আসলে পরীমনির ধূমপান করাটা কোনো সমস্যা না। ধূমপানরত অবস্থার ছবি সোশ্যাল মিডিয়ায় আপলোড করাটাও কোনো সমস্যা না। এমনকি তার হাতের তালুতে "Fuck Me More" লিখে সেটা দেখিয়ে বেড়ানোটাও কোনো সমস্যা না। এসব একান্তই তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। তিনি সেলিব্রিটি হয়েছেন তারমানেই এই না যে তার ব্যক্তিগত জীবন বলে কিছু থাকতে পারবে না এবং সেই ব্যক্তিগত জীবনের কিছুই তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করতে পারবেন না। অবশ্যই পারবেন। আমরা যেমন আমাদের ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছুই সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করে থাকি, তেমনি তিনিও ব্যক্তিগত জীবনের অনেক কিছুই শেয়ার করতেই পারেন। যার ভালো লাগবে না, সে এড়িয়ে যাবে। যেমন আমার এসব ভালো লাগে না, তাই আমি এড়িয়ে যাই।
কিন্তু সমস্যা তো একটা আছেই! এইযে কতিপয় বাঙালি নারীবাদীরা পরীমনির এসব কর্মকাণ্ডকে বিরাট সাহসিকতার দৃষ্টান্ত বলে দাবি করছেন, এখানেই সমস্যাটা। বেশ কয়েকজন তো আবার তার এসব কর্মকাণ্ডকে বেশ শিক্ষণীয় বলেও দাবি করছেন!
অথচ এই "বাঙালি নারীবাদী"দের কখনোই দেখলাম না দিন-রাত এক করে সিগন্যালে দাড়িয়ে নিজের কর্তব্য পালন করে যাওয়া মহিলা সার্জেন্ট কিংবা গভীর রাতে রাস্তায় রাস্তায় টহল দিয়ে বেড়ানো মহিলা পুলিশ সদস্য কিংবা নিজেদের পরিবার-পরিজন থেকে দিনের পর দিন দূরে থাকা মহিলা সেনাসদস্যদের সাহসিকতা নিয়ে কিছু বলতে। আচ্ছা, নারী পুলিশসদস্য আর সেনাসদস্যদের কথা নাহয় বাদ-ই দিলাম। বাংলাদেশের একটা রক্ষণশীল পরিবারে জন্ম নিয়েও অ্যাথলেট হয়ে অলিম্পিকে গিয়ে স্বর্ণপদক জেতার স্বপ্ন দেখা একটা মেয়ের সাহসিকতাকে আমাদের দেশের কতজন নারীবাদী বাহবা দিয়েছেন?? কিংবা সেই নারী ড্রামার, যে কিনা বেড়ে উঠেছে "গান-বাজনা হারাম" জাতীয় ধ্যান-ধারণার অধিকারী একটি ধর্মভীরু পরিবারে, এবং সেই পরিবারের সদস্যদের রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে সে একটা ব্যান্ডে ড্রামার হিসেবে যোগ দিয়েছে, সে তার সাহসিকতার জন্য কতটুকু প্রশংসা পেয়েছে এদেশের নারীবাদীদের কাছ থেকে??? প্রকাশ্যে ধূমপান করতে কি এসবের চাইতেও বেশি সাহসের প্রয়োজন হয়?!
আচ্ছা "বাঙালি নারীবাদী"রা, আপনারা ডক্টর ফেরদৌসী কাদরীকে চেনেন তো? এবছর ম্যাগসেসে এওয়ার্ড পেলেন যিনি?? তাকে নিয়ে আপনাদের দুই-একজনের বাদে আর কারো টাইমলাইনেই তেমন কোনো পোস্ট দেখলাম না, যেখানে কিনা পরীমনির ধূমপানের ছবি আর তার হাতের মেহেদী নিয়ে আপনারা একেকজন উচ্চমাধ্যমিকের বাংলা দ্বিতীয় পত্র পরীক্ষার ২০ মার্কের রচনা লিখে ফেলছেন! পরীমনির হাতের " Fuck Me More" লেখাটা আসলে ডক্টর ফেরদৌসী কাদরীর ম্যাগসেসে এওয়ার্ড পাওয়া থেকেও বেশি শিক্ষণীয়, তাই না??
আসলে বেশিরভাগ "বাঙলি নারীবাদী"দের মধ্যেই যেই জিনিসটার প্রচণ্ড অভাব, সেটা হচ্ছে নারীবাদের সঠিক শিক্ষা এবং জ্ঞান। সঠিক শিক্ষা আর জ্ঞান ছাড়া সাহসের কোনো মূল্য নেই। আকাশচুম্বী সাহস তো ক্ষ্যাপা ষাড়েরও থাকে! আর এদেশের নারীবাদীদের সাহস-ও যে খুব বেশি, তাও না। সোশ্যাল মিডিয়ার বাইরে এদের সাহস কেবল প্রকাশ্যে সিগারেট জ্বালানো পর্যন্তই, এর বেশি কিছুই না!
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে সেপ্টেম্বর, ২০২১ সকাল ৯:৩২