আমি সচারাচর ঈদ উপলক্ষে কেনাকাটা করি না, মানে ঈদের জন্য কোনো রকম কেনাকাটা করি না! এ আমার বিশাল এক ব্যর্থতা! এর মূল কারণ, আমি সময় বের করতে পারি না যে মার্কেট ঘুরে কেনাকাটা করবো! আরেকটা বড় সমস্যা, কেনাকাটায় আমি খুবই কৃপণ ও ভালো মানুষ না। আমার সহজে কোনো কিছু পছন্দ হয় না! তাই কেনাকাটা আমার পছন্দ হয় না, আর আমি সবসময় দামে সাশ্রয়ী এমন কোনো মার্কেটে ঘুরাঘুরি করি। নামি শপিং মল থেকে দামি পোশাক কেনার মত পকেট এখনোও ভারী হয়ে উঠেনি বা যদি কোনোদিন পকেট ভারীও হয় তবুও অভ্যাস ত্যাগ করতে পারবো না!
.
আর কয়দিন পরেই ঈদ। সবাই ঈদ উদযাপনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। যাদের বাড়ি ঢাকা শহর থেকে দূরে বা যারা গ্রামের বাড়ি গিয়ে ঈদ করবে তারা বাস ট্রেন, লঞ্চের অগ্রিম টিকিট সংগ্রহ করা শুরু করে দিয়েছেন। বাড়ির সবার জন্য কেনাকাটা করছেন। যারা নিজ শহরে চাকরি করে তাদের এতো দুশ্চিন্তা নেই। দুশ্চিন্তা হলো যারা গ্রামে গিয়ে ঈদ করবে তাদের। শহরের নানান দুর্ভোগ, জ্যাম, বাস-ট্রেনের টিকিট সঙ্কট, লঞ্চে পর্যাপ্ত আসন নেই। অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই করে লঞ্চ পরবর্তী বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা করবে। এইজন্য অতীতে আমরা অনেকবার লঞ্চ ডুবির খবর পেয়েছি। ঈদে ঘর মুখী এসব মানুষের দুর্ভোগের অনেক। এরপর আছে চোর, ডাকাত, ছিনতাইকারীর উপদ্রব! একজন গার্মেন্টস শ্রমিক কষ্টে উপার্জন করা টাকা-পয়সা যাত্রাপথে যদি ছিনতাইকারীর কবলে পরে বা চুরি হয়ে যায় তাহলে তো আর দুঃখের সীমা নাই!
স্বপ্ন যাবে বাড়ি আমার। কতটুকু স্বপ্ন বাড়ি পৌঁছতে পারবে? স্বপ্ন বাড়ি পর্যন্ত গিয়ে পুরোপুরি পূরণ হবে তো?! কথাটা বলার কারণ, যে হারে দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি পাচ্ছে সে হারে কিন্তু বেতন বা বোনাস বৃদ্ধি পাচ্ছে না! ঈদ মানে আনন্দ, এই আনন্দ কি সবার মুখে ফুটাতে পারবে চাকুরীজীবী মানুষ গুলো। তাদের মাথায় কিন্তু অজস্র চিন্তা ও দুশ্চিন্তা। পরিবারের সবার মুখে হাসি ফুটানো চাট্টিখানি কথা নয় এর জন্য অনেক শ্রম দিতে হয়। শ্রম দিয়েও অনেক সময় সবার চাহিদা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়। দেখা যায় অনেক সময় ঘাটতি রয়ে যায়, এমনকি নিজের যে চাহিদাটুকু সেটাও সম্পূর্ণ পূরণ হচ্ছে না! মানুষের মৌলিক চাহিদা হচ্ছে খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান। কিন্তু মানুষের এই মৌলিক চাহিদা গুলো সহজে পূরণ হচ্ছে না। মানুষ হিমশিম খাচ্ছে! ছোট বড় সবারই একটা ইচ্ছে থাকে ঈদে ভালো, সুন্দর জামা কাপড় কিনবে। কিন্তু অতিরিক্ত দামের কারণে দেখা যায় ইচ্ছে বেশিরভাগ মানুষের ক্ষেত্রে পূরণ হয় না।
আর তাই স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় প্রায়শই।
আর যারা উদ্বাস্তু তাদের কি অবস্থা! নিজের বাস করার মতো জায়গাই তো নেই! ঈদেই কেনাকাটা করার প্রশ্নও তো উঠবে না। কোনো মতে দিন আনে দিন খায়। ওদের ঈদ মানে শুধুই ঈদ, ঈদের আনন্দ নেই। আমি যখন রাত বিরাতে শহরের রাস্তায় হেটে বেড়াই তখন দেখি ফুটপাথ, রাস্তার ধারে অনেক মানুষ কাথা মুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে। কেউ কেউ ছোট খাটো ঝুপড়ি উঠিয়ে নিয়েছে রাতে মাথা গোজার জন্য। সেখানেই রাত সেখানেই কাত। এইসব মানুষেরও মনে অনেক স্বপ্ন আছে ঈদের জামা কাপড় কিনবে, আনন্দ করবে! ঈদে অনেক ভালো খাবার খাবে।
কিন্তু তারা কি তা করতে পারছে?!
একজন বৃদ্ধ মানুষ যার কোন সন্তান নেই বা সন্তান থেকেও নেই তার ঈদ উদযাপন কেমন হবে?! বৃদ্ধাশ্রমে বসবাস রত একজন মা বাবার ঈদ কেমন কাটবে, তার সন্তান কখনো কি খোঁজ খবর নিয়ে দেখে!! অন্তত ঈদের দিনে তো খোঁজ নেয়া উচিত। কেন খোঁজ খবর নেয় না এসকল সন্তানেরা? ব্যস্ততায় নাকি দায়িত্ব থেকে এড়িয়ে চলার জন্যে?!
যার সন্তান নেই সেই সকল মা-বাবার কি অবস্থা! সে বৃদ্ধ মা বাবা ঈদের দিন আর বাকি দিন একই রকম। শুধু জানালার পাশে বসে কারো জন্য নীরব অপেক্ষা আর অশ্রু ঝরিয়ে যাওয়া।
এই বৃদ্ধ মা-বাবাদের ঈদ কেমন কাটবে?
এই যে কিছুদিন আগে পাহাড় ধসে পরলো রাঙামাটিতে, যাদের পরিবারের দুই একজন সদস্য বেঁচে আছে তাদের কি ঈদ হবে এবার?! তাদের চোখে শুধু স্মৃতী, বুকে স্বজন হারানোর বেদনা, কানে বেজে উঠছে আর্তনাদ। এবার তারা কার সাথে, কি নিয়ে ঈদ করবে!? যে কয়জন মানুষ এই দৃশ্য দেখে বেঁচে আছে তারা পাথর হয়ে গেছে।
পাহাড় ধসের ঘটনা এদেশে নতুন নয়! কিন্তু এর কোনো সচেতনতা নেই, না সরকারি প্রশাসন থেকে না জনগণ নিজেদের থেকে! বললে অনেক কথাই উঠে আসবে, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, পাহাড় ধসের জন্য বিএমপি দল দায়ী। আমরা জানি আপনারা পাগল হয়ে গেছেন, কিন্তু এটা কি কারো দোষ ধরার সময়? পত্রিকা খুললেই তো আমরা দেখি অমুক লীগের তমুক নেতা, নেতার বিশ্বস্ত লোকজন পাহাড় কেটে রাস্তা করেছেন, পাহাড় কেটে পাথর উত্তোলন করছেন, এমনকি পাহাড়ের জায়গা পর্যন্ত দখল করে নিয়েছে। তখন কি উনার এ নিউজ চোখে পড়ে না।
এই পাহাড় ধসের দুর্ঘটনা কবলিত এলাকা থেকে বিপর্যস্ত মানুষদের উদ্ধার করতে গিয়ে চার সেনা সদস্য নিহত হয়েছেন(যতটুকু খবর থেকে জেনেছি), এদের মধ্যে একজন সদ্য বিবাহিত! তার বাড়ির এবং বাকি সবার ঈদ কেমন কাটবে?!
এই সকল প্রশ্নের উত্তর সম্ভবত আমাদের কারোর জানা নেই!
লেখাটা অনেক ভারী হয়ে গেছে, পড়ে যদি কারো মন খারাপ হয় তাহলে আন্তরিক ভাবে দুঃখিত।
সর্বশেষ এডিট : ২০ শে জুন, ২০১৭ ভোর ৪:৫৯