৪৭

ফকির আবদুল হাই সাহেবের সাথে পরিচয় হয় যখন আমি অনার্স সেকেন্ড ইয়ারে পড়ি তখন। খুবই আধ্যাত্মিক আর রহস্যময় মানুষ। পেশায় একজন অধ্যাপক। অধ্যাপনা ছেড়ে আধ্যাত্মিকতা করেন, ফকির নামটি তার নিজস্ব... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ৯:০৮

কেন বিএনপির বিরুদ্ধে অপপ্রচার.....

হোয়াটসঅ্যাপে আমাদের ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক এবং অরাজনৈতিক ১০ জনের একটা গ্রুপ আছে। আমরা বেশীরভাগ সময়ই সমসাময়ীক বিষয় নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করি। গত তিনদিনের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো বিএনপির... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের মডেল মসজিদ প্রকল্প: রাজনীতি, প্রতারণা ও সমাজের প্রতিচ্ছবি

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই এপ্রিল, ২০২৫ রাত ১০:২৪


২০১৪ সালের প্রহসনের নির্বাচনের পর শেখ হাসিনার সরকার একটি কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেয়। ইসলামপন্থীদের সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে তারা ধর্মীয় আবেগকে কাজে লাগানোর পথ বেছে নেয়। ২০১৩ সালের শাপলা চত্বরের ঘটনা সরকারকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×