অমানবতা এখন প্রতিযোগিতা দিয়ে বেড়ে চলছে; মানুষের মানবতা নিঃশেষ হওয়ার পথে। দেশে দিনের পর দিন অন্যায়, দুর্নীতি, অবিচার, ধর্ষণের মাত্রা অতিরিক্ত হারে বৃদ্বি পেয়ে গেছে ঠিক মশা মাছির উৎপাত যেভাবে বেড়েছে!
আমি কোনো অপরাধীকে সমর্থন করিনা; কখনো করবো না। শুধু আমি কেন কোনো সভ্য, সচেতন নাগরিক কোনো অন্যায়, অসভ্যতা মেনে নিবে না। অন্যায় যে করে আর অন্যায় যে সহে তব ঘৃণা যেন তারে তৃণসম দহে।
বর্তমান বিশ্বেও একই অবস্থা খুব বেশি অপরাধ বেড়ে গেছে। খুন, খারাপি, রেষারেষি, অপহরণ, ধর্ষণ সহ অনেক বড় বড় অপরাধ বেড়ে গেছে। এগুলো কেন হচ্ছে!? সামাজিক ও নৈতিক অবক্ষয়ের জন্য!
ধর্ষণ এই শব্দটা বাংলা শব্দকোষে কিভাবে আসলো জানা নেই, না আসলে হয়তো জানা হতনা। কথাটা বলার কারণ শব্দটি একটি বীভৎস শব্দ; যা বাংলা শব্দকোষ'কে কলুষিত করছে।
ধর্ষণের বিচার আমরা সবাই চাই। কিন্তু, বিচার বিভাগ কতটুকু সফল হয়েছে এই ব্যাপারে জানা আছে কারও? নাই! কেন নাই কারণ এরকম নজিরবিহীন বিচার/ঘটনা দেখার সৌভাগ্য দেশের মানুষের হয় নাই।
যেমন তনু হত্যাকান্ড! অনেকেই বিভিন্ন ইস্যুর চাপে পরে ভুলে গেছি যেমন ফাইলটাও চাপা পরে গেছে অনেক নীচে!! আমরা যারা সাধারণ জনগণ বিশেষ করে যারা আমার মত ক্ষুদ্র মানুষ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করিতেছি, নিরুপায় হইয়া। তনুর বাবা মা কিন্তু নিরবেই চোখের জল ফেলেন কারণ দেখারও নাই বলারও কেউ নাই!
তনু'র হত্যা কান্ড নিয়ে দেশে তুমুল হৈচৈ পড়েছিলো এইতো প্রায় বছর খানেক আগের ঘটনা। পোস্টমর্টেম রিপোর্টে পাওয়া গেলো তনুকে ধর্ষণ করার পর হত্যা করা হয়েছে (কতটা জঘনা মানসিকতার মানুষ হলে এই অপকর্ম করতে পারে)। এরপর বিচারের দাবিতে আন্দোলন হলো, শাহবাগে অনেক মানুষ অবস্থান করলো। কিছু সংখ্যক মানুষ তনুকে বোন বানালো, কেউ নিজের মেয়ে বানালো। তার কয়েক মাস পর সব ইতিহাস। বিচার কাঠগড়ায় ঝুলে আছে, বোধহয় আরও ঝুলবে। এইই ছিলো দেখার বিচার না পেয়ে একটা সংসার কিভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।
বিগত বেশ কয়েকদিন যাবৎ একটি ঘটনা খুব আলোড়ন তৈরী করেছে, সেটি হলো বনানীর এক হোটেলে দুই মেয়েকে ধর্ষণ!! এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ভালো ফুঁসে উঠেছে দেশ অনেকে এইটা নিয়ে ফেসবুকে লেখে, জোরালো সমর্থন জানিয়ে সেলিব্রিটি হয়ে গেছেন। কিছুদিন আগেও যার নাম জানতাম না উনি এখন পপুলার হয়ে গেছেন (ভালো!)। উনাকে জিজ্ঞেস করা দরকার মশাই আগে কোথায় ছিলেন এতদিন দেশে তো অনেক অন্যায় হয়েছে!! এই কথা বলে নির্ঘাত আমি দোষী হয়ে যেতে পারি, কারণ ফেসবুকে একজন এরকম মন্তব্য করায় স্বাধীনতা চেতনা বিরোধী ট্যাগ খেয়েছেন!!
বিচার অবশ্যই চাই, কিন্তু একটা বিষয় নিয়ে মানুষ এতো ফুঁসে উঠে কিভাবে হয়তো এটা বললেও আমার খবর খারাপ হতে পারে!!
বনানীর ধর্ষণকে কেন্দ্র করে দেশের অনেক মানুষ খুব জাগ্রত হয়েছেন, মানে দেশ ফুঁসে উঠেছে, সাবাস।
আমরা সবাই চাই ধর্ষণ সহ সব ধরণের অপরাধের বিচার হোক। বিচার না হলে অন্যায়-অপরাধ আরও বাড়বে। কিন্তু বিচার কি আদৌ সঠিক ভাবে হচ্ছে! হচ্ছে না। যারা ক্ষমতাসীন, যাদের অনেক টাকা সম্পত্তি আছে তারা আইনের ফাকফোকরের মাধ্যামে পরিত্রাণ পেয়ে যাচ্ছে। উল্টো যে ভিকটিম সে বিপদে পড়ছে। যেমনটা ঠিক ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুরে, বিচার না পেয়ে ১০ বছর বয়সের মেয়েকে নিয়ে বাবা ট্রেনের নিচে পরে আত্মহত্যা করেছেন। সে বাবা আর কি করবে, তার তো আর অনেক টাকা নেই গরিব মানুষ ইজ্জতই সব। তাই ইজ্জত বাঁচানোর জন্য আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়।
দেশের আইন শৃঙ্খলার ব্যবস্থা মগের মুল্লুক হলে যা হয় আরকি। এখানেই চেতনার প্রশ্নটা জাগে, ঐ ১০ বছরের মেয়েটা আর ওর বাবার কি দোষ ছিল যে তারা সঠিক বিচার পেলো না?! দেশ তখন ফুঁসে উঠলোনা কেন?! এখানে কি কারণ থাকতে পারে!? এই খবরে কোনো গণজাগরণ মঞ্চ, মুক্তমনা নাগরিক, ফেবু রাইটার প্রায় কেউই জেগে উঠেনি(লিখেছেন দুই একজন) যেমন উঠেছেন বনানীতে দুই যুবতীর ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে।
এ কথা বললে এ পোষ্টের লেখক খারাপ হয়ে যাবে, তখন কেন ফুঁসে উঠে নাই এখন কেন ফুঁসে উঠেছে? একটা বিশাল প্রশ্ন!
আমি বলে রাখি আমি কোনো অপরাধীকে সমর্থন করিনা, আমি চাই বিচার হোক কঠোরতর। দেশে আইন ব্যবস্থা আরও মার্জিত হোক, পক্ষপাতিত্ব মুছে যাক, সৎ ও নিরপেক্ষ বিচার হোক।
কিন্তু দেশে এতো বিবেঁধ কেন? গরিব মানুষ হওয়ার জন্য তার বিচার হবে না; এটা কি ঠিক?! আপনারাই বলুন..
আপন জুয়েলার্স এর মালিকের ছেলে এই ধর্ষনের সাথে সম্পৃক্ত একজন, দেশের সবাই এখন বলছেন আমরা সবাই আপন জুয়েলার্স বয়কট করলাম, হ্যা বয়কট করাই উচিত। এখন বলুন, আপন জুয়েলার্স কে বয়কট করলেই সব সমাধান হয়ে যাবে?! আমি শুনেছি এই জুয়েলার্সের মালিকের দুই নম্বরি ব্যবসায় রয়েছে, চোরাকারবারি যাকে বলে। তাহলে আপনি বলুন আপন জুয়েলার্সকে বয়কট করে লাভ আছে কি ! উনার তো উল্টা ব্যবসা আছেই, বাংলাদেশের অনেকেরই আছে। বয়কট করলে কিছু হয়তো আপন জুয়েলার্সের কিছু ক্ষতি সাধন হবে, দেখাদেখি অনেক ব্যবসায়ীরা শিক্ষা পাবে। তবে কথাটা এভাবে বললে ভালো হয় বেশি: "আমরা আপন জুয়েলার্সের মত সকল দুর্নীতি গ্রস্ত ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান সবকিছুকেই বয়কট করছি" তাহলে বিষয় টা শক্ত ও তরতাজা হয়। এবং যা করা প্রায় দুঃসাধ্য। দেখেছেন নিশ্চই আপন জুয়েলার্স বন্ধ করে দেয়ার ঘোষণায় সকল স্বর্ণকার ব্যবসায়ীরা ধর্মঘট ডেকেছিল গতকালকে। রাতে অবশ্য উঠিয়ে নেয়, কেন ধর্মঘট তাড়াতাড়ি উঠিয়ে নিলো তা জানি না! কিন্তু এমন যদি হয় তাহলে সঠিক বিচার কিভাবে প্রতিষ্ঠা করবে?!
আপন জুয়েলার্সের মালিক ছেলের পক্ষে বলেছেন, এই বয়সে এমন একটুআধটু করেই সবাই।
উনাকে রিমান্ডের ঘরে নিয়ে গিয়ে তেরজন পুলিশ অফিসারের সামনে জিজ্ঞেস করা উচিত, ধর্ষণ যদি আপনার মেয়ের হত তাহলে আপনি এই কথা বলতে পারতেন? উত্তর না দেয়া পর্যন্ত রিমান্ডের মার বন্ধ হবে না।
এই বিষয় নিয়ে কথা চললে, চায়ের দোকানে সবচেয়ে বেশি খবর পাওয়া যায়। একজন বলেন ছেলে ভালো না একজন বলেন মেয়ে ভালো না! সাফায়াত কিন্তু তাই বলছে 'অনুমতি নিয়ে কিছু করলে সেটা কি ধর্ষণ হয়?" ( হায়রে চায়ের দোকান হায়রে মিডিয়া)। ফেসবুক, অনলাইন পত্রিকা আর চায়ের দোকান প্রায় একই রকম কি রেখে কিযে খবর জানাবে বোঝা দায়!!
.
একটি ছেলে বা পুরুষ ধর্ষক হয় কেন? তার সামাজিক অবক্ষয় ও নৈতিকতার শিক্ষার অভাবে যা সন্তানের বাবা মা শিক্ষা দিতে ব্যর্থ। বাবার দুর্নীতির টাকা আছে ছেলে দুহাতে উড়ায়, মেয়ে দুহাতে উড়ায় (ঐশীর কথা ভুলে যাননি তো সবাই) । দুহাতে টাকা উড়ায়, রাত বিরাতে নাইট ক্লাবের বাজে পার্টিতে যায়, বাজে নেশা করে, খারাপ ছেলে মেয়েদের সঙ্গ নেয়। এতে দেখা যায় তার চরিত্র ফুলে ফেঁপে ধুতরা ফুলের মত পবিত্র হয়ে যায়।
ধর্ষণের মত বড় অন্যায় ঠেকাতে হলে কঠোর শাস্তি যেমন প্রয়োজন তেমনি নৈতিকতার ও ধর্মীয় শিক্ষারও প্রয়োজন।
One thing we should remember, 'Prevention is better than cure'.
নারীদেরও সচেতন হতে হবে অনেক, বনানীতে যেই ঘটনাটা ঘটেছে সেটা আসলেই দুঃখজনক, কিন্তু একটু সচেতন হলে এ ঘটনা ঘটত না। কি দরকার ছিলো রাত করে পার্টিতে যাওয়ার যে হোটেলে রাতে মদ আর ইয়াবা চলে। দুদিনের পরিচয়ে কেন মেয়ে দুজনের ওই ছেলেদের নিমন্ত্রণ গ্রহণ করতে হবে, তাও রাতের বেলায় পার্টি। সাবধানেই মঙ্গল তাই বলা, আবারও বলে রাখি আমি কিন্তু ধর্ষকদের সমর্থন করছি না। শুধু বোঝানোর চেষ্টা করছি সচেতন সব দিকে থেকেই হওয়া দরকার।
এক নারী নেত্রী বললেন, কেন ভাই মেয়েরা রাতে পার্টিতে গেলে কি কোনো সমস্যা? তাকে বললাম, সমস্যা হয় কি না হয় সেটা তো প্রমান পেলেন।
উনি বললেন, কেন ছেলেদের এ কাজ করতে হবে? তারা ইজ্জতের সম্মান দিতে পারতোনা।
আমি বুঝালাম, দেখেন সমুদ্রে হাঙ্গর থাকে আর হাঙ্গর মাংসাশী তাই মানুষ পানিতে নামার আগে সেভ জোনে নামে। হাঙ্গর তো প্রাণী সে কিন্তু ভালো মন্দ বুঝেনা যাকে পাবে তাকেই খাবে। তো হাঙ্গর কে বুঝাবেন না নিজে সাবধান হবেন?!
পৃথিবীর সবাইকে এক পাল্লায় বিচার করলে তো হবে না।
এরপর উনাকে একটা গল্প শুনালাম-
পাশাপাশি দুই দোকানদার মধু বিক্রি করে। একজন বিশুদ্ধ মধু বিক্রি করে আরেকজন ভেজাল দুই নম্বর মধু বিক্রি করে। মজার বিষয় হলো, বিশুদ্ধ মধুর চেয়ে ভেজাল মধু বেশি বিক্রি হয়।
তো একদিন ভেজাল মধু বিক্রেতার একজন পরিচিত মানুষ জিজ্ঞেস করলো, ভাই আপনি তো ভেজাল মধু বিক্রি করেন আর আপনার পাশের দোকানদার ভালো বিশুদ্ধ মধু বিক্রি করেন তবুও তার চেয়ে আপনার মধু বেশি বিক্রি হয়, কারণ টা কি?
ভেজাল মধু বিক্রেতা উত্তর দিলো, আসলে আমার মুখে মধু আছে তাই ভেজাল হলেও আমার দোকানের বিক্রির পরিমান বেশি।
ভেজালের আকর্ষণ টা বেশি, তাই আমরা ভেজালেই হাত বাড়াই বেশিই।
এখন বলতে পারেন ৬/৮/১০বছরের শিশু কে যখন ধর্ষণ করা হয় তখন!? হ্যা আপনার কথা সত্য পর্দাও অনেক সময় রক্ষার কারণ হয় না! মানুষের ভেতর যখন শয়তান কুমন্ত্রনার জাল বিছিয়ে দেয় তখনই মানুষ এসব কান্ড গুলো করে। এখানে অনেক সময় সাইকিপ্যাথিক বা মনস্তাত্ত্বিক বিষয়ও জড়িত, যেমন শিশু সেক্সুয়াল হেরেসমেন্ট বা ধর্ষণকারীকে বলে 'পিডোফাইল'।
এখন এসব একদিনেই ঠিক করা সম্ভব নয়। সমাজে অনেক আবর্জনার স্তুপ থাকে যা অনেক দিন ধরে জমে পরে থাকলে দুর্গন্ধ হয়ে পরে, যা অপসারণ করতেও সময় লাগে দুর্গন্ধ কমতেও! তবে সার্বিক সচেতনতা ও তদারকিই পারে এসব দ্রুত নির্মূল করতে।
মানুষের জীবনে দুর্ঘটনা ঘটে এটা প্রকৃতি গত নিয়ম। তাই বলে জীবন থেমে থাকে না!
আমার কানে যখন ধর্ষণ শব্দটা ভেসে আসে আমার তখন ঘেন্না লাগে।
ধর্ষণ খুনের চেয়েও খারাপ, কারণ একটি ধর্ষণের ঘটনা সমগ্র দেশের জন্য লজ্জাজনক!!
মানুষ কবে সত্যিকারের মানুষ হবে? কোনদিন মানুষ মানুষের ভালোর জন্য ভাববে? মানুষের মন মানুষের জন্য উন্মুক্ত থাকবে, সেখানে হয়ে যাচ্ছে উল্টো! কাউকে ক্ষতি করে কেউই উপরে উঠতে পারে না। কিন্তু মানুষ কেন এই কথাটা বুঝেও না বুঝার ভান করে!!
(লেখাটা কিছুদিন আগে লিখে রেখেছিলাম, আসলে এখন এরকম লেখা পোস্ট করতে খুব ইচ্ছে হয় না, অনেকেই উল্টো ভাবতে পারে তবুও সব ভেবেই পোস্ট করলাম। ভুল ত্রুটি সংশোধনযোগ্য)।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১৯ দুপুর ১:১৬