আমি এখন আমার কেবিনে গিয়ে লিখবো। স্যার, খাতা কলম তো কিছুই আনেন নাই, লিখবেন কিভাবে?!
লেখকরা মনে মনে যত লেখা লিখেন তার ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ লিখেন কাগজে-কলমে।
আসলে স্যারকে নিয়ে নিজের মত করে কি লিখবো বুঝতে পারি না! হুমায়ুন আহমেদ স্যার, নন্দিত কথাসাহিত্যিক। আমি বলি কলমের জাদুকর; শুধু আমি নই অনেকেই বলে। এমন এক ঝিড় ঝিড় বৃষ্টির দিনে হুমায়ূন আহমেদ। শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেছিলেন। সেই দিন ছিলো রমজান মাস; এক দুর্লভ নক্ষত্র ঝড়ে গিয়েছিলো সেদিন। আজ উনার পঞ্চম মৃত্যু বার্ষিক। ভাবতেই অবাক লাগে, খুব কষ্ট লাগে, স্যার আমাদের মাঝে নেই!!
ফাউন্টেনপেন বইটা আমার খুব প্রিয়, বইটাতে স্যার তার জীবনের কঠিন কিছু মুহূর্তের কথা বলেছেন।
লেখকদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় খুব সচল হয়। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে এই পৃথিবীর সময় আমার জন্যে শেষ হয়ে আসছে। আমার ছোট ছেলে নিষাদ মনে হয় বাবার স্মৃতী ছাড়াই বড় হবে।
স্যার শেষ দিকে এমনই কিছু কথা লিখে গেছেন।
উনি এও লিখেছিলেন, আমি ঘেটুদের নিয়ে একটা চলচ্চিত্র বানাবো নাম দিবো "ঘেটুপুত্র কমলা"। আমার কেমন যেন মনে হচ্ছে এরপর আমি আর কোনো চলচ্চিত্র তৈরি করতে পারবো না।
লেখক হিসেবে হুমায়ুন আহমেদ ছিলেন সর্বকালের শ্রেষ্ঠ। আর মানুষ হিসেবে উনি ছিলেন একজন প্রকৃত ভালো মানুষ। "ম্যাজিক মুনশী" বইয়ের কিছু অংশ না লিখে পারছিনা। 'ম্যাজিক মুনশী সাহেবের সাথে উনার পরিচয় হয় একটা দুর্ঘটনা বসত। ঘেটুপুত্র কমলা ছবির শুটিংয়ের জন্য সেট ঠিক করতে যাচ্ছিলেন লঞ্চে করে, মাঝ নদীতে তুফান শুরু হয়! এরপর লঞ্চ থামানো হয় একটা অপরিচিত একটা অঞ্চলে সেখানে একজন মুনশী ছিলেন সবাই তাকে ম্যাজিক মুনশী বলে ডাকতেন। ম্যাজিক মুনশী বলার কারণ উনি ম্যাজিক জানতেন। ম্যাজিক মুনশী হুমায়ুন আহমেদের সাথে পরিচিত হওয়ার পর, কথোপকথনের এক পর্যায়ে "নলিনী বাবু bs.c" বইটা চোখে পরে। মুনশী সাহেব বইটা পড়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন, আর স্যার বইটা উনাকে একেবারেই দিয়ে দেন। মুনশী জিজ্ঞেস করেছিলেন নলিনী বাবু কি সত্যিকারের কেউ। তো স্যার এই প্রশ্নের উত্তরে বলেছিলেন, এটা আপনার জন্য একটা ধাঁধার মত, এই রহস্যটা আপনি খুঁজে বের করবেন। এরপর সেখান থেকে চলে আসার পর স্যার ঘেটুপুত্র কমলা ছবির কাজের জন্য খুব ব্যস্ত হয়ে পরেন। ম্যাজিক মুনশীর কথা উনার আর মনে পরেনা। এই সময় উনি ছবিটা তৈরি করার জন্য অর্থ সংস্থানের চেষ্টা করতে থাকেন, একটা চলচ্চিত্র বানানো খুব খরচের ব্যাপার। কিন্তু এতো অর্থ কোথায় পাবেন সেইজন্য অনেক ছোটাছুটি করেন। ঠিক সেই সময় উনার কাছে একটা চিঠি আসে। চিঠির প্রেরক ম্যাজিক মুনশী। চিঠিতে লেখা ছিলো, পত্র শুরুতে আমার সালাম নিবেন, আশা করি আপনি ভালো আছেন। আমি খুব অসুস্থ বিছানা থেকে উঠতে পারি না। সম্ভবত আমি আর বেশি দিন বাঁচবো না। আপনার সেই বইয়ের নলিনী বাবু কি সত্যিকারের সেটা যদি বলতেন। মৃত্য পথ যাত্রীর ইচ্ছে পূরণ হতো।
স্যার চিঠির জবাবে লিখেছিলেন, আপনি অসুস্থ শুনে খুবই ব্যথিত হলাম। আমি এই চিঠির সাথে আমার দুজন এসিস্ট্যান্ট পাঠাচ্ছি আপনি ওদের সঙ্গে ঢাকায় চলে আসুন আপনার চিকিৎসার সকল খরচ আমি ব্যবস্থা করবো। আর নলিনী বাবু সত্যিকারের কেউ নয়! লেখকদের জগতে অনেক চরিত্র বসবাস করে নলিনী বাবু এদের মধ্যে একজন!
মানুষ হলো পৃথিবীর সবচেয়ে অদ্ভুত জীব; বাকিসব স্বাভাবিক। মনে একটা কষ্ট হুমায়ুন আহমেদ স্যার বেঁচে নেই। স্যার বেঁচে থাকলে উনি আরও একটা বই লিখতেন নাম দিতেন "অদ্ভুত মানব" যেখানে দুটো বিয়োগান্তক মুহূর্ত থাকতো। একটা মুহূর্তে মিসির আলি সাহেব হারিয়ে যেতো; আরেকটা মুহূর্তে হিমুকে খুঁজে পাওয়া যাবে না! এর মানে দুটো চরিত্রই মুক্তি পেয়ে যাবে! পৃথিবীর সব কিছুই ক্ষনিকের। মানুষের জীবন তার মধ্যে অন্যতম!!
সব চলে যাওয়ার মানেই চির প্রস্থান নয়।
স্যার এখনও বেঁচে আছেন...
.
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ দুপুর ১২:৩৪