আমরা এখন বসবাস করছি বিশ্বায়নের যুগে। যেখানে প্রযুক্তি অনেক অনেক বড় উন্নতি সাধন করেছে এবং ভবিষ্যতে আরও করবে! ইচ্ছে করলেই আমরা এখন বিশ্বের একপ্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত খুব সহজে একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগ করতে পারি। সে ছিলো অনেক দিন আগের কথা যখন যোগাযোগের মাধ্যম রেডিও, টেলিগ্রাম, চিঠি এরপর আসলো ল্যান্ডলাইন টেলিফোন। চিঠি কিংবা টেলিগ্রাম ছিলো অনেক সময় সাপেক্ষ যোগাযোগ মাধ্যম, আর ল্যান্ডলাইন টেলিফোন তখনকার দিনে সবার বাড়িতে থাকতো না! তাই এসবের মাধ্যমে যোগাযোগ করাটা ছিলো খুব ধৈর্যের। তখন পৃথিবীটাকে সত্যিকারের অর্থে বিশাল লাগতো। বিজ্ঞানের বিস্ময়কর বিপ্লব ও অনন্য আবিষ্কারের ফলে জীবন হয়েছে গতিময় এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার বিস্ময়কর উন্নতি সাধনে পৃথিবী ছোট হয়ে আসছে!!
যোগাযোগের একটি বিস্ময়কর আবিষ্কার হলো মোবাইল/সেলফোন/মুঠোফোন। নেটওয়ার্ক এর মাধ্যমে বেতার সংযোগ, এটি হয়তো কিছুটা ব্যয়বহুল, বেশির ভাগ সময় দেশের বাইরে যোগাযোগের ক্ষেত্রে। মুহূর্তের মধ্যেই যেকোনো সময় যেখানে ইচ্ছে সেখানে বার্তা আদান প্রদান করা যায়। আর এখন সামাজিক মাধ্যমের যুগ, স্মার্টফোনের যুগ, ইচ্ছে করলেই কেউ কারো সাথে খুব সহজেই যোগাযোগ করতে পারে। এবং তা খুবই স্বল্প মূল্যে। এমনকি ভিডিও কলের মাধ্যমে একজন আরেকজনকে দেখতে পারছে, মনে হয় যেন দুজন মানুষ সামনাসামনি দাঁড়িয়ে কথা বলছে! এইসব আশ্চর্জ্জনক ঘটনাবলী সবই বিজ্ঞানের আবিষ্কার এবং আশীর্বাদও বলা যায়।
যোগাযোগের এইসব মাধ্যমের জন্য পৃথিবীর পরিসর খুব ছোট হয়ে আসছে। আগের দিনগুলোর কথা একটু মনে করি, যখন ডাকযোগে চিঠি আদান-প্রদান করা হত। দেখা যেত একটি চিঠির জন্য মাসের পর মাস বসে থাকতে হত। সেই চিঠি একজনের দায়িত্ব থাকতো পড়ার, দিনের বেলায় তার চারপাশে সবাই গোল করে বসে থাকতো চিঠির কথা গুলো শোনার জন্যে। এরপর ছিলো ল্যান্ডলাইন বা টিএন্ডটি ফোনের বিড়ম্বনা। অমুক সময়ে একজন কল করবে এজন্য সেখানে উপস্থিত থাকতে হত গ্রাহককে, কারন এই টেলিফোন ছিল একজন নির্দিষ্ট জনের বাসায়। সে দিন গুলি এখন জাদুঘরেও নেই।
বিশ্বায়ন ও প্রযুক্তির উন্নয়ন সবকিছু পাল্টে দিয়েছে। এখন হাতের নাগালে সব কিছু সব কিছু পাওয়া যায়, নামি ব্রান্ডের সুলভ মূল্যের স্মার্টফোন পাওয়া যায় যা দিয়ে ভয়েস কল, ভিডিও কল, সামাজিক যোগাযোগ, চ্যাটিং, মেসেজ আদান প্রদান এতো সহজ হয়ে যা তুলনাহীন!
হয়তো বিজ্ঞান মানব জীবনকে অনেক সহজ করে দিয়েছে, মানুষ একদেশ থেকে আরেকদেশে যাচ্ছে খুব কম সময়ে। বাস, ট্রেন, ট্রেন, বিমান, মহাকাশযান ইত্যাদি একদেশ থেকে আরেক দেশের দূরত্ব ও সময় লাঘব করে দিয়েছে। হয়তো কোনো একসময় দেখা যাবে যে দরজা খুলেই আপনি পৌঁছে যাবেন সুদূর আমেরিকা বা চীন। সেদিন আসতেওঁ পারে আবার নাও পারে। হয়তো সেদিন আমি বা আমাদের সাথের কেউই থাকবোনা এই পৃথিবীতে। দূর ভবিষ্যতের কথা কে জানে।
ট্যালিপ্যাথি বা মনোসংযোগ বলে একটা বিষয় রয়েছে, যা মানব জগতের সবচেয়ে রহস্যপূর্ন একটি বিষয়। আসলে কেউ কারো মনে কথা শুনতে বা বুঝতে পারে না। এটা হচ্ছে একধরনের অনুমান, একটা বিশেষ টান। যা খুব কাছের মানুষের জন্যে বেশি ঘটে থাকে। যখন বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উন্নত ছিলোনা ও যোগাযোগের মাধ্যম ছিলো চিঠি কিংবা টেলিগ্রাম, সেই সময় গুলো মানুষ একজন আরেকজনের সাথে যোগাযোগের জন্য অপেক্ষা করতো। একটা লম্বা সময়। সে অপেক্ষা গুলো ছিলো অনেক আত্মিক। তখনই হয়তো সেই ট্যালিপ্যাথি বা মনোসংযোগ টা বেশি হতো মানুষে মানুষে। যা এখন প্রায় বিলুপ্ত। আজকালের দিনের ভালোবাসাও ভার্চুয়াল হয়ে যাচ্ছে, বর্তমান যুগের কথা বলছি, হয়তো সবার একইরকম অবস্থা নাও হতে পারে!
খুব সংক্ষেপে কিছু মনের কথা ব্যক্ত করলাম। আমি মূলত বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলাম না না আমি কোনো টেকনিক্যাল বিভাগের লোক। তাই সংক্ষিপ্ত আকারে নিজের সাজানো কিছু কথা তুলে ধরার প্রয়াস করেছি মাত্র।
ব্লগ সামাজিক মাধ্যম নয়; ব্লগ হচ্ছে মুক্ত চিন্তা ধারার লেখালেখির একটা প্রেক্ষাপট। এখানে একজন আরেকজনের নিকট কোনো ম্যাসেজ পাঠানো যায় না, না কেউ কারো সাথে চ্যাটিং করতে পারে। তবুও একটা একটা জিনিস লক্ষ্য করে দেখবেন অনেক ব্লগারের পোষ্টে অনেকেই জিজ্ঞাসা করেন 'কেমন আছেন?' 'অনেক দিন পর', "কি খবর ভাই আপনার" " শরীর ভালো তো"
এইযে একটা কুশল বিনিময় এক জন আরেকজনের সাথে; এই যে মমত্ব বোধ তা আকাশ চুম্বী কিংবা বলা যেতে পারে শাশ্বত! কারও সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে বা খোঁজ খবর নিতে চাইলে কোনোরকম বাধা কিংবা দূরত্ব আটকে রাখতে পারেনা! সেটা কোন সামাজিক মাধ্যমেই হোক বা ব্লগে । শুধু যোগাযোগ করার মন বাসনা দৃঢ় থাকলেই হবে।
দূরত্বের ব্যাপ্তি বড় কোনো ব্যাপ্তি নয়!!
*একান্ত নিজের কিছু অভিব্যক্তি।
-লেখাখানি সকল ব্লগার ভাই বোনদের উৎসর্গ করলাম।
সবাইকে ঈদের শুভেচ্ছা জানাই, ঈদ মোবারক
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে জুন, ২০১৭ রাত ১:৫৯