লেখক: রাফাত শামস
প্রকাশনী: অবসর প্রকাশনী
পৃষ্ঠা সংখ্যা: ২০০
"মৃত্যুরেণু", "মৃত্যুর পেলব স্পর্শ"-এর পরবর্তী আখ্যান!
থ্রিলার সাহিত্যের অন্যতম প্রিয় লেখক রাফাত শামসের নারকোটিক থ্রিলার জনরার মৃত্যু সিরিজ বা ড্রাগলর্ড সিরিজের প্রথম বই "মৃত্যুর পেলব স্পর্শ" পড়েছিলাম প্রায় বছর খানেক আগে। তারপর থেকেই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম এই সিরিজের দ্বিতীয় পর্ব "মৃত্যুরেণু"-এর জন্য। সেই অপেক্ষার পালা শেষ হয়েছে গত ৩ মার্চ, ২০২২ তারিখ। সেদিন-ই বইটি সংগ্রহ করে পড়া শুরু করে দিয়েছিলাম, এবং পড়ে শেষ করলাম গতকাল ভোর পৌনে চারটার দিকে। আর তারপর থেকে এখন অবধি একটা ঘোরের মধ্যে আছি। কিছুটা মানসিক ট্রমার মধ্যেও আছি। আসলে এই বইয়ের শেষটা এমনই যে...... আচ্ছা, শেষটায় বরং পরেই আসছি। আগে বলে নিই সবমিলিয়ে কেমন লাগলো "মৃত্যুরেণু"!
লেখক রাফাত শামসের গল্পের গাথুনি বরাবরই বেশ শক্ত। আর বরাবরের মতোই " মৃত্যুরেণু"-ও অত্যন্ত শক্ত গাথুনিসম্পন্ন শক্তিশালী এক গল্প! আর চরিত্রায়ন? চরিত্রায়ন নিয়ে বলতে গেলে বলতে হয়, কাহিনীর প্রতিটা চরিত্রই যার যার জায়গা থেকে গুরুত্বপূর্ণ। এমনকি ছোট থেকেও ছোট চরিত্রগুলোও বেশ গুরুত্বপূর্ণ! প্রতিটা চরিত্রকেই এতটা গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে মূলত চরিত্রগুলোর অন্তর্নিহিত দর্শন। এটা এই বইয়ের আরেকটা শক্তিশালী দিক- লেখক কোনোরকম দর্শন কপচান নি, কিন্তু পাঠক এই বইটি পড়তে গিয়ে জায়গায় জায়গায় বিভিন্ন চরিত্রের জীবনের বিভিন্ন দর্শনের সম্মুখীন হবেন। আর সেই দর্শন-ই পাঠককে টেনে নিয়ে যাবে কাহিনীর গভীর থেকেও গভীরে!
লেখকের আরেকটা ব্যাপার যেটা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবি রাখে সেটা হচ্ছে, লেখক তার এই কাহিনীর কোনো চরিত্রকেই মোটাদাগে ভালো কিংবা খারাপ দেখান নি। এই কাহিনীতে লেখক যেমন নায়ক/নায়িকার চরিত্রের কিছু খারাপ দিক দেখিয়েছেন, তেমনি দেখিয়েছেন খলনায়কের চরিত্রের সামান্য কিছু ভালো দিক-ও। খলনায়ক হলেই তার মধ্যে ভালো কোনো গুণ থাকা যাবে না, সে আগা-গোড়া একজন পিশাচ, কিংবা নায়ক হলেই তার কোনো ধরনের দোষ-ত্রুটি থাকতে পারবে না, তার কোনো দুর্বলতা থাকা যাবে না- এরকম ধ্যান ধারণা যে লেখক রাখেন না, সেটার প্রমাণ ড্রাগলর্ড সিরিজের এই বইটি। তবে এই গোটা সিরিজে, মানে "মৃত্যুর পেলব স্পর্শ" থেকে "মৃত্যুরেণু" পর্যন্ত একটা চরিত্রই আছে যাকে সম্পূর্ণরূপে খাটি ভালো মানুষ বলা যায়, তার নাম হচ্ছে রূপা। সে যে-ই হোক, তার পেশা যা-ই হোক না কেন, এই পুরো কাহিনীতে তার চাইতে ভালো মানুষ আর কাউকেই বলা যাবে না। "মৃত্যুর পেলব স্পর্শ"-এর তুলনায় "মৃত্যুরেণু"তে রূপাকে অনেক অল্প সময়ের জন্যে দেখা গেছে। কিন্তু তাতে কী? সেই অল্প সময়ের মধ্যেই দেবী দূর্গার সবগুলো রূপ প্রদর্শন করে ফেলেছে এই রূপা! হ্যাঁ, রূপাকে আমি দেবী দূর্গা-ই বলবো। আরেকটা চরিত্রের কথা না বললেই নয়, সেই চরিত্রটি হচ্ছে- ডিলান। বলতে গেলে এই ডিলান চরিত্রটিই এই বইয়ের প্রধান আকর্ষণ! বাংলা থ্রিলারে এরকম "অ্যান্টিহিরো" চরিত্র আগে কখনো এসেছে কিনা সে ব্যাপারে যথেষ্ট সন্দেহ আছে! এর পুরো নাম ইসরাফিল আনসারি, ডাকনাম ডিলান। এই চরিত্রটিকে যতই পড়ছিলাম, ততই মনে হচ্ছিলো যেন এ অন্য কেউ না, স্বয়ং শিঙ্গা হাতে ইসরাফিল! এই বুঝি শিঙ্গায় ফুঁ দিয়ে দিলো!
যাই হোক, শুরুতে বলেছিলাম যে শেষটায় পরে আসবো। কিন্তু পরে ভেবে দেখলাম, শেষটা নিয়ে কিছু বরং না-ই বলি। বইটার শেষ অধ্যায় পড়ে শেষ করার পর আমার ভেতরে যেই অনুভূতিটা কাজ করেছিলো, আমি চাই সেই একই অনুভূতি অন্য সবার মধ্যেও কাজ করুক। শেষের ভয়ংকর ধাক্কাটা বাকিরা নিজেদের মতো করেই অনুভব করুক। তাই আমি শেষটা নিয়ে কিছুই বলতে চাচ্ছি না শুধু এটুকু ছাড়া- বইটা পড়ে শেষ করার পর থেকেই আমার কানে ভেসে আসছিলো রূপঙ্কর বাগচির "গভীরে যাও" গানটা....!
এখন অপেক্ষায় আছি এই সিরিজের তৃতীয় এবং শেষ পর্ব "মৃত্যুঞ্জয়"-এর জন্যে। "মৃত্যুঞ্জয়" না পড়া অবধি "মৃত্যুরেণু" থেকে বের হতে পারবো বলে মনে হয় না!
রেটিং: ৫/৫
অসাধারণ থেকেও অসাধারণ এই বইটির জন্যে পাঁচ তারার রেটিং-ও কম পড়ে যায় আসলে!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে মার্চ, ২০২২ দুপুর ১২:৫৫